ব্রেটন উডস এগ্রিমেন্ট

সময় ১৯৪৪, বিশ্বজুড়ে চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা। ধস নেমেছে মানুষের জীবনমানে, ধসে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বিশ্বের অর্থনীতিকে শিথিল ও সমস্যা সমাধানের জন্য যুদ্ধের মিত্র দেশগুলো আলোচনা ও একত্র হওয়ার চেস্টা করছিল। অবধারিত এই সম্মেলনে তখন বিশ্বের ৪৪ টি দেশের প্রায় ৭৩০ জন শীর্ষস্থানীয় নেতারা ব্রেটন উডস-এ, মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে জাতিসংঘের মুদ্রা ও আর্থিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিল। এবং এই সম্মেলনের ফলাফলই ব্রেটন উডস চুক্তি এবং ব্রেটন উডস সিস্টেম। চুক্তিটি বেশ কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক অর্থনীতির সামঞ্জসতা রক্ষা করতে পারলেও, ১৯৭০-এর দশকে এসে গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তবে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ এর সৃষ্টি এই চুক্তি সবচেয়ে বড় সাফল্যের দিক।
Key Points
- ব্রেটন উডস চুক্তি একটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা তৈরি করে দিয়েছিল যা ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ দশক পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
- বিশ্বব্যাপী বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, অর্থ প্রদানের নিয়ন্ত্রণ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকট নিরসনই ছিল ব্রেটন উডস চুক্তির উদ্দেশ্য।
- ব্রেটন উডস সিস্টেমের জন্য সর্বজনীনভাবে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে মুদ্রা বিনিময় শুরু হয়েছিল এবং এই মার্কিন ডলারের মান স্বর্নের মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
- ১৯৭০ এর দশকে ব্রেটন উডস সিস্টেম ভেঙে পড়লেও, আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময় ও বাণিজ্যে স্থায়ী প্রভাব ফেলে যাচ্ছে।
ব্রেটন উডস এগ্রিমেন্ট কি
তাহলে ব্রেটেন উসড এগ্রিমেন্ট হলো আন্তর্জাতিক বাজারের মুদ্রা বিনিময় হার কেমন হবে এবং কিভাবে নির্ধারিত হবে, তার জন্য প্রণীত কিছু বিধি-বিধান। ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার -এ এই বিখ্যাত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যদিও এই চুক্তির কথাবার্তা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছিল কিন্তু ব্রেটেন উডস সম্মেলনটি মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই আয়োজন করা হয়েছিল।
তখন এই চুক্তির মাধ্যমে স্বর্ণকে সার্বজনীন মান হিসেবে বিবেচনা করে একটা নির্দিষ্ট মুদ্রা বিনিময় হার ধার্য করা হয়েছিল। চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল সারা বিশ্বব্যাপী একটি নির্দিষ্ট মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করা। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল আজকের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ও বিশ্ব ব্যাংক এই ব্রেটেন উডস চুক্তির ফলাফল।
ব্রেটেন উডস চুক্তির প্রেক্ষাপট
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেরই গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ফলো করতো। তারা তাদের মুদ্রার মান বৃদ্ধি ও যুদ্ধের প্রয়োজনীয় খরচ মিটানোর জন্য এই নীতি মেনে চলত। কারন তারা মনে করত যুদ্ধের প্রয়োজনীয় খরচ এই স্বর্ণের মাধ্যমেই আসবে। ফলে তখনকার সময়ের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী দেশগুলো সব সময় চাইত স্বর্ণকে মজুত করতে।
তাই এই নীতি স্বর্ণের বিপরীতে টাকার চাহিদাকে যোগানের চেয়ে অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। ফলে পুরো পৃথিবীজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। এই মুদ্রাস্ফীতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে মাঝে মাঝে সামান্য একটি রুটি কিনতে হলে মানুষকে ঠেলাগাড়ি পর্যন্ত বন্ধক রাখতে হতো।
এরপর আবার ১৯২৯ সালে স্টক মার্কেটে ধস নামে। এতে বিনিয়োগকারীরা কমিউনিটি ট্রেডিং এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। যা স্বর্ণের দাম আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং মানুষজন তাদের ডলার দিয়ে অনেক বেশি স্বর্ন কেনা শুরু করেছিল।
বিশ্ব বাজারের এই অস্থিতিশীলতা দূর করার জন্যই তখন সংকট সমাধানের প্রয়োজনীয়তা অনেক ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। এবং এই সমাধানের চিন্তা থেকেই পরবর্তীতে বিশ্ব পরিচিত হয় নতুন এক চুক্তির সাথে, যেটিই এই ব্রেটন উডস চুক্তি।
ব্রেটন উডস চুক্তির উদ্দেশ্য
নতুন আন্তর্জাতিক আর্থিক আদেশ প্রণয়ন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চলমান অস্থিশীলতা দূর করা, এবং সারা বিশ্বব্যাপী একটি নির্দিষ্ট মুদ্রা এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারণ করাই ছিল ব্রেটেন উডস চুক্তির মূল উদ্দেশ্য।
এর বাইরেও এই চুক্তির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বজুড়ে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী মহামন্দাকে কাটিয়ে ওঠা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্প গুলোর জন্য আর্থিক সেবা প্রদান করা।
সাথে সাথে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মানের পুনর্গঠন, সঠিক দাম ও বিনিময় ব্যবস্থা বের করা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থার সকল অনিয়ম দূর করাও এই চুক্তির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। মুদ্রা সংকট রোধ করার জন্য ব্রেটেন উডস সিস্টেমের অধীনে ইউ এস ডলারকে প্রথম প্রাথমিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে মনোনীত করা হয়।
গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড প্রতিস্থাপন
ব্রেটেন উডস চুক্তির আগে বেশিরভাগ দেশই স্বর্নের মান অনুসরণ করতো। গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে এমন এক আর্থিক ব্যবস্থাপনা যেখানে একটি দেশের মুদ্রার মান সরাসরি একটি নির্দিষ্টভাবে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতো। কারন একটি দেশের প্রচলিত মুদ্রার বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ সংরক্ষিত রাখতে হতো।
এরপর ১৯৪৪ সালে ব্রেটেন উডস চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে, সদস্যরা মার্কিন ডলার মূল্যের বিপরীতে ৪৪ টি দেশের মুদ্রা স্থির করে। তারা স্বর্ণের দামের বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে। প্রথমে এক আউন্স সোনার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ ডলার।
কিন্তু তারা কেন ডলারকেই বেছে নিয়েছিল? কারণ তখন সারা বিশ্ব জুড়ে স্বর্ন সরবরাহের প্রায় ৮০ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। তাই বিনিময়ের জন্য মার্কিন ডলার ব্যতীত অন্য কোন অপশন ছিল না।
ব্রেটন উডস চুক্তির সুবিধা
ব্রেটেন উডস চুক্তি বিশ্বের অর্থনীতিতে আমুল পরিবর্তন আনে, যার গুরুত্ব আজ অবধি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে। যদিও সিস্টেমটি নিজেই একটি ভিন্ন আর্থিক শাসনের পথ দিয়েছিল এবং পরে ভেঙে যায় কিন্তু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার বিবর্তনের উপর এর প্রভাব আজও অনুভূত হচ্ছে।
তৎকালীন সময়ে বিশ্বের অর্থনীতি যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সেখান থেকে পুনরুদ্ধার করে গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আবারও স্থায়ী করতে পেরেছিল এই ব্রেটেন উডস চুক্তি । এক্ষেত্রে চুক্তি পরবর্তী বিশ্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, এই পুনর্গঠন প্রচেষ্টাকে অনেক বেশি সহজতর করেছিল।
ব্রেটেন উডস চুক্তি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার নতুন বৃদ্ধি স্থাপন করে, যা বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার মেরুদন্ডে পরিণত হয়। এই চুক্তির ফলে বিশ্ববাজার একটি স্থির বিনিময়ের হার এবং প্রভাবশালী রিজার্ভ মুদ্রার সাথে পরিচিত হয়েছিল।
ব্রেটেন উডস সিস্টেমে বিশ্ববাজারে যে স্থিতিশীলতার প্রদান করেছিল তা পরবর্তীতে "পুঁজিবাদের স্বর্ণযুগ" এর সাথে মিশে ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলোতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রদান করেছিল।
চুক্তির ফলাফলস্বরূপ সৃষ্ট আই এম এস এবং বিশ্ব ব্যাংক, বর্তমানে বিশ্বের অর্থনীতির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এ দুই প্রতিষ্ঠান দ্বারা অতুলনীয় সুবিধা পেয়ে থাকে।
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক
সোজা কোথায় বলতে গেলে ব্রেটেন উডস চুক্তির আসল সাফল্য আসলে কোথায়? এই চুক্তির ফলে কোন পরিবর্তনটি আজও বিশ্ববাসীকে উপকৃত করছে? উত্তরে বলব ব্রেটেন উডস চুক্তির আসল সাফল্য হল দুইটা আন্তর্জাতিক শক্তিশালী সংস্থা আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের আবির্ভাব।
সংস্থা দুটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে এবং যা আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রা বিনিময়ের স্থিতিশীলতা প্রদান সহ আরো অনেক আর্থিক সেবা প্রদান করে চলছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন এবং উন্নয়নের চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ভূমিকা এবং কার্যকারিতা বছরের পর বছর ধরে বিকশিত হয়েছে।
IMF-এর ভূমিকা
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা IMF-এর সৃষ্টির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। কারণ নীতি নির্ধারকেরা মনে করত বিনিময় হারকে স্থির রাখতে পারলে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়িক লাভকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এছাড়াও আই এম এফ-এর আরও একটি লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন এমন দেশগুলো শনাক্ত করা ও প্রয়োজন মাফিক সহায়তা প্রদান করা।
বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা
আইএমএফ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে নীতি নির্ধারকেরা একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজন মনে করেন যার থেকে ঋণ নিয়ে সংকটপূর্ণ দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক সামঞ্জসতা ও সংকট নিরসন করতে পারে। এই ধারণা থেকেই তখন বিশ্ব ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়।
প্রাথমিকভাবে বিশ্ব ব্যাংক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইউরোপের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা ও পুনর্গঠনের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। তবে বর্তমানে এই বিশ্ব ব্যাংক সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক সফলভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
ব্রেটেন উডস চুক্তির অসুবিধা
যুদ্ধ পরবর্তীকালীন পৃথিবীর অর্থনীতির বিপ্লবিক পরিবর্তন আনা এই ব্রিটেন কোর্স চুক্তির অসুবিধার কিছু দিক যে ছিল না এমন না। এই চুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা প্রাথমিকভাবে তেমন সমস্যা সৃষ্টি না করে থাকলেও পরবর্তীতে সময়ে এই চুক্তির ব্যর্থতার পিছনে এসব সীমাবদ্ধতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল-
ব্রেটেন উডস চুক্তির ফলে পৃথিবী জুড়ে মার্কিন ডলারের আধিপত্য শুরু হয়েছিল। এই পরিস্থিতিকে ভিত্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন অর্থনৈতিক নীতির প্রতি নিজেদের প্রভাব দেখাতে শুরু করেছিল। যা অন্যান্য দেশ ও মুদ্রা ব্যবস্থার প্রতি অসামঞ্জস্যতা ও সংকট সৃষ্টি করেছিল।
চুক্তিতে স্থির বিনিময়ে হার নির্ধারণের ফলে দেশগুলোর জন্য তাদের বিনিময়ে হার নির্ধারণের সীমা সংক্ষিপ্ত রাখতে হতো। যাতে কোন কোন মুদ্রার মান অনেক বেশি হতো এবং কোন কোন মুদ্রার মান অনেক কম হতো।
ব্রেটেন উডস চুক্তির ফলে বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থপ্রধানের ভারসাম্যহীনতা, ক্রমাগত বাণিজ্যিক ভারসাম্যাহীনতা সহ বড় বড় অনেক সমস্যার উদয় হয়েছিল।
ব্রেটন উডস চুক্তিতে অর্থনৈতিক নীতিগুলোর উপরে বড় ও শক্তিশালী দেশগুলোর প্রভাব ছোট দেশগুলোর তুলনায় বেশি থাকতো। এতে করে প্রায়সই অনেক নিয়ম নীতি ছোট দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দেওয়া হতো। যার ফলে এইসব দেশগুলো প্রায়শই বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হত।
সময়ের সাথে সাথে মার্কিন স্বর্ণের রিজার্ভের উপর চাপ বৃদ্ধি ও অনেক দেশের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির ফলে ধীরে ধীরে এই সিস্টেমের কার্যকারিতা কমতে শুরু করেছিল।
ব্রেটেন উডস চুক্তির পতন
ব্রেটেন উডস চুক্তিবাস্তবায়িত হওয়ার পর থেকে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছিল। কিন্তু বিপত্তি বাজে ১৯৬০ এর দশকে এসে। তখন গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে মুদ্রার সামঞ্জস্যতা রক্ষা করা অনেক বড় চ্যালেঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ধীরে ধীরে সংকচ প্রকট হতে শুরু করে। ফলে চূড়ান্তভাবে ১৯৭১ সালে এই চুক্তি স্থগিত করা হয়।
ব্রেটেন উডস চুক্তির ব্যর্থতার পিছনে যে কারণ গুলো বেশি দায়ী ছিল-
সেই সময় বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের ব্যবসায়িক ভারসাম্যতা কমে যাচ্ছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক সংকট দেখা দিয়েছিল। যার ফলে মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অন্য দেশগুলোতে বেশি ডলার জমা হতে শুরু করেছিল।
অন্যান্য দেশগুলোর হাতে মার্কিন ডলারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, তারা অনেক স্বর্ণ ক্রয় করা শুরু করছিল। ফলে মার্কিন স্বর্ণের রিজার্ভের উপর অত্যাধিক চাপ পড়তে শুরু করেছিল।
অন্য দেশগুলোর অত্যধিক হারে স্বর্ণ ক্রয় করার ফলে ডলারের সংখ্যা ও রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের মধ্যে ব্যাপক অমিল দেখা দিয়েছিল। ফলে ব্রেটেন উডস সিস্টেমের মূল লক্ষ্য, কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস ও স্বর্ণের রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য নিক্সন পরবর্তীতে স্বর্ণের বিপরীতে ডলারের মূল্য হ্রাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। তিনি প্রতি আউন্স সোনার মূল্য ৩৮ ডলার থেকে বাড়িয়ে, ৪২ ডলারে নির্ধারণ করেছিলেন।
কিন্তু পরবর্তীতে তার এই সিদ্ধান্তও বিফল হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ ই আগস্ট ১৯৭১ সালে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন এই চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করেন। "নিক্সন শক" নামে পরিচিত এই ঘটনাটিই ব্রেটন উডস সিস্টেমের আনুষ্ঠানিক পতন ঘটায়।
উপসংহার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর জন্য যে অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন করেছিল তখন বিশ্বের অর্থনীতির ধস মোকাবেলা করার জন্য, একটি সুষ্ঠ বিধান বা নীতির প্রয়োজন ছিল। দরকার ছিল বড় বড় দেশসহ সব দেশের একসাথে কাজ করার।
এই কাজটিই করে দিয়েছিল ১৯৪৪ সালের স্বাক্ষরিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চুক্তিগুলোর একটা ব্রেটেন উডস চুক্তি। এই সিস্টেম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পুর্নগঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সাথে সারা পৃথিবীতে উপহার দেয় শক্তিশালী দুটি সংস্থা যার সুফল সারা পৃথিবীর মানুষ আজও ভোগ করে যাচ্ছে।
- https://www.thebalancemoney.com/bretton-woods-system-and-1944-agreement-3306133
- https://www.wallstreetmojo.com/bretton-woods-system/
- https://corporatefinanceinstitute.com/resources/economics/bretton-woods-agreement/
- https://www.investopedia.com/terms/b/brettonwoodsagreement.asp
Next to read
অ্যাড অন মডেল (Add On Model)


ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ

মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)

বি-টু-বি, বি-টু-সি এবং বি-টু-জি কি? (B-to-B, B-to-C, B-to-G)

নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন

হোরেকা (HORECA)

ইক্যুইটির সংজ্ঞা এবং অর্থ

সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রো ইকোমিক্স ( Macro Economics ) কী?

সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?
