বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি ১৯৭২

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৈত্রী চুক্তি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে কষ্টার্জিত স্বাধীনতার পর, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং স্বাধীনতা দৃঢ় করতে বাংলাদেশের কঠোর সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে, ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ স্বাক্ষরিত হয় এই ঐতিহাসিক চুক্তিটি যা স্বাধীন জাতি হিসাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠার ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে কাজ করে।
Key Points
- ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ পাকিস্তানের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে, বাংলাদেশকে ভারতের সহযোগিতা এবং দুই দেশের সম্পর্কের চূড়ান্ত স্বীকৃতি হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র তিন মাসের মাথায়, ১৯৭২ সালের ১৯শে মার্চ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
- ১২ অনুচ্ছেদ বিশিষ্ট, ২৫ বছর মেয়াদী এই চুক্তিটি আর নবায়ন না করায় ১৯৯৭ সালের ১৯শে মার্চ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
- চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শক্তিশালী করা এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধন করে, একে অপরের প্রতি সর্বোচ্চ সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি কি
মৈত্রী চুক্তি, ইংরেজিতে Treaty of friendship, বলতে বোঝায় দুটি দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন ও শান্তি সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে চুক্তি করা হয় তাকে। দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি ও সুদৃঢ় করতে এবং একে অপরের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা পূর্ণ মনোভাব সৃষ্টির জন্য এই চুক্তি করা হয়ে থাকে। এই ধরনের চুক্তিগুলি সাধারণত কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং নিরাপত্তার দিকগুলি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে।
১৯৭১ সালে উপমহাদেশকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া দীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সৃষ্টি হয় এক নতুন দেশের, যার নাম বাংলাদেশ। এই যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশের পুনর্গঠন, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, নতুন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং দেশের সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির পুরো নাম ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী, সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তি বা The Indo-Bangla Treaty of Friendship, Cooperation and Peace.
২৫ বছর মেয়াদি এই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাক্ষর করেন। এটি এমন একটি চুক্তি যা শুধুমাত্র একটি নতুন জাতির জন্মই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন যুগের সূচনাও করেছিল। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যখন বিশ্ব রাজনীতি ও কুটনৈতিক মঞ্চে বাঙালি জাতির ভাগ্য ঝুলছিল, তখন ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি যেন এক স্থিতিস্থাপকতা, মুক্তি ও পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে বাঙালি জাতির জন্য আবির্ভূত হয়েছিল।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত, বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ভারতের মিত্র বাহিনীর যুদ্ধে সহযোগিতা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথকে মসৃণ করে দেয়। যুদ্ধের সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। অর্থাৎ, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধন পুরাতন, যুগ যুগের। এই বন্ধনকে আরো শক্তিশালী করতে, বাংলাদেশকে স্বাধীনতার স্বীকৃতির বাইরে, এই চুক্তিটি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির লক্ষ্য
১৯৭২ সালের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই দেশের সার্বিক পুনর্গঠন, সংকট মোকাবেলা করা, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং সহযোগিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি স্থাপন করা।
চুক্তির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের মর্যাদাকে বৈধতা দেওয়া।
শান্তি, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের একই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই দেশের আদর্শের বাস্তব রূপায়ণের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করা।
স্বাধীনতা যুদ্ধে একযোগে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দুই দেশের যে বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয় তা বন্ধন সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার নিয়ে মুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয় অভ্যূদয় ঘটানো।
দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রক্ষা করা। এবং উভয় দেশের মধ্যকার বর্তমান মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্ক আরো সম্প্রসারণ ও জোরদার করা।
উভয় দেশের সীমান্ত সংকট মোকাবেলা এবং সীমান্তে স্থায়ী শান্তির বন্দোবস্ত করা। চুক্তিটি একটি যৌথ সীমানা কমিশন প্রতিষ্ঠা করে।
দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত বিনিময়কে বৃদ্ধি করা। লক্ষ্য ছিল জনগণের মধ্যে সংযোগ জোরদার করা, বৃহত্তর বোঝাপড়া বৃদ্ধি এবং উভয় দেশের যৌথ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করা।
এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণ এবং উভয় পক্ষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি ঘটানো।
বিদ্যমান সম্পর্কের মধ্যে কোন দেশ, অন্য কোন দেশের সাথে সামরিক চুক্তি করবে না এবং উভয় দেশ একে অপরকে আক্রমন ও ক্ষতিসাধন করা থেকে বিরত থাকবে।
চুক্তির বর্ণনা
১৯৭২ সালের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মোট ১২ টি দফা রয়েছে। ২৫ বছর মেয়াদী এই চুক্তিটি ছিল নবায়নযোগ্য, যদিও পরবর্তীতে চুক্তিটি আর নবায়ন করা হয়নি।
অনুচ্ছেদ-১
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ভারত ও বাংলাদেশ এই মর্মে ঘোষণা দিবে যে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। পাশাপাশি উভয়পক্ষ, একে অন্যের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবে।
অনুচ্ছেদ-২
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী পক্ষদ্বয় সকল রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি সমতা ও সহযোগিতার নীতিতে আস্থাশীল থাকবে এবং সব ধরনের উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের বিপক্ষে থাকবে। পাশাপাশি এসব উপনিবেশবাদ ও বর্ণ বৈষম্য নির্মূলের লক্ষ্যে দুই দেশ একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে।
অনুচ্ছেদ-৩
চুক্তি স্বাক্ষরকারী ভারত ও বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করবে। উভয়পক্ষ বিশ্বের উত্তেজনা হ্রাস, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য একত্রিত হয়ে কাজ করবে।
অনুচ্ছেদ-৪
আন্তর্জাতিক কোন সমস্যার কারণে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন দুই দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত বা ক্ষতি হলে, তারা নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও মতবিনিময় করার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবে।
অনুচ্ছেদ-৫
চুক্তি সম্পাদনকারী উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন উভয়পক্ষ নিজেদের অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে পরস্পরকে সুবিধা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করার মাধ্যমে এসব খাতকে শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করবে। পাশাপাশি এসব সহযোগিতা প্রদান, সমতা এবং পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে যাতায়াত, যোগাযোগ এবং বাণিজ্য খাতের উন্নয়ন সাধন করবে।
অনুচ্ছেদ-৬
এই চুক্তির উভয় দেশ বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীর অববাহিকা উন্নয়ন, জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন ও সেচ প্রকল্পের ক্ষেত্রে যৌথ গবেষণা পরিচালনা ও যৌথ কার্যক্রম গ্রহণ করবে এবং নদীর উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।
অনুচ্ছেদ-৭
চুক্তিতে ভারত ও বাংলাদেশ শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য খাতে পরস্পর সম্পর্কের উন্নয়ন সাধন করবে ও একযোগে কাজ করবে।
অনুচ্ছেদ-৮
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দুই দেশের বর্তমান সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তারা একে অন্যের প্রতি ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে ঘোষণা দিবে যে, তারা একে অপরের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কোন দেশের সাথে কোন সামরিক চুক্তি করবে না। এতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে কোন আগ্রাসন ও সামরিক ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, কিংবা নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরুপ হতে পারে এমন কোন কাজও পরিচালনা করতে পারবেনা। পাশাপাশি চুক্তির অন্য পক্ষের ক্ষতিসাধন করতে পারে এমন কোন দেশকে সামরিক অভিযানের জন্য নিজেদের ভূমি ব্যবহারে অনুমতি প্রদান করবে না।
অনুচ্ছেদ-৯
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী কোন এক পক্ষের বিরুদ্ধে যদি তৃতীয় কোন পক্ষ সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তাহলে, চুক্তি সম্পাদনকারী কোন পক্ষ অপর পক্ষকে সমর্থন প্রদান করতে পারবেনা। বরং চুক্তি সম্পাদনকারী দুই দেশ একত্রিত হয়ে এই হামলার বিরুদ্ধে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করবে এবং নিজ নিজ দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
অনুচ্ছেদ-১০
চুক্তির দুই দেশ নিষ্ঠার সাথে ঘোষণা করবে যে, কোন তৃতীয় পক্ষের সাথে এমন কোন গোপন বা প্রকাশ্য চুক্তি সম্পাদন করবে না যা এই চুক্তির সার্থকে বিঘ্নিত করতে পারে।
অনুচ্ছেদ-১১
এই চুক্তির মেয়াদ হবে ২৫ বছর। তবে চুক্তি সম্পাদনকারী দুই পক্ষ চাইলে পরস্পরের সম্মতিতে পরবর্তীতে চুক্তি নবায়ন করতে পারবে।
অনুচ্ছেদ-১২
চুক্তির কোন ধারা বা অনুচ্ছেদ নিয়ে কোন পক্ষের আপত্তি থাকলে তা দ্বিপাক্ষিক শান্তিপূর্ণ সমঝোতা বা বৈঠকের মাধ্যমে এবং পরস্পর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সমাধান করা হবে।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির তাৎপর্য
প্রতিবেশী ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। স্বাধীনতার পর এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিনমাসের মধ্যেই ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি দেশ দুটির জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্মিলনের একটি মাইলফলক এবং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান সহযোগিতার জন্য একটি মৌলিক দলিল হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ।
চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীনতার জন্য একটি নৃশংস যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের মর্যাদাকে বৈধতা দেয়। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। পাশাপাশি চুক্তিটি স্বাধীনতা পরবর্তী পরিস্থিতিতে দ্বন্দ্ব সমাধান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি টেকসই কাঠামো প্রদান করে। এটি দুই দেশের জটিল সমস্যা সমাধানে কূটনীতি এবং আলোচনার শক্তিকে বৃদ্ধি করে।
চুক্তিটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতাকে উন্নীত করেছে। এটি উভয় পক্ষের প্রসারিত বাণিজ্য সম্পর্ক, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহজতর করেছে। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত আদান-প্রদানকে বৃদ্ধি করে, জনগণের মধ্যে সংযোগকে শক্তিশালী করেছে এবং নিজেদের বোঝাপড়াকে উন্নীত করেছে। যার ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি গভীর বন্ধন গড়ে উঠেছে।
দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যাগুলির সমাধানে চুক্তিটি একটি যৌথ সীমানা কমিশন প্রতিষ্ঠা করে যাতে এই বিরোধগুলির শান্তিপূর্ণ সমাধান করা যায় এবং সম্ভাব্য সংঘাত প্রতিরোধ করা যায়। এটি যুদ্ধের পরপরই প্রতিষ্ঠিত হয় বলে দেশ দুটির সীমান্ত সমস্যার সমাধান করে এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
উপসংহার
এ চুক্তিটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থায়ী বন্ধুত্ব এবং শান্তি ও সহযোগিতার জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে রয়ে গেছে। যদিও পরবর্তীতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কিছু আন্তঃসীমান্ত বিবাদ দেখা দেয়, তারপরও ধারণা করা হয় ভারত-বাংলাদেশ এই মৈত্রী চুক্তি দেশ দুটির বর্তমান সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছিল। এই চুক্তি দুটি দেশের মধ্যকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন করে, দেশ দুটির মানুষদের জীবনকে এক সুতায় গেঁথে দিয়েছিল।
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের অন্যতম সাফল্য। চুক্তিটি ছিল অনেকটা ১৯৭১ সালের ভারত সোভিয়েত চুক্তির আদলে। কিন্তু ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তিটি, সংঘাত এবং সংগ্রামের সূচনা থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া দেশ, বাংলাদেশের জন্য কূটনীতি, স্থিতিস্থাপকতা এবং মানবিক চেতনার শক্তির প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। ইতিহাসে খোদাই করা এই চুক্তিটি একটি অঞ্চলের সংঘর্ষ থেকে সহযোগিতা, হতাশা থেকে বন্ধুত্ব এবং বিভাজন থেকে ঐক্যের দিকে যাত্রার কথা বলে।
- https://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Bangla_Treaty_of_Friendship,_Cooperation_and_Peace#:~:text=The%20India%E2%80%93Bangladesh%20Treaty%20of,newly%20established%20state%20of%20Bangladesh.
- http://www.commonlii.org/in/other/treaties/INTSer/1972/6.html
Next to read
শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)


Needs, Wants, Demands (প্রয়োজন, চাওয়া এবং চাহিদা)

CSR বা Corporate Social Responsibility কী?

ইক্যুইটির সংজ্ঞা এবং অর্থ

সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?

সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?

PESTLE বিশ্লেষণ

ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসা

মার্কেটিং এ ৫ সি (5 C's Of Marketing)
