রুট কজ অ্যানালিসিস - Five whys method

457
article image

৫ বার ‘কেনো?’ প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান খুজে বের করাকে রুট কজ অ্যানালিসিস বলে। মূলত রুট কজ অ্যানালিসিসের আরও কিছু পদ্ধতি থাকলেও এই পদ্ধতিটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অন্যসকল পদ্ধতির থেকে এর কার্যকারিতা অনেক বেশি।

Key Points

  • ৫টি ‘কেনো?’ জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে রুট কজ অ্যানালিসিস করে সমস্যার মূল কারণ খুজে বের করার পদ্ধতি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন টয়োটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাকিচি টয়োডা।
  • রুট কজ অ্যানালিসিস হচ্ছে একটি সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি, যা যেকোনো সমস্যার মূল কারণ খুজে বের করতে সাহায্য করে।
  • কিছু ক্ষেত্রে, মূল কারণের গভীরতার উপর নির্ভর করে কম বা বেশি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন হতে পারে।
  • রুট কজ অ্যানালিসিস-এর প্রধান সুবিধা হল এটি সমস্ত অ-পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্লেষণী পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি।
  • সমস্যাটি যদি অনেক জটিল হয় তাহলে অন্যান্য পদ্ধতির পাশিপাশি এটা ব্যবহার করা যাবে।

ভূমিকা

যেকোনো কাজে বা সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিতে পারে, তবে সেই সমস্যাটি যে কোনো গভীরতম সমস্যার উপরের অংশমাত্র তার সম্ভাবনা’ই বেশি। সমস্যাটি দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে শর্টকাট কোনো সমাধান প্রয়োগ করলে সেটি ভবিষ্যতে আবার ফিরে আসবে সেই সম্ভাবনা থেকেই যায়। শুধু উপরের সমস্যাটি সমাধান করা’ই যথেষ্ট নয়, ভবিষ্যতে যেন এমনটি আর না ঘটে তাই মূল সমস্যাটি খুজে বের করতে হবে এবং মূল থেকে সমাধান প্রয়োগ করতে হবে। তবেই কোনো সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।

কোনো সমস্যার মূল কারণ খুজে বের করার কাজে একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হচ্ছে রুট কজ অ্যানালিসিস। তাই আজকের লেখায় আমরা জানব, রুট কজ অ্যানালিসিস কি, কিভাবে ও কখন করতে হয় এবং রুট কজ অ্যানালিসিসের ইতিহাস সম্পর্কে।

রুট কজ অ্যানালিসিস কী?

রুট কজ অ্যানালিসিস হচ্ছে একটি সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি, যা যেকোনো সমস্যার মূল কারণ খুজে বের করতে সাহায্য করে। রুট কজ অ্যানালিসিস-এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল ক্রমাগতভাবে "কেন?" প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করে একটি ত্রুটি বা সমস্যার মূল কারণ নির্ধারণ করা। এখানে '৫' সংখ্যাটি উপাখ্যানমূলক পর্যবেক্ষণ থেকে এসেছে। যার মানে, ‘কেন?’ জিজ্ঞাসা করার পাঁচটি পুনরাবৃত্তিই মূল কারণটি প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট। কিছু ক্ষেত্রে, মূল কারণের গভীরতার উপর নির্ভর করে কম বা বেশি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন হতে পারে।

৫টি প্রশ্ন দিয়ে কীভাবে রুট কজ অ্যানালিসিস করবেন?

একটি সমস্যা নির্ধারণ করুন। সমাধান তৈরির পূর্বশর্ত হচ্ছে সঠিকভাবে সমস্যা নির্ধারণ করা। ভূল সমস্যায় ফোকাস করলে সমাধান বের করে কোনো লাভ হয় না।

নিজেকেই জিজ্ঞাসা করুন যে - “সমস্যাটি কেনো হলো?” এবং প্রথম উত্তরটি কোথাও লিখে ফেলুন।

খেয়াল করলে জানবেন আপনার দেয়া উত্তরটিও আরো একটি সমস্যা এবং এর পেছনে’ও অবশ্যই কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। উত্তর থেকে পাওয়া সমস্যার কারণ খুজে বের করতে আবারো একই প্রশ্ন করুন এবং লিখে ফেলুন।

এভাবেই প্রতিটি উত্তরের বিপরীতে ‘কেনো?’ প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত মূল কারণটি বের না হয়ে আসে।

আপনাকে যে ৫ বারই জিজ্ঞাসা করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনার সমস্যার উপর ডিপেন্ড করে আপনি কখনো ২ বা ৩ বারেই মূল কারণটি খুজে বের করতে পারেন অথবা ৭ বা ৮ বার’ও জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন হতে পারে।

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাক।

মনে করুন, মনে করুন আপনি বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার সময় সিগন্যালে আটকে গিয়েছেন। এতে করে আপনার অফিসে যেতে দেরি হয়েছে। এখন চলুন এটার রুট কজ বের করা যাক।

  • কেনো? - আপনি বাসা থেকে দেরি করে বের হয়েছেন।
  • কেনো? - আপনার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে।
  • কেনো? - ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজেনি।
  • কেনো? - ঘড়ির ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছে।
  • কেনো? - ঘড়ির ব্যাটারি চেক করতে ভুলে গিয়েছিলেন।

৫ বার ‘কেনো?’ জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে আমরা একটি মূল কারণ খুজে পেলাম। যদিও এই কারণটি খুজে বের করতে গিয়ে আরো নতুন কিছু সমস্যার ব্যাপারে আমরা জানতে পারলাম যা দৃষ্টির অগোচরে ছিল। খুশির খবর হচ্ছে, শুধু মূল সমস্যাটি সমাধানের মাধ্যমেই সবগুলো সমস্যা একসাথে সমাধান করে ফেলা যাবে।

সঠিকভাবে রুট কজ অ্যানালিসিস করার জন্য কিছু অ্যাডভাইস

অনেক বেশি প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনি ক্রমাগত প্রশ্ন করতেই থাকেন তবে সম্ভাবনা আছে আপনার হাতে অনেক বেশি পরিমাণে অপ্রয়োজনীয় সমস্যা চলে আসবে, যেগুলো আপনার তাৎক্ষণিক সমাধান করার প্রয়োজন না হতে পারে। তাই ক্রমাগত প্রশ্ন করতে থাকলে আপনার বেশ কিছু সময় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

অনেক সময় আপনি রুট কজ অ্যানালিসিস করে একের অধিক মূল কারণ খুজে পেতে পারেন। অর্গ্যানাইজেশনের ইফেক্টিভিটি বৃদ্ধির লক্ষ্যে চেষ্টা করুন সবগুলো সমস্যা সমাধান করে ফেলার। নইলে দেখা যাবে অন্য সমস্যাগুলো কারণে আপনার একটি সমাধান প্রয়োগ করে বিশেষ লাভ হচ্ছে না।

রুট কজ অ্যানালিসিসের ইতিহাস

৫টি ‘কেনো?’ জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে রুট কজ অ্যানালিসিস করে সমস্যার মূল কারণ খুজে বের করার পদ্ধতি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন টয়োটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাকিচি টয়োডা। শুরুরদিকে এটি টয়োটা মোটর করপোরেশনের প্রায় সবক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো, এমনকি এখনো টয়োটা’র যেকোনো সমস্যা সমাধানে রুট কজ অ্যানালিসিস’কে প্রাধান্য দেয়া হয়। এই পদ্ধতিকে টয়োটার সাইন্টিফিক প্রোডাকশন সিস্টেমের মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।

রুট কজ অ্যানালিসিস কেনো এতো জনপ্রিয়?

বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি হচ্ছে রুট কজ অ্যানালিসিস। এমনিতেই তো এটি এতো জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি! নিশ্চয়ই এর বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে।

  • রুট কজ অ্যানালিসিস-এর প্রধান সুবিধা হল এটি সমস্ত অ-পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্লেষণী পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি।
  • যেকোনো সমস্যার গভীরতম কারণ এটি সহজেই চিহ্নিত এবং উন্মোচিত করতে পারে।
  • এই পদ্ধতি ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ এবং অন্য যেকোনো পদ্ধতি থেকে এটির সাফল্যের হার তুলনামূলক বেশি।

৫ বার ‘কেনো?’ জিজ্ঞাসা করার সুবিধা কী?

  • যেকোনো সমস্যার মূল কারণ খুজে বের করা যায়।
  • কিভাবে একটি নির্দিষ্ট ফ্যাক্টর অনেকগুলো সমস্যার দীর্ঘ সারি তৈরি করে ফেলে তা বোঝা যায়।
  • সমস্যার একাধিক মূল কারণ থেকে থাকলে তাদের ভেতর সম্পর্ক জানা যায়।
  • অন্যান্য জটিলতম পদ্ধতিগুলোর থেকে অনেক বেশি ইফেক্টিভ।

কখন রুট কজ অ্যানালিসিস ব্যবহার করবেন?

  • সমস্যাটি যদি সিম্পল অথবা মিড লেভেলের হয়।
  • সমস্যাটি যদি অনেক জটিল হয় তাহলে অন্যান্য পদ্ধতির পাশিপাশি এটা ব্যবহার করা যাবে।
  • যদি সমস্যাটির সাথে কোনো হিউম্যান ইন্টারেকশনের প্রয়োজন হয়।

পরিসংহার

৫টি প্রশ্নের মাধ্যমে রুট কজ অ্যানালিসিস নিঃসন্দেহে খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। তবে এটির ব্যবহারের সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো সমস্যার লক্ষণ বা ক্যাজুয়াল ফাক্টরের সাথে মূল কারণ মিলিয়ে ফেলা যাবে না এবং অবশ্যই সমাধান নির্ধারণের ক্ষেত্রে তথ্য এবং উপাত্ত’কে গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে মূল সমস্যা এবং আসল সমাধান থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

  • https://kanbanize.com/lean-management/improvement/5-whys-analysis-tool
  • https://www.isixsigma.com/tools-templates/cause-effect/determine-root-cause-5-whys/
  • https://tulip.co/glossary/five-whys/
  • সাকিচি টয়োডা
  • https://www.toyota-industries.com/company/history/toyoda_sakichi/
Next to read
Business
বি-টু-বি, বি-টু-সি এবং বি-টু-জি কি? (B-to-B, B-to-C, B-to-G)
বি-টু-বি, বি-টু-সি এবং বি-টু-জি কি? (B-to-B, B-to-C, B-to-G)

বি -টু- বি অর্থ হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে ব্যবসা হয়ে থাকে আর বি- টু- সি হচ্ছে যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তার মধ্যে সরাসরি পণ্য অথবা কোন সেবার আদান প্রদান হয় এবং বি- টু- জি মানে হচ্ছে যখন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ও সরকার বা কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যবসায়িক কোন লেন দেন হয় ।

লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)
Logo
লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
Business
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?
Sales
সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?
ব্রেটন উডস এগ্রিমেন্ট
Agreement
ব্রেটন উডস এগ্রিমেন্ট
World Trade Organization (WTO) Agreements
Agreement
World Trade Organization (WTO) Agreements
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল
Investment
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল
মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স (Multi Vendor E-commerce)
E-Commerce
মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স (Multi Vendor E-commerce)
কনভার্সন রেট অপটিমাইজেশন (Conversion Rate Optimization)
Digital Marketing
কনভার্সন রেট অপটিমাইজেশন (Conversion Rate Optimization)
ব্যাংক লোন কিভাবে কাজ করে
Banking
ব্যাংক লোন কিভাবে কাজ করে