বাংলাদেশ ব্যাংক

494
article image

বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে। বর্তমানে বাংলাদেশের নোট ইস্যু করা, মনিটারি পলিসি তৈরি করা, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা, ব্যাংকিং সেক্টর রেগুলেট করা ইত্যাদি দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর।

Key Points

  • রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  • বাংলাদেশের নোট বা মুদ্রা ছাপানোর ও রেগুলেট করার দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর
  • সুদের হার ও অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ভোগ্যপণ্যের মূল্যের স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের কাজ করে থাকে
  • সকল ধরণের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে তা এনশিওর করা’ই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ।

বাংলাদেশ ব্যাংক

যেকোনো দেশের অর্থব্যবস্থার মেরুদণ্ড হচ্ছে ঐ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যার কাছে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষমতা থাকে। বাংলাদেশে এই দায়িত্ব অর্পিত আছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’র উপর, অর্থাৎ, বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাবতীয় সকল দায়িত্ব পালন করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজকের লেখায় আমরা সংক্ষেপে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে জানবো।

প্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে অনেকটাই জড়িত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বড় ট্রান্সফরম্যাশন দরকার ছিল, আবার এমন একটি প্রতিষ্ঠান দরকার ছিল যার হাতে এই কাজটি করার পূর্ণ ক্ষমতা এবং দায়িত্ব থাকবে। এই দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ছিল বেশ নড়বড়ে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার সময়টি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি বড় ছাতার নিচে গুছিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়। সেই থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব ও কার্যক্রম

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু ধরণের কাজ করে থাকে। তবে মূল দায়িত্বগুলো হচ্ছে -

১। নোট ইস্যুঃ

বাংলাদেশের নোট বা মুদ্রা ছাপানোর ও রেগুলেট করার দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর। বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশী টাকার সিকিউরিটি ও ইন্টিগ্রিটি’ও এনশিওর করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশী টাকার অবাধ সার্কুলেশনের কাজ’ও বাংলাদেশ ব্যাংক করে থাকে। এতে করে বাংলাদেশ ব্যাংক এনশিওর করে যে অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ নোটের উপস্থিতি আছে।

ব্যাংক নোট ডিজাইনের কাজটি মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক নোটগুলো এমনভাবে ডিজাইন করে যাতে করে বিভিন্ন সিকিউরিটি ফিচার নোটে যোগ করা যায়, যেমন - ওয়াটারমার্ক, সিকিউরিটি থ্রেড, হলোগ্রাম, প্যাটার্ন ইত্যাদি।

ব্যাংক নোট প্রিন্ট করার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কঠোরভাবে কোয়ালিটি কন্ট্রোল করে থাকে। এর মাঝে পেপার কোয়ালিটি, প্রিন্টিং অ্যাকুরেসি ও সিকিউরিটি ফিচার ঠিকভাবে যোগ করা হচ্ছে কি না তা বার বার চেক করা হয়।

প্রিন্ট করার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি নোটের একটি সিরিয়াল নাম্বার অ্যাসাইন করে। এর মাধ্যমে মার্কেটে প্রতিটি নোটকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আইডেন্টিফাই করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু সময় পর পর মার্কেট থেকে নষ্ট বা ছেড়া নোটগুলো তুলে নেয়। এতে করে মার্কেটে অ্যাভেইলএবল থাকা টাকার কোয়ালিটি মেইনটেইন করা সম্ভব হয়। পুরনো নোটগুলো পরবর্তীতে ধ্বংস করে ফেলা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক আঈন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করে দেশের অভ্যন্তরে নোট জালিয়াতির মতো ঘটনাগুলো মনিটর করে ও এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

২। মনিটারি পলিসি তৈরি করাঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের মুদ্রানীতি তৈরি ও বাস্তবায়ন করা। সুদের হার ও অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ভোগ্যপণ্যের মূল্যের স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের কাজ করে থাকে।

প্রথমেই বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব রিসার্চ ও বিভিন্ন সোর্স থেকে ডেটা কালেক্ট করে। এই ডেটার মূল অংশ হচ্ছে বিভিন্ন ইকোনমিক ইন্ডিকেটর ও প্রেডিকশন যেমন - মুদ্রাস্ফীতির হার, জিডিপি গ্রোথ রেইট, মানি সাপ্লাই, সুদের হার, এক্সচেঞ্জ রেইট এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা তৈরি ফরকাস্ট।

তারপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ও অ্যানালিস্টরা মিলে সকল ডেটা অ্যানালাইজ করে বোঝার চেষ্টা করেন যে কি কি সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যাবে।

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন মনিটারি টুল যেমন - সুদের হার, রিজার্ভ রেশিও এবং ওপেন মার্কেট অপারেশনসের মাধ্যমে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন শুরু করে।

৩। ব্যাংকিং সেক্টর রেগুলেট করাঃ

বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের রেগুলেটরি অথোরিটি হিসেবে কাজ করে। সকল ধরণের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে তা এনশিওর করা’ই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ।

দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট হতে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়। লাইসেন্স গ্রহণ করার পর থেকে ব্যাংকগুলো সর্বদা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারির আওতায় থাকে।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোর জন্য বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করে থাকে। সম্পদের পর্যাপ্ততা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, সম্পদের মান, তারল্যের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় এই সকল নীতির আওতাভুক্ত।

যেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা তৈরি নীতি অনুসরণ করে না বা নিয়ম ভঙ্গ করে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জরিমানা করার অথবা লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।

৪। ফরেন রিজার্ভ মেইনটেইন করাঃ

ফরেন রিজার্ভ মেইনটেইন করা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ফরেন রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা থাকে এবং এই রিজার্ভকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত পলিসি তৈরি করে থাকে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালিয়ে যেতে এই কাজের কোনো বিকল্প নেই।

সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সব কাজকে পুশ করার চেষ্টা করে, যেগুলোর মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং এমন সব কাজকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে যেগুলোর মাধ্যমে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বহিঃপ্রবাহ হ্রাস পায়।

৫। ইকোনমিক রিসার্চ ও ডেটা অ্যানালিসিসঃ

ভবিষ্যতে অর্থনীতির কি অবস্থা হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংক ডেটা অ্যানালিসিসের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করে এবং সেই অনুসারে আগে থেকেই কার্যক্রম গ্রহণ করে।

এইসব রিসার্চ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ইকোনমিক ইন্ডিকেটর যেমন - ইনফ্লেশন রেইট, জিডিপি গ্রোথ রেইট, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে। এসব তথ্য ব্যবহার করে আবার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।

৬। পেমেন্ট সিস্টেমের রেগুলেশনঃ

বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে করা সকল ধরনের পেমেন্ট নজরদারিতে রাখে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে যাতে নিরাপদে লেনদেন করা যায় এবং দেশের বাইরে অর্থ পাচার রোধ করা যায়।

আবার বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক ও নন-ব্যাংক প্রতিষ্ঠান, যারা পেমেন্ট সার্ভিস বা প্লাটফর্ম প্রোভাইড করে, তাদেরকে রেগুলেট করে। এতে করে বাংলাদেশ ব্যাংক এনশিওর করে যে তারা সকল নিয়ম-কানুন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

৭। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করাঃ

অনেকসময় বাংলাদেশ ব্যাংক’কে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে’ও কাজ করতে হতে পারে। এটা হতে পারে অবকাঠামো তৈরিতে সরকারকে ঋণ হিসেবে অর্থ প্রদান বা অন্য কোনো সুবিধা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের প্রতিনিধি হিসেবেই মনিটারি পলিসি তৈরি ও বাস্তবায়ন করে। প্রথমে সরকার লং-টার্ম ইকোনমিক অবজেক্টিভগুলো নির্ধারণ করে দেয়, এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক সেই অনুযায়ী বিভিন্ন পলিসি তৈরি ও ইমপ্লিমেন্ট করে। এর ভেতর সুদের হার, অর্থের সরবরাহ, ভোগ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত।

সরকারের হয়ে বিভিন্ন লেনদেন সম্পন্ন করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ফিসকাল এজেন্ট হিসেবে’ও কাজ করে। সরকারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করা, ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু ও ম্যানেজ করা, সরকারের হয়ে বিভিন্ন পেমেন্ট প্রসেস করে দেয়া ইত্যাদি এই কাজের অন্তর্ভুক্ত।

সরকারের ঋণের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করার দায়িত্ব’ও থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। সরকার যেসব ট্রেজারি বন্ড ও বিল ইস্যু করে তার সুদ প্রদান ও রিপেমেন্টের কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে।

৮। অর্থ পাচার রোধ করাঃ

বাংলাদেশের বাইরে অর্থ পাচার রোধের দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর। নিয়মকানুনে বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আসা এবং সকল লেনদেনে নজরদারি করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থ পাচার রোধ করার চেষ্টা করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এনশিওর করে যে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের থেকে সঠিকভাবে KYC ফর্ম পূরণ করিয়ে নিচ্ছে। এর মাঝে গ্রাহকদের পরিচয় যাচাই করা, প্রয়োজনীয় তথ্য কালেক্ট করা এবং প্রতি গ্রাহকদের সাথে জড়িত ঝুঁকি ক্যালকুলেট করা অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোর্স করে যাতে তারা নিয়মিত তাদের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করে। এতে করে কোনো সন্দেহজনক লেনদেন চোখে পরলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনা যেহেতু বেশ কঠিন হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফেরত আনা’ই যায় না তাই এইক্ষেত্রে যতো দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় ততো ভালো।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন - ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)’র সাথে কো-অপারেট করে যাতে করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের পদক্ষেপগুলোকে আরো ইফেক্টিভ করে তোলা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা

সারা বাংলাদেশ জুড়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি শাখা রয়েছে। যথা -

  • মতিঝিল
  • সদরঘাট
  • চট্টগ্রাম
  • খুলনা
  • বগুড়া
  • রাজশাহী
  • সিলেট
  • বরিশাল
  • রংপুর
  • ময়মনসিংহ

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১২ জন ব্যাক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিচে তাদের তালিকা দেয়া হলো -

নাম এবং কার্যকাল

  • জনাব আব্দুর রউফ তালুকদার --- জুলাই ১২, ২০২২ - বর্তমান
  • জনাব ফজলে কবির --- মার্চ ২০, ২০১৬ - জুলাই ৩, ২০২২
  • জনাব ড. আতিউর রহমান --- মে ১, ২০০৯ - মার্চ ১৫, ২০১৬
  • জনাব ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ --- মে ১, ২০০৫ - এপ্রিল ৩০, ২০০৯
  • জনাব ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ --- নভেম্বর ২৯, ২০০১ - এপ্রিল ৩০, ২০০৫
  • জনাব ড. মোহাম্মদ ফরাশউদ্দিন --- নভেম্বর ২৪, ১৯৯৮ - নভেম্বর ২২, ২০০১
  • জনাব লুতফর রহমান সরকার --- নভেম্বর ২১, ১৯৯৬ - নভেম্বর ২১, ১৯৯৮
  • জনাব খোরশেদ আলম --- ডিসেম্বর ২০, ১৯৯২ - নভেম্বর ২১, ১৯৯৬
  • জনাব শেগুফতা বখত চৌধুরী --- এপ্রিল ১২, ১৯৮৭ - ডিসেম্বর ১৯, ১৯৯২
  • জনাব এম. নুরুল ইসলাম --- জুলাই ১৩, ১৯৭৬ - এপ্রিল ১২, ১৯৮৭
  • জনাব এ.কে.এন আহমেদ --- নভেম্বর ১৯, ১৯৭৪ - জুলাই ১৩, ১৯৭৬
  • জনাব এ.এন. হামিদুল্লাহ --- জানুয়ারি ১৮, ১৯৭২ - নভেম্বর ১৮, ১৯৭৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছিল। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা যেখানে সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮১ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। ২০১৬ সালের এই ঘটনা সম্পর্কে আমরা সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করবো।

১। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কিছু সাইবার ক্রিমিনাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে বেশ অর্গানাইজড একটি সাইবার অ্যাটাক পরিচালনা করে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে অ্যাক্সেস পেতে ম্যালওয়্যার ব্যবহার করেছিল।

২। একবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে প্রবেশ করার পর সাইবার ক্রিমিনালরা বেশ বড় অ্যামাউন্টের টাকা নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করার চেষ্টা করে। ফেডারেল রিজার্ভ থেকে তারা শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকাগুলো নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

৩। টাকার পরিমাণ বেশ বড় হওয়ায় এবং বেনেফিশিয়ারি অ্যাকাউন্টের তথ্যে তারতম্য থাকায় বেশ কিছু ট্রান্সফার রিকুয়েস্ট অটোমেটিকালি রিজেক্ট করা হয়।

৪। তবে সিস্টেম যেহেতু অটোমেটেড ছিল, তাই তারা বেশ কিছু টাকা সফলভাবে ট্রান্সফার করে ফেলে। টাকার অংকে এই পরিমাণ ছিল প্রায় ৮১ মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ ফিলিপাইনের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়। সাইবার ক্রিমিনালরা সিকিউরিটি সিস্টেমের বিভিন্ন দুর্বলতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এমনভাবে ট্রান্সফার রিকুয়েস্টগুলো সাজায়, যেন দেখেই মনে হয় যে এই রিকুয়েস্টগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা’ই করা।

৫। তবে একটি ট্রান্সফার রিকুয়েস্টের রাউটিং নাম্বারে ভুল থাকায় তা ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের মনে সন্দেহ জাগায়। এরপর বাকি ট্রান্সফার রিকুয়েস্টগুলো রিজেক্ট করা হয়।

৬। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিষয়ে তদন্ত করা শুরু করে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য গ্রহণ করে। অভিযান পরিচালনা করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক হারানো টাকার কিছু পরিমাণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বরং পুরো বিশ্বের সাইবার চুরির ঘটনাগুলোর মাঝে অন্যতম। এতে করে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের দুর্বলতাগুলো সবার সামনে চলে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা এড়ানোর জন্য আরো ভালো সিকিউরিটি সিস্টেম এবং প্রোটোকল ব্যবহার করা শুরু করে।

পরিসংহার

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি কোন দিকে যাবে এবং ভবিষ্যতে কীভাবে দেশের অর্থের চাহিদা পূরণ করা হবে তা এই ব্যাংক দ্বারাই নির্ধারিত হয়।

  • https://www.bb.org.bd/en/index.php/about/index#
  • https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Bank
  • https://en.banglapedia.org/index.php/Bangladesh_Bank
  • https://oikosmist.com/bangladesh-bank/
Next to read
Canvas & Methods
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)

ইম্প্যাথি ম্যাপিং মূলত একধরনের ট্যুলস। এটি গ্রাহকদের ভাবনা-চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, অনুভব, উপলব্ধি সহ নানাবিধ তথ্য, উপাত্ত এর সমন্বয়ে গঠিত সুশৃঙ্খল এবং সুবিন্যস্ত একটি চার্ট। উল্লেখিত বিষয় সমূহ সম্পর্কিত তথ্য উপাত্তের খুব চমৎকার একটা ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন পাওয়া যায় এই ইম্প্যাথি ম্যাপিং এর মাধ্যমে। যা মূলত আপনার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহককে ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করে।

লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)
Canvas & Methods
লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)
শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)
Business Models
শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ
Marketing
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ
সারোগেট মার্কেটিং (SURROGATE MARKETING)
Marketing
সারোগেট মার্কেটিং (SURROGATE MARKETING)
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
Business
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
ইক্যুইটির সংজ্ঞা এবং অর্থ
Business
ইক্যুইটির সংজ্ঞা এবং অর্থ
বিজনেস অ্যানালিসিস কী, কেনো, কীভাবে করবেন?
Analysis
বিজনেস অ্যানালিসিস কী, কেনো, কীভাবে করবেন?
হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি (What is Accounting)
Accounting
হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি (What is Accounting)
Startup funding Pre-seed to series A, B, C brief discussion
Investment
Startup funding Pre-seed to series A, B, C brief discussion