ব্যাংক লোন কিভাবে কাজ করে

কোনো কিছু বন্ধক রেখে বা বন্ধক ছাড়াই যখন ব্যাংক আমাদের অ্যাকাউন্টে জমানো টাকার অতিরিক্ত অর্থ আমাদের প্রদান করে, তখন তাকে ব্যাংক লোন বলা হয়। সাধারণত, ব্যক্তিগত কোনো প্রয়োজনে বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য ব্যাংক লোন নেয়া হয়ে থাকে। লোনের মেয়াদ শেষ হলে সুদ’সহ লোনের সম্পূর্ণ অর্থ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হয়। আর লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে দিতে হয় জরিমানা।
Key Points
- হোম লোন হচ্ছে বিশেষায়িত লোনের একটি ধরণ যেখানে কোনো ব্যাক্তিকে বাড়ি ক্রয় বা তৈরি করার উদ্দেশ্যে লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।
- লোন পরিশোধের সময় আসল টাকার সাথে যেই অতিরিক্ত অর্থ আপনাকে পরিশোধ করতে হয় সেটাই হচ্ছে সুদ এবং আসল টাকার উপর যেই হারে সুদ ধার্য করা হয় সেটাই হচ্ছে সুদের হার।
- ব্যাংক লোন পেতে চাইলে সাধারণত ইনকাম স্টেট্মেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি ডকুমেন্ট ব্যাংকে জমা দিতে হয়।
- আপনি যদি ব্যাংকের থেকে লোন নিয়ে গাড়ি বা বাড়ি ক্রয় করে থাকেন এবং পরবর্তীতে উক্ত লোন পরিশোধে ব্যর্থ হোন, তাহলে ব্যাংক আপনার উক্ত গাড়ি বা বাড়ি বিক্রয় করার মাধ্যমে লোনের টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টা করবে।
ব্যাংক লোন কিভাবে কাজ করে
ফাইন্যান্সের জগতে ব্যাংক লোন হচ্ছে এমন একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট, যেখানে একটি ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন একটি ব্যাংক, কোনো নির্দিষ্ট ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে। লোন প্রদানের শর্ত হিসেবে থাকে যে লোনের অ্যামাউন্ট নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ’সহ পরিশোধ করতে হবে। নিজের ফাইন্যান্সিয়াল গোল অ্যাচিভ করতে চাইলে ব্যাংক লোন সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা থাকা প্রয়োজন, বিশেষ করে যেহেতু এখন প্রায় সকলকেই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ব্যাংক লোন গ্রহণ করতে হয়।
ব্যাংক লোন সম্পর্কে একটি ক্লিয়ার ধারণা রাখার মাধ্যমে আপনি আরো ডেটা-ড্রিভেন ও ইফেক্টিভ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন এবং ভবিষ্যৎ আর্থিক ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারবেন। তাই ব্যাংক লোন কিভাবে কাজ করে, এই সম্বন্ধে আমরা আজ বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
বিভিন্ন ধরণের ব্যাংক লোন
গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমান ব্যাংকগুলো অনেক ধরণের ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে। প্রতিটি লোনের বৈশিষ্ট্য সাধারণত আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। আমরা ব্যাংক লোনের প্রধান প্রকারগুলো সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করবো।
১। পারসোনাল লোন
লোন পরিশোধের সক্ষমতা আছে এমন ব্যাক্তিদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পারসোনাল লোন প্রদান করা হয়ে থাকে। এইসব লোনের মেয়াদকাল ও পরিমাণ সাধারণত কম হয় এবং লোনের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হয়। বিভিন্ন কাজে পারসোনাল লোন ব্যবহার করা যায়, যেমন - ঋণ পরিশোধ, অপ্রত্যাশিত ব্যয় মেটানো, ভ্রমণ ইত্যাদি।
২। হোম লোন
হোম লোন হচ্ছে বিশেষায়িত লোনের একটি ধরণ যেখানে কোনো ব্যাক্তিকে বাড়ি ক্রয় বা তৈরি করার উদ্দেশ্যে লোন প্রদান করা হয়ে থাকে। হোম লোনের বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তির লোন পরিশোধ করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এই লোনের মেয়াদকাল বা ম্যাচুরিটি এবং সুদের হার উভয়ই অনেক বেশি হয়। আবার কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা নিজের কর্মস্থল থেকে হোম লোন নিতে পারলে সাধারণত কম বা একেবারে কোনো সুদ ছাড়াই হোম লোন পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেশে হোম লোনকে ‘মর্টগেজ লোন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
৩। অটো লোন
সাধারণত গাড়ি বা অন্য কোনো যানবাহন ক্রয় করার উদ্দেশ্যে এই ধরণের লোন প্রদান করা হয়ে থাকে। চাইলে কোনো বিশেষায়িত ব্যাংক অথবা ক্রেডিট ইউনিয়ন থেকে অটো লোন গ্রহণ করা যায়। তবে লোনের মেয়াদকাল ও বাহনের মূল্যের উপর নির্ভর করে সুদের হার কম-বেশি হয়ে থাকে।
৪। বিজনেস লোন
সাধারণত কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও সম্প্রসারণ করার উদ্দেশ্যে ব্যাংক হতে এই লোন গ্রহণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের লোন পরিশোধের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে তারা চাইলে ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে এই লোনকে কাস্টমাইজ করে নিতে পারে।
৫। স্টুডেন্ট লোন
বাংলাদেশে এই ধরণের লোন বিশেষ দেখা না গেলেও, বিভিন্ন উন্নত দেশ, যেখানে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি, সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়াশোনা চালানোর জন্য এই ধরণের লোন গ্রহণ করতে পারেন। তবে অবশ্যই এখানে শির্ক্ষার্থীর বাবা-মা বা অন্য কোনো গার্ডিয়ান ইন্টারমিডিয়ারি হিসেবে কাজ করেন। পড়াশোনা শেষ করে কর্মস্থলে জয়েন করার পর থেকে শিক্ষার্থীরা এই লোন পরিশোধ করা শুরু করেন। বাইরে পড়াশোনা প্রত্যাশী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীগণ ব্যাংক ব্যালেন্স দেখানোর জন্য এই লোন গ্রহণ করে থাকে।
৬। বন্ধকী ঋণ
নাম থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এই লোন নিতে চাইলে ব্যাংকের কাছে মূল্যবান কোনো কিছু বন্ধক হিসেবে রাখতে হয়। বন্ধককৃত জিনিসের বাজার মূল্য লোনের পরিমাণের সমান বা তার থেকে বেশি হতে হয়। কোনো কারণে যদি আপনি লোন পরিশোধে ব্যর্থ হোন, তখন ব্যাংক উক্ত জিনিস বিক্রয় করার মাধ্যমে লোনের টাকা উঠিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। হোম লোন এবং অটো লোন’ও এক প্রকার বন্ধকী ঋণ।
কারণ, আপনি ব্যাংকের থেকে লোন নিয়ে বাহন বা বাড়ি ক্রয় করলে, আপনি লোনের টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত উক্ত জিনিসের মালিকানা ব্যাংকের নামে থাকে।
ব্যাংক লোনের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকার এগুলোই। তবে অনেক ব্যাংক পারসোনালাইজড বা কাস্টমাইজড লোন অফার করে থাকে। আপনার কোনো কাজে ব্যাংক লোন প্রয়োজন হলে আপনার পরিচিত কোনো ব্যাংকে গিয়ে কথা বলে দেখতে পারেন যে উক্ত কাজের জন্য তারা কোন ধরণের লোন অফার করছেন।
ব্যাংক লোনের সাথে জড়িত বিভিন্ন এলিমেন্ট
ব্যাংক লোন পেতে চাইলে আগে ব্যাংক লোনের বিভিন্ন এলিমেন্ট সম্পর্কে জেনে নেয়া দরকার।
১। প্রিন্সিপাল বা আসলঃ
ব্যাংক আপনাকে যে পরিমাণ অর্থ লোন হিসেবে প্রদান করছে সেটাই হচ্ছে প্রিন্সিপাল বা আসল। লোন কার্যকর হওয়ার পর এই অ্যামাউন্টের উপরেই সুদ ধার্য করা শুরু হয়।
২। টার্ম বা মেয়াদঃ
টার্ম বলতে সাধারণত লোনের মেয়াদকাল বোঝানো হয়। লোন কার্যকর হওয়ার পর থেকে তা সম্পূর্ণ পরিশোধ করার সময় পর্যন্ত লোনের মেয়াদকাল হিসেবে ধরা হয়।
৩। সুদের হারঃ
লোন পরিশোধের সময় আসল টাকার সাথে যেই অতিরিক্ত অর্থ আপনাকে পরিশোধ করতে হয় সেটাই হচ্ছে সুদ এবং আসল টাকার উপর যেই হারে সুদ ধার্য করা হয় সেটাই হচ্ছে সুদের হার।
ধরে নিন, আপনি ১০০ টাকা লোন নিয়ে ১ বছর পর ১১০ টাকা ব্যাংককে ফেরত দিলেন। এইক্ষেত্রে ১০০ টাকা হচ্ছে আসল, ১ বছর হচ্ছে লোনের মেয়াদ, ১০ টাকা হচ্ছে সুদ এবং সুদের হার হচ্ছে ১০%।
ব্যাংক লোনের সাথে জড়িত বিভিন্ন খরচ
ব্যাংক লোনের সাথে জড়িত খরচগুলো জানার মাধ্যমে আপনি আরো সহজে অনুমান করতে পারবেন যে লোন পেতে এবং পরিশোধ করতে আপনাকে ঠিক কতো টাকা খরচ করতে হতে পারে।
১। সুদ খরচঃ
লোন পাওয়ার পর তা পরিশোধ করার সময় আসল টাকার সাথে যেই অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হয় সেটাই হচ্ছে সুদ।
২। অ্যাপ্লিকেশন ফিঃ
কিছু ব্যাংক লোনের যাচাই-বাছাই শুরু করার আগে অ্যাপ্লিকেশন ফি হিসেবে কিছু টাকা চার্জ করে থাকে।
৩। প্রসেসিং ফিঃ
ব্যাংক লোন যাচাই-বাছাই করার জন্য এই ধরণের ফি চার্জ করে থাকে। সাধারণত বার্ষিক কিস্তির সাথে এই টাকা যোগ করা থাকে।
৪। বার্ষিক ফিঃ
এই ক্ষেত্রে লোন সুবিধা পাওয়ার জন্য ব্যাংককে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ প্রদান করতে হয়। বিশেষ করে, ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে এই ধরণের চার্জ দেখা যায়।
৫। লেইট ফিঃ
লোনের কোনো কিস্তি পরিশোধে দেরি করলে জরিমানা হিসেবে এই অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
৬। প্রি-পেমেন্ট ফিঃ
লোনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি কেউ লোনের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে দিতে চায়, তখন কিছু ব্যাংক এই ফি চার্জ করে।
ব্যাংক যেভাবে লোনের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে
আমরা জানি যে ব্যাংক কখনো নিজের টাকায় ব্যবসা করে না। ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করার পর সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের থেকে ডিপোজিট হিসেবে অর্থ কালেক্ট করে। তারপর সেই ডিপোজিটের একটি নির্দিষ্ট অংশ রিজার্ভ হিসেবে রেখে বাকি অংশ ব্যাংক তার গ্রাহকদের লোন হিসেবে প্রদান করে।
এই লোন প্রদানের বিপরীতে ব্যাংক তার গ্রাহকদের থেকে বিভিন্ন হারে সুদ গ্রহণ করে। গ্রাহকদের থেকে পাওয়া সুদ’ই হচ্ছে ব্যাংকের আয়ের মূল উৎস। তবে সুদ ছাড়া’ও ব্যাংক আরো কিছু উপায়ে লোন থেকে মুনাফা আয় করে।
১। সুদ আয় -
ব্যাংক মূলত সুদের মাধ্যমে লোন থেকে মুনাফা অর্জন করে। যখন ব্যাংক কাউকে লোন দেয়, তখন লোনের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে সুদ গ্রহণ করে। লোন থেকে কালেক্ট করে সুদের হার সাধারণত ডিপোজিটের বিপরীতে প্রদান করা সুদের হারের চাইতে বেশি হয়ে থাকে। দুই সুদের হারের পার্থক্য’ই হচ্ছে ব্যাংকের মুনাফা। উদাহরণস্বরুপ, কোনো ব্যাংক যদি ডিপোজিটের বিপরীতে ২% সুদ অফার করে, তাহলে সেই ব্যাংক লোনের বিপরীতে ৫% সুদ চার্জ করে থাকে। দুই সুদের হারের পার্থক্য, অর্থাৎ, ৩% হচ্ছে ব্যাংকের জন্য মুনাফা।
২। লোন অরিজিনেশন ফি -
বিভিন্ন ব্যাংক লোন দেয়ার সময় অরিজিনেশন ফি চার্জ করে থাকে। এই ফি’র পরিমাণ সাধারণত লোনের অ্যামাউন্টের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। লোনের অ্যাপ্লিকেশন কালেক্ট করা, যাচাই-বাছাই করা ও প্রসেস করার খরচ ব্যাংক এই ফি’র মাধ্যমে বহন করে। এই লোন অরিজিনেশন ফি ব্যাংকের জন্য একটি অতিরিক্ত আয়ের উপায় হিসেবে কাজ করে।
৩। লেইট পেমেন্ট ফি -
ঋণগ্রহিতারা কোনো কিস্তি পরিশোধের তারিখ মিস করলে ব্যাংক তাদের থেকে জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত ফি কালেক্ট করে। এই ফি ব্যাংকের জন্য আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে।
৪। প্রি-পেমেন্ট পেনাল্টি -
কিছু স্পেসিফিক লোনের ক্ষেত্রে (যেমন - মর্টজেগ লোন) ব্যাংককে যদি লোনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হয়, তাহলে ব্যাংক কিছু অতিরিক্ত ফি কালেক্ট করে। লোনটি যদি আরো দেরিতে পরিশোধ করা হতো, তাহলে ব্যাংক বেশি সুদ পেতো। আগে পেমেন্ট করার কারণে ব্যাংক যেহেতু সেই সুদটি পাচ্ছে না, তাই জরিমানা হিসেবে এই ফি কালেক্ট করে নেয়।
৫। ক্রস-সেলিং -
গ্রাহকরা যখন ব্যাংকের থেকে লোন নেয়, তখন তারা ব্যাংকের ইকোসিস্টেমের সাথে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে পরে। এই সুযোগ ব্যবহার করে ব্যাংক তার ঋণগ্রহিতাদের কাছে ব্যাংকের অন্যান্য সার্ভিসগুলো’ও সেল করার চেষ্টা করে, যেমন - ক্রেডিট কার্ড, বিমা ইত্যাদি।
লোন অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস
ব্যাংক লোন পেতে চাইলে একটি সিস্টেমেটিক ওয়ে’তে অ্যাপ্লিকেশন করতে হয়। তবে ব্যাংকভেদে ও লোনের ধরণভেদে আবেদনের প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন থাকতে পারে।
১। প্রিপারেশন
ব্যাংক লোনের জন্য অ্যাপ্লাই করার আগে প্রিপারেশন নিতে হয়। এই অংশে আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় -
ইনকাম স্টেট্মেন্ট।
ট্যাক্স রিটার্ন।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি।
আবার যেই পরিমাণ অর্থ আপনি লোন হিসেবে গ্রহণ করতে চাইছেন, তা সময়মতো পরিশোধ করার সক্ষমতা আপনার আছে কি না তা’ও আগেই ভেবে দেখতে হবে।
২। অ্যাপ্লিকেশন
এই স্টেজে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিয়ে ব্যাংককে আপনার লোনের সম্পর্কে জানাতে হবে। ব্যাংকের সাথে আলোচনা করার পর ব্যাংক আপনাকে লোন দেয়া যায় কি না তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে।
উন্নত দেশ যেমন - আমেরিকায় ক্রেডিট স্কোর চেক করে লোন গ্রহণের যোগ্যতা যাচাই বাছাই করা হয়। তবে বাংলাদেশে কোনো ক্রেডিট স্কোরিং সিটেম নেই। তাই ব্যাংক আপনার অতীতের ব্যাংক স্টেট্মেন্ট, মাসিক আয় ও পূর্বে কোনো লোন গ্রহণ করে থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে আপনার লোন গ্রহণের যোগ্যতা ডিটারমাইন করবে।
৩। অ্যাপ্রুভাল
আপনি যদি লোন গ্রহণের যোগ্য হয়ে থাকেন, তাহলে ব্যাংক এই স্টেজে আপনার লোনের শর্তাবলি, মেয়াদ, সুদের হার ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত করে লোন প্রদান করবে। আবার কোনো কারণে যদি আপনি রিজেক্টেড হোন, তাহলে সেই কারণ জানিয়ে আপনাকে ভবিষ্যতে তা ঠিক করে আবার অ্যাপ্লাই করতে বলবে।
ব্যাংক লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে কী হয়?
যেভাবেই হোক, ব্যাংক লোনের রিপেমেন্ট কখনো মিস করা যাবে না। এমন কি সময়ের মাঝে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলেও আপনাকে অতিরিক্ত ঝামেলা এবং অতিরিক্ত চার্জের সম্মুখীন হতে হবে। আবার একবার পেমেন্ট মিস হয়ে গেলে, তা রিকভার করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
আবার ব্যাংকের লোন পরিশোধে যতো বেশি সময় লাগে, সুদের হার ততোই বাড়তে থাকে। এতে করে ব্যাংকের কোনো সমস্যা হয় না, কারণ সুদের হার বেড়ে যাওয়া মানেই ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে যাওয়া।
আর আপনি যদি ব্যাংকের থেকে লোন নিয়ে গাড়ি বা বাড়ি ক্রয় করে থাকেন এবং পরবর্তীতে উক্ত লোন পরিশোধে ব্যর্থ হোন, তাহলে ব্যাংক আপনার উক্ত গাড়ি বা বাড়ি বিক্রয় করার মাধ্যমে লোনের টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টা করবে।
আবার একবার ব্যাংক লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে আপনাকে পরবর্তীতে লোন পেতে সমস্যা ফেইস করতে হবে। এমন কি আপনি পরবর্তীতে আর কখনো লোন না’ও পেতে পারেন।
পরিসংহার
পারসোনাল ফাইন্যান্স ও বিজনেস ফাইন্যান্স উভয় ক্ষেত্রেই ভালো করার জন্য ব্যাংক লোনের একটি স্বচ্ছ ধারণা রাখা প্রয়োজন। অনেকসময় ঋণের প্রকার ও শর্তগুলো ঠিকভাবে বুঝতে না পারার কারণে মানুষকে বিপদে পরে যেতে হয়। তবে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে ব্যাংক লোন হতে পারে আপনার স্বপ্নগুলো বাস্তবে রুপ দেয়ার শক্তিশালী হাতিয়ার। তবে অবশ্যই লোন গ্রহণ ও তা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাবধানতা ও বুদ্ধিমত্তা অবলম্বন করতে হবে।
- https://www.chime.com/blog/what-are-bank-loans-and-how-do-they-work/
- https://www.forbes.com/advisor/personal-loans/how-do-bank-loans-work/
- https://www.investopedia.com/terms/l/loan.asp
- https://www.hsbc.co.uk/loans/loans-explained/
- https://www.tescobank.com/guides/borrowing/things-to-know-before-taking-out-a-loan/
- https://suitsmecard.com/blog/the-basics-of-borrowing-how-do-bank-loans-work
Next to read
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)


কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)

মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)

Needs, Wants, Demands (প্রয়োজন, চাওয়া এবং চাহিদা)

লোগো ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা (Pros and Cons of Logo Usage)

লোগোর উদাহরন (Example of Logos)

CSR বা Corporate Social Responsibility কী?

ব্রান্ডিং (Branding)

সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
