কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝে পার্থক্য কী?

590
article image

কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝে মূল পার্থক্য হচ্ছে এই যে, কমার্শিয়াল ব্যাংক সাধারণ মানুষদের সার্ভিস প্রদান করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার অধীনে থাকা অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে সার্ভিস প্রদান করে। অন্যান্য ব্যাংকের কার্যক্রম দেখাশোনার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি তৈরি করে, ফরেন রিজার্ভ মেইনটেইন করে, নোট ইস্যু করে, সরকারকে রিপ্রেজেন্ট করে। এসব কার্যক্রম কোনো কমার্শিয়াল ব্যাংক পালন করে না।

Key Points

  • বাংলাদেশের বিভিন্ন কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো হচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, এবি ব্যাংক লিমিটেড ইত্যাদি।
  • যেকোনো দেশে একটিমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’।
  • দেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
  • দেশ ও জনগণের স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনমাফিক নোট ইস্যু করে দেশের মুদ্রার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

ভূমিকা

বাংলাদেশের মনিটারি মার্কেটের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সকল ব্যাংক এই বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাহলে ভাবতে পারেন যে অন্যসব ব্যাংকে অ্যাকাউন্টে খুলে কি লাভ! যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক’ই প্রধান ব্যাংক, তাই সেটাতেই অ্যাকাউন্ট খুলি তবে? না, আপনি চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং টাকা জমা রাখতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংক একক ব্যাক্তিদের সাথে কোনো ধরণের লেনদেন করে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেন হয় শুধু অন্যান্য ব্যাংক, সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সাথে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম এতোটা ভিন্ন কেনো? কারণ, সাধারণ জনগণ যেন সাধারণ ব্যাংকিং সার্ভিসগুলো পেতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকদের অ্যাপ্রুভ করে।

আর অন্যান্য ব্যাংক যাতে সাধারণ মানুষদের ভালোভাবে সার্ভিস দেয়, তা এনশিওর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই, আজকের লেখায় আমরা কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝে পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

কমার্শিয়াল ব্যাংক

কমার্শিয়াল ব্যাংক হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যারা নির্দিষ্ট সুদের হারে সাধারণ মানুষের থেকে আমানত সংগ্রহ করে এবং তারপর সেই আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে। কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে আসা রিটার্নের একটি নির্দিষ্ট অংশই ব্যাংক আমাদের সুদ হিসেবে প্রদান করা। অর্থাৎ, আমরা সাধারণ সেন্সে ব্যাংক বলতে যা বুঝি তা’ই হচ্ছে কমার্শিয়াল ব্যাংক। বাংলাদেশের বিভিন্ন কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো হচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, এবি ব্যাংক লিমিটেড ইত্যাদি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অপরদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ও মনিটারি পলিসিকে নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ হচ্ছে নোট ইস্যু করা, ব্যাংকিং সেক্টর রেগুলেট করা ও মনিটারি পলিসি তৈরি করা। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে ব্যাংকারদের ব্যাংকার। যেকোনো দেশে একটিমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’।

কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝে পার্থক্য

নিম্নে কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝে পার্থক্যগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

মালিকানা

কমার্শিয়াল ব্যাংকের মালিকানা সরকারের হাতে অথবা প্রাইভেট সেক্টরের হাতে থাকতে পারে। বাংলাদেশে সরকারি কমার্শিয়াল ব্যাংক হচ্ছে সোনালী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিকানা সবসময় সরকারের হাতে থাকে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি নির্ধারণ করে ও কর্মী নিয়োগ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিকানা কখনো প্রাইভেট সেক্টরের হাতে থাকে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সাধারণত স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান দেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। হিসেবে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

পরিধি

কমার্শিয়াল ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের একটি ইউনিট মাত্র। নিজেদের ব্যাংকিং কার্যক্রমের বাইরে অন্য কিছু করার এখতিয়ার কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর থাকে না।

অপরদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে দেশের মনিটারি সেক্টরের একটি এপেক্স প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ, মনিটারি সেক্টরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর আর কিছু নেই।

নোট ইস্যু

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো শুধু জনগণের থেকে আমানত সংগ্রহ করে তা অন্যদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে। দেশের নোট ইস্যু করার এখতিয়ার কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর থাকে না। তবে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ডিপোজিটের টাকা অন্যান্য গ্রাহকদের ঋণ হিসেবে প্রদান করার মাধ্যমে অর্থ তৈরির ও অর্থনীতিকে সচল রাখার কাজ করে।

অপরদিকে, একটি দেশের নোট ইস্যু করার দায়িত্ব সর্বদা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর থাকে। অর্থাৎ, নোট ইস্যু করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বিশেষ কার্যক্রম।

উদ্দেশ্য

ব্যাক্তিমালিকানাধীন হোক বা সরকারি, সকল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্দেশ্য থাকে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। অর্থাৎ, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো নিজেদের কার্যক্রম এমনভাবেই সাজিয়ে থাকে যেন তারা নিজেদের প্রফিট ম্যাক্সিমাইজ করতে পারে।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো মুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা।

লেনদেন

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো জনগণের সাথে, অন্যান্য ব্যাংকের সাথে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে পারে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কখনো জনগণের সাথে সরাসরি লেনদেন করে না, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেন হয় শুধু অন্যান্য কমার্শিয়াল ব্যাংক, সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে।

সংখ্যা

দেশে অগণিত পরিমাণে কমার্শিয়াল ব্যাংক থাকতে পারে। জনগণের জন্য আর্থিক লেনদেন সহজ করে তোলা ও প্রতিযোগীতামূলক পরিবেশ তৈরি করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনমাফিক কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়ে থকে।

অপরদিকে, যেকোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটিই থাকে। অঞ্চলভেদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক শাখা থাকতে পারে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট ১০টি শাখা রয়েছে।

অর্থের উৎস

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো জনগণের থেকে ডিপোজিট কালেক্ট করে সেই ডিপোজিটের টাকা দিয়ে নিজেদের ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করে।

অপরদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে দেশের অর্থের মূল উৎস। দেশ ও জনগণের স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনমাফিক নোট ইস্যু করে দেশের মুদ্রার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

ব্যাংকিং সার্ভিস

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বহুধরণের সেবা প্রদান করে। যেমন -

  • ডিপোজিট গ্রহণ
  • ঋণ প্রদান
  • পেমেন্ট প্রসেসিং
  • ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট
  • ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ
  • ট্রেড ফাইন্যান্স
  • লকার সার্ভিস
  • বিল ও চেক ভাঙানো
  • লেটার অব ক্রেডিট ইত্যাদি।

অপরদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত দুইধরণের সার্ভিস নিয়ে কাজ করে। প্রথমত, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মুদ্রানীতি গঠন ও বাস্তবায়ন এবং দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কমার্শিয়াল ব্যাংককে ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদান করা। কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকাশ ঘর, ঋণ সহায়তা, সাজেশন ইত্যাদি সার্ভিস দিয়ে থাকে।

ঋণ প্রদান

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করে।

অপরদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার অধীনে থাকা অন্যান্য ব্যাংক এবং সরকারকে ঋণ প্রদান করতে পারে। কোনো একক ব্যাক্তি কখনোই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন না।

পরিসংহার

আমাদের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে ব্যাংক। তাই বিভিন্ন ধরণের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা রাখা প্রয়োজন। এতে করে নাগরিক অধিকার আদায়ে আমরা আরো বেশি সচেতন হয়ে উঠতে পারবো। আর আশা করি এই লেখা পড়ার পর আর কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে ফিরে আসবেন না।

  • https://byjus.com/commerce/difference-between-central-bank-and-commercial-bank/
  • https://www.shiksha.com/online-courses/articles/difference-between-central-bank-and-commercial-bank/
  • https://www.javatpoint.com/central-bank-vs-commercial-bank
  • https://unacademy.com/content/upsc/difference-between/central-bank-and-commercial-bank/
  • https://globalbanks.com/difference-between-central-bank-and-commercial-bank/
  • https://www.economicsdiscussion.net/difference-between/difference-between-a-central-bank-and-commercial-bank/4139
Next to read
Marketing
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ

মূলত মার্কেটিং এর যে প্রক্রিয়া বা ধারণাগুলো রয়েছে সেসব ধারণাগুলোকে প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকভাবে উপস্থাপন বা ব্যবহার করাই ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং-এ একদিকে যেমন ব্যয় হয় স্বল্প ঠিক তেমনই সময়’ও লাগে কম। আর তাছাড়া বয়স, লিঙ্গ, অঞ্চল ইত্যাদি বিষয় একদম নির্দিষ্ট করে দিয়ে প্রচারণা চালানো সম্ভবপর হয়ে উঠে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে।

সারোগেট মার্কেটিং (SURROGATE MARKETING)
Marketing
সারোগেট মার্কেটিং (SURROGATE MARKETING)
বি-টু-বি, বি-টু-সি এবং বি-টু-জি কি? (B-to-B, B-to-C, B-to-G)
Business
বি-টু-বি, বি-টু-সি এবং বি-টু-জি কি? (B-to-B, B-to-C, B-to-G)
রিব্র্যান্ডিং (Rebranding)
Branding
রিব্র্যান্ডিং (Rebranding)
অর্থনীতি কী?
Economics
অর্থনীতি কী?
বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
Investment
বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
সেলস টার্গেট অর্জনের জন্য ১০টি বডি ল্যাঙ্গুয়েজ টিপস
Sales
সেলস টার্গেট অর্জনের জন্য ১০টি বডি ল্যাঙ্গুয়েজ টিপস
মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স (Multi Vendor E-commerce)
E-Commerce
মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স (Multi Vendor E-commerce)
কর্পোরেট ট্যাক্সেশন এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা (Corporate Tax)
Accounting
কর্পোরেট ট্যাক্সেশন এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা (Corporate Tax)
Generally Accepted Accounting Principle (GAAP)
Accounting
Generally Accepted Accounting Principle (GAAP)