কমার্শিয়াল ব্যাংক কী এবং কীভাবে কাজ করে?

612
article image

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বর্তমানে ডিপোজিট গ্রহণ, ঋণ প্রদান, পেমেন্ট প্রসেসিং ও কারেন্সি এক্সচেঞ্জ সার্ভিসের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন সেবা অফার করছে যেমন - মূলধন সরবরাহ করা, রিস্ক ট্রান্সফরম্যাশন, লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। এইসকল সার্ভিস অফার করার মাধ্যমে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো একদিকে যেমন ব্যাক্তি পর্যায়ে ব্যাংকিং সার্ভিস পাওয়া সহজ করে দিচ্ছে, আবার বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে’ও ভূমিকা পালন করছে।

Key Points

  • কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তিদের বেসিক ব্যাংকিং সার্ভিসগুলো প্রদান করে।
  • ঋণের টাকা থেকে প্রাপ্ত সুদ এবং বিভিন্ন সেবার জন্য ফি চার্জ করার মাধ্যমে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো আয় করে থাকে।
  • এতোদিন বেশিরভাগ কমার্শিয়াল ব্যাংক ফিজিকাল অফিসের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বর্তমানে কিছু ডিজিটাল ব্যাংক দেখা যাচ্ছে যাদের কোনো ফিজিকাল অফিস নেই।
  • অর্থনীতিতে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো মূলধন ও ঋণ সরবরাহ করে, তাই অর্থনীতিতে এদের গুরুত্ব অনেক বেশি।

ভূমিকা

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো আমাদের মডার্ন ফাইন্যান্সিয়াল ওয়ার্ল্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। বর্তমানে বিকাশ, নগদের মতো বিভিন্ন এমএফএস সার্ভিসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও, গতানুগতিক কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর চাহিদা’ও কিন্তু পালাক্রমে বেড়ে চলেছে। এতো ডাইনামিক একটি পরিবেশে টিকে থাকার জন্য ব্যাংকগুলোকে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সার্ভিস অফার করতে হচ্ছে এবং নিজেদের সেবার মান প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। তাই, আজকের লেখায় আমরা জানবো যে কমার্শিয়াল ব্যাংক আসলে কি করে এবং কিভাবে করে।

কমার্শিয়াল ব্যাংক কী?

কমার্শিয়াল ব্যাংক বলতে এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়, যারা সাধারণ মানুষদের থেকে ডিপোজিট কালেক্ট করে, বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট সেবা প্রদান করে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তিদের ঋণ সুবিধা প্রদান করে। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ যেখানে নিজেদের ব্যাক্তিগত ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করেন সেটাই কমার্শিয়াল ব্যাংক।

সাধারণ মানুষদের থেকে পাওয়া ডিপোজিট কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো নিজেদের মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে। এই টাকা থেকে তারা ঋণ প্রদান করে এবং এই ঋণ থেকে আসা সুদ’ই হচ্ছে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো আয়ের মূল উৎস।

কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিভিন্ন প্রাইমারি ফাংশন

বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু ভাইটাল সেবা প্রদানের মাধ্যমে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। এই সেকশনে আমরা কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর প্রাইমারি ফাংশনগুলো সম্পর্কে জানবো।

ডিপোজিট গ্রহণ করা

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর সর্বপ্রধান ফাংশন হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের থেকে ডিপোজিট গ্রহণ করা। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট ও ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কমার্শিয়াল ব্যাংক এই ডিপোজিট কালেক্ট করে থাকে। এই অ্যাকাউন্টগুলো ব্যাংকের কাস্টমারদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে কাজ করে।

তারা এখানে টাকা রেখে চিন্তামুক্ত থাকে এবং নিজেদের প্রয়োজনের স্থান থেকে তুলে নিতে পারে। ব্যাংকে রাখা ডিপোজিটের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বারা বীমাকৃত থাকে। অর্থাৎ, কোনো কারণে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই নির্দিষ্ট অংশ ডিপোজিটরদের ফেরত দিবে। বাংলাদেশে এই অ্যামাউন্ট হচ্ছে ১ লক্ষ টাকা।

ঋণ প্রদান

ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ঋণের উৎস হিসেবে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। ডিপোজিটরদের থেকে পাওয়া টাকার একটি নির্দিষ্ট অংশ ব্যাংক সেফটি রিজার্ভ হিসেবে জমা রেখে বাকি টাকা ঋণ হিসেবে তাদের প্রদান করে যাদের ঋণ দরকার। ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রয়োজনে ঋণগ্রহণ করতে পারে, যেমন - গাড়ি ক্রয়, বাড়ি তৈরি, ব্যবসা স্থাপন ও সম্প্রসারণ ইত্যাদি।

ঋণগ্রহিতাদের ঋণের টাকা ফেরত দেয়ার সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে ব্যাংক এইসব ঋণ দিয়ে থাকে। এই টাকা যেহেতু অর্থনীতিতে সার্কুলেট হতে থাকে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে, তাই এই ঋণ সেবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পেমেন্ট প্রসেসিং

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো লেনদেন সহজ করার উদ্দেশ্যে আরো কিছু সেবা নিয়ে এসেছে, এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে অর্থের সহজ লেনদেন এনশিওর করা যায়। পেমেন্ট প্রসেসিং সার্ভিসগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে চেক ইস্যু করা, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সেবা, ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ইত্যাদি।

চেকের মাধ্যমে গ্রাহকরা একে অপরকে পেমেন্ট করতে পারে আবার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এটিএম ব্যবহার করে নিজের অ্যাকাউন্টের টাকা যখন খুশি তুলে নিতে পারে। ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন যেকোনো স্থান থেকে মোবাইল বা কমপিউটার ব্যবহার করে লেনদেন সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।

কারেন্সি এক্সচেঞ্জ ফ্যাসিলিটিস

ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট, যেখানে ফরেন কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় করা হয়, সেখানে’ও কমার্শিয়াল ব্যাংকের কার্যক্রম রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে জড়িত ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো এই ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ সার্ভিস অফার করে থাকে। খুবই কমপিটিটিভ রেটে ব্যাংকগুলো অনেক দেশের মুদ্রা এক্সচেঞ্জ করার সার্ভিস দেয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য এই সার্ভিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইন্টারমিডিয়ারি ফাংশন

প্রাইমারি ফাংশনগুলোর পাশাপাশি কমার্শিয়াল ব্যাংকের কিছু ইন্টারমিডিয়ারি ফাংশন রয়েছে। এগুলোকে কমার্শিয়াল ব্যাংকের সেকেন্ডারি ফাংশন’ও বলা যায়।

মূলধন সরবরাহ করা

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষদের থেকে সেভিংস কালেক্ট করে তা বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে বা ঋণ হিসেবে প্রদান করে। তাই বলা যায় যে, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ঋণদাতা ও ঋণগ্রহিতাদের মাঝে ইন্টারমিডিয়ারি বা মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করে।

রিস্ক ট্রান্সফরম্যাশন

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল রিস্ক ট্রান্সফর্ম করার কাজ করে। ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়, যেমন -

  • ক্রেডিট রিস্ক - ঋণের টাকা ফেরত না পাওয়ার ঝুঁকি।
  • ইন্টারেস্ট রেট রিস্ক - হঠাৎ করে সুদের হার পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি।
  • লিকুইডিটি রিস্ক - স্বল্পমেয়াদী দায়গুলো পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি।

এইসব ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য ব্যাংকগুলো বিভিন্ন বিশেষ টেকনিক ব্যবহার করে থাকে। ব্যাংকগুলো যেহেতু নিজের কাধে এসব ঝুঁকি নিয়ে নিচ্ছে, তাই ঋণদাতা ও ঋণগ্রহিতারা নিশ্চিন্তে লেনদেন করতে পারছেন।

লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্ট

কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইন্টারমিডিয়ারি ফাংশনগুলো মাঝে লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্ট আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ রোল। ব্যাংকগুলোকে নিজেদের সম্পদ (লোন ও বিনিয়োগ) এবং দায় (ডিপোজিট এবং ঋণ) - এর মাঝে খুব সুক্ষ্ম ব্যালেন্স মেইনটেইন করতে হয়। তারা এনশিওর করে যে তাদের কাছে ২৪/৭ যথেষ্ট পরিমাণ ফান্ড আছে, যাতে তারা কাস্টমারদের ডিমান্ড ফুলফিল করতে পারে।

এতে করে ব্যাংকগুলো নির্বিঘ্নে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এবং কাস্টমাররা যেকোনো সময় নিজেদের টাকা তোলার সুযোগ পায়।

কমার্শিয়াল ব্যাংকের আর্থিক সেবা

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো তার গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের আর্থিক সেবা দিয়ে থাকে। এই সার্ভিসগুলো ব্যাংকের গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরণের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

পারসোনাল ব্যাংকিং সার্ভিসেস

সেভিংস অ্যাকাউন্টঃ কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের সেভিংস অ্যাকাউন্ট সেবা প্রদান করে থাকে। এই অ্যাকাউন্টে গ্রাহকরা টাকা জমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন হারে সুদ আয় করার সুযোগ পান।

কারেন্ট অ্যাকাউন্টঃ কারেন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজেদের অ্যাকাউন্টে টাকা রেখে তা যেকোনো সময় ব্যয় করতে পারেন।

ডিপোজিট অ্যাকাউন্টঃ ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ জমা রেখে উচ্চহারে সুদ পাওয়া যায়। এই অ্যাকাউন্টে যেহেতু রেগুলার লেনদেন হয় না, তাই মেইনটেনেন্স খরচ অনেক কম, এতে করে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের বেশি সুদ অফার করতে পারে।

বিজনেস ব্যাংকিং সার্ভিসেস

বিজনেস লোনঃ কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন মেয়াদে লোন অফার করে থাকে। যেমন - ব্যবসায়ের মূলধন সরবরাহ, সরঞ্জাম ক্রয় বা ব্যবসায় সম্প্রসারণ ঋণ।

লাইন অব ক্রেডিটঃ প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের পুরো টাকা একবারে তুলে না নিয়ে বরং কিছু সময় পর পর ব্যাংক থেকে ছোট ছোট আকারে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। মোট কতো টাকা ও কতো সময়ের জন্য ঋণ দেয়া হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে।

মার্চেন্ট সার্ভিসেসঃ ব্যাংকগুলো কাস্টমারদের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দেয়, এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট সংগ্রহ করতে পারে।

ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস

সম্পদ ব্যবস্থাপনাঃ কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানদের ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস অফার করে যেমন - ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজরি, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট ও ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং ইত্যাদি।

ব্রোকারেজ সার্ভিসেসঃ বিভিন্ন ব্যাংকের ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সাথে এফিলিয়েশন থাকে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের স্টক, বন্ড, মিচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ করে দেয়।

রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিংঃ রিটায়ারমেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট সেবা প্রদান করার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং-এ সাহায্য করে থাকে।

অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা

ইন্টারনেট ব্যাংকিংঃ বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংক’ই তার গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। গ্রাহকরা ব্যাংকের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ পাচ্ছেন।

মোবাইল ব্যাংকিংঃ সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন পৌছে যাওয়ায় এখন ব্যাংকগুলো নিজেদের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে।

এইসব আর্থিক সেবাগুলো একত্রে গ্রাহকদের ফাইন্যান্স ম্যানেজ করার, নিজেদের ফাইন্যান্সিয়াল গোল অ্যাচিভ করার ও জটিলতাগুলো মোকাবিলা করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভূমিকা

ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও সমাজের উন্নতিতে’ও ভূমিকা রাখে।

মূলধন গঠন

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো যেসব উপায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে, তার মাঝে মূলধন গঠন অন্যতম। এখানে সূত্র বেশ সহজ। কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো যেই টাকা ঋণ হিসেবে প্রদান করে তার বেশিরভাগই ব্যয় হয় নতুন ব্যবসা স্থাপন অথবা পূর্বের ব্যবসা সম্প্রসারণে। তাই পরোক্ষভাবে এই টাকা মূলধন গঠনে সাহায্য করছে বলা যায়।

কর্মসংস্থান তৈরি

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রেও পরোক্ষভাবে অবদান রাখে। ছোট ও মাঝারি সাইজের ব্যবসায়গুলো যেহেতু মারাত্মকভাবে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া ঋণের উপর নির্ভরশীল। তাই, বলা যায় যে তাদের ব্যবসায়ের উন্নতি নির্ভর করে যে তারা কতো সহজে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিতে পারছে। আর এই ছোট সাইজের ব্যবসাগুলোই ঋণের মাধ্যমে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করে বড় আকারের ব্যবসায় রুপ নেয়। এভাবে তৈরি হয় নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

আর্থিক লেনদেন বৃদ্ধি

বিভিন্ন ধরণের ব্যাংকিং সার্ভিসের প্রাপ্যতা, পেমেন্ট প্রসেসিং ও ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ইত্যাদির কারণে দেশে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো না থাকলে আর্থিক লেনদেন ব্যাহত হতো এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হতো।

সরকারের তহবিল যোগান

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো প্রায়ই সরকারের ট্রেজারি বন্ড ও বিল ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারকে তহবিল সংগ্রহ করতে সহায়তা করে। এতে করে সরকারের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি অনেক সহজ হয়ে ওঠে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো অনেক দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ব্যাংকিং সেবা পৌছে দেয়ার মাধ্যমে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাংকিং সেবার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেক মানুষ যারা আগে ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে ছিল, তারা’ও এখন এই সুবিধা ভোগ করতে পারছেন।

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ ট্রেন্ড ও প্রতিবন্ধকতা

পরিবর্তিত হতে থাকা আর্থিক পরিস্থিতির কারণে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে বেশ কিছু ফিউচার ট্রেন্ড মাথায় রেখে প্ল্যানিং করতে হচ্ছে। এগুলোর মাঝে যেমন রয়েছে অপরিসীম সুযোগ, আবার রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ।

১। ডিজিটাল ট্রান্সফরম্যাশন

বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যাংক ও ফিনটেক স্টার্টআপগুলোর কারণে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে’ও ডিজিটাল ট্রান্সফরম্যাশনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই কারণে ব্যাংকগুলোকে ডিজিটাল চ্যানেল, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ডিজিটাল সার্ভিসগুলোর পেছনে বেশি করে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।

২। সাইবার সিকিউরিটি

বর্তমান সময়ে সাইবার অ্যাটাকের পরিমাণ ও মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর ও তাদের গ্রাহকদের জন্য বেশ হুমকির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এই কারণে ব্যাংকগুলোকে অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টদের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।

৩। ডেটা অ্যানালিটিক্স ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স

গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন করতে দেয়ায় এখন ব্যাংকিং সেক্টরে পূর্বের তুলনায় প্রতি মিনিটে অনেক বেশি পরিমাণ ডেটা জেনারেট হচ্ছে। এতো বেশি পরিমাণ ডেটা স্টোর, প্রসেস ও অ্যানালাইজ করা ব্যাংকগুলোর জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। এই কারণে ব্যাংকগুলোকে ডেটা অ্যানালিটিক্স ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের সাহায্য নিতে হচ্ছে।

৪। কনজ্যুমার প্রিফারেন্সে পরিবর্তন

ব্যাংকের গ্রাহকরা এখন অনেক বেশি পার্সোনালাইজড, কনভিনিয়েন্ট এবং ২৪/৭ ব্যাংকিং সার্ভিসেস হাতের গোড়ায় চাইছেন। এই কারণে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন চ্যাটবটের সাহায্য নিচ্ছে। এতে করে তারা ২৪/৭ গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে।

৫। নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানদের সাথে প্রতিযোগিতা

এখন বিভিন্ন ফিনটেক কোম্পানী, টেক-জায়ান্ট ও পেমেন্ট প্রসেসরদের নজর ব্যাংকিং সেক্টরে। এই কারণেই ব্যাংকগুলো এখন বিভিন্ন ফিনটেক ফার্মের সাথে পার্টনারশিপে কাজ করছে।

পরিসংহার

পরিশেষে, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে বেশ ডাইনামিক একটি পরিবেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। আবার তাদেরকে এটাও এনশিওর করতে হচ্ছে যেন তাদের গ্রাহকরা সবচেয়ে লেটেস্ট ও সেরা সেবা তাদের থেকে পায়। এইসব চ্যালেঞ্জকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করা ও সুযোগগুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই ব্যাংকিং সেক্টরের অগ্রযাত্রা চলমান রাখা সম্ভব।

  • https://economictimes.indiatimes.com/definition/commercial-bank
  • https://en.wikipedia.org/wiki/Commercial_bank
  • https://byjus.com/commerce/functions-of-commercial-banks/
  • https://ca.indeed.com/career-advice/career-development/commercial-banking
  • https://www.studysmarter.co.uk/explanations/macroeconomics/financial-sector/commercial-banks/
  • https://www.wallstreetmojo.com/commercial-bank/
  • https://www.fool.com/terms/c/commercial-banking/
Next to read
Canvas & Methods
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)

ইম্প্যাথি ম্যাপিং মূলত একধরনের ট্যুলস। এটি গ্রাহকদের ভাবনা-চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, অনুভব, উপলব্ধি সহ নানাবিধ তথ্য, উপাত্ত এর সমন্বয়ে গঠিত সুশৃঙ্খল এবং সুবিন্যস্ত একটি চার্ট। উল্লেখিত বিষয় সমূহ সম্পর্কিত তথ্য উপাত্তের খুব চমৎকার একটা ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন পাওয়া যায় এই ইম্প্যাথি ম্যাপিং এর মাধ্যমে। যা মূলত আপনার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহককে ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করে।

সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)
Canvas & Methods
সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)
ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)
Business Models
ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)
সাবস্ক্রিপশন মডেল (Subscription Model)
Business Models
সাবস্ক্রিপশন মডেল (Subscription Model)
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
Marketing
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
রেড ওশান এবং ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি (Red Ocean & Blue Ocean Strategy with Example
Business
রেড ওশান এবং ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি (Red Ocean & Blue Ocean Strategy with Example
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
Investment
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)
Marketing
অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)
World Trade Organization (WTO) Agreements
Agreement
World Trade Organization (WTO) Agreements
সিঙ্গেল ব্রান্ডেড ই-কমার্স (Single Branded E-commerce)
E-Commerce
সিঙ্গেল ব্রান্ডেড ই-কমার্স (Single Branded E-commerce)