ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং কী এবং কীভাবে কাজ করে?

459
article image

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং হচ্ছে এমন একটি ব্যাংক ব্যবস্থা, যেখানে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিপোজিটের একটি নির্দিষ্ট অংশ রিজার্ভ হিসেবে জমা রেখে বাকি টাকা লোন হিসেবে অন্যান্য গ্রাহকদের দেয়। গ্রাহকদের টাকা ব্যবহার করার কারণে সেই লোন থেকে প্রাপ্ত লাভের একটি অংশ ব্যাংক তার গ্রাহকদের সুদ হিসেবে প্রদান করে। বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা’ই ফ্র্যাকশনা রিজার্ভ ব্যাংকিং সিস্টেম ফলো করছে।

Key Points

  • ব্যাংক যে আপনার টাকা ব্যবহার করছে, তার কারণেই ব্যাংক সাধারণত সেভিংস ও ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে সুদ দিয়ে থাকে।
  • ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং সিস্টেমে কমার্শিয়াল ও রিটেইল ব্যাংক তার গ্রাহকদের কতো হারে সুদ দিবে তা ঠিক করে দেয় উক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
  • ২০% রিজার্ভ রেশিওতে গ্রাহকের ১০০০ টাকার ডিপোজিট থেকে ব্যাংক ৫০০০ টাকার পর্যন্ত ঋণ তৈরি করতে পারে।
  • বর্তমানে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর জন্য স্ট্যাচুটরি লিক্যুইডিটি রেশিও হিসেবে ডিপোজিটের ১৩% ও ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও হিসেবে ডিপোজিটের ৪% জমা রাখা বাধ্যতামূলক।

ভূমিকা

গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ছিল গোল্ডের স্বল্পতা। প্রকৃতিতে খুবই স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যায় এমন একটি উপাদানের সাথে যখন কোনো দেশ তার ব্যাংক ব্যবস্থাকে বেধে রাখে, তখন সে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আটকে রাখে। গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডে যেহেতু সেন্ট্রাল ব্যাংকের কাছে দেশের টাকার সমপরিমাণ গোল্ড জমা রাখতে হতো, তাই অর্থনীতি বড় হওয়ার সাথে সাথে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হয়ে ওঠে গলার কাটা। তার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আপন করে ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং। আজকের লেখায় আমরা ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং কী?

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং হচ্ছে এমন একটি ব্যাংক ব্যবস্থা, যেখানে ব্যাংক তার মোট ডিপোজিটের একটি নির্দিষ্ট অংশ যেকোনো সময় গ্রাহকদের তুলে নেয়ার জন্য রাখে। ডিপোজিটের একটি নির্দিষ্ট অংশ ব্যাংক তারল্য হিসেবে হাতে রেখে বাকি টাকা লোন হিসেবে অন্য গ্রাহকদের দিতে পারে অথবা লাভজনক কোনো খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাংকের ঋণ প্রদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আলটিমেটলি অর্থনীতিকে বড় করা। বর্তমান সময়ের প্রায় সকল দেশের কমার্শিয়াল ও রিটেইল ব্যাংক এই ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং পদ্ধতি অনুসরণ করেই চলছে।

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং কীভাবে কাজ করে?

আপনি যখন কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন, তখন কনট্র্যাক্টের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যাংকের টাকার একটি অংশ ব্যাংককে ঋণ হিসেবে অন্য গ্রাহকদের প্রদান করার অনুমতি দিয়ে দেন। তবে তার মানে এই নয় যে আপনার টাকা আর আপনার রইলো না।

আপনার টাকা আপনারই আছে, তবে ব্যাংক আপনার টাকার যতোটুকু তারল্য হিসেবে হাতে রেখেছে, তার বেশি টাকা বা পুরোটাই যদি তুলে ফেলতে চান, তাহলে ব্যাংককে অন্য কোথাও থেকে টাকা ম্যানেজ করে আপনাকে সেই টাকা দিতে হবে, আর ব্যাংক এটি দিতে বাধ্য।

ব্যাংক যে আপনার টাকা ব্যবহার করছে, তার কারণেই ব্যাংক সাধারণত সেভিংস ও ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে সুদ দিয়ে থাকে। কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ব্যাংক সাধারণত কোনো সুদ দেয় না বা দিলেও খুব কম পরিমাণে দেয় কারণ কারেন্ট অ্যাকাউন্ট গ্রাহক যখন খুশি টাকা তুলতে পারে, আবার জমা দিতে পারে। তাই এই টাকা বিনিয়োগ করে ব্যাংক বিশেষ একটা লাভ করতে পারে না।

অন্যদিকে, সেভিংস ও ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে টাকা তোলার ক্ষেত্রে যেহেতু কিছু রেস্ট্রিকশন থাকে, তাই গ্রাহক চাইলেও যখন খুশি তখন অ্যাকাউন্টের পুরো টাকা তুলে ফেলতে পারেন না। আর এই কারণেই ব্যাংক সেভিংস ও ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের টাকা বিনিয়োগ করতে পারে এবং সেই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লাভের একটি অংশ ব্যাংক সুদ হিসেবে গ্রাহকদের দেয়।

মনে করুন, আপনি একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক একটি ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলে ১০০০ টাকা জমা রাখলেন, আর ব্যাংক আপনাকে বার্ষিক ৫% সুদ দিবে। সেই টাকার ২০% ব্যাংক ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও হিসেবে নিজেদের কাছে রেখে, বাকি ৮০% টাকা এমন কোনো খাতে বিনিয়োগ করবে, যেখান থেকে ব্যাংক ৫% - এর বেশি রিটার্ন পাবে। তাই আপনাকে ৫% সুদ দেয়ার পরেও ব্যাংকের কিছু টাকা লাভ হয়।

দ্য মানি মাল্টিপ্লায়ার

মনে করুন, আপনি কোনো ব্যাংকে ১০০০ টাকা জমা রাখলেন। ব্যাংক সেই ১০০০ টাকার ২০% রিজার্ভ হিসেবে রেখে বাকি টাকা (৮০০ টাকা) ঋণ হিসেবে অন্য একজন গ্রাহককে দিয়ে দিলো। এখন ব্যাংক কিন্তু ঋণের টাকা সরাসরি গ্রাহকদের হাতে দেয় না। বরং ঋণ প্রাপ্তির জন্য গ্রাহককে ঐ ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় এবং ব্যাংক ঐ অ্যাকাউন্টে ঋণের টাকা ট্রান্সফার করে দেয়।

তারপর ব্যাংক আবার সেই ঋণগ্রহিতার ৮০০ টাকার ২০% রিজার্ভ হিসেবে জমা রাখে এবং ৬৪০ টাকা পর্যন্ত তুলে নেয়ার সুযোগ দেয়। গ্রাহক যদি সেই টাকা তুলে না নেয়, তাহলে ব্যাংক অন্য একজন গ্রাহককে আবার সেই টাকা থেকে ঋণ প্রদান করে। এভাবে ১০০০ টাকার’ও অনেক বেশি পরিমাণ টাকা ব্যাংক শুধু ১০০০ টাকা থেকেই তৈরি করতে পারে।

এখন কথা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ থেকে ব্যাংক আসলে কতো টাকার ঋণ তৈরি করতে পারে? এটি জানতেই ব্যবহার করা হয় দ্য মানি মাল্টিপ্লায়ারের সূত্র।

মানি মাল্টিপ্লায়ার = ১ / রিজার্ভ রেশিও



অর্থাৎ, ব্যাংকের রিজার্ভ রেশিও যদি হয় ২০% (০.২০), তাহলে মানি মাল্টিপ্লায়ার হবে ৫।

মানি মাল্টিপ্লায়ার = ১ / ০.২০ = ৫



এখন সেই ১০০০ টাকাকে ৫ দিয়ে গুণ দিলেই ব্যাংক দ্বারা তৈরি ঋণের পরিমাণ বের করা যাবে। অর্থাৎ, ২০% রিজার্ভ রেশিওতে গ্রাহকের ১০০০ টাকার ডিপোজিট থেকে ব্যাংক ৫০০০ টাকার পর্যন্ত ঋণ তৈরি করতে পারে।

ডিজিটাল মানি

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং ডিজিটাল মানি তৈরিতে ভূমিকা রাখে। বিষয়টি কিভাবে কাজ করে তা এইবার বুঝা যাক

১. জমা এবং রিজার্ভ:

যখন একজন গ্রাহক ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, তখন ব্যাংক সেই জমা টাকার একটি অংশ (রিজার্ভ রেশিও) রিজার্ভ হিসেবে রাখে এবং বাকিটা ঋণ হিসেবে অন্যদের ঋণ দিয়ে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনার কাছে ১০০০ টাকা আছে আপনি সেই অর্থ কোন ব্যাংকে জমা রাখলেন। ব্যাংক এখন রিজার্ভ রেশিও ২০% ধরে, ১০০০ টাকার ২০% অর্থাৎ ২০০ টাকা জমা রেখে বাকি টাকা অন্যদের ঋণ দিয়ে দিবে।

২. ঋণের মাধ্যমে টাকা সৃষ্টি:

ব্যাংক যখন ৮০০ টাকা ঋণ হিসেবে অন্যদের দেয়, ঋণগ্রহীতা সেই টাকা খরচ করে। অর্থাৎ কোন না কোন গ্রাহকের কাছে সেই অর্থ পৌঁছায়। সেই গ্রাহক আবার নিরাপত্তা বা জমা রাখার উদ্দেশ্যে আবার ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা রেখে আসে। এবং একই অর্থ শেষ পর্যন্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আবার ফিরে আসে, হয় একই ব্যাংকে বা অন্য কোন ব্যাংকে। ব্যাংক জমা রাখা টাকা থেকে আবার একটি অংশ রিজার্ভ হিসেবে রেখে বাকিটা ঋণ হিসেবে দিয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন জমা তৈরি হয় এবং কার্যত অর্থ সরবরাহ বাড়ে।

৩. ডিজিটাল মানি:

এইভাবে তৈরি হওয়া বেশিরভাগ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স হিসেবে বিদ্যমান থাকে, নগদ অর্থ নয় [অর্থাৎ এই অর্থের বিপরীতে কোন ক্যাশ নেই আছে শুধু কিছু ডিজিট]। যেহেতু অর্থের বহুগুণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে, অর্থনীতির বেশিরভাগ টাকা ডিজিটাল ফর্মে থাকে, যা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইলেকট্রনিকভাবে জমা, স্থানান্তর বা সংরক্ষণ করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • ডিজিটাল মানি তে যে অর্থ তৈরি হয় তার বিপরীতে কোন ক্যাশ বা নগদ বা কাগুজে টাকা থাকে না।
  • এই কারণে অর্থনীতিতে কাগুজে টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল অর্থ অনেক বেশী।
  • আংশিক রিজার্ভ ব্যাংকিং অর্থনীতিতে মোট অর্থের পরিমাণ বাড়ায়, যা মূলত ডিজিটাল ফর্মে থাকে, তাই একটা সময় লেনদেনের মাধ্যমে শুধুই ডিজিট পাস হয় বা পরিবর্তন হয়।
  • এবং পৃথিবীর সকল মানুষ যদি মনে করে তাদের কাছে যত অর্থ আছে তা তারা নগদে অর্থাৎ কাগুজে টাকায় কনভার্ট করবে তা কোনো দিনো সম্ভব হবে না।
  • তাই ব্যাংক সবসময় কাগুজে টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল টাকায় লেনদেন পছন্দ করে।

এভাবে, আংশিক রিজার্ভ ব্যাংকিং নগদ অর্থ জমা দিয়ে শুরু হলেও ঋণ-জমার চক্রের মাধ্যমে ডিজিটাল মানি তৈরিতে সাহায্য করে।

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং ও সুদের হার

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং সিস্টেমে কমার্শিয়াল ও রিটেইল ব্যাংক তার গ্রাহকদের কতো হারে সুদ দিবে তা ঠিক করে দেয় উক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু সুদের হারই নয়, এর পাশাপাশি ব্যাংক ডিপোজিটের কতো শতাংশ ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও, স্ট্যাচুটরি লিক্যুইডিটি রেশিও ও সেফটি রিজার্ভ হিসেবে নিজেদের কাছে রাখবে তা’ও নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সুদের হার ঠিক কতো হবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে। এই হার সবসময় এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যাতে করে দেশের বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ কমানো যায় এবং ভোগ্য পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা যায়।

গ্রাহকের টাকা তোলার চাহিদা পূরণের জন্য কমার্শিয়াল ব্যাংক চাইলে অন্যান্য ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে নির্দিষ্ট সুদের হারে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার সাধারণত অন্যান্য কমার্শিয়াল ব্যাংকের চাইতে বেশি হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক লেনদেন বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে। আবার এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে কি হারে সুদ নিতে পারবেন তা’ও নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং - এর ইতিহাস

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং - এর ইতিহাস স্বর্ণ ও রুপার মুদ্রায় লেনদেনের মতোই পুরনো। মধ্যযুগের স্বর্ণব্যবসায়ীরা একসময় ব্যবসায়ীদের থেকে তাদের অর্থ ডিপোজিট হিসেবে কালেক্ট করতেন এবং এর বিপরীতে কিছু প্রমিসরি নোট ইস্যু করে দিতেন। পরবর্তী সময়ে এই নোটের মাধ্যমেই ব্যবসায়ীরা নিজেদের মাঝে লেনদেন করতেন।

নিজেদের কাছে জমা রাখা স্বর্ণ মুদ্রার একটি অংশ স্বর্ণব্যবসায়ীরা নিজেদের কাছে রেখে বাকি অংশ লোন হিসেবে উচ্চ সুদের হারে অন্য ব্যবসায়ীদের দিয়ে দিতেন। তাই স্বর্ণব্যবসায়ীরা ডিপোজিটকারীদের কিছু হারে সুদ’ও প্রদান করতেন। ধারণা করা হয় যে এটিই ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং - এর আদিরুপ।

আমেরিকায় ১৮৬৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাক্ট পাশ হওয়ার মাধ্যমে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর জন্য ডিপোজিটের একটি নির্দিষ্ট অংশ রিজার্ভ হিসেবে জমা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক তৈরি হওয়ার পর কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো নিজেদের রিজার্ভের অর্থ ফেডারেল রিজার্ভের কাছে রাখতে শুরু করে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গঠন করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ রেশিও বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে দিয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর জন্য স্ট্যাচুটরি লিক্যুইডিটি রেশিও হিসেবে ডিপোজিটের ১৩% ও ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও হিসেবে ডিপোজিটের ৪% জমা রাখা বাধ্যতামূলক।

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং না থাকলে কি হতো?

যেহেতু ব্যাংকের সকল গ্রাহকদের একই সময়ে সকল অর্থ প্রয়োজন হয় না, আবার সবাই একসাথে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয় না(যদি ব্যাংক রান না হয়), তাই ব্যাংকগুলো ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং সিস্টেম ফলো করছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের লোন দিতে পারছে, অর্থনীতি বড় হচ্ছে, কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। আবার ব্যাংকে টাকা রাখার মাধ্যমে গ্রাহকরা’ও বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছেন।

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং - এর বিপরীত দিকে দুইটি বিষয় হতে পারতো -

১। ব্যাংকগুলো যদি ডিপোজিটের পুরোটাই লোন দিয়ে দিত তাহলে কি হতো?

ব্যাংকগুলো যদি ডিপোজিটের পুরোটাই লোন দিয়ে দিত তাহলে গ্রাহকদের অর্থের চাহিদা পূরণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। গ্রাহকরা যখন ইচ্ছা ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারেন না এবং এতে করে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা ও অনীহা তৈরি হতো।

আবার ব্যাংকের দেয়া ঋণের একটি অংশ সবসময়ই কুঋণ(যেই ঋণের অর্থ আর ফেরত পাওয়া যায় না) হিসেবে ধরে নেয়া হয়। ডিপোজিটের পুরো অংশ ঋণ হিসেবে দিয়ে দিলে ব্যাংকের কুঋণ বৃদ্ধি পেত এবং ব্যাংকগুলোকে ভারি লোকসানের সম্মুখীন হতে হতো।

২। ব্যাংকগুলো যদি ডিপোজিটের পুরোটাই নিজেদের কাছে জমা রাখতো তাহলে কি হতো?

ব্যাংকগুলো যদি ঋণ না দিয়ে ডিপোজিটের পুরোটাই নিজেদের কাছে রিজার্ভ হিসেবে রেখে দিতো তাহলে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো ইকোনমিক গ্রোথ অনেকটাই হ্রাস পেত। কারণ ব্যাংকের থেকে পাওয়া ঋণের টাকা দিয়েই ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় সম্প্রসারণ করেন আর সাধারণ জনগণ নিজেদের জীবনের বড় বড় খরচগুলো(গাড়ি ক্রয়, ফ্ল্যাট ক্রয়, বাড়ি বানানো ইত্যাদি) করে থাকেন।

এইসব লেনদেন তখন আর করা সম্ভব হতো না। এতে করে অর্থনীতিতে মুদ্রার হাতবদল হওয়া কমে যেতো এবং অর্থনীতির চাকা অনেকটাই ধীরগিতে চলতো। আবার ব্যবসায়ীরা যেহেতু ব্যবসায় স্থাপন ও সম্প্রসারণ করতে পারতে পারছেন না তাই বৃদ্ধি পেত বেকারত্ব।

পরিসংহার

ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিংয়ের অনেক সমালোচনা রয়েছে। তবে আবার এই ব্যবস্থাকে ব্যাংক ব্যবস্থার সবচেয়ে অপটিমাম পদ্ধতি হিসেবে অনেকে দেখে থাকেন। এই ব্যবস্থা আশীর্বাদ না অভিশাপ এর বিবেচনা হবে অর্থনীতির তথা মানুষের কল্যাণ, অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা, বৈষম্যহীনতা দিয়ে।

  • https://www.studysmarter.co.uk/explanations/macroeconomics/financial-sector/fractional-reserve-system/
  • https://corporatefinanceinstitute.com/resources/economics/fractional-banking/
  • https://www.thebalancemoney.com/what-is-fractional-reserve-banking-4590236
  • https://www.wallstreetmojo.com/fractional-reserve-banking/
  • https://www.masterclass.com/articles/fractional-reserve-banking
Next to read
Canvas & Methods
সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)
সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)

সামাজিক উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আরো সহজ করে দেয় সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস টুল। মূলত বহুল ব্যবহৃত বিজনেস মডেল ক্যানভাস টুল থেকেই সামাজিক সংগঠনের কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী করে এই মডেলটি তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের সামাজিক উন্নয়নে কোনো আইডিয়া এই টুলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট সিন্ধান্তে আসা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি।

সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)
Canvas & Methods
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)
বিজনেস মডেল ক্যানভাস ( Business Model Canvas)
Canvas & Methods
বিজনেস মডেল ক্যানভাস ( Business Model Canvas)
লোগো ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা (Pros and Cons of Logo Usage)
Logo
লোগো ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা (Pros and Cons of Logo Usage)
CSR বা Corporate Social Responsibility কী?
Business
CSR বা Corporate Social Responsibility কী?
সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রো ইকোমিক্স ( Macro Economics ) কী?
Economics
সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রো ইকোমিক্স ( Macro Economics ) কী?
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
Sales
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
PESTLE বিশ্লেষণ
Analysis
PESTLE বিশ্লেষণ
বিজনেস অ্যানালিসিস কী, কেনো, কীভাবে করবেন?
Analysis
বিজনেস অ্যানালিসিস কী, কেনো, কীভাবে করবেন?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)
E-Commerce
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)