কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী? এবং অর্থব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা

1207
article image

দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার মূল দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দায়িত্ব পালন করে মূল ৫টি কাজের মাধ্যমে, যথা - মনিটারি পলিসি তৈরি করা, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে রেগুলেট করা, নোট ইস্যু করা, ফরেন রিজার্ভ ম্যানজ করা ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস মোকাবিলা করা।

Key Points

  • বিশ্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে পরিচিত হয় ১৭ শতকে, যখন ১৬৬৮ সালে ব্যাংক অব সুইডেন এবং ১৬৯৪ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  • আজ থেকে ১৫০ বছর আগেও অনেক দেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করতো।
  • মুদ্রানীতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে, সুদের হার বাড়ায় বা কমায় এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করে
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাতে করে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া না হয়। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়ে সহায়তা করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে এমন একটি সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, যে উক্ত দেশের মনিটারি পলিসি তৈরি করে এবং দেশের মুদ্রাব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলতে এমন ব্যাংককে’ও বোঝানো হয় যার কাছে নোট ইস্যু করার ক্ষমতা থাকে। কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইনডিভিজুয়াল ব্যাক্তিদের সাথে লেনদেন করে না, বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেন হয় অন্যান্য ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সাথে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা

যেকোনো দেশের মনিটারি সিস্টেমের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে ঐ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি এমন একটি ইউনিক প্রতিষ্ঠান, যার উপর দেশের মনিটারি সিস্টেম রেগুলেট ও কন্ট্রোল করার দায়িত্ব থাকে। যদিও দেশভেদে বিভিন্ন নামে এই ব্যাংক নিজের কার্যক্রম পরিচালনা করে, তবে মোটামুটি সকল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ একই।

দেশের অর্থনীতি ও মুদ্রানীতি বোঝার জন্য তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম বোঝা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ব্যাংকের কাছেই দেশের মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো বা কমানোর পাওয়ার থাকে, আর তার মাধ্যমে এই ব্যাংক সুদের হার ও মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।

তাই আজকের লেখায়, আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করবো এবং তার কার্যাবলি ও পলিসিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাঝে মূল পার্থক্য

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা পেতে আগে বুঝতে হবে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন কি কি কাজ করে যেগুলো সাধারণত কোনো কমার্শিয়াল ব্যাংক করতে পারে। এমন কিছু কাজ হচ্ছে -

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি তৈরি ও বাস্তবায়নের কাজ করে। মুদ্রানীতি তৈরির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে টাকার সরবরাহ ও সুদের হারকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে।

একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছেই দেশের নোট বা টাকা ছাপানোর ক্ষমতা থাকে। মুদ্রানীতির সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনমাফিক নোট ইস্যু করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো ব্যাংকিং সেক্টর পর্যবেক্ষণ ও রেগুলেট করার কাজ করে।

কোনো কমার্শিয়াল ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘Lender of Last Resort’।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বিশ্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে পরিচিত হয় ১৭ শতকে, যখন ১৬৬৮ সালে ব্যাংক অব সুইডেন এবং ১৬৯৪ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকারকে ঋণ সহায়তা দেয়া এবং দেশের মুদ্রাব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে তখন এই ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সময়ের সাথে পালাক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম ও গঠন পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন - আমেরিকার প্রথম অফিশিয়াল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যার কার্যকাল ছিল ১৭৯১ থেকে ১৮১১ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় অফিশিয়াল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যার কার্যকাল ছিল ১৮১৬ থেকে ১৮৩৬ সালে পর্যন্ত, এই দুটো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক না হয়ে’ও আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বগুলো পালন করে। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভ তৈরি করা হলে সমস্ত দায়িত্ব তার কাছে চলে যায়।

অর্থাৎ, আজ থেকে ১৫০ বছর আগেও অনেক দেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করতো। তবে সময়ের সাথে অর্থনীতি বড় হতে থাকায় একটি একক এপেক্স প্রতিষ্ঠান তৈরি করার প্রয়োজন সব দেশই অনুভব করে।

তবে তখনকার ব্যাংকগুলোর উপর অনেক বেশি রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। গত কয়েক দশকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বেশ ভালো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যার মাধ্যমে তারা অনেকটাই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয় এবং অনেকটা স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পালন করছে।

এবার চলুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজঃ মুদ্রানীতি তৈরি করা

বিশ্বের প্রায় সকল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ হচ্ছে মুদ্রানীতি তৈরি করা। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনে এই মুদ্রানীতি প্রধান ভূমিকা পালন করে। মুদ্রানীতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে, সুদের হার বাড়ায় বা কমায় এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করে।

এই কাজগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে মূলত ৩টি মাধ্যমে।

১। খোলাবাজারে লেনদেনঃ

অর্থের সরবরাহকে বাড়ানো বা কমানোর উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজারে বিভিন্ন সরকারি বিল ও বন্ডের লেনদেন করে থাকে। যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিল ও বন্ড বিক্রয় করে, তখন অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ কমে যায়। আবার যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিল ও বন্ড ক্রয় করে নেয়, তখন মুদ্রার সরবরাহ কমে যায়। এর মাধ্যমে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা টাকার পরিমাণ’ও পরিবর্তন হয়, তাই সুদের হারে’ও এর প্রভাব পরে।

২। ব্যাংক রেট নির্ধারণঃ

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো যেই সুদের হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে ঋণ নিতে পারে, তাকে ব্যাংক রেট বা পলিসি রেট বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন এই সুদের হার বাড়িয়ে দেয়, তখন কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো কম ঋণ নেয় এবং অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ কমে যায়। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন সুদের হার কমিয়ে দেয়, তখন কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বেশি বেশি ঋণ নেয় এবং এতে করে মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায়।

৩। রিজার্ভ রেশিও পরিবর্তনঃ

আমরা জানি যে, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে তাদের ডিপোজিটের একটি অংশ ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও, স্ট্যাচুটরি লিক্যুইডিটি রেশিও ও সেফটি রিজার্ভ হিসেবে জমা রাখতে হয়। আর এই রিজার্ভের রেশিওগুলো ঠিক করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ রেশিও বাড়িয়ে দেয়, তখন কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো জনগণকে কম ঋণ দিতে পারে, এতে করে মুদ্রার সরবরাহ কমে যায়। আবার মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই রিজার্ভ রেশিওগুলো কমিয়ে দেয়।

মূলত এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করে।

কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর রেগুলেশন

দেশের সকল ব্যাংকিং এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রেগুলেশন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও সাধারণ জনগণের ডিপোজিট সেইফ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে খুব সাবধানতার সাথে এই দায়িত্ব পালন করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত দুটি উপায়ে এই কাজটি করে থাকে।

১। ব্যাংক রেগুলেশনঃ

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর জন্য রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে থাকে। কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো কি কি করতে পারবে এবং কি কি করতে পারবে না তা এই ফ্রেমওয়ার্কে উল্লেখ করা থাকে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনশিওর করে যে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে ও ডিসিপ্লিনের সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

২। ব্যাংক সুপারভিশনঃ

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমাগত কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর উপর নজরদারি করে থাকে এটা এনশিওর করার জন্য যে ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য তাদের যথেষ্ট মূলধন আছে এবং তারা নিয়ম-কানুন মেনে ব্যবসায় পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কর্মীদের দিয়ে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর রেগুলার অডিট করায়, এতে করে এটাও জানা যায় কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো দেশের বাইরে অর্থ পাচারে সহায়তা করছে কি না।

  • উপরিউক্ত কাজ দুটি করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনশিওর করে যেন -
  • ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় না করে।
  • ব্যাংকগুলো ভালো ভালো প্র্যাক্টিস ফলো করার মাধ্যমে ব্যবসায় করে।
  • কোনো সমস্যা হলে যেন সেটি আগেই আইডেন্টিফাই করা যায়।
  • জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।

নোট ইস্যু ও ম্যানেজমেন্ট

দেশের নোট বা টাকা ছাপানোর দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর। নোট ইস্যু রিলেটেড এই কাজগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি করে থাকে -

  • নোট ও কয়েন ডিজাইন ও প্রিন্ট করা।
  • কমার্শিয়াল ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ইস্যুকৃত নোটগুলো ডিস্ট্রিবিউট করা।
  • পুরনো হয়ে যাওয়া নোটগুলো মার্কেট থেকে তুলে ফেলা।

নোট ইস্যুর সাথে সম্পর্কিত আরো একটি কাজ হচ্ছে জাল নোট ম্যানেজ করা। জাল নোট প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই কাজগুলো করে থাকে -

  • হোলোগ্রাম, ওয়ারটারমার্ক ও মাইক্রোপ্রিন্টিং-এর মতো অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ব্যবহার করে মুদ্রার জাল সংস্করণ তৈরি করা কঠিন করে দেয়া।
  • জাল নোট চিহ্নিত করার উপায়গুলো খুজে বের করে তা মার্কেট থেকে তুলে ফেলা।
  • নোট ও কয়েনগুলো যাতে দীর্ঘদিন ধরে মার্কেটে সার্কুলেট করতে পারে তাই ইস্যু করার সময় সেগুলোর যথাযথ মান নিশ্চিত করা।
  • কমার্শিয়াল ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আঈন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় টুলস ও ট্রেনিং সরবরাহ করা, যাতে করে তারা জাল নোট আইডেন্টিফাই করতে পারে।
  • বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জাল নোট সম্পর্কে সচেতন করা। যারা জাল নোট তৈরি ও বিতরণ করে তাদের বিরুদ্ধে আঈনগত ব্যবস্থা নেয়া।

ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ম্যানজমেন্ট

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ম্যানেজ করার দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এই সেকশনে আমরা জানবো কিভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফরেন রিজার্ভ ম্যানেজ করে।

১। ফরেন রিজার্ভ কালেক্ট করাঃ

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বন্ডগুলো মার্কেট থেকে প্রথমে কালেক্ট করে নেয়। এই রিজার্ভ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সাপোর্ট দেয়ার কাজ করে।

২। যথাযথ স্থানে ব্যবহার করাঃ

পরবর্তীতে এই রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারণ, বৈদেশিক ঋণ শোধ করা এবং ক্রান্তিকালে তারল্য ঘাটতি ফেইস করার কাজে ব্যবহার করে।

বিশ্বব্যাপী সাধারণত দুইধরণের এক্সচেঞ্জ রেট পলিসি দেখতে পাওয়া যায়। ফরেন রিজার্ভ ম্যানেজ করার এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ টুল।

১। ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেটঃ

কিছু কিছু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে থেকেই বৈদেশিক মুদ্রার সাথে দেশীয় মুদ্রার একচেঞ্জ রেট বেধে দেয় এবং সবাই যেন সেই এক্সচেঞ্জ রেট মেইনটেইন করে, তা এনশিওর করার কাজ করে। বাংলাদেশে’ও এই পলিসি বিদ্যমান।

২। ভাসমান এক্সচেঞ্জ রেটঃ

আবার কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের দেশের এক্সচেঞ্জ রেট মার্কেট সাপ্লাই ও ডিমান্ডের উপর ছেড়ে দেয়। তবে এক্সচেঞ্জ রেট অনেক বেশি উঠা-নামা করলে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে পারে।

ফরেন রিজার্ভ ম্যানেজ করার প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে সরাসরি মার্কেটে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এখানে মূল উদ্দেশ্যই থাকে অনেক বেশি অস্থিতিশীল এক্সচেঞ্জ রেটকে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে নিয়ে আসা।

আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে ইচ্ছা করেই নিজের দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করতে পারে। এতে করে ডলারের বিপরীতে আরো বেশি পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয়। এতে করে রপ্তানি বৃদ্ধি করা যায় এবং অর্থনীতিতে একটি প্রতিযোগীতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়।

দেশের সকল আমদানী যেহেতু ফরেন রিজার্ভের উপর নির্ভরশীল, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনে আমদানীতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। কারণ, অনেক বেশি সময় ধরে যদি দেশে রপ্তানির চাইতে আমদানি বেশ হতে থাকে তাহলে একসময় ফরেন রিজার্ভ অনেক বেশি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর ফরেন রিজার্ভ শেষ হয়ে গেলে কোনো দেশই প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারবে না।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট

দেশে কখনো কোনো অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তা হ্যান্ডেল করার মূল কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপরেই এসে পরে। এই সেকশনে আমরা জানবো যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস ম্যানেজ করার জন্য কি কি করে থাকে।

১। নজরদারিঃ

ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কমপোনেন্টগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমাগত নজরদারির আওতায় রাখে। এটা হতে পারে ক্রেডিট কোয়ালিটি এনশিওর করা, সম্পদের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান যাচাই করা ইত্যাদি।

২। কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করাঃ

একটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে তার সাথে অনেক সাধারণ মানুষের অর্থ হারাতে হয়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাতে করে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া না হয়। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়ে সহায়তা করে।

পরিসংহার

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আধুনিক অর্থনীতির মেরুদন্ড বললেও কিন্তু ভুল হবে না। আজকের লেখায় আশা করি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ৫টি কাজ অর্থাৎ, মনিটারি পলিসি তৈরি করা, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে রেগুলেট করা, নোট ইস্যু করা, ফরেন রিজার্ভ মেইনটেইন করা ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস মোকাবিলা করা সম্বন্ধে একটি বিস্তারিত ধারনা দিতে পেরেছি। দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দায়িত্ব যেই প্রতিষ্ঠানের হাতে, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে না জানলে তো আর আর্থিক শিক্ষা পূরন করা যাবে না। 
 
 
 
 
 


Next to read
Canvas & Methods
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)

ইম্প্যাথি ম্যাপিং মূলত একধরনের ট্যুলস। এটি গ্রাহকদের ভাবনা-চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, অনুভব, উপলব্ধি সহ নানাবিধ তথ্য, উপাত্ত এর সমন্বয়ে গঠিত সুশৃঙ্খল এবং সুবিন্যস্ত একটি চার্ট। উল্লেখিত বিষয় সমূহ সম্পর্কিত তথ্য উপাত্তের খুব চমৎকার একটা ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন পাওয়া যায় এই ইম্প্যাথি ম্যাপিং এর মাধ্যমে। যা মূলত আপনার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহককে ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করে।

সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)
Canvas & Methods
সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)
ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)
Business Models
ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)
সাবস্ক্রিপশন মডেল (Subscription Model)
Business Models
সাবস্ক্রিপশন মডেল (Subscription Model)
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
Marketing
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
রেড ওশান এবং ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি (Red Ocean & Blue Ocean Strategy with Example
Business
রেড ওশান এবং ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি (Red Ocean & Blue Ocean Strategy with Example
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
Investment
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)
Marketing
অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)
World Trade Organization (WTO) Agreements
Agreement
World Trade Organization (WTO) Agreements
সিঙ্গেল ব্রান্ডেড ই-কমার্স (Single Branded E-commerce)
E-Commerce
সিঙ্গেল ব্রান্ডেড ই-কমার্স (Single Branded E-commerce)