ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কী? সংজ্ঞা, মডেল এবং উদাহরণ

315
article image

একটি প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে একাধিক ব্র্যান্ড এবং সাব-ব্র্যান্ড কিভাবে পরিচালিত হবে এবং তারা মার্কেটের কোন কোন সেগমেন্টের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে কি কি কাজ করবে তাই হচ্ছে ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার। ব্র্যান্ড আর্কিটেকচারের বহুল ব্যবহৃত ৩টি মডেল হচ্ছে - The Branded House, The House of Brands এবং The Hybrid Model।

Key Points

  • ব্র্যান্ড আর্কেটেকচার বলতে একটি প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে অন্যান্য ব্র্যান্ড, সাব-ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস কিভাবে সাজানো থাকে সেই স্ট্রাকচারকে বোঝানো হচ্ছে।
  • ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার যদি ভালোভাবে সাজানো না থাকে তাহলে কাস্টমাররা যেমন কনফিউজড হবেন, ঠিক তেমনই প্যারেন্ট কোম্পানীর ম্যানেজারদেরও ব্যবস্থাপনাজনিত সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে।
  • The Branded House মডেল ব্যবহার করা হয় যখন একটি কোম্পানীর বেশ ভালো পরিমাণ লয়াল কাস্টমার তৈরি হয়ে যায়।
  • ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার ভালো হলে একটি ব্র্যান্ডের ক্যাম্পেইনে খুব সন্তর্পণে আরেকটি ব্র্যান্ডকে ব্যবহার করা যায়।

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কী? সংজ্ঞা, মডেল এবং উদাহরণ

আপনার যদি মার্জার এবং অ্যাক্যুইজেশনের মাধ্যমে আপনার কোম্পানী বড় করার ইচ্ছা থাকে তাহলে ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার আপনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমান সময়ে কোম্পানীগুলো এতো বেশি পরিমানে মার্জার এবং অ্যাক্যুইজেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যে নিজেদের ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার বলতে আর কিছু থাকছে না। ফলে গ্রাহকদের কাছে নিজেদের কোম্পানী সম্পর্কে যেই ম্যাসেজটি তারা পৌছে দেয়ার চেষ্টা করছে, তা হয়ে উঠছে না। এতে করে গ্রাহকদের মনেও বাড়ছে কনফিউশন। অথচ, গ্রাহকদের মনে একটি নির্দিষ্ট স্থান দখল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে সবধরণের কনফিউশন দূর করা। তাই আজকের লেখায় আমরা জানবো ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কি, এর বিভিন্ন মডেল এবং কিভাবে আপনি আপনার কোম্পানীর ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার সাজাতে পারেন।

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কী?

ব্র্যান্ড আর্কেটেকচার বলতে একটি প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে অন্যান্য ব্র্যান্ড, সাব-ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস কিভাবে সাজানো থাকে সেই স্ট্রাকচারকে বোঝানো হচ্ছে। একটি প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে একের অধিক ব্র্যান্ড থাকতে পারে। এমতাবস্থায়, ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার যদি ভালোভাবে সাজানো না থাকে তাহলে কাস্টমাররা যেমন কনফিউজড হবেন, ঠিক তেমনই প্যারেন্ট কোম্পানীর ম্যানেজারদেরও ব্যবস্থাপনাজনিত সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে।

অপরদিকে একটি ভালো ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কোম্পানীটি সম্পর্কে কাস্টমারদের পজিটিভ সিগন্যাল পাঠায়, কোম্পানীর যাবতীয় ব্যবস্থাপনাজনিত কাজও অনেক সহজ হয়ে ওঠে।

৩ ধরণের ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার মডেল

ব্যবস্থাপকদের মাঝে ক্রিয়েটিভিটি থাকলে কোম্পানীগুলো সাধারণত নিজেদের পছন্দসই ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করে নেয়। তবে পৃথিবীতে ব্র্যান্ড আর্কিটেকচারের ৩টি মডেল সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই ৩টি মডেল নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করবো।

The Branded House

এই মডেলে একটি প্যারেন্ট কোম্পানী বা অর্গ্যানাইজেশনের অধীনে অনেকগুলো ব্র্যান্ড এবং সাব-ব্র্যান্ড থাকতে পারে যারা প্যারেন্ট কোম্পানীর নামের পুরোটা অথবা কিছু অংশ এবং লোগোকে নিজেদের লোগো হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। অর্থাৎ, প্যারেন্ট কোম্পানীর মার্কেটিং এবং সুনাম ব্যবহারের করেই এই ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসা পরিচালিত হয়।

এই মডেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ হতে পারে FedEx। FedEx একটি প্যারেন্ট কোম্পানী এবং এর অধীনে এই নামেই আরো অনেক সার্ভিসের উপস্থিতি রয়েছে। যেমন -

  • FedEx Express
  • FedEx Freight
  • FedEx Ground
  • FedEx Logistics

এই সবগুলো সার্ভিসই FedEx প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং সবগুলোতেই FedEx-এর নাম এবং লোগো ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে আলাদাভাবে আর এগুলোর মার্কেটিং করার প্রয়োজন পরছে না।

The Branded House মডেল ব্যবহার করা হয় যখন একটি কোম্পানীর বেশ ভালো পরিমাণ লয়াল কাস্টমার তৈরি হয়ে যায়। তখন তারা এই কাস্টমারদের অন্যান্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে আরো অনেক প্রোডাক্ট বা সার্ভিস যোগ করেন। আর কাস্টমাররা যেহেতু আগে থেকেই প্যারেন্ট কোম্পানীর সাথে পরিচিত, তাই বাকি সার্ভিসগুলোও তারা এই কোম্পানী থেকে নিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

তবে এই মডেলের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধাসমূহ

প্যারেন্ট কোম্পানীর সুনাম ব্র্যান্ড এবং সাব-ব্র্যান্ডগুলো কাজে লাগে। আর কাস্টমাররা সবগুলো ব্র্যান্ডকে একই কোম্পানীর অধীনে বলে জানেন তাই সার্বিক মার্কেট ইক্যুইটি বৃদ্ধি পায়।

কাস্টমারদের মন থেকে কনফিউশন দূর হয়ে যায়। নিজেদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সম্পর্কে কাস্টমারদের একটি স্বচ্ছ ধারণা দেয়া সম্ভব হয়।

প্রত্যাকটি ব্র্যান্ডের জন্য আলাদা আলাদা মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা প্রয়োজন পরে না। প্যারেন্ট কোম্পানীর মার্কেটিং-এর মাধ্যমেই সবার মার্কেটিং হয়ে যায়। তাই অনেক টাকা বেচে যায়।

অসুবিধাসমূহ

অধীভুক্ত ব্র্যান্ডগুলোতে কোনো রকম সমস্যা হলে তা প্যারেন্ট কোম্পানীর সুনামকে এফেক্ট করে। এই কারণে একটি ব্র্যান্ডের সুনাম নষ্ট হলে পুরো স্ট্রাকচারটিই ভেঙে পরার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

এই মডেলের মাধ্যমে কাস্টমারদের কনফিউশন যেমন দূর করা যায়, তেমনই ভুল ব্যবহারে কাস্টমাররা আরো বেশি কনফিউজড হয়ে পরতে পারেন। একটি প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে অনেক বেশি পরিমাণে সার্ভিস যোগ করে ফেললে কোম্পানীর মূল আইডেন্টিটি কোনটি তা বুঝতে কাস্টমাররা হিমশিম খাবেন।

প্যারেন্ট কোম্পানীর ভুল পরিচালনা কারণে সবগুলো ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্টের গ্রোথ কমে যেতে পারে। আবার একটি ব্র্যান্ড ঠিকভাবে পারফর্ম করতে না পারলে পুরো অর্গ্যানাইজেশনের সমস্যা দেখা দেয়।

The House of Brands

এই মডেলে একটি প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে অনেকগুলো স্বতন্ত ব্র্যান্ড অথবা প্রোডাক্ট থাকে, যেগুলো সাধারণত প্যারেন্ট কোম্পানীর নাম এবং লোগো ব্যবহার করে না। এখানে প্যারেন্ট কোম্পানীর চাইতে অধিভুক্ত ব্র্যান্ডগুলোর গুরুত্ব বেশি। কাস্টমাররা সাধারণত প্যারেন্ট কোম্পানীটিকে চেনেন না অথবা চিনলেও অধিভুক্ত ব্র্যান্ডগুলোর সাথেই তাদের মূল কানেকশন থাকে। এখানে প্যারেন্ট কোম্পানীর কাজ মূলত নিয়ন্ত্রণ এবং বিনিয়োগ কন্ট্রোল করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

এই মডেলের একটি জনপ্রিয় উদাহরণ হচ্ছে আমেরিকান কোম্পানী Proctor & Gamble। এই কোম্পানীটির অধীনে আরো অনেক ব্র্যান্ড রয়েছে যেগুলোর পরিচিতি এই প্যারেন্ট কোম্পানীর থেকেও অনেক বেশি। যেমন -

  • Oral B
  • Always
  • Pampers
  • Vicks
  • Ariel

বোঝাই যাচ্ছে যে, এই মডেলে ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের স্বতন্ত্র নাম এবন লোগো ব্যবহার করে থাকে, যেখানে প্যারেন্ট কোম্পানীর উপস্থিতি মোড়কের কোনো এক কর্ণারে ছোট্ট ভাবে উপস্থাপন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। যেহেতু নিজেরা স্বতন্তভাবে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, তাই ব্র্যান্ডগুলো প্যারেন্ট কোম্পানীর সাথে নিজেদের কানেকশনের মার্কেটিং করেন না।

The Branded House মডেলের মতোই এই মডেলেরও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধাসমূহ

এখানে ব্র্যান্ডগুলোর পরিচিতি যেহেতু প্যারেন্ট কোম্পানী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে না তাই ব্র্যান্ডগুলো একটি ডাইভারসিফাইড অডিয়েন্সের কাছে পৌছাতে পারে। একই সাথে বিভিন্ন ধরণের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার সুবিধাও এই মডেলে রয়েছে।

যেহেতু এই মডেলে একটি ব্র্যান্ডের ভুল অন্য ব্র্যান্ডগুলোকে এফেক্ট করে না তাই ব্র্যান্ডগুলো অনেক বেশি রিস্ক নিতে পারে। অনেকসময় একে অপরের প্রতিযোগী হিসেবে কাজ করে এরা অনেক বড় মার্কেট শেয়ার গ্রহণ করে ফেলে যা সবশেষে একটি প্যারেন্ট কোম্পানীকেই সুবিধা দেয়।

একটি ব্র্যান্ডে সমস্যা দেখা দিলে পুরো স্ট্রাকচারটি ভেঙে পরার সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া যায়।

অসুবিধাসমূহ

এই মডেলে প্যারেন্ট কোম্পানীকে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা খরচ করতে হয়। কারণ, আগে থেকে তৈরি থাকা সুনাম নতুন কোনো ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে পারে না। এতে করে সবগুলো ব্র্যান্ডকে একদম গোড়া থেকে গড়ে তুলতে হয়।

যেহেতু প্রকাশ্যে প্যারেন্ট কোম্পানীর কোনো কাজের এফেক্ট ব্র্যান্ডগুলোর উপর পরে না তাই এই মডেলের ব্র্যান্ডগুলোকে কাস্টমারের কাছে অনেক ছোট বলে মনে হয়। অপরদিকে The Branded House মডেলে যেহেতু প্যারেন্ট কোম্পানীর দমেই সবগুলো ব্র্যান্ডগুলো কাজ করে আর প্যারেন্ট কোম্পানী এমনিতেই অনেক বড় হয়ে থাকে তাই এই মডেলে এই অসুবিধা হয় না।

অনেকসময় ব্র্যান্ডগুলোর ভ্যালু বেশি নাকি প্যারেন্ট কোম্পানীর ভ্যালু বেশি এই নিয়ে কনজ্যুমারদের মনে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।

The Hybrid Brand Architecture

হাইব্রিড মডেল উপরের দুইধরনের মডেলেরই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ, এখানে প্যারেন্ট কোম্পানীটি কোনো একটি নির্দিষ্ট মডেল ফলো না করে দুই ধরণের মডেলকেই নিজেদের ব্র্যান্ডিং-এর কাজে ব্যবহার করেন। এই মডেল ব্র্যান্ড এবং সাব-ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের মাঝে কোনো ধরণের মিল না রেখে ব্র্যান্ডিং করে। তবে একটি কমন বিষয় থাকে যে, তারা সবাই প্যারেন্ট কোম্পানীর নিয়ম-নীতি অনুযায়ী নিজেদের ব্র্যান্ডিং করেন। তাই আপাতদৃষ্টিতে কোনো ধরণের মিল লক্ষ্য করা না গেলেও নিখুতভাবে প্যারেন্ট কোম্পানীর সাথে তাদের মিল খুজে পাওয়া যায়।

এই মডেলের একটি জনপ্রিয় উদাহরণ হতে পারে আমাদের সকলের পরিচিত Toyata কোম্পানী। এটি একটি প্যারেন্ট কোম্পানী এবং এর অধীনে বেশ কিছু ব্র্যান্ড রয়েছে। যেমন -

  • Lexus
  • Scion
  • Hino
  • Ranz
  • Daihatsu

এখানে, একটি ব্র্যান্ডের সাথে অন্য কোনো ব্র্যান্ডের মিল না থাকলেও এরা সবাই টয়োটার ব্র্যান্ডিং-এর অধীনে নিজেদের গাড়ি এবং যন্ত্রপাতি বিক্রয় করে থাকেন।

উপরিউক্ত মডেলগুলোর মতোই এখানেও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধাসমূহ

এই মডেল উপরিউক্ত উভয় মডেলের সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। অর্থাৎ, প্যারেন্ট কোম্পানী একের অধিক ব্র্যান্ড নিজের অধীনে নিয়ে আসলেও তাদের একের প্রভাব অন্যের উপর পরে না। তাই প্রকৃতপক্ষে এখানে প্যারেন্ট কোম্পানীটিরই লাভ হয়। আবার ব্র্যান্ডগুলো যেহেতু প্যারেন্ট কোম্পানীর ব্র্যান্ডিং ব্যবহার করে, তাই তারা যখন নতুন কোনো সাব-ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করে তখন তার জন্য মার্কেট শেয়ার দখল করা সহজ হয়ে ওঠে।

অসুবিধাসমূহ

সুবিধার পাশাপাশি উপরিক্ত মডেলগুলোর অসুবিধাও এখানে চলে আসে। আবার প্যারেন্ট কোম্পানীর অধীনে ব্র্যান্ড আবার তার অধীনে সাব-ব্র্যান্ডের একই ধরণের স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা হলে কাস্টমারদের মাঝে ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি নিয়ে কনফিউশন তৈরি হতে পারে।

একটি পরিকল্পিত ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার গঠনের তাৎপর্য

অনেকেই মনে করেন যে একটি ভালো ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরির পরিকল্পনা শুধু বড় বড় কোম্পানীগুলো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এটি সত্য নয়। ছোট এবং মাঝারি সাইজের কোম্পানীগুলোও ব্র্যান্ড আর্কিটেকচারের সুফলগুলো ভোগ করতে পারে। এর গুরুত্ব বোঝানে কিছু পয়েন্ট নিচে তুলে ধরা হলো -

মার্কেটিং খরচ কমে যায়

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার ভালো হলে একটি ব্র্যান্ডের ক্যাম্পেইনে খুব সন্তর্পণে আরেকটি ব্র্যান্ডকে ব্যবহার করা যায়। যেহেতু একাধিক ব্র্যান্ড একসাথে কাজ করছে তাই কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং খরচ অনেক কমে যায়।

কোনো একটি মার্কেট সেগমেন্টকে খুব ভালোভাবে টার্গেট করা যায়

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার দেখলেই যেহেতু খুব সহজে বোঝা যায় যে কোনো ব্র্যান্ড কোন সেগমেন্ট নিয়ে কাজ করছে, তাই কোনো ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্যারেন্ট কোম্পানী চাইলেই কোনো নির্দিষ্ট মার্কেট সেগমেন্ট ধরার উদ্দেশ্যে একেকটি ব্র্যান্ডকে একেকটি চাহিদা পূরণের কাজে নিয়োজিত করতে পারে। ফলে পুরো মার্কেট সেগমেন্টের বেশিরভাগ অংশ উক্ত কোম্পানী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

আপনার ব্র্যান্ডের পজিশন খুব স্পষ্টভাবে কাস্টমারদের কাছে তুলে ধরা যায়

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচারে যেহেতু সবগুলো ব্র্যান্ড কোনো না কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করছে, তাই এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলোর মার্কেট পজিশনিং ভালো হয় এবং গ্রাহকরা খুব সহজে বুঝতে পারেন যে ব্র্যান্ডটি তাদের কোন ধরণের চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে।

গ্রোথ এনশিওর করা যায়

এখানে অনেকগুলো ব্র্যান্ড একইসাথে কাজ করে এবং একের গ্রোথের উদ্দেশ্যে অন্যরাও সাহায্য করে থাকে। তাই আল্টিমেটলি ব্র্যান্ডগুলোর মাঝে একধরণের মিচুয়াল গ্রোথ রিলেশনশিপ দেখা দেয় আর স্টকহোল্ডারদেরও সন্তুষ্ট রাখা যায়।

কিভাবে ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করবেন?

সবকিছু জানার পর এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে কিভাবে আপনি আপনার কোম্পানীর ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করতে পারেন। শুরুতে বিষয়টি খুবই জটিল মনে হতে পারে। তবে আসলে ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করা খুবই সরল তবে সময়সাপেক্ষ একটি কাজ। একদিন বা দুইদিনে এটি তৈরি করা যায় না। বেশ ভালো পরিমাণ সময় ইনভেস্ট করে এবং বিভিন্ন ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করার মাধ্যমেই একটি কোম্পানী নিজের জন্য পারফেক্ট ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করতে সক্ষম হয়। এর জন্য কিছু স্টেপ নিচে আলোচনা করা হলো।

রিসার্চ

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরির প্রথম ধাপেই আপনাকে আপনার টার্গেট কাস্টমারদের নিয়ে প্রচুর পরিমাণে রিসার্চ করতে হবে। আপনার ব্র্যান্ডগুলো দ্বারা আপনি কোন কাস্টমারদের টার্গেট করছেন, আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে তাদের মনোভাব কি, লয়ালিটি আছে কি না, আপনার ব্র্যান্ডকে তারা কিভাবে এক্সেপ্ট করতে পারবেন বা পারবেন না, এইসব বিষয় নিয়েই আপনার প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

রিসার্চ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করলেই আপনি বুঝে যাবেন যে আসলে কোন মডেলটি আপনার কোম্পানীর জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। যদি আপনার ব্র্যান্ডগুলো থেকে আপনার প্যারেন্ট কোম্পানীকেই কাস্টমাররা বেশি ভালভাবে চিনে থাকেন তবে আপনার জন্য The Branded House মডেলটি সবচেয়ে ভালো হবে। আবার যদি আপনার কাস্টমারদের কাছে প্যারেন্ট কোম্পানীর চাইতে অধীনস্ত ব্র্যান্ডগুলোর পরিচিতি বেশি থাকে তাহলে আপনার জন্য The House of Brands মডেলটি বেশি ভালো হবে।

আর যদি আপনার মার্কেট সেগমেন্টে উভয় ধরণের কাস্টমার থেকে থাকেন তাহলে আপনি হাইব্রিড মডেলটি ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ কোম্পানীই এই মডেলটি ব্যবহার করছেন। এতে করে ইনডিভিজুয়াল মডেলগুলোর সুবিধাগুলো গ্রহণ করে অসুবিধাগুলো এড়ানো সম্ভব হয়। তবে মনে রাখবেন, হাইব্রিড মডেলে আপনাকে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হবে।

তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য আপনি অনলাইন বা অফলাইন যেকোনো মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি কাস্টমারদের সাথে মুখোমুখি যোগাযোগ স্থাপণ করতে পারেন।

স্ট্র্যাটেজি তৈরি

তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করার পর এই পর্যায়ে আপনাকে একটি মডেল সিলেক্ট করতে হবে। আপনার মাঝে যদি কনফিউশন থাকে যে কোন মডেল আপনার কোম্পানীর জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করবে তাহলে আপনি ভিজুয়াল ইলাস্ট্রেশনের সাহায্যে সবগুলো মডেলের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারেন। এভাবে সহজেই বুঝতে পারেবন যে আপনার জন্য কোন মডেলটি এপ্রোপ্রিয়েট হবে।

তবে যেই মডেলে আপনি ব্র্যান্ডগুলোর মাঝে ক্রস-প্রমোশন করতে পারবেন এবং আপনার ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার খুব স্পষ্টভাবে কাস্টমারদের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে সেই মডেলটাই ফলো করা ভালো। ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরির সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কাস্টমারদের মনে কোনো ধরণের কনফিউশন থাকতে না দেয়া। তাই এটিকেই প্রথম প্রায়োরিটি মনে করতে হবে।

এরপর আপনাকে একটি প্র্যাক্টিকাল স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করতে হবে যে কিভাবে আপনি উক্ত মডেলটি আপনার কোম্পানীতে প্রয়োগ করবেন। স্ট্র্যাটেজি যতো বাস্তবসম্মত হবে, সফল হওয়ার সম্ভাবনা ততোই বেশি থাকবে। স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে বেশ কিছু পরিমাণ টাকা খরচ করতে হতে পারে।

মাইগ্রেশন

আগের ধাপে তৈরি করা স্ট্র্যাটেজি এই ধাপে আপনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্থাৎ, আপনার বর্তমান যেই মডেলটি রয়েছে সেটি ভেঙে নতুন মডেলে মাইগ্রেশন করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে, ব্র্যান্ডগুলো নাম কেমন হবে, তাদের মাঝে ইন্টারকানেকশন থাকবে কি না, অর্গানাইজেশনাল হায়ারার্কিতে তাদের অবস্থান কোথায় হবে সেই বিষয়েও কাজ করতে হবে।

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করার সময় যে ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি যেকোনো কোম্পানীর জন্যই একটি সেনসিটিভ কাজ। তাই অনেকগুলো বিষয় মাথায় রেখেই এই আর্কিটেকচার তৈরি করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফ্যাক্টর নিয়ে আলোচনা করা হলো।

গ্রোথ স্ট্র্যাটেজি

ভবিষ্যতে আপনি আপনার কোম্পানী কিভাবে বড় করবেন সেই বিষয়টিও মাথা রেখে আর্কিটেকচার সাজাতে হবে। এমন কোনো স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা যাবে যাতে করে আপনার কোম্পানীর গ্রোথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

খরচ

আগেই বলেছি যে, ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার ইমপ্লিমেন্ট করার সময় আপনার বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হবে। তাই খরচের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে যাতে করি অতিরিক্ত খরচ আপনার কোম্পানীর জন্য বোঝা না হয়ে ওঠে।

মার্কেট

আপনি কোম্পানীর সবগুলো ব্র্যান্ড যদি একটিমাত্র মার্কেটকে টার্গেট করে থাকে তাহলে আপনার জন্য The Branded House মডেলটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। আবার আপনার ব্র্যান্ডগুলো যদি পুরোপুরি ভিন্ন মার্কেটকে টার্গেট করে তৈরি করা হয় তাহলে আপনার জন্য The House of Brands মডেলটি বেশি ভালো হবে। তাই আর্কিটেকচার তৈরি করার সময় অবশ্যই মার্কেটকে বিবেচনায় রেখে কাজ করতে হবে।

অর্গানাইজেশনাল কালচার

ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার সাজানোর সময় অবশ্যই আপনার কোম্পানীর কালচারের কথা মাথায় রাখতে হবে। হঠাৎ করেই যদি নতুন কোনো কালচার আপনি ইমপ্লিমেন্ট করতে চান তাহলে পারবেন না। এতে করে আপনার কর্মীরাও সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

ঝুকি

নতুন কোনো ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার তৈরি করার সময় ঝুকি থাকবেই। তাই ঠিক কতোটা ঝুকি আপনি এবং আপনার কোম্পানী গ্রহণ করতে পারবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ভালো।

ব্র্যান্ড ইকুইটি

আপনার যদি মনে হয় যে নতুন মডেলের ফলে আপনার ব্র্যান্ড ইকুইটি কমে যেতে পারে তাহলে পুরনো মডেলে থাকাই ভালো। কারণ, ব্র্যান্ড ইকুইটি কমে গেলে মডেল কোনো কাজেই আসবে না।

পরিসংহার

একটি পরিকল্পিত ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার পুরো অর্গ্যানাইজেশনের জন্য অনেকগুলো সুফল বয়ে আনতে পারে। এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি সহজ হয়ে ওঠে এবং ব্র্যান্ড সম্পর্কে কাস্টমারদের একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করা সম্ভব হয়। অপরদিকে অপরিকল্পিত ব্র্যান্ড আর্কিটেকচারের কারণে করপোরেট জটিলতা অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে যা পারতপক্ষে একটি প্যারেন্ট কোম্পানী এবং সবগুলো ব্র্যান্ড ও সাব-ব্র্যান্ডের জন্যই ক্ষতিকারক। তাই কোম্পানীগুলোর উচিত নতুন নতুন ব্র্যান্ড ও সাব-ব্র্যান্ড নিজের অধীনে নিয়ে আসার শুরুতেই নিজেদের ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কেমন হবে সেই বিষয়ে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করে নেয়া। 
 
 
 


  • https://brandmasteracademy.com/brand-architecture/
  • https://www.feedough.com/brand-architecture/
  • https://elementthree.com/blog/why-brand-architecture-matters-and-what-you-can-do-about-it/
  • https://www.qualtrics.com/experience-management/brand/brand-architecture/
Next to read
Canvas & Methods
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)

ইম্প্যাথি ম্যাপিং মূলত একধরনের ট্যুলস। এটি গ্রাহকদের ভাবনা-চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, অনুভব, উপলব্ধি সহ নানাবিধ তথ্য, উপাত্ত এর সমন্বয়ে গঠিত সুশৃঙ্খল এবং সুবিন্যস্ত একটি চার্ট। উল্লেখিত বিষয় সমূহ সম্পর্কিত তথ্য উপাত্তের খুব চমৎকার একটা ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন পাওয়া যায় এই ইম্প্যাথি ম্যাপিং এর মাধ্যমে। যা মূলত আপনার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহককে ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করে।

কাস্টমার এক্সপ্লোরেশন ম্যাপ (Customer Exploration Map)
Canvas & Methods
কাস্টমার এক্সপ্লোরেশন ম্যাপ (Customer Exploration Map)
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
Marketing
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)
Logo
লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)
অর্থনীতি কী?
Economics
অর্থনীতি কী?
ব্যষ্টিক অর্থনীতি বা Micro Economics কী?
Economics
ব্যষ্টিক অর্থনীতি বা Micro Economics কী?
সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রো ইকোমিক্স ( Macro Economics ) কী?
Economics
সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রো ইকোমিক্স ( Macro Economics ) কী?
বিক্রয়ের ১০টি ভুল যেগুলো প্রতিটি বিক্রয়কর্মীর এড়ানো উচিৎ
Sales
বিক্রয়ের ১০টি ভুল যেগুলো প্রতিটি বিক্রয়কর্মীর এড়ানো উচিৎ
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
Investment
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
মার্কেটিং এ ৫ সি (5 C's Of Marketing)
Marketing
মার্কেটিং এ ৫ সি (5 C's Of Marketing)