সাবস্ক্রিপশন মডেল (Subscription Model)

সাবস্ক্রিপশন মডেল এ গ্রাহকরা মূলত কোনও সেবা বা পণ্য ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করে থাকে। মাসিক বা বাৎসরিক ভিত্তিতেই বেশিরভাগ সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান গুলো চার্জ বা সাবস্ক্রিপশন ফি নিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানভেদে এই সময়ের ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। এটি সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কৌশলের উপর নির্ভর করে।
Key Points
- সাবস্ক্রিপশন মডেল এ গ্রাহকরা মূলত কোনও সেবা বা পণ্য ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করে থাকে
- ষোড়শ শতাব্দীতে সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং বই প্রকাশনীগুলোর হাত ধরে সাবস্ক্রিপশন মডেল এর ব্যবহার শুরু হয়।
- বর্তমানে মূলত সফটওয়্যার অ্যাস এ্যা সার্ভিস (Software As A Service = SAAS) ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুলো সাবস্ক্রিপশন মডেল এর সবচেয়ে ব্যবহার করছে।
- সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত কোনো একটি পণ্য বিক্রয় করার পরিবর্তে বরং অনেকগুলো পণ্যের সমষ্টি সম্বলিত নির্দিষ্ট একটি পরিষেবা গ্রাহকদের কাছে বিক্রয় করে
- সাবস্ক্রিপশন বিজনেস মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাবস্ক্রাইবার বা গ্রাহকরা মূলত একটি রেগুলার ব্যসিসে অর্থ প্রদান করে
সাবস্ক্রিপশন মডেল
লক্ষ্য করেছেন, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনেকসময় মাসিক কিংবা বাৎসরিক একটা মূল্য নির্ধারণ করে আমাদের সেবা প্রদান করে থাকে। মূলত তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যে মডেলটি অনুসরণ করে তা হলো বহুল প্রচলিত সাবস্ক্রিপশন মডেল।
সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত কোনো একটি পণ্য বিক্রয় করার পরিবর্তে বরং অনেকগুলো পণ্যের সমষ্টি সম্বলিত নির্দিষ্ট একটি পরিষেবা গ্রাহকদের কাছে বিক্রয় করে। এক্ষেত্রে সাবস্ক্রাইবার বা গ্রাহকরা মূলত ঐ সেবাটি গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরিশোধ করে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
ষোড়শ শতাব্দীতে সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং বই প্রকাশনীগুলোর হাত ধরে সাবস্ক্রিপশন মডেল এর ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এই মডেল এর ব্যবহার খুব দ্রুতই ত্বরান্বিত হয়। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণেই মূলত ওয়ান টাইম পারচেজ (one time purchase) পদ্ধতি থেকে বের হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাবস্ক্রিপশন মডেল এর দিকে ঝুঁকছে।
সাবস্ক্রিপশন মডেল সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ
বর্তমানে সাবস্ক্রিপশন মডেল এর ব্যবহার অনেক বিস্তৃত। ব্যায়ামাগার, ক্যাবল টেলিভিশন, স্যাটেলাইট রেডিও, ওয়েবসাইট, সংবাদপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নানাবিধ প্রতিষ্ঠান এই সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহার করে আসছে। এছাড়াও বর্তমানে নতুন ধরনের সাবস্ক্রিপশন বক্স ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে খাবার সরবারহ এবং বিতরণ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুলো সাবস্ক্রিপশন বক্স এর উত্তম রূপে ব্যবহার করছে।
বর্তমানে মূলত সফটওয়্যার অ্যাস এ্যা সার্ভিস (Software As A Service = SAAS) ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুলো সাবস্ক্রিপশন মডেল এর সবচেয়ে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভার্চুয়াল পণ্য বা পরিষেবা গুলো কিংবা কোনো সেবা বা সার্ভিস নির্দিষ্ট সাবস্ক্রিপশন ফি এর বিনিময়ে ব্যবহার করার সুযোগ পায়।
আমরা ইতোপূর্বেই জেনেছি যে, সাবস্ক্রিপশন মডেল এ গ্রাহকরা মূলত কোনও সেবা বা পণ্য ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করে থাকে। মাসিক বা বাৎসরিক ভিত্তিতেই বেশিরভাগ সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান গুলো চার্জ বা সাবস্ক্রিপশন ফি নিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানভেদে এই সময়ের ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। এটি সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কৌশলের উপর নির্ভর করে।
আর এই নির্দিষ্ট সময় পর গ্রাহকরা তাঁদের সাবস্ক্রিপশন টি আবার পুনঃনবায়ন (Renew) করতে পারে কিংবা তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী বাতিল ও করে দিতে পারে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান গুলো গ্রাহকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতি বা প্যাকেজ রাখে। আর এক্ষেত্রে গ্রাহকরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে তাঁরা কোন সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতিটি গ্রহণ করবে।
সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে সফটওয়্যার অ্যাস এ্যা সার্ভিস (Software As A Service) ভিত্তিক
সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে সাফল্য পেতে করণীয়
প্রথমেই যে জিনিষটা দরকার তা হলো সেবা বা পণ্য। সাথে চমৎকার এবং অনন্য একটি আইডিয়া। প্রথমত আপনি কোন ধরনের সেবা বা পণ্য নিয়ে গ্রাহকদের কাছে পৌছাতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কে জানতে হবে। এবং সেই সেবা বা পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা কিংবা চাহিদা গ্রাহকদের আছে কিনা সে ব্যাপারটিও বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। আর যদিও বা চাহিদা থাকে তবে কি তাঁরা ঐ সেবাটি ব্যবহারের জন্য সাবস্ক্রিপশন করবে কিনা, এসব ব্যাপারে সম্ভাব্য কিন্তু বাস্তবিক ধারণা রাখতে হবে।
আর তাছাড়া বর্তমান সময় প্রতিযোগিতা পূর্ণ সময়। তাই একই মার্কেটে একই সেবা দানকারী বা সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অসংখ্য। যেমন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এর কথা হিসেব করলে এমাজন প্রাইম (Amazon Prime), নেটফ্লিক্স (Netflix), হুলু (Hulu) সহ অনেক প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই একাধিক প্রতিষ্ঠান বিরাজমান। সেক্ষেত্রে আপনার সামগ্রিক কন্টেন্ট বা পণ্যের যোগান যেমন বেশি হতে হবে, ঠিক তেমনি মার্কেটের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দূর্বলতা গুলো খুঁজে বের করতে হবে। অতঃপর সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে পরিষেবাটি কে গ্রাহক ব্যবহারযোগ্য করতে হবে।
গ্রাহক, ক্রেতা বা কাস্টমার যাই বলি না কেন, তাঁরাই কিন্তু যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই গ্রাহক কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো সংস্থা যে কেউই হতে পারে। আর এই গ্রাহকরা এমন এক সম্পদ যা পাওয়াটাও যেমন কষ্টসাধ্য তেমনি ধরে রাখাটাও অনেক কঠিন। সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারে সফল হওয়াটাও কিন্তু অনেকাংশে নির্ভর করে এই গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং আস্থা অর্জন এর উপর। যেহেতু এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকরা দীর্ঘমেয়াদী হয়। আর তাই এই দীর্ঘমেয়াদী গ্রাহক তৈরী করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
সেবা বা পরিষেবা গুলোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে গ্রাহক নির্ভরশীলতা তৈরী করতে হবে। গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে তাঁদের রূচি, অভিমত, পছন্দ গুলো জানতে হবে। অতঃপর ঐ জাতীয়ই সেবা, পণ্য বা পরিষেবা গুলো গ্রাহকদের সামনে প্রদর্শন করতে হবে, যা ঐ গ্রাহকের পছন্দের। এছাড়াও নানা বিষয়াদি বিশ্লেষণ কিংবা যাচাই-বাছাই করে সর্বোপরি গ্রাহক সন্তোষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি সব দিক মিলিয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেন, গ্রাহকরা প্রতিযোগি প্রতিষ্ঠানের ঐ একই সেবার দিকে আকৃষ্ট না হয়ে বরং আপনার প্রতিষ্টানেরই নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে থাকে।
সাবস্ক্রিপশন ফি বা পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের যাতে ভোগান্তি না পোহাতে হয়, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে গ্রাহক সুবিধামতো বিভিন্ন মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়াও গ্রাহকদের নানাবিধ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ এর ব্যবস্থা করতে পারেন। সাবস্ক্রিপশন নবায়ন (Renew) করার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।
যেহেতু গ্রাহক সন্তুষ্টিই ব্যবসার অন্যতম নিয়ামক, তাই খেয়াল রাখতে হবে সন্তুষ্টির পরিবর্তে গ্রাহক যেন আবার বিরক্ত না হয়। অর্থাৎ একই ধরনের কন্টেন্ট বা পরিষেবা যেন গ্রাহককে বিচ্যুত করে না ফেলে সাবস্ক্রিপশন থেকে। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যে ধরনের সেবা, পরিষেবা যা কিছুই আপনি গ্রাহক কে প্রদান করুন না কেন তাতে বৈচিত্র্যতা আনতে হবে। আপনি যেই পণ্য বা সেবা নিয়েই কাজ করুন না কেন সবসময় গ্রাহককে নতুনত্ব কি দেওয়া যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগি প্রতিষ্টানের থেকেও ভালমানের নতুন সব সেবা গ্রাহক কে প্রদান করার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারে সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনা
ইতোপূর্বে আমরা জেনেছি যে, সাবস্ক্রিপশন মডেল এ আয় বা রেভিনিউ সম্পর্কে পূর্ব ধারণা করতে পারে প্রতিষ্ঠান গুলো। কিন্তু এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান গুলো যখন একেবারেই নতুন অবস্থায় থাকে তখন এই আয় বা রেভিনিউ সম্পর্কে একেবারেই অনিশ্চয়তা কাজ করে। আর এই অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠানগুলো কে সামনে এগুতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কে বিজনেস স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার সময় একাধারে কৌশলী এবং সতর্ক হতে হবে। সেই সঙ্গে পণ্য বা সেবাটির গুণগত মানের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
পাশাপাশি গ্রাহক নির্ভরশীলতাও তৈরী করতে হবে। এই গ্রাহক নির্ভরশীলতা, পণ্যের গুণগত মান, বাজারে তুমুল প্রতিযোগিতা, সঠিক বিপণনে কৌশল, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার এই সব কিছুর সমন্বয় সাধন করা একটি একদম নতুন প্রতিষ্টানের ক্ষেত্রে খুব একটা সহজসাধ্য কাজ নয়। আর এই কাজ গুলো অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপারও বটে। তাই শুরুর দিকে একটা বিরাট প্রতিকূলতা মোকাবিলার জন্য অবশ্যই প্রতিষ্টানগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
সাবস্ক্রিপশন মডেলে গ্রাহকরা একটি সামগ্রিক সেবা বা পণ্য গ্রহণ করে। অর্থাৎ অনেকগুলো সেবা, পণ্য কিংবা এদের সমষ্টিকে সম্বলিত সেবাটি নেওয়ার জন্য সাবস্ক্রিপশন করে গ্রাহক। তাই এক্ষেত্রে কিছুটা অনিশ্চয়তা গ্রাহক মনে থেকে যায়। যা এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনেক ক্ষেত্রে অনেকাংশে প্রভাব ফেলে।
অনেক গ্রাহক চিন্তিত থাকে যদি সাবস্ক্রিপশন কিংবা সাইনআপ করে তবে কি সে আদৌ মানসম্পন্ন সেবা পাবে কি না। বরং গ্রাহকরা কোনো একটি নির্দিষ্ট পণ্য কিনে বেশি সন্তুষ্ট থাকে। কারণ এখানে কোনো প্রতিশ্রুতি কাজ করে নাহ। অর্থাৎ তাঁর যদি পণ্যটি কিনে ভালো না লাগে বা মন মতো না হয়, সেক্ষেত্রে সে ভবিষ্যতে আর ঐ পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকলেই হলো। আর সাবস্ক্রিপশন অনেক লম্বা একটি সময়ের জন্যই করতে হয়।
তাই সেক্ষেত্রে গ্রাহক আকৃষ্ট করার জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট রাখতে হবে। আবার ফ্রি কিংবা ট্রায়াল নেওয়ার ব্যবস্থাও রাখতে পারেন। তবে এগুলার সমন্বয় কিংবা একটু কৌশলী না হলে কিন্তু গ্রাহক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারে সুবিধা সমূহ
সাবস্ক্রিপশন বিজনেস মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাবস্ক্রাইবার বা গ্রাহকরা মূলত একটি রেগুলার ব্যসিসে অর্থ প্রদান করে। ফলে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেখেই এই মডেল ব্যবহারকারী যে কোনো প্রতিষ্ঠান তাঁদের মাসিক বা নির্দিষ্ট একটি সময়ে তাঁদের আয়ের পরিমাণ আন্দাজ করতে পারে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর এটিও আন্দাজ করতে সুবিধা হয় যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে কি পরিমাণ পরিষেবা বা পণ্যের প্রয়োজন হবে।
ফলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ পণ্য স্টক করার প্রয়োজন পড়ছে নাহ। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান গুলো তাঁদের আয় কমা কিংবা বাড়া সম্পর্কেও ধারণা পেতে পারে। তবে এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ খুব একটা অসহনশীল ভাবে ওঠা নামা করে নাহ। ফলে প্রতিষ্ঠান গুলো তাঁদের সার্বিক কার্যক্রম খুব নির্ঝঞ্জাট ভাবেই চালাতে পারে।
সাবস্ক্রাইব মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় সাবস্ক্রাইবার বা গ্রাহকরা যেহেতু নির্দিষ্ট এবং একটা রেগুলার ব্যসিসেই মূলত সেবাটি নিয়ে থাকে। তাই গ্রাহকদের বিভিন্ন সেবা কিংবা পরিষেবা গুলোয় আকৃষ্ট করতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে মার্কেটিং করার প্রয়োজন পড়ে নাহ। ফলে মার্কেটিং ব্যয় ও তুলনামূলক কম হয়।
আর তাছাড়া আপনি যদি সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে গ্রাহকদের সেবাটি দিতে পারেন তবে প্রতিযোগি প্রতিষ্ঠানগুলোয় গ্রাহক স্থানান্তরের সম্ভাবনাও থাকবে নাহ। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদী গ্রাহক পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় এই মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে। আর যদিও বা ঐ একই সেবার জন্য প্রতিযোগি প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হয়, তবে সে গতিটাও মন্থর। তাই গ্রাহক হারানোর সম্ভাবনা কম থাকা এবং নির্দিষ্ট ও স্থায়ী গ্রাহক থাকার ফলে মার্কেটিং সহ অন্যান্য ব্যয় তুলনামূলক কমই হয় সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।
সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে সফটওয়্যার অ্যাস এ্যা সার্ভিস (Software As A Service) ভিত্তিক। অর্থাৎ গ্রাহকদের ইন্টারনেট এর সহায়তায় সফটওয়্যার কিংবা ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অন্যতম বড় একটি সুবিধা হলো, গ্রাহকরা একাধিক ডিভাইস দিয়েও পরিষেবাটি ব্যবহার করতে পারবে। কারণ সব ধরনের ডিজিটাল কন্টেন্ট কিংবা পরিষেবা গুলো ক্লাউড এ সঞ্চিত থাকে।
ফলে গ্রাহকরা অনেক ক্ষেত্রে কয়েকজন মিলেও ঐ পরিষেবাটি ব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে থাকে। যার ফলে তাঁদের জনপ্রতি তুলনামূলক কম খরচই হয়। তাছাড়া SAAS হওয়ায় প্রতিষ্ঠান গুলো গ্রাহকদের ফ্রি ট্রায়ালও দিতে পারে। যা গ্রাহকদের দ্রুত আকৃষ্ট করতে পারে।
সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারের অসুবিধা সমূহ
সময়ের সাথে সাথে সাবস্ক্রিপশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব দ্রুতই বাড়ছে। তাই দেখা যায়, একই সেবা, পণ্য কিংবা পরিষেবা সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাজারে অনেক। এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা হলো গ্রাহক আকৃষ্ট করা। আর এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের পরিষেবা গ্রহণকারী গ্রাহকরা মূলত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকে। এটা হতে পারে মাসিক কিংবা বাৎসরিক।
সেক্ষেত্রে একেবারে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রাহক পাওয়া মুশকিল ব্যাপারও বটে। আর তাছাড়া যদি গ্রাহকরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের একই কোনো পরিষেবা ব্যবহার করে, তবে সেখানেই তাঁদের অভ্যস্ততা কিংবা নির্ভরশীলতা বেশি। তাই গ্রাহক পাওয়াটা তুলনামূলক মুশকিলই বটে। তবে আপনার পরিষেবার গুণগত মান সেরা হয়, ব্রান্ডিং, মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে যদি অনন্য হয়, সর্বোপরি যদি গ্রাহকদের সেরা সেবাটি দিয়ে সন্তোষ্ট করতে পারে, তবেই ধীরে ধীরে আপনার প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারবে। তাই এসব ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে হবে, যদিও বা তা অর্থসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
প্রতিষ্ঠানগুলো কে অবশ্যই নিত্যনতুনত্ব আনতে হবে পণ্য কিংবা সেবায়। তবে অনেকক্ষেত্রে এটিই প্রতিষ্টানের জন্য অলাভজনক এবং অসুবিধার কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি অসুবিধার স্বীকার হতে হয়, নতুন কিংবা স্টার্টঅাপ ফেজ এ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কে। প্রথমত তাঁদের গ্রাহক সংখ্যাও কিন্তু তেমন থাকে নাহ। পক্ষান্তরে নতুন নতুন সেবা বা পণ্যে যদি প্রতিনিয়ত যোগ করতে হয়, তবে এক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ মূলধনের দরকার হয়। তাছাড়া একটি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এগুতে হয়। আর এ মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এমন নয় যে, রাতারাতি তাঁদের পরিষেবা গুলো ব্যাপক গ্রাহক পেয়ে যাবে। কারণ এটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই সবদিক মিলিয়ে নতুন প্রতিষ্টানের জন্য একটু বেশি অর্থবহুল ব্যাপার।
সাবস্ক্রিপশন মডেল এর প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট উদাহরণ সমূহ
ষোড়শ শতকে সাবস্ক্রিপশন মডেলের ব্যবহার শুরু হলেও বর্তমানে এর ব্যবহার অনেক বেশি বিস্তৃত। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি হওয়ায় SAAS ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো এর বহুল ব্যবহার শুরু করেছে। যেমন, এডোবি (Adobe), মাইক্রোসফট (Microsoft), সেলসফোরস.কম (Salesforce.Com) সহ অসংখ্য সফটওয়্যার ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এই সাবস্ক্রিপশন মডেল এর সফল প্রয়োগ করে আসছে।
এছাড়াও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স (Netflix), অ্যামাজন প্রাইম (Amazon Prime), হুলু (Hulu), বিনোদন ভিত্তিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম স্পটিফাই (Spotify), অ্যাপল মিউজিক (Apple Music), গেমিং এর ক্ষেত্রে এক্সবক্স গেম পাস (xbox Game Pass), প্লেস্টেশন নাউ (Playstation Now) সহ অনেক নামকরা ও সফল প্রতিষ্ঠান এই মডেল সাফল্যের সাথে ব্যবহার করে আসছে।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স (Netflix) এবং ফিন্যান্সিয়াল নিউজ ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার (Business Insider) এর মতো বহুল জনপ্রিয় এবং সমাদৃত প্রতিষ্ঠান দুটি কিভাবে এই মডেলের সফল প্রয়োগ করে আসছেঃ
নেটফ্লিক্স (Netflix)
১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নেটফ্লিক্স মূলত পে ফর ইউজ মডেল (Pay for Use Model) ব্যবহার করে যাত্রা শুরু করেছিল। শুরুর দিকে ফিল্ম, সিরিজ, ডকুমেন্টারি সহ বিভিন্ন টেলিভিশন শো ডিভিডি আকারে গ্রাহকের কাছে পৌছে দিত প্রতিষ্ঠানটি। তবে সময়ের পরিবর্তন এবং প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করে খুব দ্রুতই সাবস্ক্রিপশন মডেল এর দিকে ঝুঁকে নেটফ্লিক্স।
ডিভিডি রেন্টাল মার্কেট এর অবশ্যম্ভাবী পতন কে আঁচ করতে পেরেই নেটফ্লিক্স তাঁদের বিজনেস মডেল এ পরিবর্তন আনে। তাঁরা ডিভিডি রেন্টাল সেবাটি দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে অনলাইনে ঐ পূর্বের বিষয়গুলোরই ক্যাটালগ তৈরী করে। যেন মানুষজন ঘরে বসে ইন্টারনেটের সহায়তায় মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা টেলিভিশন এ নিজের ইচ্ছা সুবিধামতো সময়ে তাঁর পছন্দের শো কিংবা মুভি টি দেখতে পারে।
মূলত বিনোদন ভিত্তিক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স এর রকমারি সব কন্টেন্ট এর দুনিয়ায় হারাতে গেলে প্রথমেই আপনাকে করতে হবে সাবস্ক্রিপশন। আর মূলত তিন ধরনের সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান নেটফ্লিক্স গ্রাহকদের প্রদান করে। যথাঃ ব্যসিক, স্ট্যান্ডার্ড এবং প্রিমিয়াম। আর নেটফ্লিক্স মূলত মাসিক ভিত্তিতে সাবস্ক্রিপশন ফি গ্রহণ করে। আবার বাৎসরিক প্ল্যান ও রয়েছে।
বিজনেস ইনসাইডার (Business Insider)
আমরা ইতোপূর্বেই জেনেছি যে, এই সাবস্ক্রিপশন মডেল এর পথচলাই শুরু হয় সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বই প্রকাশনীগুলোর মাধ্যমে। তাই সেই ষোড়শ শতক থেকে শুরু করে এই ধারার ব্যতীক্রম ঘটে নি। তবে প্রযুক্তির সাথে অনেকাংশে পরিবর্তন এসেছে অবশ্য। বর্তমানে অনলাইন কিংবা অফলাইন বেশিরভাগ সংবাদ প্রতিষ্ঠান এই মডেল ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনাকারী প্রতিষ্টান বিজনেস ইনসাইডার (Business Insider) ও অন্যতম।
ফিন্যান্সিয়াল নিউজ ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার মূলত ফিন্যান্স, মার্কেটিং, মার্কেটস, গ্লোবাল টেক, বিজনেস স্ট্রাটেজি সহ বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করে৷ এক্ষেত্রে যেকোনো মানুষই বিজনেস ইনসাইডার এর ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন আর্টিকেল ফি তেই পড়তে পারে। তবে যদি কেউ সাবস্ক্রাইব করে প্রিমিয়াম সেবাটি গ্রহণ করে তাঁর জন্য রয়েছে অসংখ্য সুবিধা। যা ফ্রি তে ব্যবহারকারী পাচ্ছে নাহ।
সাবস্ক্রাইব করার সুবিধা হচ্ছে আপনি পাবেন দশ হাজারেরও বেশি আকর্ষণীয় সব আর্টিকেল পড়ার সুবিধা। এছাড়াও পাবে বিভিন্ন লাইভ ইন্টারভিউ এবং বিশেষ ইভেন্ট গুলো জানার এবং সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ। অ্যাপ এ অবাধে, নিরবচ্ছিন্ন ভাবে প্রবেশ এর সুবিধা তো রয়েছেই।
বিজনেস ইনসাইডার এর মূলত তিন ধরনের সাবস্ক্রিপশন ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, অ্যানুয়াল সাবস্ক্রিপশন, সাবস্ক্রিপশন ফর স্টুডেন্টস এন্ড টিচার এবং গ্রুপ সাবস্ক্রিপশন। সাবস্ক্রাইবারদের মূলত মাসিক কিংবা বাৎসরিক ভিত্তিতে সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করতে পারে। এভাবেই মূলত বিজনেস ইনসাইডার সাবস্ক্রিপশন মডেল এর সফল ব্যবহার করে আসছে।
- a https://bmtoolbox.net/patterns/ https://blog.hubspot.com/service/subscription-business-model
- https://www.moonclerk.com/subscription-business-model-pros-vs-cons
- https://blog.fusebill.com/advantages-subscription-based-pricing?hs_amp=true
- https://roicallcentersolutions.com/customerservice/overcoming-disadvantages-of-a-subscription-business-model/
- https://www.thoughtindustries.com/blog/5-critical-success-factors-for-incorporating-subscription-into-your-business-model
- https://venturebeat.com/2013/11/04/subscription-model-challenges/
- https://fourweekmba.com/how-does-netflix-make-money/ https://en.wikipedia.org/wiki/Netflix
- https://en.wikipedia.org/wiki/Business_Insider
Next to read
কাস্টমার এক্সপ্লোরেশন ম্যাপ (Customer Exploration Map)


কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)

নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন

সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রো ইকোমিক্স ( Macro Economics ) কী?

সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?

বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ

ব্যবসায়কি আইন কি? উদাহরণ সহ বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়কি আইন

বিজনেস অ্যানালিসিস কী, কেনো, কীভাবে করবেন?

সিঙ্গেল ব্রান্ডেড ই-কমার্স (Single Branded E-commerce)
