মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)

অধিক শ্রম ও অর্থ খরচের এই ঝুঁকি এড়াতে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি যেখানে পণ্য প্রয়োজনীয় কিছু ফিচার দিয়ে বাজারজাত করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাহিদা পর্যালোচনা করে ধীরে ধীরে এই পণ্যের উন্নয়ন করা হয় এবং নতুন নতুন উপাদান/ফিচার যুক্ত করা হয়। ব্যবসায়িক জগতে একে বলা হয় মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট।
Key Points
- ২০০১ সালে ফ্রাংক রবিনসন প্রথম ধারণা প্রদান করলেও মূলত ইরিক রাইসের (Eric Ries) বিখ্যাত লিন স্টার্টআপ মেথোডোলজি (Lean Startup Methodology) থেকে এই মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট জনপ্রিয়তা পায় ।
- "Dream Big, Start Small" এই কথা মাথায় রেখে আপনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
- লিন স্টার্টআপ কিংবা মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর সাথে বিল্ড-মেজার-লার্ন টার্মটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট
গ্রাহকদের নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের চিন্তা করে একটা পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাত করতে আমাদের অনেক গবেষণার প্রয়োজন হয়। এই গবেষণা এবং উন্নয়নে আমাদের শ্রমের সাথে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়, অনেক সময় দেখা যায় এতোকিছু করার পরেও পণ্য কিংবা সেবাটি আশানুরূপ ফলাফল দিতে পারে না।
অধিক শ্রম ও অর্থ খরচের এই ঝুঁকি এড়াতে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি যেখানে পণ্য প্রয়োজনীয় কিছু ফিচার দিয়ে বাজারজাত করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাহিদা পর্যালোচনা করে ধীরে ধীরে এই পণ্যের উন্নয়ন করা হয় এবং নতুন নতুন উপাদান/ফিচার যুক্ত করা হয়। ব্যবসায়িক জগতে একে বলা হয় মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট।
মূলত সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে এই ধরনের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি আমরা সচরাচর দেখতে পাই। তবে আমরা অনেকেই, পাইলট প্রজেক্ট আর মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট একই মনে করি কিংবা গুলিয়ে ফেলি। জেনে রাখা ভালো, যখন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের গ্রাহকদের মাঝে ফাইনাল প্রোডাক্ট এনে এর চাহিদা পর্যালোচনা করা হয় তখন এটি পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয় । অন্যদিকে মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে কিছু প্রয়োজনীয় ফিচার সহ পণ্যটি বাজারজাত করা হয় এবং পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এর মান উন্নয়ন করা হয়।
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট নিয়ে সকল কনফিউশন দূর করতে আমরা এই আর্টিকেলে এর সবকিছু নিয়ে ব্যাখা করবো। আশা করি, শুরুতে প্রযুক্তিভিত্তিক যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে আপনি এই আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হবেন।
একটা ব্যবসা শুরু করার আগে শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে গ্রাহকদের পেইন পয়েন্ট বোঝা, সমস্যা অনুযায়ী একদম উপযোগী পণ্য কিংবা সেবা তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বিল্ড-মেজার-লার্ন (Build-Measure-Learn) স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে খুব সহজেই গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সমাধান দেওয়া যায়, প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো শনাক্ত করে একটা উপযুক্ত সিন্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য
২০০১ সালে ফ্রাংক রবিনসন প্রথম ধারণা প্রদান করলেও মূলত ইরিক রাইসের (Eric Ries) বিখ্যাত লিন স্টার্টআপ মেথোডোলজি (Lean Startup Methodology) থেকে এই মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট জনপ্রিয়তা পায়। তিনি এই সম্পর্কে বলেন, মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট হল এমন একটি পণ্য যা বাজারজাত উপযোগী করে তুলতে নির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজনীয় ফিচার এতে সংশ্লিষ্ট করা হয়। শুরুর দিকে গ্রাহকরা এই পণ্য কিংবা সেবা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করে।
উদাহরণস্বরূপ আমরা দেশের জনপ্রিয় টেক স্টার্টআপ পাঠাও এর কথা তুলে ধরতে পারি। শুরুতে রাইড শেয়ারিং এপ হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হলেও প্রতিনিয়ত তারা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন সেবা যেমনঃ পাঠাও ফুড ডেলিভারি সার্ভিস, পাঠাও কুরিয়ার ইত্যাদি নিয়ে এসেছে। এছাড়া তাদের এপটিও প্রতিনিয়ত ইউজার-ফ্রেন্ডলি করে গড়ে তোলাকে প্রাধান্য দিয়েছে। প্রথম দিকে তারা মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করলেও গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের সেবায় পরিধি বড় করেছে। এছাড়া উবার (Uber), ড্রপবক্স (DropBox) একই বিজনেস স্ট্র্যাটেজি অনুসরণ করে আজ তারা বিশ্বের অন্যতম সফল স্টার্টআপ।
সব উদ্যোক্তাই চায় তার কষ্ট করে গড়ে তোলা স্টার্টআপ গ্রাহকদের কাছে যেন গ্রহনযোগ্যতা পায়। মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে এই বিষয়টি খুব ভালোভাবেই পর্যালোচনা করা যায়।
দ্যা বিল্ড-মেজার-লার্ন ফিডব্যাক ল্যুপ (The Build-Measure-Learn Feedback Loop)
লিন স্টার্টআপ কিংবা মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর সাথে বিল্ড-মেজার-লার্ন টার্মটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটা ব্যবসা শুরু করার আগে শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে গ্রাহকদের পেইন পয়েন্ট বোঝা, সমস্যা অনুযায়ী একদম উপযোগী পণ্য কিংবা সেবা তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বিল্ড-মেজার-লার্ন (Build-Measure-Learn) স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে খুব সহজেই গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সমাধান দেওয়া যায়, প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো শনাক্ত করে একটা উপযুক্ত সিন্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। তাহলে টার্মটির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে কিভাবে সবকিছু সম্পাদন করা যায় তা সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেওয়া যাকঃ
তৈরি (Build)
আপনি একটি নির্দিষ্ট গ্রাহকের কথা চিন্তা করে যে মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট টি তৈরি করবেন তা এই অংশ দিয়েই শুরু হয়।
পরিমাপ (Measure)
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট টি তৈরি করার পর আপনাকে বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত যেমন গ্রাহকরা কিভাবে নিচ্ছে, পণ্যের গ্রহনযোগ্য কেমন, মার্কেট ভ্যালু কেমন ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে প্রতিনিয়ত বিজনেস গ্রোথ এবং ল্যাকিংস পরিমাণ করতে হবে।
শেখা (Learn)
সবকিছু মিলিয়ে পরিশেষে আপনাকে জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবসায়িক সিন্ধান্ত নিতে হবে। এই অংশের উপর ভিত্তি করে আপনি ভবিষ্যতে কি করা প্রয়োজন তা বুঝতে পারবেন।
এখানে দু'টি ব্যাপার হতে পারে। যেমনঃ
- আপনি আপনার অনুমান অনুযায়ী সঠিকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই আপনার সিদ্ধান্ত হবে একই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া এবং এই ফিডব্যাকের উপর নির্ভর করে ব্যবসার উন্নয়ন করা।
- আপনার প্ল্যান ও স্ট্র্যাটেজি অনুয়ায়ী আশানুরূপ ভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না । আপনাকে আপনার লক্ষ্য কিছুটা পরিবর্তন কিংবা সংশোধন করতে হবে, এবং আবার এই ফিডব্যাক টার্ম অনুযায়ী ব্যবসায় পরিচালনা করে এগিয়ে যেতে হবে।
এভাবে বিল্ড-মেজার-লার্ন ফিডব্যাক ল্যুপটি চক্রাকারে অনুসরণ করে ভালো একটা একটা ফলাফল আসবে বলে আশা করা যায়।
একটি মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট তৈরি করার জন্য কি কি প্রয়োজন?
যেকোনো প্রতিষ্ঠান একটি মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট তৈরি করতে বেশকিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় মাথায় রেখে কাজ শুরু করে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
গ্রাহকের চাহিদা পর্যালোচনা
আপনার গ্রাহকরা কেমন পণ্য কিংবা সেবা চায় সেটা বোঝার জন্য তাদের চাহিদা সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি। যেহেতু আপনি পণ্য ন্যূনতম একটি অবস্থান বানিয়ে বাজারজাত করবেন, গ্রাহকদের সেই পণ্য কিংবা সেবা নিতে আকৃষ্ট করতে না পারলে আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই সর্বপ্রথম গ্রাহক সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা অর্জন করতে হবে, নতুবা ব্যর্থ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
আইডিয়া যাচাই
আপনার পণ্য কিংবা সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবেন? তারা কিভাবে আপনার সুযোগ-সুবিধা থেকে উপকৃত হতে পারে? আপনার আইডিয়া নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে যাচাই করা লাগবে এটি আপনার লং টার্ম ডেভেলপমেন্ট এর জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে। তাই এক্সিকিউশন এর আগে একটা ক্লিয়ার আইডিয়া বের করুন যা আপনার ব্যবসা এবং গ্রাহক উভয়ের জন্যই কল্যাণকর।
এমভিপি এপ্রোচ ( MVP Approach)
আপনার কাস্টমার এবং আইডিয়া সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সিন্ধান্ত নিতে সক্ষম হলে, এইবার মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি আবার বিভিন্ন ভাবে সম্পাদনা করতে পারবেন। যেমনঃ
নো-প্রোডাক্ট এমভিপি (No Product MVP)
বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানি অনেকসময় কোনো কোডিং কিংবা টেকনিক্যাল কাজ করা ছাড়াই নো-প্রোডাক্ট এমভিপি বাজারজাত করে। সাধারণত আইডিয়া ভিজুয়ালি উপস্থাপন করে কিংবা পণ্য বাজারজাতের আগে আগাম বার্তা দিয়ে এই নো-প্রোডাক্ট এমভিপি স্ট্র্যাটেজি সম্পাদন করা হয়ে থাকে।
প্রোডাক্ট মকআপ এমভিপি (Product Mockup MVP)
অনেকসময় একটি পণ্যের বিভিন্ন ফিচার নিয়ে একটি গাঠনিক মডেল দাড় কিংবা মকআপ করে এই প্রোডাক্ট মকআপ এমভিপি তৈরি করা হয়। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের টুলের সহায়তা নিয়ে এটি করা হয়ে থাকে।
সিংগেল ফিচার এমভিপি (Single Feature MVP)
সিংগেল ফিচার এমভিপি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি এমভিপি এপ্রোচ যা অসংখ্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে তাদের মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট বাজারজাত করেছে এবং সফল হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার একটি পণ্য কিংবা সেবা তার গুরুত্বপূর্ণ ফিচার নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করে যা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম।
এমএলপি (MLP)
মিনিমান লাভএবল প্রোডাক্ট (Minimum Lovable Product) গ্রাহকদের কাছে তার অসাধারণ সেবা কিংবা সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম। এক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মানের উপর খুব বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হয় যাতে গ্রাহকদের সেরা সার্ভিস দেওয়া সম্ভবপর হয়।
এমভিপির ফিচার লিস্ট বানানো
আপনার মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এ শুরুতে কোন কোন ফিচার যুক্ত করবেন তা নিয়ে একটা চুড়ান্ত সিন্ধান্তে আসা জরুরি। আপনাকে এইক্ষেত্রে কিছুটা গবেষণা করতে হবে এবং বের করতে হবে গ্রাহকরা কি কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে আগ্রহী।
এমভিপি তৈরি
পরিশেষে উপরোক্ত সবকিছুর সম্মিলনে আপনার মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট তৈরি করে বাজারজাত করুন। এক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত গ্রাহকদের ফিডব্যাক পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই এই মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট থেকে একটি দারুণ মার্কেট উপযোগী পণ্য কিংবা সেবা প্রস্তুত করা সম্ভব।
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে অল্প সময়েই সল্প মূলধন নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের পন্য বাজারজাত করা সম্ভব হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে এর বহুল ব্যবহার, ডেভেলপাররা তাদের পন্য সম্পূর্ণভাবে তৈরি না করে বরং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী আপডেট করে আগ্রহী হয়। এতে করে একটা সুনির্দিষ্ট প্ল্যান অনুযায়ী সুনিপুণভাবে পণ্যের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়।
তাছাড়া, প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন ধরনের মতামত থেকে তাদের পেইন পয়েন্ট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় যেকারণে একটি নির্দিষ্ট গ্রাহকের মাঝে নিজের পরিধি বিস্তার করা বেশ সহজ হয়ে যায়। গ্রাহকরা কি চায়, কি প্রয়োজন নেই তা খুব সহজেই রিয়েল কাস্টমার রিসার্চ করে শনাক্ত করা যায়।
পরিশেষে, মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট একটি প্রতিষ্ঠান আর গ্রাহকের মাঝে সুষম সেতুবন্ধন তৈরি করে। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রয়োজন কিংবা চাহিদা অনুযায়ী যতটা নিজেকে উপযোগী করে তুলবে, বাজারে সে ততটাই গ্রহণযোগ্যতা পাবে এটাই স্বাভাবিক।
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব?
লিন স্টার্টআপ গুলোর জন্য মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর বহুল ব্যবহার হচ্ছে। স্টার্টআপ গুলো এই মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট বাজারজাত করে পরবর্তীতে কৌশলগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিনিয়োগ, লাভ এবং সফলতা অর্জন করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক সুফল বয়ে আনতে পারে। যেমনঃ
টেস্টিং
যেকোনো ব্যবসা করতে চাইলেই আপনার পণ্য কিংবা সেবা নিয়মিত পরীক্ষা করে যেতে হবে যাতে গ্রাহকদের সেরাটা দেওয়া সম্ভব হয়। মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট বাজারজাতের মাধ্যমে আপনি রিয়েল কাস্টমারের মাধ্যমে আপনার পণ্য পরীক্ষা করতে পারছেন। অপরদিকে গ্রাহক আপনার পণ্য কিংবা সেবা গ্রহণে নির্দিষ্ট পরিমাণ রেভিনিউ আয় করাও সম্ভব। বাড়তি ঝামেলার কিছু নেই।
মার্কেটিং
পণ্য কিংবা সেবা সঠিকভাবে বিপণনের জন্য প্রয়োজন আপনার কনজুমার বিহেভিয়ার সঠিকভাবে বুঝতে পারা। এই বিষয় সম্পর্কে আপনার সম্যক ধারণা থাকলে এই ডিজিটালাইজেশন এর যুগে আপনার মার্কেটিং করাটা বেশ সহজ। মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে আপনি শুধু পণ্যের উন্নয়ন করতে পারবেন তাই নয়, আপনার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী হয়ে যাবে।
সুযোগ-সুবিধা
এই বিজনেস মডেলটির অসংখ্য সুযোগ-সুবিধা থাকায় প্রযুক্তির যুগে এটি আজ এতো জনপ্রিয়।! "Dream Big, Start Small" এই কথা মাথায় রেখে আপনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। যেমনঃ
- কাস্টমার ফিডব্যাক গ্রহণের মাধ্যমে আপনার ভ্যালু প্রোপোজিশন নিয়ে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
- যেহেতু গতানুগতিক ব্যবসার চেয়ে অনেকটা কম খরচে এই স্ট্রাটেজি অনুসরণ করে ব্যবসা শুরু করা যায়, অর্থঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
- দ্রুত আপনার পণ্য কিংবা সেবার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অবগত হওয়া যায় এবং সে অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। ব্যর্থতার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
সীমাবদ্ধতা
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট এর বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমনঃ
- সঠিকভাবে মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট তৈরি করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
- ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি টেকনিক্যাল উন্নয়নে সবসময় দৃষ্টি রাখতে হয়। এইজন্য দক্ষ জনবল এবং ডাইভার্স প্ল্যানিং প্রয়োজন।
উপসংহার
আমাদের দেশে এখনো অনেক প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপ প্রয়োজন যা দেশের এবং জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। আর এই মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট আমাদের দেশের টেক স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনি যদি আপনার ব্যবসা খুব দ্রুত সল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে শুরু করতে চান, মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট অবশ্যই আপনার বিবেচনায় রাখতে পারেন।
Next to read
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)


লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)

ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)

শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)

বেইট এন্ড হুক মডেল (Bait & Hook Model)

লোগো ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা (Pros and Cons of Logo Usage)

নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন

ব্রান্ডিং (Branding)

রিব্র্যান্ডিং (Rebranding)
