ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসা

502
article image

ই-কমার্স কে ইলেকট্রনিক কমার্স কিংবা ইন্টারনেট কমার্স নামেও অভিহিত করা হয়। ই-কমার্স হলো কোনো পণ্য কিংবা সেবা আমরা যখন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদনা করি।

Key Points

  • ১৯৮২ সালে পৃথিবীর প্রথম ই-কমার্স কোম্পানি হিসেবে বোস্টন কম্পিউটার এক্সচেঞ্জ (Boston Computer Exchange) তাদের যাত্রা শুরু করে
  • সর্বপ্রথম ই-কমার্স সম্পর্কে ১৯৮৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট এসেম্বলির ইউটিলিটি এন্ড কমার্স কমিটির প্রিন্সিপাল কনসালটেন্ট ড. রবার্ট জ্যাকবসন ধারণা প্রদান করেন
  • সাধারণত ছয় ধরনের ই-কমার্স ব্যবসারের ধরণ আমরা অনলাইনে দেখতে পাই
  • স্ট্যাটিস্টা এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র আমেরিকায় ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির রেভ্যিনিউ ছিল ৪৩১.৬ বিলিয়ন ডলার যা ২০২৫ সালে ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

ই-কমার্স কি?

বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিকাশ ঘটতে থাকে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এই ইন্টারনেট বিপ্লব আমাদের জীবনযাত্রার মান আজ অনেকাংশে বদলে দিয়েছে। জীবন হয়ে গেছে আগের চেয়ে অনেক সহজ যা আমরা পূর্বে কখনো কল্পনাও করতে পারি নি। ডিজিটাল কমার্স কিংবা ইলেকট্রনিক কমার্স (ই-কমার্স) এমন একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যা আমাদের বর্তমান জীবনের একটা বৃহৎ জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে।

সর্বপ্রথম ই-কমার্স সম্পর্কে ১৯৮৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট এসেম্বলির ইউটিলিটি এন্ড কমার্স কমিটির প্রিন্সিপাল কনসালটেন্ট ড. রবার্ট জ্যাকবসন ধারণা প্রদান করেন। এই ই-কমার্স বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সময়ের স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনলাইন শপিং, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, সাপ্লাই চেইন, অনলাইন টান্সএকশন, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট এইসব ই-কমার্সকে আরো তরান্বিত করেছে।

১৯৮২ সালে পৃথিবীর প্রথম ই-কমার্স কোম্পানি হিসেবে বোস্টন কম্পিউটার এক্সচেঞ্জ (Boston Computer Exchange) তাদের যাত্রা শুরু করে।

ই-কমার্সের ইতিহাস

ই-কমার্সের ইতিহাস চিন্তা করলে আমাদের সর্বপ্রথম হয়তো এমাজন (Amazon), আলিবাবা (Alibaba) কিংবা ইবে (Ebay) এর কথা মাথায় আসে। কিন্তু এসব সফল স্টার্টআপ তাদের ব্যবসা শুরু করার আগেই এই ই-কমার্স প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়েছিলো।

১৯৮২ সালে পৃথিবীর প্রথম ই-কমার্স কোম্পানি হিসেবে বোস্টন কম্পিউটার এক্সচেঞ্জ (Boston Computer Exchange) তাদের যাত্রা শুরু করে। মূলত তারা মানুষের কাছে একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস নিয়ে আসেন যেখানে পুরাতন কম্পিউটার ক্রয়-বিক্রয় করা যেত।

১৯৯২ সালে বুক স্ট্যাকস (Book Stacks) নামে আরেকটি বই কেনা-বেচার স্টার্টআপ তৈরি হয় যা বর্তমানে বুকস ডট কম (Books.com) হিসেবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস এমাজনের (Amazon) এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। শুরুতে বুকস ডট কমের মতো তারাও গ্রাহকদের কাছে অনলাইনে বই ক্রয় করা বেশ সহজতর করে দেয়। ক্রমশ তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে থাকে এবং বর্তমানে তারা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

এমাজনের ঠিক এক বছর পরেই ১৯৯৫ সালেই ইবে (ebay) অকশনওয়েব নামে তাদের যাত্রা শুরু করে। এর ঠিক চার বছর পর চায়নার জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস আলিবাবা (Alibaba) প্রতিষ্ঠিত হয়।

এভাবেই ধীরে ধীরে ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে। ধারণা করা হয়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২০ মিলিয়ন এর মতো ছোট বড় ই-কমার্স সাইট রয়েছে এবং প্রতিদিন ই নিত্যনতুন ই-কমার্স সাইটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ই-কমার্সের ধরন

সাধারণত ছয় ধরনের ই-কমার্স ব্যবসারের ধরণ আমরা অনলাইনে দেখতে পাই। যেমনঃ

বিজনেস টু কনজিউমার (B2C):

যখন এক বা একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোনো পণ্য কিংবা সেবা সাধারণ গ্রাহকদের কাছে বিক্রয় করে তখন সেটা বিজনেস টু কনজিউমার মডেল বলে আখ্যায়িত করা যায়। যেমনঃ আমরা যখন কোনো পণ্য কিংবা সেবা অনলাইনে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করি। এই ধরণের ব্যবসায়ের উদাহরণ হল এমাজন, বেস্ট বাই, দারাজ ইত্যাদি।

বিজনেস টু বিজনেস (B2B):

বিজনেস টু বিজনেস এ একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে তার পণ্য কিংবা সেবা বিক্রয় করে থাকে। এই ধরণের ব্যবসা সাধারনত খুচরায় হয় না। এইখানে পণ্য কিনতে হলে এক সাথে অনেক পণ্য কিনতে হয়। অনলাইনে এই ধরণের ব্যবসায়ের উদাহরণ হল আলিবাবা (Alibaba)।

কনজিউমার টু কনজিউমার (C2C):

কনজিউমার টু কনজিউমার প্রক্রিয়ায় দু'জন গ্রাহকই নিজেদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদনা করে। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের মধ্যে একটি বিশ্বস্ত সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে ই-কমার্স ওয়েবসাইট। যেমনঃ আমাদের দেশে বিক্রয় ডট কমের মাধ্যমে গ্রাহকরাই পুরাতন কিংবা নতুন পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে।

কনজিউমার টু বিজনেস (C2B):

এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা ব্যাতিক্রম। একজন গ্রাহক তার কোনো পণ্য কিংবা সেবা এক বা একাধিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পারে কনজিউমার টু বিজনেস মডেলের মাধ্যমে। যেমনঃ বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে গ্রাহকরা বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকে। যেমনঃ Fiverr, freelancer ইত্যাদি।

বিজনেস টু গভার্মেন্ট (B2G)

এই ধরনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মূলত সরকার কিংবা প্রশাসনের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। যেমনঃ সামাজিক নিরাপত্তা, আইনি সহায়তা, ই-গভর্মেন্ট ইত্যাদি।

কনজিউমার টু গভার্মেন্ট (C2G):

কনজিউমার টু এডমিনিস্ট্রেশন কিছুটা বিজনেস টু এডমিনিস্ট্রেশন এর মতোই, তবে এক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর বদলে নির্দিষ্ট ব্যক্তি সরকারকে পণ্য কিংবা সেবা প্রদান করে। যেমনঃ বিভিন্ন ধরনের কনসালটেন্সি, অডিট ইত্যাদি।

ই-কমার্সের প্রসার

ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি রাতারাতি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি। ধীরে ধীরে গ্রাহকদের কাছে সহজলভ্যতা এবং বিশ্বস্ততা দিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। করোনা প্যান্ডেমিকের কারণে মানুষ আগের চেয়ে আরো অনেক বেশী অনলাইন শপিং এ মনোনিবেশ করেছে এবং ধারণা করা যায় গ্রাহকদের এই বায়িং বিহেভিয়ার করোনা পরবর্তীকালীন ও অক্ষুণ্ণ থাকবে। প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

স্ট্যাটিস্টা এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র আমেরিকায় ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির রেভ্যিনিউ ছিল ৪৩১.৬ বিলিয়ন ডলার যা ২০২৫ সালে ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

ই-কমার্সের এই প্রসারের কারণে বর্তমানে বড় বড় সব রিটেইলয়ার তাদের পণ্য অনলাইনে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সহজেই অনলাইনে তাদের পণ্য কিংবা সেবা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান এই ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য অসংখ্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য সহজেই খুঁজে পায় এবং তাদের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা আগের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক হয়ে গিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী স্ট্যাটিস্টা এর তথ্য মতে, ২০২০ সালে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে টোটাল বিক্রি হয়েছিলো ৪.২৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তাই অদূর ভবিষ্যতে এই ইন্ডাস্ট্রির যে আরো প্রসার ঘটবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ই-কমার্সের সুবিধা

সম্ভাবনাময় এই ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে অসাধারণ সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে। গ্রাহকদের কেনাকাটার মান-উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটালাইজেশন এর মাধ্যমে অনেক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে। যেমনঃ

  • ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন খুব সহজেই তাদের নির্দিষ্ট গ্রাহকদের কাছে পৌছাতে পেরেছে। লোকাল বিজনেস থেকে শুরু করে গ্লোবাল বিজনেস এর ক্ষেত্রেও এই ই-কমার্স সিস্টেম বেশ সহজতর করে দিয়েছে।
  • গ্রাহকরা এখন ঘরে বসেই তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য ক্রয় করতে পারছে। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই তাদের সেই ক্রয়কৃত পণ্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই ঘরে পৌছে দেয়।
  • ব্যবসা পরিচালনার খরচ আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
  • অনলাইন মিডিয়ার কল্যাণে এখন একটি ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমেই গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী কেনাকাটার অভিজ্ঞতা তরান্বিত করা সম্ভব হয়েছে।
  • ই-কমার্স এর মাধ্যমে মার্কেটিং খরচ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

ই-কমার্সের সীমাবদ্ধতা

ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির বেশকিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় অনেক সময় গ্রাহকদের পূর্ণ আস্থা অর্জন করা সম্ভবপর হয় না। তাই অদূর ভবিষ্যতে একটা টেকসই ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে চাইলে আমাদের এসকল বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। যেমনঃ

  • ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা প্রায় দেখা যায়।
  • নিরাপত্তা এবং ডেটা প্রাইভেসি নিয়ে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সবসময় প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়। অনেক ওয়েবসাইটে ভালো এনক্রিপশন সিস্টেম থাকে না নিরাপদ লেন দেনের জন্য।
  • গ্রাহকরা পণ্য ক্রয় করার পূর্বে সেটি যাচাই করার সুযোগ পায় না।
  • হরহামেশাই গ্রাহকদের কাছথেকে প্রতারণার অভিযোগ আসে, টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না করা, এক পণ্যের পরিবর্তে অন্য পণ্য ডেলিভারি করা, পণ্যই ডেলিভারি না করা। ইত্যাদি।

বাংলাদেশে ই-কমার্স

২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইন পেমেন্ট এবং ২০১৩ সালে অনলাইনে ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট অনুমোদন দেওয়ার পর দেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির শুভসূচনা হতে থাকে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ট্রেড বডি হিসেবে সবধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ই-ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ১৯০০ এর বেশী ছোট-বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের সসদস্যপদ নিয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশে বড় বড় বেশকিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

রিসার্চ এন্ড মার্কেটস এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট সাইজ ছিল ৬৫,৯৬৬ কোটি টাকা যা ২০২৬ সালে দাঁড়াবে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকাতে। বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট সাইজ ক্রমশই বড় থেকে বড় হচ্ছে। বাড়ছে নতুন নতুন ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা।

তবে প্রায়ই গ্রাহকদের পণ্য নিয়ে কিংবা ডেলিভারি সময় নিয়ে নানান অভিযোগ শোনা যায়। সেইসাথে আছে প্রতারণারও অভিযোগ। তাই সম্ভাবনাময় মার্কেটে গ্রাহক সন্তুষ্টিই সবচে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আশা করা যায়, আমাদের দেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সকল বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে অদূর ভবিষ্যতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান

প্রায় দুই যুগ ধরে গড়ে উঠা এই ই-কমার্স ইন্ড্রাস্ট্রিতে বর্তমানে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান তাদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এদের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমরা হয়তো চিনি, আবার অনেকগুলো সম্পর্কে তেমন জানি না। তাহলে জেনে নেওয়া যাক তাদের সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহঃ

এমাজন

বই বিক্রির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর বৃহত্তম মাল্টিন্যাশনাল টেকনোলজি কোম্পানি। ওয়াশিংটন ভিত্তিত এই প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও ক্লাউড কম্পিউটিং, ডিজিটাল স্ট্রিমিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সহ বেশকিছু ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

১৯৯৪ সালে একটি গ্যারেজ থেকে গড়ে তোলা জেফ বেজোসের এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বিশ্বের নামকরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। অনলাইন শপিং এক্সপেরিয়েন্স গ্রাহকদের কাছে আরো সহজ করে দিতে প্রতিনিয়ত এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।

আলিবাবা

এমাজনের পাশাপাশি অন্য কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এর কথা চিন্তা করলে হয়তো আলিবাবার নাম-ই আমাদের মাথায় আসবে। জনপ্রিয় এই চায়নার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ১৯৯৯ সালে তাদের যাত্রা শুরু করে সবচেয়ে বৃহৎ অনলাইন হোলসেল মার্কেটপ্লেস হিসেবে।

শুরুতে আলীবাবা তার নিজের এপার্টমেন্ট থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা শুরু করেন। এসময়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা একই স্থানে তাদের সকল কাজ যেমনঃ খাওয়া, কাজ, ঘুমানো ইত্যাদি সম্পাদনা করতো।

আলিবাবা অধীনে আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান যেমনঃ আলিএক্সপ্রেস (Aliexpress.com), আলিপে (AliPay.com), তাওবাও (Taobao.com) রয়েছে। চায়নায় আধিপত্য বিস্তার করা এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

ইবে

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বেড়ে উঠা এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বেশ সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৫ সালে গড়ে উঠা এই কোম্পানি ডট কম বাবলের থেকে বেরিয়ে আসা এক সফল অনলাইন মার্কেটপ্লেস।

প্রথমদিকে ইবে তার ই-কমার্স সাইটটি অকশনওয়েব নামে শুরু করে। পরবর্তীতে দেখা যায়, গ্রাহকরা ইবে নামেই রেফার করতো মানুষের কাছে (ইবে ছিল এর প্যারেন্ট কোম্পানি)। তাই, পরবর্তীতে এই নামেই তাদের ব্র্যান্ডিং শুরু করে।

ফ্লিপকার্ট

সিঙ্গাপুরের অনলাইন রিটেইল স্টোর ফ্লিপকার্ট ২০০৭ সালে ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে কার্যক্রম শুরু করে। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে গ্যাজুয়েশন করা দুইজন তরুণ উদ্দ্যোক্তা শচীন বানসাল এবং বিনি বানসাল শুরুতে এমাজনের মতো অনলাইন বুক স্টোর হিসেবেই তাদের যাত্রা শুরু করে।

পরবর্তীতে তাদের কার্যক্রম আস্তে আস্তে বাড়াতে থাকে এবং ভারতে নামকরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি পায়। ২০১৮ সালের মে মাসে ওয়ালমার্ট (Walmart) এই ই-কমার্স কোম্পানিকে কিনে নেয়। বর্তমানে প্রায় ৮১% ফ্লিপকার্টের শেয়ার ওয়ালমার্টের অধীনে। উল্লেখ্য যে, ওয়ালমার্ট ও পৃথিবীর নামকরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

দারাজ

দক্ষিণ এশিয়ার নামকরা ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস দারাজ বেশ সফলতার সাথে বিভিন্ন দেশে যেমনঃ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং মায়ানমারে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মাত্র কয়েক বছর আগে গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্চে এবং অদূর ভবিষ্যতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারবে বলে ধারণা করা হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১৮ সালের মে মাসে সম্পূর্ণ দারাজ গ্রুপ আলিবাবা গ্রুপ ক্রয় করে নেয়। বাংলাদেশে দারাজ গ্রুপ তাদের নিজস্ব অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে অনলাইন শপিং সার্ভিস দিয়ে আসছে। সম্প্রতি তারা দেশের জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি সার্ভিস "হাংরিনাকি-Hungrynaki" ক্রয় করে নিয়েছে।

উপসংহার

গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সেরা সেবা প্রদান করতে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির বড় বড় জায়ান্টরা বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ব্লকচেইন ইত্যাদির ফন্টিয়ার টেকনোলজির মাধ্যমে এই ইন্ডাস্ট্রির অধিকতর উন্নয়ন করা সম্ভব। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রাহকদের চাহিদা এবং বায়িং বিহেভিয়ার এর উপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতে এই ইন্ডাস্ট্রি কতটুকু উন্নতি করবে।

  • https://www.shopify.com/encyclopedia/what-is-ecommerce#
  • https://www.bigcommerce.com/articles/ecommerce/#the-future-of-ecommerce
  • https://en.wikipedia.org/wiki/E-commerce
  • https://magenticians.com/top-ecommerce-companies-in-the-world/ https://www.investopedia.com/terms/e/ecommerce.asp
  • 

Next to read
Canvas & Methods
বিজনেস মডেল ক্যানভাস ( Business Model Canvas)
বিজনেস মডেল ক্যানভাস ( Business Model Canvas)

মূলত ব্যবসা শুরু করার আগে যেকোনো উদ্যোক্তাকে একটা স্ট্র‍্যাটেজিক প্ল্যান নিয়ে আগাতে হয়, তার ব্যবসার সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে কিভাবে পরিচালনা করবেন! সনাতনী পদ্ধতি অনুসরণ করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখার চেয়ে বিজনেস মডেল ক্যানভাস অনুসরণ করা অধিকতর সহজ এবং কার্যকর। কারণ এই মডেল ব্যবহার করে আপনি নয়টি ব্লক তৈরি করে একটা পৃষ্ঠায় সবকিছু আলোকপাত করতে পারবেন যা আপনার নিজের এবং ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাক্তির বুঝতে অনেকটা সহজ হবে।

মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
Marketing
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
রেড ওশান এবং ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি (Red Ocean & Blue Ocean Strategy with Example
Business
রেড ওশান এবং ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি (Red Ocean & Blue Ocean Strategy with Example
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
Business
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
Sales
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
PESTLE বিশ্লেষণ
Analysis
PESTLE বিশ্লেষণ
মার্কেটিং এ ৫ সি (5 C's Of Marketing)
Marketing
মার্কেটিং এ ৫ সি (5 C's Of Marketing)
ডিমার্কেটিং (DeMarketing)
Marketing
ডিমার্কেটিং (DeMarketing)
World Trade Organization (WTO) Agreements
Agreement
World Trade Organization (WTO) Agreements
মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স (Multi Vendor E-commerce)
E-Commerce
মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স (Multi Vendor E-commerce)