The U.S.-China Rivalry: Economic, Technological, and Military Frontiers
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিক ক্ষেত্রে বৈশ্বিক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। উভয় দেশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তবে তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত নির্ভর করবে কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Key Points
- ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ছিল চীনের চতুর্থ বৃহৎ বানিজ্যিক বন্ধু, যেখানে দুই দেশের মাঝে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫৭৫ বিলিয়ন ডলার।
- JPMorgan Chase এবং Goldman Sachs এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে আমেরিকা এখনো গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল হাব হিসেবে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোই বৈশ্বিক বিনিয়োগের প্রবাহ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
- BRI প্রজেক্টে ট্রান্সপোর্ট করিডোরগুলোতে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যার কারণে কাজ শেষ হয়ে গেলে এর সাথে জড়িত দেশগুলোর বাণিজ্য ১.৭% থেকে ৬.২% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে এবং যার ফলে গ্লোবাল রিয়াল ইনকাম ০.৭% থেকে ২.৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
- ২০২৪ সালের জন্য চীনের আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ২৩৬ বিলিয়ন ডলার। তবে, অতিরিক্ত ব্যয় হিসাব করে ধারণা করা হচ্ছে যে চীনের মোট সামরিক ব্যয় প্রায় ৪৭৪ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রতিষ্ঠিত সুপার পাওয়ার, আর চীন উদীয়মান প্রতিদ্বন্দ্বী, যার রয়েছে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ৫জি প্রযুক্তিতে অগ্রগতি। এই প্রতিযোগিতা বৈশ্বিক বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তায় গভীর প্রভাব ফেলছে, যা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
এই কারণেই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সারা বিশ্বের বাণিজ্য নীতি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং নিরাপত্তা কৌশলকে প্রভাবিত করছে। তাই এই প্রতিযোগিতার অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সামরিক দিকগুলো বোঝা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ অনুধাবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় আমরা এই সবগুলো দিক কভার করার চেষ্টা করবো।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার অর্থনৈতিক দিকসমূহ
বাণিজ্য সম্পর্ক
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৭% কম। যুক্তরাষ্ট্র চীনে ১৪৭.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি এবং চীন থেকে ৪২৭.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ২৭৯.৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিসংখ্যান হ্রাস পাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করেছে, যার মাঝে অন্যতম -
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, যথা - মুদ্রাস্ফীতি, বারতি সুদের হার, গ্রোথ রেট কমে যাওয়া ইত্যাদি।
- মহামারি পরবর্তী রিকভারি প্রসেস।
- ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বারতি ট্যারিফ।
- চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক সংকট।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন টেনশন আবার ঘনীভূত হতে শুরু করায় অনেক কোম্পানীর তাদের প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটি চীন থেকে সরিয়ে নেয়া।
এই বিষয়গুলোর কারণে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। ট্যারিফ ও জিওপলিটিকাল অনিশ্চয়তার কারণে নিজেদের প্রোডাকশন যাতে ব্যাহত না হয়, তাই কোম্পানিগুলো প্রোডাকশন বেইজ ডাইভারসিফাই করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এই কারণে ভিয়েতনাম, মেক্সিকোর মতো দেশগুলো এখন তুলনামূলক বেশি এফডিআই পাচ্ছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রভাব
২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকা এখনো বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি, যার জিডিপি প্রায় ২৯ ট্রিলিয়ন ডলার। আর চীন দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনীতি, যার জিডিপি ১৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে এই দুই দেশ বিশ্বের বেশিরভাগ সেক্টরেই লিডার হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আমেরিকা যেসব সেক্টরে লিডার হিসেবে রয়েছে -
প্রযুক্তি - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ৫জি’র দিক দিয়ে চীন অনেকটা এগিয়ে গেলেও, আমেরিকা এখনো বিভিন্ন টেক-জায়ান্ট যেমন - অ্যাপল, মাইক্রোসফট, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানের দেশ।
আর্থিক সেবা - JPMorgan Chase এবং Goldman Sachs এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে আমেরিকা এখনো গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল হাব হিসেবে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা ও ফার্মাসিউটিক্যালস - আমেরিকায় রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যালস ও মেডিকাল রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রির বড় বড় প্রতিষ্ঠান, যেমন - ফাইজার, জনসন এন্ড জনসন।
চীন যেসব সেক্টরে লিডার হিসেবে রয়েছে -
উৎপাদন - চীন ইতোমধ্যেই নিজেকে ‘গ্লোবাল ফ্যাক্টরি’ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। আপনি যেকোনো পণ্য চীনে খুব সহজেই উৎপাদন করতে পারবেন।
অবকাঠামো তৈরি - চীন নিজের দেশের ভেতরে এতো দ্রুত শহরায়ন করেছে এবং এই কাজে সে এতোটাই এগিয়ে গিয়েছে যে এখন বিশ্বের অন্যতম বড় বড় প্রজেক্টগুলো চীন নিজেই হ্যান্ডেল করে।
রপ্তানী বাণিজ্য - বৈশ্বিক রপ্তানী বাণিজ্যে সবার উপরে চীনের অবস্থান। যার কারণে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে চীনের পণ্য ও সেবা রপ্তানী করা হয় এবং চীনের বেশ ভালো পরিমাণ বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও এর বৈশ্বিক প্রভাব
চীন ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) শুরু করে, যার লক্ষ্য গ্লোবাল ট্রেড ও ইকোনমিক গ্রোথকে বুস্ট করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন ও ট্রেড লিংক তৈরিতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাণিজ্য ও আয় বৃদ্ধি করবে। তবে BRI নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে, যেমন জড়িত দেশগুলোর ঋণের ঝুঁকি, চীনের জিওপলিটিকাল ক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং পরিবেশগত প্রভাব। তবুও, এটি চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
ইকোনমিক ডিকাপলিং (Economic decoupling)
ইকোনমিক ডিকাপলিং বলতে দুই দেশের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা হ্রাস বোঝায়। আমেরিকা চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাপ্লাই চেইন ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, ভারতের মতো দেশে সরিয়ে নিচ্ছে, এবং চীনে টেকনোলজি রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে। চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টরে ফোকাস বাড়িয়ে, নতুন ট্রেড পার্টনার খুঁজে, এবং RCEP-এর মতো চুক্তিতে অংশ নিয়ে আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রযুক্তিগত দিকসমূহ
৫জি এবং টেলিকমিউনিকেশন্স
টেলিকমিউনিকেশন্স জায়ান্ট হুয়াওয়ে’র সাহায্যে চীন ইতোমধ্যে নিজেকে ৫জি’র দুনিয়ায় লিডিং পজিশনে নিয়ে এসেছে। ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে, হুয়াওয়ে’র ৫জি রিলেটেড ৬৫৮৩টি পেটেন্ট রয়েছে, যা গ্লোবাল টোটালের ১৪%। মার্চ, ২০২৪-এ হুয়াওয়ে ও ভিভো নিজেদের মাঝে গ্লোবাল পেটেন্ট ক্রস-লাইসেন্সিং চুক্তি করে।
২০২২ সালের নভেম্বরে ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশন চীন থেকে টেলিকমিউনিকেশন্স ইক্যুইপমেন্ট আমদানি ও দেশের ভেতরে চাইনিজ ইক্যুইপমেন্ট বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর চীনে কোনো অ্যাডভান্সড টেকনোলজির সাপ্লাই দিচ্ছে না।
সেমিকন্ডাক্টর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
সেমিকন্ডাক্টর মডার্ন টেকনোলজির মেরুদণ্ড, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হাই-পারফরম্যান্স কম্পিউটিং ও সামরিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য। ২০২২ সালে মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ চীনের অ্যাডভান্সড সেমিকন্ডাক্টর অ্যাক্সেস সীমিত করে। চীন নিজস্ব উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে "মেইড ইন চায়না ২০২৫" উদ্যোগে ৭০% দেশীয় উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অর্জনে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এআই প্রযুক্তিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং সামরিক ও বেসামরিক খাতে এটি প্রয়োগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এআই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন ও সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআই ব্যবহৃত হচ্ছে। চীন এআইকে কৌশলগত প্রযুক্তি হিসেবে গ্রহণ করে, যা সামরিক আধুনিকীকরণ, ফেস রিকগনিশন ও নগর পরিকল্পনায় ব্যবহৃত হচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর ও এআই নিয়ে প্রতিযোগিতা বৈশ্বিক প্রযুক্তি ল্যান্ডস্কেপকে পরিবর্তন করছে, যেখানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মাঝেও চীন স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে বদ্ধপরিকর।
সাইবার নিরাপত্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সাইবার আক্রমণ ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে জড়িত, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। চীনা হ্যাকাররা মার্কিন অবকাঠামোতে আক্রমণ চালিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা হ্যাকিং গ্রুপ "ফ্ল্যাক্স টাইফুন" এবং হুয়াওয়ে’র ৫জি ব্যবস্থার মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব উত্তেজনা প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সামরিক দিকসমূহ
সামরিক বাজেট
২০২৪ অর্থবছরে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেট ৮৪৯.৮ বিলিয়ন ডলার এবং চীনের আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা বাজেট ২৩৬ বিলিয়ন ডলার, তবে প্রকৃত ব্যয় ৪৭৪ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। চীন সামরিক আধুনিকীকরণে হাইপারসনিক মিসাইল ও নৌবাহিনীতে বড় বিনিয়োগ করছে। পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি ব্লু-ওয়াটার ক্যাপাবিলিটি জোরদার করে ইন্দো-প্যাসিফিকে প্রভাব বিস্তার করছে। এই প্রতিযোগিতা উভয় দেশের কৌশলগত উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে উদ্বেগ
চীন দক্ষিণ-চীন সাগরের কৃত্রিম দ্বীপগুলো সামরিকীকরণ করেছে, যেখানে মিসাইল সিস্টেম, লেজার, ও যুদ্ধবিমান স্থাপন করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র FONOP পরিচালনা করে চীনের সামুদ্রিক দাবি চ্যালেঞ্জ করেছে এবং AUKUS জোটের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা শক্তিশালী করেছে। এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-চীনের উত্তেজনা এবং কৌশলগত প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে।
মহাকাশ এবং সাইবার যুদ্ধ
চীন চন্দ্র মিশনসহ মহাকাশ অভিযানে সাফল্য অর্জন করেছে। উল্লেখযোগ্য মিশনগুলো হলো চাং'ই-৩ (২০১৩), চাং'ই-৪ (২০১৯), চাং'ই-৫ (২০২০), এবং চাং'ই-৬ (২০২৪)। তারা গ্রহাণু ও ধূমকেতু এক্সপ্লোরেশনেরও পরিকল্পনা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩০ বিলিয়ন ডলারের বাজেটসহ স্পেস ফোর্স এবং সাইবার প্রতিরক্ষা জোরদার করছে, যেখানে বাণিজ্যিক প্রযুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার বৈশ্বিক প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছোট দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যেগুলি দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যেমন ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন চীনের BRI থেকে লাভবান হলেও মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর নির্ভরশীল। আফ্রিকার দেশগুলোও চীনের বাণিজ্য বৃদ্ধির মধ্যে ঋণের উদ্বেগ মোকাবেলা করছে।
এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন অর্থনৈতিক জোটের গঠন ত্বরান্বিত করেছে, যেমন BRICS ও G7, যা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান প্রণালী নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্লোবাল হেলথে কিছু সহযোগিতার সুযোগও তৈরি হয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যৌথভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করার ঘোষণা দেয়।
এভাবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে কিছু সহযোগিতার সম্ভাবনা বিশ্ব স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতি
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত, এবং সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। দুটি দেশ একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা বজায় রাখলেও, চীন তার অর্থনৈতিক শক্তি বাড়িয়ে মার্কিন নির্ভরতাকে কমাতে পারে। প্রযুক্তিতে, চীন সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে স্বনির্ভরতা অর্জন করার চেষ্টা করছে। সামরিক দিক থেকে, দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান প্রণালী অঞ্চলে সংঘাতের ঝুঁকি রয়েছে, তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও সাইবার নিরাপত্তায় সহযোগিতার সুযোগও আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ভবিষ্যতে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করতে পারে।
পরিসংহার
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সামরিক ক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। উভয় দেশ তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিযোগিতা করছে, তবে এই প্রতিযোগিতা বিভাজন বা সহযোগিতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। একইসাথে উত্তেজনা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন, যাতে সংঘাতের ঝুঁকি এড়ানো যায় এবং বৈশ্বিক অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়। জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, এবং বাণিজ্যের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই জটিল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাবধানতা অবলম্বন দুই দেশের জন্যই ভবিষ্যতে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।
- https://www.cfr.org/backgrounder/contentious-us-china-trade-relationship
- https://think.ing.com/articles/hold-until-9-12-24-how-the-us-china-trade-dispute-has-redefined-global-trade
- https://www.investopedia.com/articles/investing/091515/3-industries-driving-chinas-economy.asp
- https://www.worldbank.org/en/topic/regional-integration/publication/belt-and-road-economics-opportunities-and-risks-of-transport-corridors
- https://merics.org/en/tracker/how-bri-shaping-global-trade-and-what-expect-initiative-its-second-decade
- https://www.stlouisfed.org/on-the-economy/2024/jan/decoupling-where-it-matters-us-imports-from-china-in-critical-sectors
- https://www.bis.gov/press-release/commerce-strengthens-export-controls-restrict-chinas-capability-produce-advanced
- https://blogs.lse.ac.uk/cff/2022/09/01/is-chinas-semiconductor-strategy-working/
- https://www.reuters.com/technology/cybersecurity/us-issues-cybersecurity-sanctions-against-chinas-integrity-technology-2025-01-03
- https://www.cfr.org/backgrounder/chinas-huawei-threat-us-national-security
- https://www.csis.org/analysis/how-chinese-communist-party-uses-cyber-espionage-undermine-american-economy
- https://www.defense.gov/Spotlights/FY2024-Defense-Budget
- https://www.iiss.org/online-analysis/military-balance/2024/05/asian-defence-spending-grows-chinas-grows-more
- https://www.cfr.org/global-conflict-tracker/conflict/territorial-disputes-south-china-sea
- https://www.defense.gov/News/News-Stories/Article/Article/3926061/allies-partners-conduct-operations-in-south-china-sea/
- https://www.theguardian.com/world/2022/mar/21/china-has-fully-militarized-three-islands-in-south-china-sea-us-admiral-says