এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)

703
article image

প্রায় বেশিরভাগ স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তারই শুরুর দিকে কিছু চ্যালেঞ্জ এর মুখে পরতে হয়। যার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে ‘ইনভেস্টমেন্ট’ বা ‘অর্থের যোগান’। ব্যবসায়ের প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন স্টেজে বিভিন্ন কারণে অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তো বর্তমানে স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তাদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট নেয়ার বেশ জনপ্রিয় একটি সোর্স হল ‘অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investors)’। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investors) বা দেবদূত বিনিয়োগকারীরা হলেন এমন স্বাধীন ব্যক্তি যারা ব্যবসার একটি অংশ, ইকুইটি মালিকানার বিনিময়ে প্রতিশ্রুতিশীল স্টার্টআপ (Startup) বা নতুন শুরু করা কোম্পানিকে অর্থায়ন বা অর্থ সরবরাহ করে থাকেন। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা মূলত প্রতিষ্ঠিতি বিজনেসম্যান যারা স্টার্টআপের প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগ করতে চায়। এরা স্বীকৃত কোন বিনিয়োগকারী কিনা এ নিয়ে অনেক ধরণের মতামত থাকতে পারে, তবে অত্যন্ত উচ্চ আয় এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীদের এই শ্রেণীবিভাগ টাকে আলাদা করা হয়ে থাকে।

Key Points

  • অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investor) হলেন একজন ধনী ব্যক্তি যিনি প্রাথমিক অবস্থায় স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তাদের সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থ থেকে টাকার যোগান দিয়ে বিজনেস পরিচালনা করতে সহায়তা করেন।
  • অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investor) অনেক স্টার্টআপের কাছেই টাকা সংগ্রহের একটি প্রাথমিক উৎস, যারা এটিকে অন্যান্য আরো তহবিল ফার্মগুলোর থেকে বেশি আকর্ষণীয় ও উদ্যোমি মনে করেন।
  • অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা স্টার্টআপদের যে সহায়তা প্রদান করে তা নতুন নতুন উদ্ভাবনকে (Innovation) উৎসাহিত করে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
  • অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা স্টার্টআপ বিজনেসে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি নিজেদের আইডিয়া, নেটওয়ার্কিং ও সোর্সিং শেয়ারের মাধ্যমেও সহায়তা করে থাকে।
  • সঠিক ইনভেস্টমেন্টের অভাবে একটি স্টার্টআপ ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সময়োপযোগী একটি ইনভেস্টমেন্ট একটি ব্যবসাকে সফল করার ক্ষমতা রাখে।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট কি ও তার বিস্তারিতঃ

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investors) রা হলেন ধনী প্রাইভেট ইনভেস্টর বা বিনিয়োগকারী যারা ইকুইটি (Equity) বিনিময়ের চুক্তিতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিনিয়োগ করে থাকেন। এরকম ব্যাক্তিগণ Business angel, Informal investor, Angel funder, Private investor এবং Seed investor নামেও পরিচিত। বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে এরা নিজস্ব অর্থ একটি স্টার্টআপ কোম্পানি বা উদ্যোক্তাদের উপর বিনিয়োগ করে, বিনিময়ে এরা কোম্পানির একটি অংশ বা মালিকানা লাভ করে।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investors) বা দেবদূত বিনিয়োগকারীরা ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য ঋণদাতাদের তুলনায় অনেক বেশি সহায়ক এবং সহযোগীপূর্ণ শর্তাবলী প্রদান করে, যেহেতু তারা প্রতিষ্ঠিত কোন ব্যবসার পরিবর্তে ব্যবসা শুরু করার জন্য কোন উদ্যোক্তার পিছনে বিনিয়োগ করে। এছাড়াও এরা ব্যবসা পরিচালনা ও এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে দারুণ আক্রমানাত্নক আর উদ্যোমী হয়। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা ব্যবসা থেকে সম্ভাব্য লাভ করার পরিবর্তে স্টার্টআপগুলিকে তাদের প্রথম পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করার দিকে বেশি মনোনিবেশ (Focus) করতে বেশি পছন্দ করে। সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যবসা বা আইডিয়াকে লালন পালন করে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বাদ বা আনন্দ পাওয়ার জন্যেও এরা মুখিয়ে থাকে।

‘Angel’ বা দেবদূত আখ্যাটি ব্রডওয়ে থিয়েটার (Broadway theater) থেকে প্রথম আসে। সে সময়ের ধনী ব্যক্তিরা তখন নাট্য প্রযোজনার জন্য টাকা বিনিয়োগ করত। তবে পরবর্তীতে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investor) শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের (The University of new Hampshire) এর উইলিয়াম ওয়েটজেল (William Wetzel)। এই ওয়েটজেল কিভাবে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ সংগ্রহ করে তা নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা ও গবেষণা করেছিলেন। তিনি সেন্টার ফর ভেঞ্চার রিসার্চেরও (Center for Venture Research) প্রতিষ্ঠাতা।

সাধারণত ধারণা করা হয় অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা হয়তো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অথবা ব্যবসায়ী পরিবার থেকেই তারা আসেন। কিন্তু এটিই অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের একমাত্র উৎস নয়। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা অন্য বিভিন্ন পেশারও হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ -

বিজনেস প্রফেশনালদের পাশাপাশি আইনজীবি, ডাক্তার, আর্থিক উপদেষ্টারাও অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর হতে পারে।

কোম্পানি এক্সিকিউটিভস, যারা বিভিন্ন পদমর্যাদা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন এবং জানেন যে একটি সফল ব্যবসা কিভাবে পরিচালনা করতে হয়।

সফল উদ্যোক্তা বা স্টার্টআপের মালিক যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের কোম্পানিকে সফল করতে পেরেছেন। কারণ তারা জানেন যে কিভাবে একটি ভবিষ্যৎ আছে এরকম সম্ভাবনাময় ও লাভজনক স্টার্টআপ চিনে নিতে হয়।

এমন বিনিয়োগকারী যারা ছোট ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করে একটি পেশাদারি বিনোদন খুঁজে পান।

ক্রাউড ফান্ডিং (Crowdfunding) প্ল্যাটফর্মগুলি যারা গ্রুপ করে পুলের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে, যেখানে প্রতিটি আলাদা ব্যক্তি কোম্পানি থেকে পাওয়া চূড়ান্ত লাভের ছোট অংশের বিনিময়ে ছোট পরিমাণ বিনিয়োগ করে থাকে।

সাধারণত এমন ব্যক্তিদের অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর হিসেবে ধরা হয় যারা Accredited Investor বা ‘স্বীকৃত বিনিয়োগকারী’ মর্যাদা অর্জন করেছেন, যদিও এটি অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর খেতাব পাওয়ার কোন পূর্বশর্ত নয়। সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (The Securities and Exchange Commission, SEC) এর সংজ্ঞানুযায়ী, ব্যক্তিগত বাসস্থান ব্যতীত যার নেট সম্পদের মূল্য $1M বা তারও বেশি অথবা বিগত দুই বছরে $200K আয় করেছেন অথবা বিবাহিত দম্পতির জন্য সম্মিলিত আয় $300K এরকম অবস্থাকে Accredited Investor বা ‘স্বীকৃত বিনিয়োগকারী’র অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও স্বীকৃত বিনিয়োগকারী আর অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর একই জিনিস নয়। মূলত এই ব্যক্তিদের উভয়েরই আর্থিক এবং স্টার্টআপগুলির জন্য তহবিল সরবরাহ করার ইচ্ছা থাকে। এসব কারণেই স্টার্টআপগুলির কাছে অন্য যে কোন ইনভেস্টমেন্ট ফার্মগুলোর থেকে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের বেশি আকর্ষনীয় আর উদ্যোমী মনে হয়।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা সাধারণত নিজেদের অর্থ থেকেই বিনিয়োগ করে থাকে যেখানে অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমগুলো অনেক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ জমা করে এবং সেসব অর্থের যোগান একটা স্ট্র্যাটেজির মধ্যদিয়ে পরিচালনা করে। যদিও অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট এর বিষয়টি নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তিকে প্রতিনিধত্ব করে, তবে মূল যে সত্ত্বাটি আসলে বিনিয়োগটি সরবরাহ করে তা হতে পারে একটি Limited Liability Company (LLC) বা লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি, একটি বিজনেস, একটি ট্রাস্ট বা একটি বিনিয়োগ তহবিল যা ইনভেস্ট করার পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করে থাকে।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট কিভাবে কাজ করে এর বিস্তারিতঃ

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর (Angel Investors) রা একটি কোম্পানির ‘Seed’ বা প্রাথমিক পর্যায়ে জড়িত হতে বেশি পছন্দ করে। এর অর্থ এমনও হতে পারে যে, যখন পুরো বিষয়টি শুধুমাত্র আইডিয়া হিসেবেই বিদ্যমান তখনও একজন অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর চাইলে বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার এমনও হতে পারে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা একটি স্টার্টআপের অর্থ সংগ্রহের প্রাথমিক পর্যায়টির পরে এসেছেন, যে পর্যায়টি সাধারণত প্রতিষ্ঠাতাদের নিজের, প্রতিষ্ঠাতার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার, বা ব্যাংক লোন থেকে আসে। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ের এসব ব্যবসায়ীক তহবিল একটি স্টার্টআপের জন্য যথেষ্ট নয়।

এটা খুবই স্বাভাবিক যে এরকম ইনিশিয়াল ফান্ডিং দিয়ে নতুন একটি আইডিয়াকে দাঁড় করানো কঠিন হয়ে পরে। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ একটি কোম্পানির বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয়ে পরে যা সেই কোম্পানির বিকাশে প্রাথমিক অবস্থার বিনিয়োগ ফুঁড়িয়ে যাবার পরে এবং বিপুল অংশীদারিত্ব ও শর্তাবলীর বিনিময়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের (Venture Capitalist) দারস্থ হওয়ার আগেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার চলুন একটি অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট প্রক্রিয়া কিভাবে কাজ করে তা দেখে নেয়া যাক -

অ্যাঞ্জল ইনভেস্টর (Angel Investors) রা মূলত তরুণ আইডিয়াবাজ, লোক মুখে আলোচিত কোন ডেভেলপিং কোম্পানি, বিজনেস এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেমিনার বা কনভেনশন্স, প্রফেশনাল বিনিয়োগ সংস্থাগুলির পরামর্শ, অনলাইন বিজনেস ফোরাম থেকে বা চেম্বার অফ কমার্স মিটিং এর মত স্থানীয় ইভেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন।

যদি পারস্পরিক ইন্টারেস্ট মিলে যায় তাহলে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা শুরুতে নতুন ওই কোম্পানির সাথে আলোচনা করবেন ও কোম্পানির প্রতি যথাযথ অধ্যাবসায় পরিচালনা করবেন। এরপর ব্যবসায়ীক বিনিয়োগের নথি ও চুক্তিপত্র পর্যালোচনার পাশাপাশি ব্যবসার জন্য যে ইন্ডাস্ট্রিকে টার্গেট করা হয়েছে তা আবারো খতিয়ে দেখবেন।

একবার উভয়ের মধ্যে মৌখিক একটা চুক্তি হয়ে গেলে একটি টার্ম শীট (Term sheet) বা কন্ট্রাক্ট তৈরী করা হয়। যার মধ্যে বিনিয়োগ শর্তাবলী, পেআউট বা ইকুইটি শতাংশ, বিনিয়োগকারীদের অধিকার ও সুরক্ষা, শাসন এবং নিয়ন্ত্রণ প্যারামিটার, বিনিয়োগকারীদের চূড়ান্ত প্রস্থানের স্ট্র্যাটেজি সহ ইত্যাদি বিষয়াদি উল্লেখ করা থাকে।

চুক্তিপত্রটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে একটি প্রকৃত আইনী চুক্তি তৈরী করে তাতে প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর শেষে চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কোম্পানির ব্যবহারের জন্য বিনিয়োগ তহবিল প্রকাশ করা হয়।

বিনিয়োগের মাত্রা একেক দেশের কারেন্সি ও প্রয়োজন বুঝে একেক রকম হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগের এই মাত্রা সর্ব নিম্ন $5,000 থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ $150,000 পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর একটি সিন্ডিকেট হিসেবে একত্রিত হয়ে সিলেক্টেড কোম্পানিগুলোর জন্য $1M বা তারও বেশি তহবিল সরবরাহ করতে পারে। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা সাধারণত একটি কোম্পানিতে ২৫% এর বেশি অংশীদারিত্ব অর্জন করে না। একটি স্টার্টআপ প্রাথমিক পর্যায়েও যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরও তার বিনিয়োগের সম্পূর্ণটাই হারিয়ে ফেলবেন। এখানে তারা কোন রিটার্নের আশা করতে পারেন না। এই কারণে পেশাদার অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা একটি যৌক্তিক প্রস্থান কৌশল (Exit strategy), অধিগ্রহণ বা প্রাথমিক পাব্লিক অফারিং (Initial Public Offering, IPO) এর সুযোগ তৈরী করে রাখেন।

অনেকটা অনিশ্চিত ভাবেই অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসেন, সংগত কারণেই তারা কিছুটা উচ্চ রিটার্ন অর্জনের চেষ্টা করেন। অনেক বেশি বিনিয়োগের বিনিময়ে উচ্চ রিটার্ন আশা করার পাশাপাশি অনেক রিস্কি ফ্যাক্টর নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় বিনিয়োগকারীদের। কেননা, সম্পূর্ণ নতুন একটি আইডিয়া নিয়ে নেমে পরলেই যে তা স্ট্যান্ড আউট করে ফেলবে এরকম কোন নিশ্চয়তা কোথাও নেই। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের একটি সফল পোর্টফোলিওর জন্য কার্যকর বিনিয়োগ রিটার্নের হার প্রায় ২২%।

বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি খুব ভালো একটি রিটার্ন হতে পারে আবার একই সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যবসার সাথে উদ্যোক্তাদের জন্য খুব ব্যয়বহুল মনে হতে পারে, কিন্তু এই ধরণের ব্যবসায়ীক উদ্যোগের জন্য সাধারণত ব্যাংকের মত অর্থায়নের উৎস থেকে এরকম আকর্ষণীয় শর্ত আর সুবিধাদী সহ বিনিয়োগ পাওয়া যায়না। এটি অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের সাথে উদ্যোক্তাদের সম্পর্ককে আরো নিখুঁত করে তোলে। বিগত কয়েক বছর ধরে স্টার্টআপের জন্য বিনিয়োগের একটি প্রাথমিক উৎস হিসেবে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একই সাথে এটি নতুন নতুন আইডিয়া এবং উদ্ভাবনকেও উৎসাহিত করেছে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সফল ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি Forbes Advisor সাইটটির তথ্যমতে, ২০১৭ সালে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা ৭০,০০০ হাজার কোম্পানিতে প্রায় $২৫ বিলিয়ন পরিমান বিনিয়োগ করেছে।

কিভাবে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের খোঁজ পাওয়া যায়ঃ

এখন প্রশ্ন হচ্ছে অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের কোথায় খুঁজব বা কিভাবে এদের খুঁজে পাওয়া যায়? যেহেতু অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা ধনী ব্যক্তি বিশেষ সুতরাং তাদের খোঁজ পাওয়াটা একটু কষ্টসাধ্যই মনে হতে পারে। প্রথমেই ভৌগলিকভাবে খুব কাছের হবে এমন কাউকে খুঁজে বের করার জন্য আপনার মনোযোগ দেয়া উচিত। এতে উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারী উভয়ই ব্যবসার জন্য একটি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

এরপরে, একজন ভালো অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরকে খুঁজে পেতে বিভিন্ন বিনিয়োগ সমিতি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখুন। নিচের কয়েকটি অ্যাঞ্জেল সংস্থা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করা যেতে পারে -

Angel Capital Association (ACA): এই ACA হল বৈশ্বিক ভিত্তিতে অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলদের সবচেয়ে বড় সমিতি। যা ১৪,০০০ এরও বেশি ব্যক্তিগত সমর্থক এবং ২৫০টিরও বেশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অ্যাঞ্জেল সমাবেশ নিয়ে গঠিত। ACA মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কার্যক্রম পরিচলনা করে।

Angel Messenger Forum (AMF): নতুন কোম্পানি যারা $100,000 থেকে $1M পর্যন্ত ইকুইটি ফাইন্যান্সিং খুঁজছে তারা AMF এর মত বড় সংস্থা ব্যবহার করতে পারে।

Angel List: এটি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যা উদ্যোক্তাদের অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর খুঁজে পেতে সহায়তা করে।

Angel Investment Network: ২৭৯,০০০ এর বেশি ইনভেস্টর নিয়ে গঠিত একটি অনলাইন নেটওয়ার্ক। এখানে উদ্যোক্তারা নিজেদের একটি প্রোফাইল তৈরী করে নিজেদের ব্যবসার প্রচারণা করতে পারে। এভাবে ইনভেস্টরদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বিনিয়োগ নেয়া যেতে পারে।

LinkedIn: প্রফেশনাল সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক যেমন LinkedIn থেকেও আপনি একজন অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর এর সাথে যোগাযোগের সরাসরি একটি উপায় বের করে ফেলতে পারেন। আপনার আশেপাশেই এরকম বিনিয়োগকারী খুঁজে পেতে শুধু এর সার্চ কি ব্যবহার করে দেখুন।

একজন অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর এর সাথে যোগাযোগের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার নিজের একটি সঠিক বিজনেস আইডিয়া বা পরিকল্পনা রয়েছে। কেননা তারা আপনার ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার আগে আপনার ব্যবসার সাফল্যের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইবে।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্টের সুবিধা ও অসুবিধাঃ

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর এর সুবিধা -

একজন অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর থাকার প্রথম সুবিধা হল বিনিয়োগ হিসেবে পাওয়া টাকা আপনাকে পরিশোধ করতে হবেনা। এমনকি কোম্পানি ব্যর্থ হলেও না। কারণ, চুক্তি হিসেবে আপনি টাকার বিনিময়ে কোম্পানির মালিকানার শেয়ার তাকে দিচ্ছেন।

অর্থের পাশাপাশি অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের ব্যবসায়িক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতারও প্রাচুর্য্য থাকে। কারণ এরা নিজেরাই হয়তো একসময় উদ্যোক্তা ছিলেন এবং নিজের হাতে অনেক কোম্পানিও তারা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

অফিসিয়াল এবং প্রশাসনিক অনেক কাজের ঝামেলা তুলনামূলক কম থাকে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সরবরাহেরও একটা নিশ্চয়তা থাকে। যখন অ্যাঞ্জেলরা একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে তখন প্রায়শই তারা দীর্ঘ একটি যাত্রার জন্য প্রস্তুত থাকেন এবং পরবর্তীতে আবারো প্রয়োজনে নগদ অর্থ বিনিয়োগ করেন।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর এর অসুবিধা -

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর এর একটি বড় অসুবিধা হল এরা তাদের বিনিয়োগের বিনিময়ে কোম্পানির ১০% থেকে ৫০% পর্যন্ত অংশ অর্জন করতে চান।

যেসব কোম্পানি অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য যে কোন ব্যবসায়িক ডিসিশন নেয়ার বিষয়টা একটু কঠিন হয়ে পরে। কন্ট্রোল করতে পারার অংশটাও তখন কমে যায় কারণ অ্যাঞ্জেল ফান্ডিং সমর্থকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তারা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে একটি বড় ভূমিকা চান।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা চাইবেই যে কোন কিছুর বিনিময়ে তাদের বিনিয়োগের টাকা উঠে আসুক। এটিই সাধারণত চুক্তিতে ইকুইটির হিসাবে প্রভাব ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের অংকের চেয়ে রিটার্নের হার অনেক বেশি হয়ে থাকে।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টিং নেয়ার আরেকটি বড় অসুবিধা হতে পারে বিনিয়োগ পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু অনভিজ্ঞ বা নতুন কোন ইনভেস্টর কপালে জুটে গেলে। প্রায়শই এরা অপ্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং ব্যবসায়ীক আপডেটের কাজেও না বুঝেই বাঁধা দেন।

উপসংহারঃ

বেশিরভাগ অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরের ক্ষেত্রেই বিশেষ করে যারা নিজেরাও উদ্যোক্তা ছিলেন তারা নতুন উন্নয়নশীল কোন ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত থাকতে ও তাদের উৎসাহিত করতে পছন্দ করেন। অনেক ক্ষেত্রেই অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগ রিস্কি হতে পারে যেহেতু এখানে বিনিয়োগ এবং ব্যবসার সফলতা দুটিই অপ্রমাণিত। একটি অনলাইন বিনিয়োগ ফোরাম FundersClub এর তথ্যমতে, ৭৫% থেকে ৯০% শতাংশ স্টার্টআপই ব্যর্থ হয়।

যেখানে অ্যাঞ্জেলরা চাইলেই অন্য আরো উপায়ে অর্থ আয় করতে পারেন, সেখানে তারা তাদের বিনিয়োগের সম্পূর্ণ টাকা হারান। আবার যদি তাদের বিনিয়োগ সফল হয়, তাহলে অ্যাঞ্জেলরা তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের ১০০ গুন বা তারও বেশি উপার্জন করতে পারে। অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগ কখনোই দ্রুত ধনী হয়ে যাওয়ার কোন উপায় নয়। একটি স্টার্টআপে করা বিনিয়োগ থেকে ফলপ্রসূ রিটার্ন নিয়ে বের হতে হতে ৭ থেকে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। সুতরাং একজন অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর হিসেবে বিনিয়োগ করতে গেলে অদূর ভবিষ্যতেও আপনার যে টাকার দরকার নেই অথবা সে টাকা হারানোরও কোন ভয় আপনার নেই, এমন টাকাই আপনার বিনিয়োগের বিবেচনায় রাখা উচিত।

  • https://www.thehartford.com/business-insurance/strategy/alternative-funding-startup/angel-investors
  • https://www.thehartford.com/business-insurance/strategy/alternative-funding-startup/angel-investors
  • https://www.forbes.com/advisor/investing/what-are-angel-investors/
  • https://en.wikipedia.org/wiki/Angel_investor
  • https://www.nerdwallet.com/article/investing/angel-investing
Next to read
Canvas & Methods
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)

অধিক শ্রম ও অর্থ খরচের এই ঝুঁকি এড়াতে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি যেখানে পণ্য প্রয়োজনীয় কিছু ফিচার দিয়ে বাজারজাত করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাহিদা পর্যালোচনা করে ধীরে ধীরে এই পণ্যের উন্নয়ন করা হয় এবং নতুন নতুন উপাদান/ফিচার যুক্ত করা হয়। ব্যবসায়িক জগতে একে বলা হয় মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট।

লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)
Logo
লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)
ব্যষ্টিক অর্থনীতি বা Micro Economics কী?
Economics
ব্যষ্টিক অর্থনীতি বা Micro Economics কী?
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
Sales
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
Investment
বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
Investment
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
‘SWOT’ Analysis
Analysis
‘SWOT’ Analysis
অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)
Marketing
অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)
বিক্রয় বৃদ্ধি করার ৬টি নীতি
Sales
বিক্রয় বৃদ্ধি করার ৬টি নীতি
হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি (What is Accounting)
Accounting
হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি (What is Accounting)