বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ১০ টি বিষয়

আপনি যখন Investing বা বিনিয়োগের কথা ভাবছেন, তখন আগে থেকেই বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনার আচরণ কেমন হওয়া উচিত, আপনার চিন্তা-ভাবনা কেমন হওয়া উচিত এইযে বিষয়গুলো নিয়ে আপনি যত বেশি জানবেন, আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ (Preferences) এবং সামর্থ্যের (Abilities) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এমন ভালো সিদ্ধান্ত নেয়া তত সহজ হবে। একটি সফল বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনার সফলতার দুয়ার যেমন খুলে যেতে পারে, একই সাথে বিনিয়োগ ব্যর্থ হলে আপনার আর্থিক অবস্থায় ধ্বসও নেমে আসতে পারে। প্রায়শই বিনিয়োগকারীরা এরকম কিছু ভুল করে থাকে, তাই বুঝে শুনে Investing করাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীবন হয়তো অনেক সহজ হয়ে যেত যদি আমরা Point & Shoot পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করতে পারতাম, কিন্তু বিনিয়োগের দুনিয়া তো আর এভাবে চলেনা। তাই আজকে আমরা বিনিয়োগের আগে বিবেচনা করতে হয় এমন কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
Key Points
- কখনোই টাকা ধার (Loan) করে এবং সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়।
- ইনভেস্টমেন্ট করার আগে আপনার ঝুঁকি বহন করছে এমন বিষয় গুলো চিহ্নিত করা এবং সম্পদ নির্মাণের পছন্দের বিষয়ে বিস্তৃত অধ্যয়ন খুবই জরুরী।
- বিনিয়োগের জন্য একটি পদ্ধতি নির্ণয়ের পূর্বে অবশ্যই নিজের লক্ষ্য (Goal) কে সংজ্ঞায়িত করা অপরিহার্য। লক্ষ্য নির্ধারণ করা একটি স্মার্ট ডিসিশন।
- বিনিয়োগে একটি বাজেট (Budget) রাখা খুবই সহায়ক বিষয়, যা আপনাকে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
- বিনিয়োগ অবশ্যই একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের চাবিকাঠি হতে পারে, তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের আবেগকে গুরত্ব দেয়া উচিত নয়।
- বিনিয়োগের সময়কাল যত বেশি, সম্ভাব্য রিটার্ন (Return) ও তত উচ্চতর।
বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যে ১০ টি বিষয়
১. বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করুন
আপনি যে কোন বিনিয়োগের (Investing) সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার ঠান্ডা মাথায় বসুন এবং আপনার সম্পূর্ণ আর্থিক পরিস্থিতির উপর একটু সৎ নজর দিন। শুরুতেই আপনার বর্তমান ব্যক্তিগত আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। আপনি বর্তমানে কেমন আয়-রোজগার বা উপার্জন (Income) করেন, আপনার প্রতিদিনের খরচের ধরণ এবং জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস না করে আপনি আপনার উপার্জন থেকে কতটুকু বিনিয়োগ করতে পারবেন, সহজ কথায় দীর্ঘমেয়াদে আরো লাভের (Return) খাতিরে আপনি এখন নিজের জীবনে চলার পথে কতখানি ত্যাগ করতে পারবেন ইত্যাদি বিষয়ের ভিত্তিতে আপনার আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করা নিতে হবে। কেননা বিনিয়োগ করতে গেলে কিছুটা কম্প্রোমাইজ করতে হয় এটা স্বাভাবিক, তাই বলে সাধ্যের বাইরে গিয়ে বিনিয়োগ করা কখনোই উচিত নয়। আপনার বর্তমান আর্থিক অবস্থা ও আয়ের উৎস বিশ্লেষণ (Analysis) এর মধ্য দিয়েই আপনি আর্থিকভাবে এখন কোথায় আছেন এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোথায় থাকতে চান সে সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা আপনি নিতে পারবেন। মনে রাখবেন, আপনি কোথাও বিনিয়োগ করতে পারবেন নাকি পারবেন না তা অনেকখানিই নির্ভর করছে আপনার আয়ের উৎস ও তার প্রবাহের (Cash inflow) উপর।
২. কম্ফোর্ট-জোনের বাইরে গিয়ে কতটুকু ঝুঁকি নিতে পারবেন তার মাত্রা বুঝুন
এ কথা সবারই জানা যে, যে কোন ধরণের বিনিয়োগে বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকি (Risk) জড়িত থাকবেই। আপনি যদি সিকিউরিটিজ (Securities) ক্রয় করতে চান যেমন - স্টক, বন্ড বা মিউচুয়াল ফান্ড - তবে বিনিয়োগ করার পূর্বে এটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার বিনিয়োগের কিছু অংশ অথবা সম্পূর্ণ অর্থই হারাতে (Loss) পারেন। এমনকি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে আপনার বিনিয়োগ ক্রয় করলেও এটা সত্য। সুতরাং আপনার আর্থিক অবস্থান বোঝার পর পরই আপনি কতটুকু ঝুঁকি বহন করতে পারবেন তা নির্ণয় করা জরুরী। কিছু মানুষ যেমন ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন, তেমনি কিছু মানুষ আবার ঝুকি-বিমুখ ও হবেন। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে আপনি কতটুকু ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতা রাখেন? আপনি কেমন ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন সেটাই আপনার বিনিয়োগের প্যাটার্ন নির্ধারণ করবে। বিনিয়োগের পরে প্রতিদিনের বাজারের ওঠানামায় যদি আপনার ঘুম হারাম হয় বা অর্থনৈতীক মন্দায় আপনি যদি খুব নাটকীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান তাহলে সে বিনিয়োগ না করতে যাওয়াই উত্তম। আবার ঝুঁকি নেয়ার পুরষ্কারও হচ্ছে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা। সফল বিনিয়োগকারীরা নিজেদের ঝুঁকি নেয়ার মাত্রাটা জানেন, তারা জানেন যে কতটুকু তারা নিতে পারবেন বা পারবেন না। আপনার যদি লং টার্মে করা একটি ফাইন্যান্সিয়াল গোল থাকে, তাহলে কম ঝুঁকি নিয়ে আপনার বিনিয়োগে সীমাবদ্ধতা আনার পরিবর্তে আপনি হয়তো স্টক অথবা বন্ডের মতো অধিক ঝুঁকি সহ কোন বিনিয়োগ মাধ্যমে খুব সাবধানে বিনিয়োগ করে আরো অর্থ উপার্জন করতে চাইবেন। কারণ একটাই, কম্ফোর্ট জোনের মধ্যে থেকে একটু একটু করে বিনিয়োগ করলে রিটার্নও কম করেই আসবে, আবার বিনিয়োগে ঝুঁকি যত বড় হবে উচ্চ রিটার্নের সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে। তাই বিনিয়োগের পূর্বে আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন সেই ক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে নেয়া জরুরী।
৩. অর্জন করতে চান এমন একটি লক্ষ্য স্থির করুন
একেক ধরণের বিনিয়োগ একেক ধরণের লক্ষ্য (Goal) অর্জনের জন্য উপযুক্ত। তাই কোন বিনিয়োগে প্রবেশ করার পূর্বে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার লক্ষ্য একটি স্বল্পমেয়াদী (Short-term) বিনিয়োগ হতে পাওয়া লাভ থেকে একটি গাড়ি ক্রয় অথবা বাড়ির জন্য ডাউন পেমেন্ট করার মত মৌলিক চাহিদা গুলোর জন্য হতে পারে, আবার দীর্ঘমেয়াদী (Long-term) কোন উদ্দেশ্য যেমন রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান, বাচ্চাদের ভবিষ্যতের জন্যও বিনিয়োগ হতে পারে। মোটকথা আপনার বিনিয়োগের উদ্দেশ্যের উপরেই নির্ভর করছে আপনার বিনিয়োগ কেমন হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, স্টক মার্কেট (Stock market) দীর্ঘমেয়াদে বৃদ্ধির জন্য একটি ভালো বিনিয়োগ হতে পারে। আবার বন্ডগুলি (Bonds) একটি নিরাপদ বিকল্প যা সুদের (Interest) মাধ্যমে নিয়মিত লাভ প্রদান করে থাকে। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির এর মাধ্যমে আপনি নুন্যতম ঝুঁকিসহ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সেরা বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হবেন। এছাড়াও এটি আপনার আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করবে কিনা তার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলে। সুতরাং, একজন সফল বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য আপনার অবশ্যই একটি স্পষ্ট আর্থিক উদ্দেশ্য থাকতে হবে যা আপনি বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্জন করতে চান।
৪. আপনার বিনিয়োগে ভারসাম্য বজায় রাখুন
বিনিয়োগে ঝুঁকি কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল বিনিয়োগে বৈচিত্র (Mix investment) আনা। বিনিয়োগের একটি সাধারণ জ্ঞান হচ্ছে যে, আপনার সমস্থ ডিম কখনো একটি ঝুড়িতে রাখবেন না। রুপক অর্থে এখানে ডিম দ্বারা আপনার অর্থ বা সম্পদ এবং ঝুড়ি দ্বারা বিনিয়োগের চ্যানেল বা মাধ্যমকে বোঝানো হয়েছে। শুধু এককভাবে একটি মাধ্যমে বিনিয়োগ না করে কয়েকটি মাধ্যমে বিনিয়োগ করাটা কম ঝুকিপূর্ণ কেননা এটি ঝুঁকি পরিচালনা করতে এবং সম্ভাব্য রিটার্ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। সবসময় চেষ্টা করা উচিত এক জায়গায় না করে একাধিক জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট করতে। ফলাফল স্বরূপ, আপনার বিনিয়োগ যদি ব্যর্থও হয় তাহলে আপনার সমস্ত অর্থ একসাথে হারানোর কোন রিস্ক থাকেনা। এতে আপনি আপনার ক্ষতির সম্ভাবনা যেমন সীমিত করতে পারবেন তেমনি একসাথে অনেকগুলো রিটার্নের সম্ভাবনাও হয়তো তৈরী হবে। একই সাথে একই রকম বাজার অবস্থার উপর নির্ভর করে এরকম অবস্থায় আপনার সমস্ত বিনিয়োগ না করার জন্য যথাসাথ্য চেষ্টা করুন। বিনিয়োগের উপরকণগুলির সঠিক ডিস্ট্রিবিউশন করুন যাতে করে তা মার্কেট কন্ডিশনের সাথে সাথে ওঠানামা করতে পারে। বিনিয়োগের এই ভারসাম্য আপনার ঝুঁকি কমিয়ে আনবে। ট্রেডিশনালি, স্টক, বন্ড এবং ক্যাশ বাজারের অবস্থার কোন পরিবর্তন না থাকলেও এগুলো প্রবাহিত হয় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। সুতরাং, শুধুমাত্র একটি জায়গায় বিনিয়োগের সমূহ ক্ষতির কথা মাথায় রেখে ভারসাম্যপূর্ণ (Portfolio balance) পদ্ধতিতে একটি মিক্স ইনভেস্টমেন্ট এর প্ল্যান তৈরী করতে ভুলবেন না।
৫. একটি জরুরী ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড তৈরী রাখুন
বেশিরভাগ স্মার্ট বিনিয়োগকারী যে কোন জরুরী অবস্থাকে কভার করার জন্য একটি সঞ্চয় পণ্যে যথেষ্ট অর্থ গচ্ছিত রাখে যাকে Emergency Fund বা জরুরী তহবিল বলে। কেউ কেউ নিশ্চিত করে যে তারা যা আয় করে সে পরিমাণের অন্তত ছয় মাস পর্যন্ত তাদের সঞ্চয়ে রাখা আছে যাতে হঠাৎ জব চলে যাওয়ার মতো কোন সিচুয়েশনে এটি তাদের সাহায্য করবে। তো একইভাবে দীর্ঘসময়ের আগে খালাসযোগ্য নয় এরকম দীর্ঘমেয়াদী (Long term) কোন বিনিয়োগে আপনার সমস্ত অর্থ একইসাথে ঢেলে রাখবেন না যা আপনার জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে। জরুরী পরিস্থিতিতে পড়লে আপনার তখনই নগদ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদে সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগ করা আদর্শ সিদ্ধান্ত নয় কারণ আপনাকে সর্বদা নগদ জরুরী অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বিনিয়োগের খাতিরেও আপনার ইমার্জেন্সী ফান্ডের প্রয়োজন হতে পারে, এমনও হতে পারে জরুরী তহবিল গচ্ছিত না থাকায় আপনি বড় একটি রিটার্নের সুযোগ মিস করছেন। কিন্তু কখনোই বিনিয়োগের জন্য ঋণ (Loan) নিবেন না কারণ লোন একটি ঝুঁকি সম্পর্কিত প্রক্রিয়া। ইমার্জেন্সী ফান্ডের কোন ব্যবস্থা না রেখে আপনি যদি লোন করে বিনিয়োগ করার কথা চিন্তা করেন, তাহলে আপনি শুধু আপনার ভোগান্তিই বাড়াবেন আর কিছু নয়।
৬. ফ্রড বা জালিয়াতির মতো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন
আজকাল অগণিত জাল (Fraud) বিনিয়োগের মাধ্যম গড়ে উঠছে এবং এসব মাধ্যমগুলো অভিনব সব পদ্ধতিতে জালিয়াতি করছে। এসব অভিনব প্রতিশ্রুতির শিকাড় না হতে বুদ্ধিমত্তার সাথে আপনার বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিন। অনেক বেশি ভালো জিনিস আসলে সত্য কিনা তার একটা সম্ভাবনা তৈরী হয়। নতুন ধারণা (Idea) এবং নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পগুলি (Investment project) প্রতিদিন নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে ইনভেস্টরদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। প্রায়শই এসব স্ক্যাম আর্টিস্টরা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করতে এবং তাদের “অফার” আরো বৈধর মতো করতে বহুল জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও ব্যবহার করে। এর ফলে কোন মাধ্যমটি বৈধ আর কোন মাধ্যমটি বৈধ নয় এ সিদ্ধান্ত নেয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। একটি বিনিয়োগ যদি একটি প্রথাগত পথের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে খুব বেশি রিটার্ন দেওয়ার কথা বলে নিজেকে উপস্থাপন করে, তবে সম্ভবত এটি জাল হবে। এরকম কোন প্রতিশ্রুতি পেলে প্রথমেই সতর্ক হোন, নিজের টাকা নিজের কাছেই রাখুন এবং নিজেকে প্রশ্ন করুন এখানে মূল চুক্তিটা আসলে কি? এত টাকা রিটার্ন আসার ভিত্তি কি? নিরাপদ ও নিরপেক্ষ কোন উৎস থেকে এরকম প্রশ্নের উত্তরগুলো মিলিয়ে নিন। এভাবে বিনিয়োগ করার আগে সর্বদা আপনার সময় নিন, প্রয়োজনে আপনার বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলুন।
৭. নিজেই নিজের সমালোচক হোন
আপনার পছন্দের একটি বিনিয়োগ মাধ্যম চিহ্নিত করার পরে এবং তা বাস্তবায়ন করার আগে নিজেই নিজের সিদ্ধান্তের বিচার করুন। একজন সমালোচকের টুপি (Critic hat) মাথায় দিয়ে আপনার সিদ্ধান্তের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত নেচিবাচক প্রভাবগুলি লিখতে চেষ্টা করুন। আপনার নিজের সিদ্ধান্তগুলিকে সমালোচনামূলক ভাবে মূল্যায়ন করুন, আপনার সিদ্ধান্ত যে অব্যর্থ এবং বিজ্ঞতাপূর্ণ তা নিশ্চিত হতে চেষ্টা করুন। দিন শেষে কিছু বিনিয়োগ থেকে প্রকৃত কোন রিটার্ন তো আসেই না, শুধুমাত্র সময়ের অপচয় হয়। এই বিনিয়োগের শেষে আমি কি লাভ করছি? আমি কত বিনিয়োগ করছি এবং এর বার্ষিক রিটার্ন হার কি? আমি কি আমার অর্থ, সময় এবং এনার্জির বিনিময়ে উপযুক্ত রিটার্ন পাচ্ছি? নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করুন। সর্বদা আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের সুযোগ গণনা করার চেষ্টা করুন যাতে আপনার সিদ্ধান্তের রেজাল্টও সর্বোচ্চ হয়। কখনও কখনও আমরা একটি খারাপ বিনিয়োগে সময় ও অর্থ দুইই নষ্ট করে ফেলি কারণ আমরা সঠিকভাবে নিজের নেয়া সিদ্ধান্তের বিচার করে নেই না।
৮. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন
আপনি যদি এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান (Company) থেকে পৃথকভাবে স্টক কেনার পরিকল্পনা করেন বা কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করতে চান তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সবকিছুই আপনাকে জানতে হবে। উদাহরণস্বরূপঃ
সিইও (CEO) - কোম্পানির সিইও সম্পর্কে জানুন। তার অভিজ্ঞতা কেমন? এর আগে কতগুলো কোম্পানি তিনি পরিচালনা করেছেন, সেসব কোম্পানি কতটুকু সফল? এসব প্রশ্নের উত্তরসমূহ গ্রহণযোগ্য মনে হলে উক্ত কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য সিলেক্ট করুন।
ম্যানেজমেন্ট এর ধরণ - বর্তমান ব্যবস্থাপনা শৈলী কতটুকু কার্যকর তা খুঁজে বের করুন। তারা কি যোগাযোগে দক্ষ এবং দলবদ্ধ হয়ে কাজ করে? তারা তাদের কর্মীদের সাথে কেমন আচরণ করে?
ট্র্যাক রেকর্ড - পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা ও মুখপাত্রের সাথে তুলনা করুন। পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে বর্তমান ব্যবস্থাপনায় কোম্পানির কতটুকু উন্নতি হয়েছে তা পরীক্ষা করে নেয়ার চেষ্টা করুন।
এছাড়াও, কোম্পানিটির মৌলিক (Fundamental) যে বিষয়গুলো তা কতখানি শক্তিশালী? কোম্পানিটি কি প্রফিট করে আসছে? এই ব্যপারগুলোও যাচাই করুন। যদি কোম্পানির প্রফিট সময়ের সাথে সাথে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পায় তাহলে এটি একটি ভালো লক্ষণ। একইসাথে যদি কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে তার কোম্পানির স্টকহোল্ডারদের (Stockholder) লভ্যাংশ প্রদান করে তাহলে ধরে নিতে হবে কোম্পানিটি স্ট্যাবল (Stable)।
৯. বিনিয়োগের রিটার্ন বা Return on Investment (ROI)
একটি সফল বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার চেয়ে আপনাকে লাভের (Return) সম্ভাবনার দিকে বেশি বিবেচনা করতে হবে। আপনি যদি ক্ষতির সম্ভাবনার সম্পর্কেও চিন্তা করেন, তাহলেও এর অর্থ একই দাড়াবে। একটি বিনিয়োগ মাধ্যম যাচাই বাছাই করার সময় বার্ষিক রিটার্ন হার দেখুন, এখানে বার্ষিক রিটার্ন হার হচ্ছে প্রতি বছর বিনিয়োগের মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাসের শতাংশ যাকে Return of Investment (ROI) ও বলে। সহজ কথায় আপনি যা বিনিয়োগ করছেন, তার বিনিময়ে আপনি কি পাচ্ছেন বা আপনার ইনভেস্টমেন্ট আপনাকে কতটুকু ফেরত দিয়েছে। এটি আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি বিনিয়োগ থেকে কত টাকা আশা করা যেতে পেতে তার একটি ভালো ধারণা দেবে। অবশ্যই সবাই লাভের জন্যই বিনিয়োগ করে, তাই বিনিয়োগের আগেই এই চিন্তা ভাবনা থাকাটা খুবই সৎ এবং জরুরী। বিনিয়োগের জন্য আপনি প্রফেশনাল কারো সাপোর্ট নিলে তার কাছ থেকে আপনি ROI এর একটা ধারণা পেতে পারেন। এছাড়াও আপনি Google Finance এর মতো সাইট গুলিতে স্টক, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড এবং অন্যান্য বিনিয়োগের হিস্টোরিক্যাল ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন।
১০. ট্যাক্সের কেমন হতে পারে তা জেনে নিন
বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে ট্যাক্স (Tax) এর বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত। একেক ধরণের বিনিয়োগে ট্যাক্সের হার একেক রকমের হয়ে থাকে। যেমন স্বল্পমেয়াদী (Short term) বিনিয়োগে ট্যাক্সের হার দীর্ঘমেয়াদী (Long term) বিনিয়োগের থেকে বেশি হয়ে থাকে। কারণ স্বল্পমেয়াদী প্রক্রিয়ায় এক বছর বা তার কম সময়ের জন্য রাখা বিনিয়োগের উপর রিটার্ন প্রদান করে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখা বিনিয়োগের উপর রিটার্ন প্রদান করে।
প্রয়োজনে আপনি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একজন ফাইন্যান্সিয়াল এডভাইজর (Financial advisor) এর সাথে যে কোন বিনিয়োগের উপর ট্যাক্স এর প্রভাব নিয়ে কথা বলতে ভুলবেন না।
উপসংহারঃ
একটি সফল বিনিয়োগের জন্য সুপরিচিত বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া অপরিহার্য। আশা করছি উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করলে আপনি আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য পূরণ করতে সাহায্য করবে এমন সঠিক সিদ্ধান্ত সহজে নিতে পারবেন। বিনিয়োগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হল আপনি যা হারাতে পারবেন না তা কখনোই বিনিয়োগ করবেন না। যদিও বিনিয়োগের পূর্বে এমন আরো কিছু বিষয় আছে যা অবশ্যই বিবেচনা করে নিতে হবে তবে এই কয়েকটি পয়েন্ট আপনাকে একটি সামগ্রিক ধারণা দিবে। কিছু বিনিয়োগ প্রকল্প বিশ্লেষণ করা যেমন সহজ, তেমনি কিছু প্রকল্প বিশ্লেষণ করা আবার ক্লান্তিকরও। যেখানে আপনি বিশ্বাস করেন যে আপনি সর্বোত্তম বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট জানেন না, সেখানে এই সামান্য কিছু তথ্য আপনার ক্ষতি নয় বরং উপকারই করবে। তবে যেভাবেই হোক না কেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে আপনার আবেগকে এড়িয়ে চলুন এবং প্রয়োজন হলে আপনার পেশাদার আর্থিক পরামর্শ নেয়া সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ।
- https://quantumzenithsecurities.com.ng/8-things-to-consider-before-making-investment-decisions/
- https://jamaica-gleaner.com/gleaner/20150128/lead/lead5.html
- https://www.sec.gov/investor/pubs/tenthingstoconsider.htm
- https://www.reliancesmartmoney.com/Insights/blog/rsm-articles/2020/01/29/ten-things-to-consider-before-you-make-investing-decisions
- https://nasonga.com/investment-decisions-factors/
Next to read
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)


অ্যাড অন মডেল (Add On Model)

লোগো ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা (Pros and Cons of Logo Usage)

মোট মুনাফা (Gross profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং উদাহরণ

নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন

হোরেকা (HORECA)

সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?

বিক্রয়ের ১০টি ভুল যেগুলো প্রতিটি বিক্রয়কর্মীর এড়ানো উচিৎ

বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
