Velocity of Money: Definition, Formula, and Examples

অর্থনীতিতে অর্থ কি পরিমাণ হাতবদল হচ্ছে তা বোঝার জন্য ভেলোসিটি অফ মানি ব্যবহার করা হয়। ভেলোসিটি অফ মানি নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় জিডিপি ও মানি সাপ্লাই। তবে অনেকে জিডিপির পরিবর্তে জিএনপি ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রসারণশীল অর্থনীতিতে ভেলোসিটি অফ মানি বেশি দেখা যায়। অপরদিকে, সংকোচনশীল অর্থনীতিতে ভেলোসিটি অফ মানি কম থাকে।
Key Points
- একটি অর্থনীতিতে যেই হারে অর্থ একজন থেকে অন্যজনের কাছে হাতবদল হয়, তাকে সেই অর্থনীতির অর্থের ভেলোসিটি বা বেগ বলা হয়।
- ভেলোসিটি অফ মানির পরিমাণ কম হলে বুঝতে হবে অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয় এবং অর্থনীতির সংকোচন হচ্ছে, যা একটি খারাপ সাইন হতে পারে।
- অনেক সময় উচ্চ-মুল্যস্ফীতির কারণেও ভেলোসিটি অফ মানি অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। আর উচ্চ-মূল্যস্ফীতি কখনো কোনো অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।
- দেশের সাধারণ মানুষ যখন অর্থ খরচ করার চাইতে অর্থ সঞ্চয় করাকে বেশি প্রাধান্য দেয়, তখন ভেলোসিটি অফ মানি কম থাকে। এর বিপরীত চিত্রে ভেলোসিটি অফ মানি বৃদ্ধি পায়।
ভূমিকা
দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে আমরা অনেক কিছু ক্রয় করি। এতে করে আমাদেরকে দিনে বেশ কয়েকবার লেনদেন করতে হয়। আপনার প্রতিদিনে করা লেনদেনের উপর নির্ভর করে কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে একটি দেশে প্রতি বছর কি পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হয়? অথবা কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে, আপনার মানি ব্যাগে যেই নোটটি এখন রয়েছে, তা আপনার আগে আরো কতোজনের কাছে ছিল? জি, আপনার এসব অতি জটিল ভাবনার উত্তর’ও রয়েছে অর্থনীতিতে। একটি অর্থনীতিতে অর্থ কি পরিমাণ সার্কুলেশন হচ্ছে, তা প্রকাশ করা হয় অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান ভেলোসিটি অফ মানি’র দ্বারা। শুনতে বেশ জটিল মনে হলেও বিষয়টি বেশ সহজ। তাই চলুন আজ ভেলোসিটি অফ মানি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ভেলোসিটি অফ মানি কী?
একটি অর্থনীতিতে যেই হারে অর্থ একজন থেকে অন্যজনের কাছে হাতবদল হয়, তাকে সেই অর্থনীতির অর্থের ভেলোসিটি বা বেগ বলা হয়। অর্থাৎ, কোনো নির্দিষ্ট সময়কালের ভেতর অর্থ মোট কতো জনের কাছে যাচ্ছে, তাই প্রকাশ পায় এই মানদন্ড দ্বারা। আর অর্থ যেহেতু মূলত খরচ করার মাধ্যমেই হাতবদল হয়, তাই বলা যায় যে এই স্ট্যাট দ্বারা বোঝা যায়, দেশের মানুষ মোট কি পরিমাণ অর্থ খরচ করছে।
ভেলোসিটি অফ মানি কীভাবে কাজ করে?
সার্কুলেশনে থাকা অর্থ কি পরিমাণ পণ্য বা সেবা ক্রয়ের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, ভেলোসিটি অফ মানি দ্বারা সেটাও বোঝা যায়। অর্থনীতিবিদ ও বাহ্যিক বিনিয়োগকারীরা এই পরিসংখ্যান দেখে অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। ভেলোসিটি অফ মানির পরিমাণ যদি বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে অর্থনীতির অবস্থা ভালো ও সম্প্রসারণ হচ্ছে। অন্যদিকে, ভেলোসিটি অফ মানির পরিমাণ কম হলে বুঝতে হবে অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয় এবং অর্থনীতির সংকোচন হচ্ছে, যা একটি খারাপ সাইন হতে পারে। ‘
তবে ভেলোসিটি অফ মানির পরিমাণ কমে গেলেই এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। অনেক কারণেই এটি স্বল্প সময়ের জন্য কমে যেতে পারে। তাই এই পরিসংখ্যানকে অর্থনীতিবিদগণ অর্থনীতির স্বাস্থ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রাইমারি স্ট্যাট হিসেবে ব্যবহার করেন না। তবে অন্য প্রাইমারি স্ট্যাটের সাথে, যেমন - জিডিপি, বেকারত্বের হার, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদির সাথে এটিকে সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মূলত জিডিপি ও মানি সাপ্লাই, এই দুটি উপাদানের সাহায্যেই ভেলোসিটি অফ মানি নির্ণয় করা যায়।
মূলত উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থের ভেলোসিটির পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে থাকে। কারণ, এসব দেশে মানুষের হাতে খরচ করার মতো অর্থের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই অর্থ অনেক বেশি হাতবদল হয়। আবার বিজনেস সাইকেলের উপরেও এই পরিসংখ্যান অনেকটা নির্ভর করে। কারণ, অর্থনৈতিক মন্দার সময় মানুষ খরচ কমানোর চেষ্টা করে, তাই তখন অর্থের ভেলোসিটি হ্রাস পায়। এই কারণেই, মনিটারি পলিসি ও ফিসকাল পলিসিতে তখন এমন সব পরিবর্তন নিয়ে আসা হয় যাতে করে মানুষ অর্থ খরচ করতে উৎসাহিত হয়।
কিন্তু অর্থের ভেলোসিটি সবসময় বেশি হওয়াই কি ভালো? বা সর্বোচ্চ অর্থের ভেলোসিটির দেশকেই কি আমরা সবচেয়ে বেশি উন্নত বলতে পারি? উত্তরটি হচ্ছে, না। আমরা আগেই বলেছি যে, ভেলোসিটি অফ মানির উপর নির্ভর করেই কোনো সিদ্ধান্তে পৌছে যাওয়া যাবে না। এই পরিসংখ্যান মূলত একটি সাপলিমেন্টারি ব্যতীত আর কিছু নয়। অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থান বুঝতে হলে অন্যান্য প্রাইমারি পরিসংখ্যানগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যেমন - জিডিপি ও ইনফ্লেশন রেট।
অনেক সময় উচ্চ-মুল্যস্ফীতির কারণেও ভেলোসিটি অফ মানি অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। আর উচ্চ-মূল্যস্ফীতি কখনো কোনো অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।
ভেলোসিটি অফ মানির উদাহরণ
উদাহরণস্বরুপ, মনে করুন একটি অর্থনীতিতে শুধু দুইজন মানুষ বসবাস করেন। একজন হচ্ছেন গাড়ি-বিক্রেতা (ক) এবং অপরজন হচ্ছে বাড়ি-বিক্রেতা (খ), আর প্রতিজনের কাছে ১০০ টাকা করে আছে। এখন, ‘খ’ নামক ব্যাক্তি ‘ক’-এর থেকে একটি ১০০ টাকা দিয়ে একটি গাড়ি ক্রয় করলেন। এই লেনদেনের মাধ্যমে ‘ক’ নামক ব্যাক্তির কাছে ২০০ টাকা হয়ে গেলো। এরপর, ‘ক’ নামক ব্যাক্তি আবার ‘খ’-এর থেকে ২০০ টাকা দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করলেন। এখন, ‘খ’ নামক ব্যাক্তির কাছে আবার ২০০ টাকা হয়ে গেলো। এরপর, ‘খ’ আবার ‘ক’-এর থেকে আরো একটি গাড়ি ক্রয় করলেন।
এই ৩টি লেনদেনের পর দুইজনের কাছেই ১০০ টাকা করে রয়ে গেলো। তাহলে এখন যদি আমরা এই অর্থনীতির ভেলোসিটি অফ মানি জানতে চাই, তাহলে আমাদের দুটি উপাদান লাগবে - জিডিপি ও মানি সাপ্লাই।
এই অর্থনীতির জিডিপি হচ্ছে, উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মোট মূল্য। অর্থাৎ,
জিডিপি = (১০০ + ২০০ + ১০০) = ৪০০ টাকা
অপরদিকে, মানি সাপ্লাই হচ্ছে অর্থনীতিতে মোট অর্থের পরিমাণ। অর্থের পরিমাণ ছিল মোট ২০০ টাকা।
এখন যদি আমরা জিডিপি’কে মানি সাপ্লাই দ্বারা ভাগ করি, তাহলে ভেলোসিটি অফ মানি পেয়ে যাবো। অর্থাৎ, এই অর্থনীতির ভেলোসিটি অফ মানি হবে ২।
ভেলোসিটি অফ মানির ফরমুলা
সকলের বোঝার সুবিধার্থে আমরা উপরে বেশ সহজ ও ছোট একটি উদাহরণ দিয়েছি। তবে বাস্তবে ভেলোসিটি অফ মানি নির্ণয় অনেক বেশ জটিল ও তর্কসাপেক্ষ বিষয়। সবচেয়ে বেশি গৃহীত ফরমুলা হচ্ছে -
ভেলোসিটি অফ মানি = জিডিপি / মানি সাপ্লাই
তবে অনেক দেশ ও অর্থনীতিবিদ জিডিপির পরিবর্তে জিএনপি ব্যবহার করে থাকেন। জিডিপি হচ্ছে যেকোনো অর্থনীতিতে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মোট ভ্যালু। আর জিএনপির ক্ষেত্রে জিডিপির সাথে দেশের বাইরে থেকে আসা আয় যোগ করা হয় এবং দেশের ভেতর থেকে বিদেশীর বাইরে পাঠানো আয় বিয়োগ করা হয়।
আবার মানি সাপ্লাইয়ের বিষয়েও রয়েছে তর্ক। কোথাও কোথাও মানি সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে M1 মানি সাপ্লাই ব্যবহার করা হয়। আবার কোথাও ব্যবহার করা হয় M2 মানি সাপ্লাই।
M1 হচ্ছে, অর্থনীতিতে থাকা সকল ক্যাশ + কারেন্ট ও সেভিংস অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ + ট্রাভেলারস চেক ইত্যাদি। আর M2-এর ক্ষেত্রে M1-এর সাথে মিচুয়াল ফান্ড, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি উপাদান যোগ করা হয়।
ভেলোসিটি অফ মানিতে প্রভাব বিস্তারকারী ফ্যাক্টর
একটি অর্থনীতির ভেলোসিটি অফ মানি একাধিক ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যেমন -
মানি সাপ্লাই - কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিতে মানি সাপ্লাইয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে ভেলোসিটি অফ মানি বৃদ্ধি পায়। কারণ, এতে করে মানুষের হাতে খরচ করার মতো বেশি অর্থ থাকে। তবে এভাবে মুদ্রাস্ফীতি’ও বৃদ্ধি পেতে পারে।
কনজ্যুমার প্রিফারেন্স - দেশের সাধারণ মানুষ যখন অর্থ খরচ করার চাইতে অর্থ সঞ্চয় করাকে বেশি প্রাধান্য দেয়, তখন ভেলোসিটি অফ মানি কম থাকে। এর বিপরীত চিত্রে ভেলোসিটি অফ মানি বৃদ্ধি পায়।
পেমেন্ট সিস্টেম - মানুষ কতোটা সহজে ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে লেনদেন করতে পারছে তার উপরেও ভেলোসিটি অফ মানি নির্ভর করে। ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলে তাই স্বাভাবিকভাবেই ভেলোসিটি অফ মানি বৃদ্ধি পায়।
ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি - সবশেষে, মানুষ কতোটা সহজে ঋণ গ্রহণ করতে পারছে, তার উপরেও ভেলোসিটি অফ মানি নির্ভর করে। মনিটারি পলিসি যখন ঋণ-সহায়ক হিসেবে তৈরি করা হয়, তখন তাই ভেলোসিটি অফ মানি বৃদ্ধি পায়।
পরিসংহার
অনেক উন্নত দেশেই এখন ভেলোসিটি অফ মানি স্থিতিশীল হয়ে গিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ভেলোসিটি অফ মানি হ্রাস পাচ্ছে। এর পেছনের মূল কারণ হচ্ছে এই যে, সেসব দেশের জিডিপির গ্রোথ রেট অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে গিয়েছে। আবার অনেক উন্নত দেশে জিডিপি গ্রোথ রেট প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। তাই সেসব দেশের ভেলোসিটি অফ মানি এতোটা কম দেখা যায়, যদিও তাদের জীবনযাত্রার মান বেশ ব্যয়বহুল। অপরদিকে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভেলোসিটি অফ মানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, কারণ আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখনো প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- https://www.investopedia.com/terms/v/velocity.asp
- https://uk.indeed.com/career-advice/career-development/velocity-of-money
- https://www.cityindex.com/en-uk/news-and-analysis/velocity-of-money/
- https://seekingalpha.com/article/4512527-velocity-of-money-definition-formula
- https://www.wallstreetmojo.com/velocity-of-money-formula/
- https://www.wallstreetmojo.com/velocity-of-money/
Next to read
সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)


অ্যাড অন মডেল (Add On Model)

কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)

শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)

ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ

সারোগেট মার্কেটিং (SURROGATE MARKETING)

লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)

বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ

PESTLE বিশ্লেষণ
