সেলস টার্গেট অর্জনের জন্য ১০টি বডি ল্যাঙ্গুয়েজ টিপস

পণ্যের বিবরণ সম্পর্কে ক্লায়েন্টকে জানানোর সময়ে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা, মুখে হাসি রাখা, হাত পকেটে না রাখা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ক্লায়েন্টের সাথে ইন্টারেকশনের সময় কতোটা ইফেক্টিভভাবে জেশ্চারগুলো ব্যবহার করতে পারছেন তার উপর আপনার ডিলটি পাওয়া বা না পাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে আপনার ছোট ছোট কিছু জেশ্চারের মাধ্যমেই ক্লায়েন্টকে জিতে নেয়া সম্ভব।
Key Points
- হেসে কথা বললে আপনার কাস্টমারের জন্যে পরিস্থিতি অনেকটা সহজ হয়ে ওঠে এবং তিনি তার প্রয়োজনগুলো আপনাকে সহজেই জানাতে পারবেন।
- পুরোটা সময় হাত একই স্থানে ফ্রিজ করে রাখা আপনার অনভিজ্ঞতা এবং অপর্যাপ্ত আত্মবিশ্বাসের সিগন্যাল দিবে।
- পুরোটা সময় যদি শুধু হাতের সাহায্যেই জেশ্চার দেখান তবে কিছুক্ষণের মাঝেই তা রিপিটেটিভ হয়ে যাবে।
- অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে বরং শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার অভ্যাস গড়ুন।
সেলস টার্গেট অর্জনের জন্য ১০টি বডি ল্যাঙ্গুয়েজ টিপস
আপনার পণ্য বা সেবার মান খুব ভালো হতে পারে, তবে সেটি যদি আপনি আকর্ষণীয় রুপে উপস্থাপন করতে না পারেন তবে কিন্তু সেটি কোনো কাজেই আসবে না। আপনার প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরিতে আপনি ঠিক কতোটা সময় ব্যয় করছেন এবং স্লাইডে কি কি অন্তর্ভূক্ত করছেন তা অনেকাংশেই ম্যাটার করে না যদি আপনি আপনার বুলি দিয়েই ক্লায়েন্টকে জিতে নিতে পারেন। তাই অন্য যেকোনো কিছুর থেকে উপস্থাপন করার দক্ষতার দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত।
আপনি যখন কথা বলছেন তখন কিন্তু সামনে থাকা শ্রোতাগণ আপনার মুখের কথার পাশাপাশি আপনার অঙ্গভঙ্গির দিকেও নজর রাখেন। উপযুক্ত অঙ্গভঙ্গি এবং শব্দচয়নের সাহায্যে একটি অত্যন্ত নিরস সেলস পিচ’কেও আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। তাই, আজ এমনই কিছু টিপস নিয়ে আমরা কথা বলবো যেগুলোর সাহায্যে আপনার পরবর্তী সেলস পিচ-এ আরো ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারেন।
১। মুখে হাসি রাখুন
সেলস ক্যারিয়ারে এটি একটি কমন প্রয়োজন হলেও, অনেকেই এই গুণটি আয়ত্ত্ব করতে পারেন না। যখনই আপনি একজন সম্ভাব্য কাস্টমারের সামনে এসে দাড়াবেন, আপনাকে মুখে হাসি রাখতেই হবে। হেসে কথা বললে আপনার কাস্টমারের জন্যেও পরিস্থিতি অনেকটা সহজ হয়ে ওঠে এবং তিনি তার প্রয়োজনগুলো আপনাকে সহজেই জানাতে পারবেন। মুখে হাসি না থাকলে বোঝা যাবে যে আপনি নিজেই সহজ হতে পারছেন, সেখানে কাস্টমার জিতে নেয়ার সম্ভাবনা হয়ে যায় একেবারেই ক্ষীণ। ক্লায়েন্টের সাথে কথোপকথনের পুরোটা সময় মুখে হাসি রাখার চেষ্টা করুন।
যদি অপরপক্ষ থেকে কোনো কঠিন প্রশ্ন এসে পরে যেটি আপনি উত্তর দিতে পারছেন না, তবেও মুখে হাসি রেখে বিনয়ের সাথে সেটি জানিয়ে দিন। তবে খেয়াল রাখবেন যে, আপনার হাসিটা যেনো প্রাকৃতিক মনে হয়। কারণ, কারো মুখে কৃত্রিম হাসি থাকলে আমরা সকলেই খুব সহজে বুঝে যাই, তাই না?
২। শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন
ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলার সময় যদি আপনি নিচের দিকে অথবা অন্য কোনো দিকে তাকিয়ে কথা বলেন তবে শ্রোতা আপনার সাথে কানেক্ট করতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে বরং শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার অভ্যাস গড়ুন। শ্রোতা যদি একাধিক ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবে এক এক করে সবার দিকে তাকিয়েই কথা বলতে হবে।
৩। আপনার বুক এবং বাহুদ্বয় প্রশস্ত করে দাড়ান
সেলস পিচ-এর সময় যদি আপনি কুজো হয়ে বা বাহু গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তবে কিন্তু সেটা আপনার নার্ভাসনেস-এর সিগন্যাল দিবে। তাই এই কাজটি করা যাবে না। বুক এবং বাহুদ্বয় স্বাভাবিকভাবে যতোটা সম্ভব প্রশস্ত করে দাড়াতে চেষ্টা করুন। এতে আপনার শ্রোতাগণ বুঝতে পারবেন যে আপনি যা বলছেন সেই বিষয়ে আপনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী এবং আপনাকে দিয়েই তাদের কাজ হবে। তবে খেয়াল রাখবেন, অতিরিক্ত কনফিডেন্স দেখাতে গিয়ে যেন হিতে বিপরীত না হয়।
৪। সেলস পিচ দেয়ার সময় স্লাইডের দিকে নির্দেশ করুন
আপনি হয়তো স্লাইডে থাকা কোনো গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট নিয়ে কথা বলছেন, তবে আপনার অঙ্গভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়ে সবাই আপনার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন(!), বিষয়টি কিন্তু খুবই বিরক্তিকর। তাই, কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার সময় স্লাইডের দিকেও নির্দেশ করতে ভুলবেন না। এই কাজে আপনি শুধু হাত বা লেজার পয়েন্টার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভুলেও কোনো স্টিক ব্যবহার করবেন না।
৫। অঙ্গভঙ্গির কাজে হাতের ব্যবহার করুন
মুখে কথা বলার পাশাপাশি হাতের সঠিক ব্যবহার করাটাও প্রয়োজন। পুরোটা সময় হাত একই স্থানে ফ্রিজ করে রাখা কিন্তু আপনার অনভিজ্ঞতা এবং অপর্যাপ্ত আত্মবিশ্বাসের সিগন্যাল দিবে। তাই, কথা বলার সময় হাত পকেটে অথবা মুষ্টিবদ্ধ করে না রেখে আপনি কি বলছেন এবং বোঝাতে চাইছেন তা হাতের আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি আরো বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন।
৬। অঙ্গভঙ্গিতে বৈচিত্র্য আনুন
সবসময় একই ধরনের অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার না করে বিভিন্ন ধরণের অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করুন। সবসময় যদি শুধু হাতের সাহায্যেই জেশ্চার দেখান তবে কিছুদিনের মাঝেই তা রিপিটেটিভ হয়ে যাবে। তাই চেষ্টা করুন এই কাজে আপনার মাথা, চোখ অথবা বাহুদ্বয়’ও ব্যবহার করতে।
৭। সামনের দিকে মুখ করে সোজা হয়ে বসুন
ক্লায়েন্টের সাথে যদি কোথাও বসে কথা বলতে হয়, তবে অলওয়েজ সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করুন। কারণ, আপনি যদি পেছনে পিঠ লাগিয়ে অথবা কুজো হয়ে বসে থাকেন তাহলে এটা আপনার কেয়ারলেস মনোভাবের সিগন্যাল ক্লায়েন্টের কাছে পৌছে দিবে। আর অন্যদিকে, যদি আপনি সোজা হয়ে ক্লায়েন্টের দিকে কিছুটা ঝুকে কনভারসেশন চালিয়ে যান তাহলে ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবেন যে আপনি তাকে নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছেন এবং দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আপনি সচেষ্ট। মোট কথা, এর মাধ্যমে আপনাকে যথেষ্ট এক্টিভ মনে হবে।
৮। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কোনো পয়েন্ট বলার আগে থামুন
অনেক সময় একাধারে কথা বলার কারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা দৃষ্টির অগোচরে চলে যেতে পারে। তাই, যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময় আসবে (যেটি আপনি চাচ্ছেন যেন আপনার ক্লায়েন্ট নোট করেন) তার আগে কিছু মুহুর্ত থামবেন। প্রয়োজনে একটি দীর্ঘঃশ্বাস নিতে পারেন এবং অঙ্গভঙ্গি বন্ধ করে দিতে পারেন। এতে আপনার শ্রোতা পরের কথাটিতে ফোকাস করতে বাধ্য হবেন এবং অবশ্যই আপনার কথার অথোরিটি বৃদ্ধি পাবে।
৯। আপনার বিজনেস কার্ড অফার করুন
মানুষের ডিফেন্সিভ আচরণের কারণে অনেক সময় হাজার চেষ্টা করেও সম্পর্ক সহজ করা সম্ভব হয় না। মানুষের আচরণ যেমনই হোক, একজন সেলসপারসন-এর জন্য প্রতিটি ক্লায়েন্টই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সম্পর্ক সহজ করার আরো একটি চেষ্টা হিসেবে আপনি আপনার বিজনেস কার্ড অফার করতে পারেন। আপনি যদি ক্লায়েন্টের সাথে কোনো মিটিং-এ থেকে থাকেন তবে মিটিং শেষে এই কাজটি করবেন। এটি অবশ্যই ক্লায়েন্ট এবং আপনার মাঝে একধরণের কানেক্টেডনেস হিসেবে কাজ করবে।
১০। পরিশেষে একটি পজিটিভ ইম্প্রেশন রেখে আসুন
আপনার সেলস পিচ কমপ্লিট হয়েছে, শ্রোতা আপনার সাথে ডিল করতে রাজি হয়েছেন এবং ডকুমেন্টে সাইন করে দিয়েছেন। পিচ শেষ, তবে আপনার পারফরম্যান্স কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। বের হওয়ার আগে শেষবারের মতো হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিন এবং হাসোজ্বল মুখ নিয়ে চোখের দিকে তাকান। এতে করে আপনার ক্লায়েন্ট উপলব্ধি করতে পারবেন যে আপনি ডিলটি সম্পন্ন করতে পেরে অত্যন্ত খুশি এবং তিনি’ও ভবিষ্যতে আরো ডিল করার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।
পরিসংহার
ক্লায়েন্টের সাথে যেকোনো কনভারসেশনের সময় আপনাকে অবশ্যই নিজের অঙ্গভঙ্গির দিকে নজর রাখতে হবে। তবে এটাই কিন্তু শেষ নয়। মনে রাখবেন, সেলস হচ্ছে একটি টু-ওয়ে কমিউনিকেশন। আপনি যেমন ক্লায়েন্টের প্রতি বিভিন্ন জেশ্চার শো করবেন, ঠিক তেমনই ক্লায়েন্ট’ও আপনার প্রতি বিভিন্ন জেশ্চার শো করবেন। সেগুলো গুরুত্বের সাথে নোট করতে হবে। আপনার প্রতি ক্লায়েন্টের ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে তা আপনি তাদের জেশ্চার দেখেই বুঝতে পারবেন।
- https://blog.hubspot.com/sales/body-language-tips-for-your-next-sales-presentation
- https://salesfuel.com/4-ways-body-language-can-improve-sales-pitch/
- https://www.linkedin.com/pulse/10-simple-powerful-body-language-tips-sales-craig-rootman
- https://www.copper.com/resources/body-language-sales
Next to read
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)


ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ

লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)

নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন

ইক্যুইটির সংজ্ঞা এবং অর্থ

সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?

ব্যবসায়কি আইন কি? উদাহরণ সহ বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়কি আইন

মার্কেটিং এ ৫ সি (5 C's Of Marketing)

ডিমার্কেটিং (DeMarketing)
