(Part-1) Malaysia's Economic Reforms: From Agrarian Roots to Industrial Powerhouse
Last edited: January 7, 2025
১৯৭০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়া কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্প ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। নতুন অর্থনৈতিক নীতি (NEP) গৃহীত হওয়ার পর দারিদ্র্য হ্রাস, শিল্পায়ন ও বৈদেশিক বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই সময়ে পাম তেল, ইলেকট্রনিক্স, এবং প্রযুক্তি খাতে মালয়েশিয়া বৈশ্বিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্রমবর্ধমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।
Key Points
- মালয়েশিয়ার অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক থেকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে, যার মূল ভিত্তি ছিল রাবার ও পাম তেল উৎপাদন।
- ১৯৭০-এর দশকে গৃহীত নতুন অর্থনৈতিক নীতি (NEP) দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে।
- বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য সরকার শুল্ক ও কর কাঠামো সংস্কার করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিকূলতা হ্রাস করেছে।
- আধুনিক সময়ে মালয়েশিয়া প্রযুক্তিগত ও ডিজিটাল খাতে বিনিয়োগ করছে, যা ভবিষ্যতে দেশের নতুন প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
পর্ব - ১
মালেশিয়ার অর্থনৈতিক শীর্ষক আলোচনায় এটি পর্ব - ১। এই পর্বে থাকছে, অর্থনৈতিক সংস্কারের পূর্বে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি, দি নিউ ইকোনমিক পলিসি, এর ফলাফল এবং এই পলিসি পরবর্তী মালয়েশিয়ান অর্থনীতি, এবং মালয়েশিয়ান অর্থনীতিতে পাম অয়েল শিল্পের ভূমিকা।
ভূমিকা
স্বল্প রিসোর্সের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে কিভাবে দেশের উন্নয়ন করা যায়, তার এক অভাবনীয় উদাহরণ হচ্ছে মালয়েশিয়া। দেশটি শুরুতে ছিল একটি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশ, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শিল্পোন্নত দেশ হয়ে উঠেছে। ১৯৮০’র দশকে সরকার অর্থনীতির পরিসর বড় করার উদ্দেশ্যে এবং দারিদ্র্য কমানোর ও জাতিগত বৈষম্য দূর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল ১৯৭১ সালে চালু করা নিউ ইকোনমিক পলিসি (এনইপি), যার লক্ষ্য ছিল বুমিপুত্র (মালয় এবং আদিবাসী জনগণ) সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং কৃষির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা।
সেই উদ্দেশ্যে দেশের সরকার রাস্তা, স্কুল-কলেজ তৈরি ও শিল্প প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল। যার ফলে মালয়েশিয়া একটি শক্তিশালী ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলে এবং ইলেকট্রনিকস ও পাম অয়েলের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে। কৃষি থেকে শিল্প নির্ভর হওয়া মালয়েশিয়ার দ্রুত প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছিল। তাই চলুন, বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক যে, মালয়েশিয়া কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছে।
অর্থনৈতিক সংস্কারের পূর্বে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি
১৯৮০-এর দশকের আগে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। রাবার, টিন এবং পাম তেল ছিল প্রধান রপ্তানি পণ্য, যা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করতো। এই পণ্যগুলোর কারণে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা উন্নত হয়ে উঠলেও, অনেক গ্রামীণ অঞ্চল তখনও উন্নয়নের বাইরে ছিল। দরিদ্রতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিল, বিশেষ করে বুমিপুত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে। শহুরে ও গ্রামীণ জনগণের মধ্যে এবং বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে আয়ের পার্থক্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছিল।
বুমিপুত্র সম্প্রদায় বলতে মালয়েশিয়ার আদিবাসী জনগণকে বোঝায়। এই শব্দটির অর্থ "মাটির সন্তান," এবং এটি সেই গোষ্ঠীগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয় যারা জাতিগতভাবে মালয় বা পেনিনসুলার মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া (সাবাহ ও সারাওয়াক) এর আদিবাসী ও উপজাতির অন্তর্ভুক্ত। এটি রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ, কারণ বুমিপুত্র জনগণ মালয়েশিয়ার সরকারি নীতিমালার অধীনে কিছু বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে, যেমন নিউ ইকোনমিক পলিসি (এনইপি), যা তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে তৈরি করা হয়েছিল।
সরকার বুঝতে পেরেছিল যে দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধির জন্য কেবল কৃষির উপর নির্ভর করা সম্ভব নয়। এই নির্ভরতা মালয়েশিয়াকে বৈশ্বিক বাজারের ওঠানামার প্রতি সংবেদনশীল করে তুলেছিল। এই সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে সরকার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার এবং শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল, যা পরবর্তীতে সংস্কারের মঞ্চ প্রস্তুত করেছিল।
দি নিউ ইকোনমিক পলিসি (১৯৭১ - ১৯৯০)
এটি ছিল মূলত মালয়েশিয়ান সরকার দ্বারা গ্রহণ করা মালয়েশিয়ান জনগণের সোশিও-ইকোনমিক অবস্থা পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে এক ল্যান্ডমার্ক পলিসি। মূলত বুমিপুত্র ও নন-বুমিপুত্র সম্প্রদায়ের মাঝে যেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভেদাভেদ তৈরি হয়েছিল, তা হ্রাস করাই ছিল এই পলিসির মূল উদ্দেশ্য। উল্লেখ করা উচিত যে, নন-বুমিপুত্র কমিউনিটিগুলো (মূলত চাইনিজ) সব দিক থেকেই মালয়েশিয়ান আদিবাসীদের থেকে এগিয়ে ছিল এবং যেকোনো বিষয়ে তাদের প্রভাব ছিল অনেক বেশি।
১৯৬৯ সালে সংগঠিত দাঙ্গার কারণে মালয়েশিয়ান জনগণের মাঝে জাতিগত ভেদাভেদ আরো বড় হয়ে ওঠার শঙ্কাই মূলত জন্ম দিয়েছিল দি নিউ ইকোনমিক পলিসির। এই পলিসির মূল অবজেক্টিভ ছিল দুটি -
১। দারিদ্র্য দূরীকরণ - সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে তোলার মাধ্যমে সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা ছিল একটি উদ্দেশ্য।
২। সামাজিক পুনর্গঠন - অপর উদ্দেশ্য ছিল আর্থিক সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণ করার ধারা বন্ধ করা। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের প্রধান সেক্টরগুলোতে (ব্যবসা, শিল্প, শিক্ষা) যাতে বুমিপুত্রদের যথাযথ অংশগ্রহণ থাকে, তা এনশিওর করা।
দরিদ্রতা হ্রাস ও সম্পদের বন্টন
এই পলিসির একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করা। ১৯৭০ সালে দেশের মোট করপোরেট সম্পদের মাত্র ১.৫% ছিল বুমিপুত্র সম্প্রদায়ের মালিকানায়, অপরদিকে চাইনিজ কমিউনিটিগুলোর মালিকানায় ছিল ৩৪.৪% এবং বৈদেশিক মালিকানায় ছিল ৬৩.৩%। এই পলিসির লক্ষ্য ছিল ১৯৯০ সালের মাঝে বুমিপুত্রদের মালিকানার পরিমাণ ৩০% উন্নীত করা। মূলত বুমিপুত্রদের ব্যবসায় স্থাপনে সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে সরকার এই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে।
দরিদ্রতা হ্রাস করার জন্য সরকার বিভিন্ন গ্রামীণ উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। যেমন - কৃষির আধুনিকায়ন, অবকাঠামো তৈরি, নতুন নতুন সুযোগের ব্যবস্থা করে দেয়া। সেচ ব্যবস্থা, রাস্তা, স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সরকার প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ করা শুরু করে। ফলস্বরুপ, মালয়েশিয়ান সরকারের তথ্যমতে, দরিদ্রতার হার ১৯৭০ সালে ৫০% থেকে ১৯৯০ সালে ২০%-এ নেমে আসে। আর গ্রামীন অঞ্চলগুলোতে এই হার ৫৮.৭% থেকে ২১.১%-এ চলে আসে।
শিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরিতে ফোকাস
নিউ ইকোনমিক পলিসির অন্যতম ফোকাস ছিল শিক্ষা খাতে। সরকার বুঝতে পেরেছিল যে দীর্ঘমেয়াদে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর উপকার করতে চাইলে তাদের নতুন জেনারেশনকে যথাযথ শিক্ষার সুযোগ প্রদান করতে হবে। তাই বুমিপুত্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি প্লেসমেন্ট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়। ফলস্বরুপ, পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৯৯০ সালের ভেতর বুমিপুত্র জনগোষ্ঠীগুলোর মাঝে শিক্ষার হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ভেতর থেকে অনেকেই ভালো ভালো পেশা যেমন - আইন, প্রকৌশল ও ব্যবসায় প্রবেশ করেন।
শিল্পের ভিত্তি তৈরি করা
নিউ ইকোনমিক পলিসির আরো একটি ফোকাস ছিল মালয়েশিয়াকে কৃষি নির্ভরতা থেকে বের করে এনে শিল্পনির্ভর করে তোলার উপর। এই উদ্দেশ্যে সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং, কন্সট্রাকশন ও ফাইন্যান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোকে নানা সুবিধা দেয়া শুরু করে। আবার এসব শিল্পে যাতে বুমিপুত্রদের যথাযথ রিপ্রেজেন্টেশন থাকে, তাই সরকার অনেকগুলো সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চালু করে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে সরকার একাধিক ফ্রি ট্রেড জোন প্রতিষ্ঠা করে। এতে করে মালয়েশিয়ার ইলেক্ট্রনিক্স সেক্টর বেশ উন্নত হয়, যা পরবর্তীতে আধুনিক মালয়েশিয়ান অর্থনীতির অন্যতম পিলার হিসেবে আবির্ভুত হয়।
নিউ ইকোনমিক পলিসির ফলাফল
১৯৯০ সালের মাঝে এই পলিসি মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। ১৯৯০ সালের ভেতর বুমিপুত্রদের করপোরেট মালিকানা ১৯.৩%-এ চলে আসে। যদিও লক্ষ্য ছিল ৩০%-এ নিয়ে আসা। সম্পূর্ণ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব না হলেও ১৯৭০ সালের অবস্থার তুলনায় বুমিপুত্রদের জীবনমান বেশ উন্নত হয়। এতে করে সারা দেশব্যাপী দরিদ্রতার হার হ্রাস পায় এবং এভাবেই মালয়েশিয়ার অর্থনীতির ভবিষ্যত অগ্রযাত্রার বীজবপন করা সম্ভব হয়।
তবে নিউ ইকোনমিক পলিসি কি শুধু সফলতার গল্প? না, এই পলিসির বেশ কিছু সমালোচনা’ও সেই সময়ে উঠে আসে। সমালোচকদের মতে, এই পলিসির কারণে অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা অনেকটাই অতিরিক্ত সরকার নির্ভর হয়ে ওঠে, ফলে দেখা দেয় স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতার মতো নানা সমস্যা। আবার বুমিপুত্রদের জন্য রাখা কোটা ব্যবস্থার কারণে নন-বুমিপুত্রদের মাঝে দেখা দিতে থাকে অসন্তোষ। বিশেষ করে, চাইনিজ ও ইন্ডিয়ান কমিউনিটিগুলো মনে করতে থাকে যে এর মাধ্যমে তাদের সাথে অবিচার করা হচ্ছে।
এসব সমালোচনা থাকার পরেও, নিউ ইকোনমিক পলিসি যে আধুনিক মালয়েশিয়ার অর্থনীতির ভিত্তি প্রস্তুত করতে বিশাল অবদান রেখেছিল, সেই বিষয় দ্বিমত খুব কম মানুষই পোষণ করেন।
পাম অয়েল শিল্পের ভূমিকা
মালয়েশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাম তেল উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক দেশ, ইন্দোনেশিয়ার পরেই মালয়েশিয়ার অবস্থান। ১৯৬০-এর দশক থেকে পাম তেল শিল্প মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান চালক হয়ে ওঠে, যখন সরকার রাবার এবং টিনের উপর নির্ভরতা কমিয়ে কৃষি খাতে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ নেয়। ১৯৮০-এর দশকের মধ্যে, মালয়েশিয়া বিশ্বের পাম তেল উৎপাদনের ৫০% এর বেশি জোগান দিচ্ছিল।
পাম অয়েল শিল্প এখনো মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, এই শিল্পটি দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩.৫% কন্ট্রিবিউট করে এবং ৬ লাখেরও বেশি মানুষকে কর্মসংস্থান প্রদান করে, বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে। পাম তেলের রপ্তানি মালয়েশিয়ার জন্য প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব এনে দেয়, এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাম তেল এবং পাম-ভিত্তিক পণ্যগুলির রপ্তানি দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪.১% কন্ট্রিবিউট করে।
সরকারের গবেষণা, প্রযুক্তিগত উন্নতি, এবং ফেলদা (Federal Land Development Authority)-এর মতো নীতিমালার মাধ্যমে এই শিল্পে অব্যাহত সমর্থন, মালয়েশিয়াকে বৈশ্বিক পাম তেল বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। যদিও পরিবেশগত উদ্বেগ এবং স্থায়িত্বের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবুও এই শিল্পটি মালয়েশিয়ার অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিউ ইকোনমিক পলিসি পরবর্তী মালয়েশিয়ান অর্থনীতি (১৯৯১ - ২০০০)
১৯৯০ সালে নিউ ইকোনমিক পলিসির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মালয়েশিয়া ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি (এনডিপি) চালু করে ১৯৯১ সালে। এনইপি’র কিছু মূল বিষয় এক রেখে এনডিপি’তে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ন্যাশনাল ইউনিটির দিকে ফোকাস করা হয়। তবে এই পলিসিতেও বুমিপুত্রদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পলিসির মাধ্যমে মালয়েশিয়ান সরকার মূলত রাবার ও পাম অয়েল এক্সপোর্টের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে আরো হাই ভ্যালু পণ্য এক্সপোর্ট করার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতি বৈচিত্র্যপূর্ণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
পুরো নব্বইয়র দশকজুড়ে মালয়েশিয়া ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে নতুনত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা করে, যার কেন্দ্রে ছিল ইলেক্ট্রনিক্স ও সেমিকন্ডাক্টর। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে এসে এই দুই শিল্প মালয়েশিয়ার মোট রপ্তানির ৫০% দখল করে থাকে। বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে আসার কাজে ফ্রি ট্রেড জোনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। একইসাথে সরকার পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সেক্টর বড় করার দিকে নজর দেয় এবং পরবর্তীতে এগুলো জাতীয় জিডিপির মূল কন্ট্রিবিউটর হয়ে ওঠে।
১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার জিডিপি বার্ষিক গড়ে ৮% হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে করে বোঝা যায় যে মালয়েশিয়ার এনডিপি বেশ সফল হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে এশিয়ান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এই ধাক্কা সামলে ওঠার জন্য মালয়েশিয়ার বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়।
আর্থিক সংকট এবং পুনরুদ্ধার (১৯৯৭–১৯৯৮)
১৯৯৭ সালের এশিয়ান অর্থনৈতিক সংকট মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দেয়। সংকটটি শুরু হয় যখন আঞ্চলিক মুদ্রাগুলোর উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে বড় আকারের মূলধন পাচার এবং মুদ্রার মান হ্রাস ঘটে। মালয়েশিয়ার রিংগিত ডলারের বিপরীতে প্রায় ৫০% মান হারায়, শেয়ারবাজার ব্যাপক পতনের মুখে পড়ে, এবং অনেক ব্যবসা ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে, যার ফলে আর্থিক বিপর্যয় দেখা দেয়।
অন্যান্য দেশগুলি যেখানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) থেকে সহায়তা নিয়েছিল, মালয়েশিয়া ভিন্ন পথ বেছে নেয়। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে, ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার মূলধন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে, যা দেশের বাইরে মূলধনের প্রবাহ বন্ধ করে এবং মুদ্রার মান স্থিতিশীল করে। রিংগিতকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৩.৮ হারে পেগ করা হয়, যা এটিকে স্পেকুলেশন থেকে রক্ষা করে।
এই কৌশলটি মালয়েশিয়াকে তার অর্থনৈতিক নীতিতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং IMF-এর কঠোর অর্থনৈতিক শর্তাবলী থেকে রক্ষা করে। সরকার রিংগিতের বাণিজ্য নিষিদ্ধ করে, যাতে মুদ্রার ওপর স্পেকুলেশন বন্ধ হয়।
সংকটের পর, মালয়েশিয়া বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক সংস্কার গ্রহণ করে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলিকে পুনঃমূলধনীকরণ করা হয় এবং ব্যাংকিং খাতে আরও কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয় যাতে ভবিষ্যতে ঝুঁকি কমানো যায়। মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Bank Negara Malaysia) আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করে।
এই পদক্ষেপগুলি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা মালয়েশিয়াকে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। ১৯৯৯ সালের মধ্যে, অর্থনীতি আবার পজিটিভ প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬.১%-এ উন্নীত হয়। মূলধন নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা পেগিং এবং সংকট-পরবর্তী সংস্কারের সংমিশ্রণটি পরবর্তী দশকে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি স্থাপন করে।
অবকাঠামো তৈরি ও ভিশন ২০২০
পুরো নব্বইয়ের দশকজুড়ে মালয়েশিয়া নানা ধরণের অবকাঠামো তৈরিতে ভারি রকমের বিনিয়োগ করে। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছি প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দ্বারা ঠিক করা ভিশন ২০২০। এই ভিশনের উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ সালের ভেতর মালয়েশিয়াকে পুরোপুরি একটি উন্নত দেশ হিসেবে রুপদান করা। এই ভিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টগুলো ছিল, পুত্রজায়া (প্রশাসনিক রাজধানী) ও কুয়ালালামপুরের মাল্টিমিডিয়া সুপের করিডোর।
ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পলিসির ফলাফল
২০০০ সালের ভেতর মালয়েশিয়া সফলতার সাথে তাদের দরিদ্রতার হার ৬.১%-এ নিয়ে আসে, যা ১৯৯০ সালে ছিল ১৭% প্রায়। এছাড়া মোটামুটি সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য একটি উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। যদিও ২০০০ সালে এসেও বুমিপুত্র করপোরেট মালিকানা ৩০%-এ আনা সম্ভব হয়নি, তবে প্রতি বছরই তাদের অংশ বৃদ্ধি পেয়ে চলছিল।
পর্ব - ২
মালেশিয়ার অর্থনৈতিক শীর্ষক আলোচনায় পরবর্তী পর্বে থাকছে, মালয়েশিয়ার আধুনিক অর্থনৈতিক সংস্কার, 1MDB কেলেঙ্কারি এবং অর্থনৈতিক আস্থা, সাফল্য এবং চলমান চ্যালেঞ্জ, COVID-19 মহামারী পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা, ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির কৌশল।
পর্ব-২ (লিঙ্ক):
https://georenus.com/edu/bn/geopolitics/malaysias-economic-reforms-part-two-bangla
- https://en.wikipedia.org/wiki/Economic_history_of_Malaysia
- https://www.ide.go.jp/library/English/Publish/Periodicals/De/pdf/73_04_03.pdf
- https://www.worldbank.org/en/country/malaysia/overview
- https://www.britannica.com/place/Malaysia/Resources-and-power
- https://www.ehm.my/publications/articles/malaysias-structural-economic-change-past-present-and-future
- https://eh.net/encyclopedia/economic-history-of-malaysia/
- https://www.krinstitute.org/assets/contentMS/img/template/editor/20181129_Part%203_KRI_SOH_2018.pdf
- https://resourcegovernance.org/sites/default/files/RWI_Econ_Diversification_Malaysia.pdf
- https://www.imf.org/en/News/Articles/2019/06/23/sp062419-md-ingredients-for-malaysias-economic-prosperity
- https://m.aliran.com/thinking-allowed-online/how-malaysia-can-become-a-developed-nation
- https://eastasiaforum.org/2020/04/30/malaysia-beats-brutal-covid-19-expectations/
- https://www.thedailystar.net/business/global-economy/south-east-asia/news/migrant-worker-crisis-malaysias-palm-oil-industry-crumbles-3046131
- https://www.investopedia.com/terms/a/asian-financial-crisis.asp
- https://corporatefinanceinstitute.com/resources/economics/asian-financial-crisis/