General Agreement on Tariffs and Trade (GATT)

398
article image

বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য ইতিহাসে কখনোই একই সরলরেখায় চলতে পারেনি। সময়ের পরিক্রমায় মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক অনেক কারণ, পৃথিবীর অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্থ করে। এসব বাধা বিপত্তি ও ক্ষতির হাত থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য অনেক সময় নীতি নির্ধারণকেরা অনেক নীতি বা চুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনই একটি চুক্তি হচ্ছে The General Agreement on Tariffs and Trade, সংক্ষেপে GATT.

Key Points

  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালের অক্টোবর ২৩ টি দেশ দ্বারা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি (GATT) স্বাক্ষরিত হয় এবং এটি ১৯৪৮ সালের পহেলা জানুয়ারি কার্যকর করা হয়।
  • এই নীতিকে বলা হয়ে থাকে মোস্ট-ফেভারড-নেশন (Most-Favored-Nation) নীতি এবং এর উদ্দেশ্য ছিল শুল্ক হ্রাস করা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসার ও সহজ করা।
  • ১৯৪৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত GATT-এর মোট আটটি রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে যার প্রত্যেকটিই ছিল সাফল্যমন্ডিত ও বিশ্ব বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ফলাফল বয়ে আনে।
  • ১৯৯৫ সালে উরুগুয়ে রাউন্ডে, GATT থেকে পরবর্তীতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) তৈরি হয়, যা GATT-এর নীতিগুলোকে অধিক কার্যকরী করে তোলে।

General Agreement on Tariffs and Trade (GATT)

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অর্থনীতি বেশ বড় কিছু বাধার সম্মুখীন হয়। ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার জন্য দায়ী শুল্ক, আমদানি কোটা ও ভর্তুকির মত নীতিগুলো এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ, বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব সুরক্ষাবাদী নীতি থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে রক্ষা এবং বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থাকে পুনরুদ্ধারের জন্যই ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় GATT, যা পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম একটি বৃহৎ আইনি চুক্তি।

বৈষম্যহীন বাণিজ্যিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই ছিল GATT-এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরিত প্রত্যেকটা দেশ সমান মর্যাদা পেত বলে একে মোস্ট-ফেভারড-নেশন (Most-Favored-Nation) নীতি বলা হয়ে থাকে। বছরের পর বছর ধরে এই চুক্তি প্রসারিত হয়েছে, পরিমার্জিত হয়েছে, হয়েছে অধিক কার্যকর, যারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে তৈরী হয় আজকের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)।

শুল্ক ও বাণিজ্যে সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি (GATT) কি?

পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব আইনি চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্যের ধারা পরিবর্তন করে, এর পথ সহজ ও প্রসারিত করেছে তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে The General Agreement on Tariffs and Trade (GATT)। ১৯৩০ এর দশকের ঘটে যাওয়া মহামন্দার জন্য দায়ী শুল্ক, আমদানি কোটা ও ভর্তুকের মতো বিশ্ব বাণিজ্যের বৃহত্তর বাধা গুলোকে হ্রাস করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এই চুক্তির যাত্রা শুরু হয়।

১৯৪৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সম্মেলনে ২৩ টি দেশের সমন্বয়ে শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি (GATT) স্বাক্ষরিত হয়। যদিও চুক্তিটি ওই সময়ে কার্যকর করা হয়নি। ১৯৪৮ সালের পহেলা জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করা হয় চুক্তিটি।

শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি (GATT), পহেলা জানুয়ারি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এই সময়কালের মধ্যে আটটি রাউন্ডে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে, ১৯৯৪ সালের ১৫ই এপ্রিল, ১২৩ টি দেশের সম্মতিতে, GATT-এর উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থা (WTO)।

GATT এর প্রেক্ষাপট

১৯৩০ এর দশকের আগে বিশ্বের অনেক দেশ তাদের দেশীয় পণ্য ও শিল্প বাণিজ্য থেকে অধিক লাভের আশায় আমদানিকৃত পণ্যের উপরে বিশেষ শুল্ক নীতি জারি করে। দেশীয় পণ্য, শিল্প ও বাজারকে, বিদেশী পন্য বা বাজারের প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করার জন্য এই নীতিগুলো জারি করা হয়, যাকে বলা হয়ে থাকে সুরক্ষাবাদী বাণিজ্য নীতি। এই নীতির ফলে বিশ্ব বাণিজ্য শুল্ক, আমদানি কোটা ও ভর্তুকির মত ভয়ংকর কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়। অবশেষে যা ডেকে আনে ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দা।

এরপরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুরো বিশ্ব সম্মুখীন হয় এক মহা ধ্বংসযজ্ঞের, ভেঙে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। ঠিক তখনই, বিশ্ব অর্থনীতিকে এই ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে উদ্ধার এবং ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার জন্য দায়ী সুরক্ষাবাদী বাণিজ্য নীতিগুলোর অভিশাপ থেকে মুক্ত করে, অর্থনৈতিক অবস্থা পুনর্গঠন ও বাণিজ্য প্রসারের জন্য স্বাক্ষরিত হয় শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি বা GATT।

GATT এর ইতিহাস

১৯৪০ এর দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সংকট নিরসনের জন্য অনেকগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি দল গঠন করে। তারা মূলত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির কথা ভাবছিলেন এবং তারাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ITO) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়। বিশ্বের প্রায় ৫০ টি দেশের এতে সম্মতি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে বাধা প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে শুল্ক ও বাণিজ্যে সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তির কথা সামনে আসলে, এবং এতে সকল দেশ সম্মতি জানালে, ITO এর পরিবর্তে তখন GATT প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই শুল্ক ও বিশ্ব বানিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তির আটটি অধিবেশন সম্পন্ন হয়। যুগান্তকারী এই চুক্তির প্রত্যেকটা অধিবেশনই সফল হয় ও বৃহৎ ফলাফল বয়ে আনে।

জেনেভা রাউন্ড

২৩টি দেশের উপস্থিতিতে প্রথম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। এই উদ্বোধনী সম্মেলনের মুল আলোচ্য বিষয় ছিল শুল্ক হ্রাস করা। সম্মেলনের ফলস্বরূপ সদস্য দেশগুলো ট্যাক্স বিরতিতে সম্মত হন এবং তারা বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়।

অ্যানেসি রাউন্ড

বিশ্ব বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তির দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্সের অ্যানেসিতে ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে। এই বৈঠকেরও মূল আলোচ্য বিষয়বস্তু ছিল শুল্ক। ১৯৪৭ সালের জেনেভা রাউন্ডে পাস হওয়া ট্যাক্স মওকুফের নীতি চালিয়ে যাওয়া এবং শুল্ক হ্রাস করা ছিল এই মিটিং এর মূল উদ্দেশ্য। শুল্কের মাত্রা কমাতে ও চুক্তির সম্প্রসারণে এই মিটিং যথেষ্ট সফল হয়েছিল।

টরকুয়ে রাউন্ড

১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের টরকুয়েতে GATT-এর তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাৎপর্যপূর্ণ এই বৈঠকে মোট ৩৮ টি দেশ অংশগ্রহণ করে। আগের রাউন্ডের সম্মেলনে ধার্যকৃত শুল্কের হার আরো কমিয়া আনা ও বাণিজ্য চুক্তির প্রসার ঘটানো ছিল এই বৈঠকের উদ্দেশ্য।

সম্মেলনে প্রায় ৯০০০০ শুল্ক ছাড় পাস হয়, যা করের মাত্রা প্রায় ২৫% কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি আরও পণ্য ও খাত অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এই চুক্তির প্রসার ঘটানো সম্ভব হয়েছিল এ সম্মেলনের ফলে।

জেনেভা রাউন্ড II

শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি বা GATT-এর চতুর্থ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভা, সুইজারল্যান্ডে। ১৯৫৬ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ২৬ টি দেশ অংশগ্রহণ করে। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাপান GATT-এর সদস্যভুক্ত হয়।

আগের সব বৈঠকের মতই এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল শুল্ক নির্মূল বা হ্রাস করা। বৈঠকে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শুল্ক মওকুফ করা হয়।

ডিলন রাউন্ড

১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর, মার্কিন ট্রেজারী সেক্রেটারি, ডগলাস ডিলনের নাম অনুসারে ডিলন রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বানিজ্য বাধাগুলো কমানোর প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া এবং শুল্ক হ্রাস। বৈঠকে প্রায় ৪৪০০টি আইটেমের শুল্ক হ্রাসের জন্য আলোচনা করা হয় এবং আইটেম-বাই-আইটেম কাটের মাধ্যমে প্রায় ৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শুল্ক কমানো হয়।

ডিলন রাউন্ড পরবর্তী গ্যাট সম্মেলন গুলোর জন্য মঞ্চ তৈরি করে দেয়। এতে European Economic Community (EEC) তৈরির আলোচনাও শুরু হয়। GATT-কে বিশ্ব বাণিজ্যে অধিক গ্রহণযোগ্য এবং মোস্ট-ফেভারড-নেশন (Most-Favored-Nation) নীতি তৈরিতে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কেনেডি রাউন্ড

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির নামে নামকরণ করা, শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি, GATT-এর ষষ্ঠ সম্মেলন, কেনেডি রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৪ সালের মে মাসে। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল-

শুল্ক সহ বাণিজ্যে অন্যান্য বাধা হ্রাস ও নির্মূল করা।

বাণিজ্য নীতি প্রচার ও বাণিজ্যের সম্প্রসারনের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করা।

খামার ব্যবসার বিধি নিষেধ ভেঙে কৃষিজাত পণ্য বাজারে প্রবেশের ব্যবস্থা করা।

প্রায় ৩৭ মাস ধরে চলা এই সম্মেলনে ৪০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছিল।

টোকিও রাউন্ড

শুল্ক ব্যতীত অন্যান্য বাণিজ্য বাধা যেমন আমদানি কোটা, ভর্তুকি ও প্রযুক্তিগত বাধা দূর করা ও কমানোর লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয় , GATT-এর টোকিও রাউন্ড। বহুপাক্ষিক এই বাণিজ্য সম্মেলনে বিশ্বের ১০২ টি দেশ অংশগ্রহণ করে। আলোচনায় প্রায় ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শুল্ক কমানো হয়।

উরুগুয়ে রাউন্ড

বেশ কয়েকটি উচ্চাভিলাসী উদ্দেশ্য যেমন বাণিজ্য বাধাকে আরও হ্রাস, কৃষি সেবা সমূহকে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতিকরন, বুদ্ধি ভিত্তিক সম্পত্তির সুরক্ষা, বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সবশেষে WTO-এর প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি সামনে রেখে ১৯৮৬ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত হয় GATT-এর উরুগুয়ে রাউন্ড। এই সম্মেলনটিতে প্রায় ১২৩ টি দেশ অংশগ্রহণ করে, যাতে প্রথমবারের মত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এই সম্মেলনটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) সৃষ্টির দিকে অগ্রসর হয় এবং কৃষি, বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তি সুরক্ষা, বিরোধ নিষ্পত্তিসহ আরো অনেক সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন নীতি পাশ করা হয়।

১৯৪৭ সালে যখন GATT প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন গড় শুল্ক হার ছিল প্রায় ২২%। এবং ১৯৯৪ সালের উরুগুয়ে রাউন্ডের পর এই শুল্ক হার কমে দাঁড়ায় ৫%। পাশাপাশি বৈশিক অর্থনীতির বড় বাঁধাগুলো কাটিয়ে উঠে, কৃষি বিবাদের মীমাংসা ও বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তি রক্ষার মতো যুগান্তকারী কিছু অর্থনৈতিক পরিবর্তন এনে দেয় এই শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি।

GATT এর উদ্দেশ্য

শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল শুল্ক বাধা হ্রাস করা। ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার জন্য দায়ী এসব নীতিগুলো বিশ্বের অর্থনীতিকে দিন দিন ধ্বংসযজ্ঞের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। এসব নীতির ফলে, মহামন্দার সময় বিশ্ব বানিজ্যে ৬৫% পতন ঘটে। এসব নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা হিসেবে ছিল।

তাই এসব ক্ষতিকর শুল্ক বাধা দূর করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক করতে GATT প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর জন্য নিজেদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করার পথ সহজ হয়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রসার, কৃষি বিবাদ মীমাংসা, জিডিপি বৃদ্ধিতে GATT ব্যাপকভাবে সফল হয়েছিল।

GATT vs. WTO

GATT (শুল্ক এবং বাণিজ্যে সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি) এবং WTO (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) হল দুটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং সংস্থা যা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য মাইলফলক ছিল এবং স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৪৭ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে GATT-এর নীতিগুলো জারি থাকার পর, ১৯৯৫ সালে GATT-এর উত্তরাধিকারী হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) শুধু শুল্ক হ্রাসই নয় বরং পরিষেবার বাণিজ্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির সুরক্ষা চুক্তি (TRIPS চুক্তি), এবং সরকারী বিধানের বিভিন্ন বাণিজ্য-সম্পর্কিত চুক্তি (TBT চুক্তি, SPS চুক্তি) অন্তর্ভুক্ত করে। যা বিশ্ব বাণিজ্যের পথ আরো সহজ ও প্রসারিত করে। সবশেষে বলা যায়, GATT আধুনিক বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা পরবর্তীতে WTO-এর দ্বারা সফল ও সার্থক হয়।

শেষকথা

পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম চুক্তি সকল দেশের জন্য সমানভাবে কার্যকর ও সমান মর্যাদা দান করতে সক্ষম হয়েছিল। এরকম কিছু যুগান্তকারী চুক্তির মধ্যে একটি হচ্ছে শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি। একে বলা হয়ে থাকে মোস্ট-ফেভারড-নেশন (Most-Favored-Nation) নীতি, যা পৃথিবীর বাণিজ্য থেকে বৈষম্যের চর্চাকে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল।

গেট এর মুক্ত বাণিজ্য নীতি, বিশ্বের অর্থনীতিকে সুরক্ষাবাদী নীতির অভিশাপ থেকে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় থেকে মুক্ত দিয়েছিল। যা তখন বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক অবস্থাকে পুনরুদ্ধার করে, কয়েক দশক জন্য বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে দেয়। 
 
 
 
 
 
 
 


  • https://www.investopedia.com/terms/g/gatt.asp
  • https://www.wallstreetmojo.com/gatt/
  • https://en.wikipedia.org/wiki/General_Agreement_on_Tariffs_and_Trade
  • 

Next to read
Canvas & Methods
লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)
লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)

লিন ক্যানভাস মডেল মূলত একটি এক পৃষ্ঠার নয়টি ব্লকের মাধ্যমে তৈরি করা সমস্যা-সমাধান ভিত্তিক মডেল যা একটি আইডিয়াকে ব্যবসায়ে রুপান্তরিত করতে কিংবা স্টার্টআপ এর প্রসারে সহায়তা করে। এই মডেলটি মূলত স্টার্টআপ লেভেলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুগান্তকারী মডেল হিসেবে কাজ করে যেকারণে অনেক বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও তাদের শুরুর দিকে এই মডেলটি ব্যবহার করে নানাভাবে উপকৃত হয়েছে।

বিজনেস মডেল ক্যানভাস ( Business Model Canvas)
Canvas & Methods
বিজনেস মডেল ক্যানভাস ( Business Model Canvas)
ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)
Business Models
ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)
CSR বা Corporate Social Responsibility কী?
Business
CSR বা Corporate Social Responsibility কী?
অর্থনীতি কী?
Economics
অর্থনীতি কী?
বিক্রয়ের ১০টি ভুল যেগুলো প্রতিটি বিক্রয়কর্মীর এড়ানো উচিৎ
Sales
বিক্রয়ের ১০টি ভুল যেগুলো প্রতিটি বিক্রয়কর্মীর এড়ানো উচিৎ
‘SWOT’ Analysis
Analysis
‘SWOT’ Analysis
ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসা
E-Commerce
ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসা
হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি (What is Accounting)
Accounting
হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি (What is Accounting)
Startup funding Pre-seed to series A, B, C brief discussion
Investment
Startup funding Pre-seed to series A, B, C brief discussion