বাজারে প্রবেশের বাধা: কারণ, প্রকারভেদ ও প্রভাব (Barriers to Entry in a business.)

বাজারে টিকে থাকতে শুধু ভালো পণ্য বা সেবা দিলেই হয় না, প্রয়োজন কৌশলগতভাবে প্রতিযোগীদের প্রবেশ ঠেকানো। এই লেখায় তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ব্র্যান্ড ভ্যালু, সাপ্লাই চেইন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, আইনি সুরক্ষা ও নেটওয়ার্ক ইফেক্টের মতো উপায়গুলো কাজে লাগিয়ে বাজারে নিজের অবস্থান শক্ত করে রাখতে পারে। আপনার ধারণাকে আরো স্পষ্ট করার জন্য সাথে থাকছে কিছু বাস্তব উদাহরণ।
Key Points
- শক্তিশালী ব্র্যান্ড ভ্যালু ও গ্রাহকের আস্থা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাকে প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে রাখে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রবেশ কঠিন করে তোলে।
- বৃহৎ উৎপাদন ক্ষমতা ইউনিট খরচ কমিয়ে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণে সহায়তা করে, যা নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য টিকে থাকা কঠিন করে তোলে।
- আইনি সুরক্ষা যেমন পেটেন্ট ও ট্রেডমার্ক প্রতিযোগীদের অনুকরণ রোধ করে, ফলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার একচেটিয়া অবস্থান বজায় থাকে।
- নেটওয়ার্ক ইফেক্ট ও গ্রাহক অভ্যাস নতুন ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে বাজারে প্রবেশে তারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায় না।
ভূমিকা
একটি প্রতিষ্ঠান যখন সফলভাবে বাজারে প্রবেশ করে, তখন তার মূল লক্ষ্য হয় সেই বাজারে নিজের অবস্থান দৃঢ় করা এবং নতুন প্রতিযোগীদের প্রবেশ ঠেকানো। এ ক্ষেত্রে “বাজারে প্রবেশের বাধা” একটি কার্যকর কৌশল হয়ে উঠতে পারে। এই বাধাগুলো নতুন ব্যবসার জন্য প্রবেশের পথ কঠিন করে তোলে, যা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিযোগিতার বাইরে রেখে দিতে পারে। বাংলাদেশি বাজারে এর বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায় বিভিন্ন খাতে, যেখানে ব্র্যান্ডিং, বিনিয়োগ, সরবরাহ ব্যবস্থা, বা আইনি সুরক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে। আজকের লেখায় সেই বাধাগুলোর বিশ্লেষণ ও কিছু দেশীয় উদাহরণ তুলে ধরা হলো।
১। ব্র্যান্ড ভ্যালু ও গ্রাহকের আস্থা
একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার জন্য সবচেয়ে কার্যকর বাধা হলো একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরি করা। ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকের আস্থা এবং অভ্যাস নতুন প্রতিযোগীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। আপনি যদি নিয়মিত মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা সরবরাহ করেন, গ্রাহকরা স্বাভাবিকভাবেই আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। এটি তখন আরও শক্তিশালী হয় যখন আপনি মার্কেটিং, কাস্টমার কেয়ার এবং কাস্টমারের রিভিউয়ের মাধ্যমে সেই আস্থাকে আরো দৃঢ় করে তুলবেন। এমনকি তারা যদি একই মানের পণ্যও নিয়ে আসে, তবুও এই আস্থা ভাঙা নতুন কোনো ব্র্যান্ডের পক্ষে সহজ নয়।
“বিকাশ” এই প্রবেশ-বাধার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। দেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস সেক্টরে বিকাশ এতটাই গভীরভাবে গ্রাহকের মনে জায়গা করে নিয়েছে যে, সরকার-সমর্থিত ও উচ্চবাজেটের প্রচার চালিয়েও “নগদ” বা “উপায়” বিকাশের বাজার অংশীদারিত্ব থেকে বড় অংশ দখল করতে পারছে না। তাই, প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড হিসেবে বিকাশের ব্র্যান্ড ভ্যালুই নতুনদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২। সাপ্লাই চেইন নেটওয়ার্ক
একটি ব্যবসার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে তার পণ্যকে বাজারে পৌঁছানোর সক্ষমতার ওপর। যদি আপনার পণ্য দেশের সকল প্রান্তে সহজলভ্য থাকে, তবে নতুন কোনো ব্যবসার পক্ষে সেই কাভারেজ তৈরি করা খুবই কঠিন। আপনি যদি সরাসরি বিক্রেতা, ডিলার এবং হোলসেল চ্যানেলের ওপর শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে আপনার প্রতিযোগীরা সহজেই সেই চেইনে প্রবেশ করতে পারবে না।
“আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ” এমন একটি কোম্পানি যারা সারাদেশব্যাপী অসংখ্য ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট তৈরি করেছে। তাদের বিস্কুট, জুস, পানীয় ও স্ন্যাক্স পণ্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সহজে পাওয়া যায়। এখন যদি কোনো নতুন কোম্পানি একই ধরনের পণ্য বাজারে আনে, তবে তাদের জন্য আকিজের মত সাপ্লাই চেইন ও নেটওয়ার্ক তৈরি করতে দীর্ঘ সময় ও বিশাল বিনিয়োগ দরকার হবে। ফলে আকিজের নেটওয়ার্ক নতুনদের জন্য একটি বাস্তব বাধা হিসেবে কাজ করে।
৩। উৎপাদনের মাত্রাগত সুবিধা
যখন একটি কোম্পানি বড় আকারে উৎপাদন করতে পারে, তখন তা ইউনিট প্রতি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। এই উৎপাদন-সাশ্রয় প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য সরবরাহের সুবিধা দেয়। এটি নতুন প্রতিযোগীদের জন্য প্রবেশের বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, কারণ তারা একই পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে উচ্চ খরচে পড়ে এবং বাজারে কম দামে টিকতে পারে না।
“রানার অটোমোবাইলস” দেশের মধ্যে প্রথম বাইক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজস্ব কারখানায় বিশাল স্কেলে উৎপাদন করে খরচ কমিয়ে ফেলেছে। ফলে তারা তুলনামূলকভাবে কম দামে মোটরসাইকেল বাজারজাত করতে পারে। নতুন বাইক ব্র্যান্ড বা আমদানিকারকদের জন্য এ দামে প্রতিযোগিতা করা প্রায় অসম্ভব। রানার যেভাবে নিজস্ব স্কেলে উৎপাদনের সুবিধা কাজে লাগিয়েছে, তা স্পষ্টভাবে নতুন প্রতিযোগীদের জন্য একটি শক্তিশালী প্রবেশ-বাধা তৈরি করেছে।
৪। আইনি সুরক্ষা – পেটেন্ট ও ট্রেডমার্ক
আপনার পণ্যের নাম, ফর্মুলা বা প্রযুক্তি যদি আইনগতভাবে পেটেন্ট বা ট্রেডমার্ক দ্বারা সুরক্ষিত থাকে, তবে অন্য কেউ তা অনুকরণ করতে পারবে না। এটি বাজারে একচেটিয়া সুবিধা দেয় এবং প্রতিযোগীদের বাজারে প্রবেশ সীমিত করে তোলে। পেটেন্ট বা ট্রেডমার্ক সংরক্ষণ শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত খাতে নয়, খাদ্য, ওষুধ, প্যাকেজিং ডিজাইন এবং এমনকি নামেও প্রযোজ্য।
“স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস” বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ কোম্পানি। তারা প্রতিটি ওষুধের নাম, ফর্মুলা, প্যাকেজিং ও বিজ্ঞাপনের ধরণ ট্রেডমার্ক ও পেটেন্টের মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখে। নতুন কোনো কোম্পানি চাইলেও এই ওষুধের নাম বা স্টাইল অনুকরণ করতে পারে না। এই আইনি সুরক্ষা নতুন ফার্মা কোম্পানির প্রবেশ ঠেকানোর জন্য একধরনের আইনগত দেয়াল তৈরি করে।
৫। প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা
আপনার ব্যবসা যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রযুক্তি, সফটওয়্যার, বা দক্ষ জনশক্তির ওপর নির্ভর করে এবং সেটা সহজলভ্য না হয়, তাহলে তা নতুন প্রবেশকারীদের জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্দিষ্ট অপারেশন দক্ষতার মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকেন, তাহলে প্রতিযোগীরা তা হুবহু অনুকরণ করতে পারবে না।
“ডেটাপাথ” বা “পাথওয়ে” এর মতো ফিনটেক ও আইটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ERP সলিউশন, ক্লাউড সার্ভিস, এবং বিজনেস ইনটেলিজেন্স সফটওয়্যারে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তাদের দক্ষ টেকনিক্যাল টিম, অটোমেশন সিস্টেম এবং ক্লায়েন্ট-কেন্দ্রিক সফটওয়্যার সলিউশন নতুন কোনো কোম্পানির পক্ষে সহজে প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়। এতে করে তারা টেকনোলজির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী প্রবেশ-বাধা তৈরি করতে পেরেছে।
৬। উচ্চ প্রাথমিক বিনিয়োগ
কিছু ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ এতটাই বেশি হয় যে ছোট উদ্যোক্তারা এই বাজারে ঢুকতেই ভয় পায়। ফ্যাক্টরি স্থাপন, মেশিনারি কেনা, বিপণন ব্যয়, এবং লাইসেন্সিং ইত্যাদি খরচ অনেক সময় এত বেশি হয় যে এটি নিজেই একধরনের প্রতিরোধক দেয়াল হিসেবে কাজ করে।
“বসুন্ধরা গ্রুপ” টিস্যু, সিমেন্ট, কাগজ, ইস্পাত ও রিয়েল এস্টেট খাতে এমন স্কেলে বিনিয়োগ করেছে যে নতুন কোনো কোম্পানির পক্ষে সেই ধরনের উৎপাদন অবকাঠামো গড়া প্রায় অসম্ভব। এমনকি যদি তাদের মতো পণ্য তৈরি করাও যায়, তাহলে সেটিকে বাজারজাত করতে এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু গড়তে যে পরিমাণ ব্যয় দরকার, তা অনেক উদ্যোক্তার সাধ্যের বাইরে।
৭। নিয়ন্ত্রক বাধা ও লাইসেন্সিং জটিলতা
কিছু শিল্পখাতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সরকার থেকে লাইসেন্স বা অনুমোদন নিতে হয় যা খুব জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। যদি আপনি আগেই এই অনুমোদনগুলো অর্জন করে ফেলেন এবং নিয়মিত নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করেন, তবে নতুন উদ্যোক্তারা সেই পর্যায়ে আসতে গিয়ে পিছিয়ে পরবে।
টেলিকম খাতে “গ্রামীণফোন”, “রবি”, এবং “বাংলালিংক” আগে থেকেই BTRC থেকে স্পেকট্রাম, অপারেটিং লাইসেন্স এবং টাওয়ার পারমিশন ইত্যাদি অর্জন করেছে। নতুন কোনো টেলিকম কোম্পানির জন্য এসব অনুমোদন নেয়া শুধু কঠিনই নয়, বরং সময় ও টাকার ব্যাপারেও অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, এগুলো প্রবেশের বড় আইনি বাধা তৈরি করে।
৮। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও সনদ
গুণগত মান বজায় রাখা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সার্টিফিকেশন পাওয়া অনেক সময় কঠিন এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায়। আপনার কোম্পানি যদি আগেই ISO, BSTI বা HACCP এর মত আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় সনদপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে ভোক্তার কাছে আপনার পণ্য বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে, যা নতুনদের জন্য একটি বড় মনস্তাত্ত্বিক বাধা সৃষ্টি করবে।
“ফ্রেশ” ব্র্যান্ড, যা মেঘনা গ্রুপ পরিচালিত, তাদের তেল, মসলা, আটা-ময়দা সব ধরনের পণ্য HACCP ও BSTI অনুমোদিত। তারা নিয়মিতভাবে মান নিয়ন্ত্রণ ও টেস্টিং করে এবং গ্রাহকের কাছে এটি তুলে ধরে। ফলে, একটি নতুন খাদ্যপণ্য বাজারে এলেও, গ্রাহক তাতে আস্থা রাখতে দ্বিধা করে। এই মানের সনদ ও মান বজায় রাখার দক্ষতা নতুন কোম্পানির জন্য প্রবেশের একটি দৃঢ় বাধা হিসেবে কাজ করে।
৯। কন্ট্রাক্ট ও এক্সক্লুসিভ ডিলিং
বাজারে টিকে থাকার অন্যতম কার্যকর কৌশল হলো সরবরাহকারী, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার সাথে একচেটিয়া চুক্তি গড়ে তোলা। আপনি যদি কাঁচামাল সরবরাহকারীর সাথে একটি নির্দিষ্ট চুক্তি করে থাকেন যেখানে তারা শুধুমাত্র আপনাকেই পণ্য সরবরাহ করবে, তাহলে প্রতিযোগীরা সহজে সে উৎস থেকে কাঁচামাল পাবে না। একইভাবে, যদি পরিবেশক বা দোকানদারদের সঙ্গে একচেটিয়া ডিল করা হয়, তাহলে তারা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডের পণ্য তুলবে না। এর ফলে নতুন কোম্পানিকে নতুন ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল গড়ে তুলতে হয়, যার জন্য সময়, খরচ এবং নেটওয়ার্কিং লাগে।
“প্রাণ-আরএফএল” গ্রুপ দেশের অন্যতম বড় কনজ্যুমার প্রোডাক্ট কোম্পানি হিসেবে বহু পরিবেশক ও রিটেইল চেইনের সাথে একচেটিয়া সরবরাহ চুক্তি করে রেখেছে। ফলে নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর দোকানে শুধু প্রাণের পণ্যই দেখা যায়। নতুন কোনো কোম্পানি সেই বাজারে প্রবেশ করতে চাইলে, তাদের বিকল্প ডিলার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হয়, যা বেশ কঠিন এবং ব্যয়বহুল।
১০। সাবসিডি ও মূল্যে প্রতিযোগিতা
একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা অনেক সময় নতুন প্রতিযোগীদের ঠেকাতে মূল্যে আগ্রাসী কৌশল গ্রহণ করে। তারা হয়তো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পণ্য কম দামে বিক্রি করে, ডিসকাউন্ট অফার চালু করে অথবা গ্রাহক ধরে রাখতে সাবসিডি দেয়। নতুন কোম্পানিগুলোর পক্ষে এই ধরনের মূল্যে প্রতিযোগিতা করা প্রায় অসম্ভব, কারণ তাদের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হয় এবং তারা ক্ষতিতে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক শক্তি রাখে না। এইভাবে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে এবং নতুনদের প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দেয়।
“ওয়ালটন” ইলেকট্রনিক্স খাতে যেমন টিভি, ফ্রিজ, এসি প্রভৃতিতে বারবার মূল্য হ্রাস, এক্সচেঞ্জ অফার এবং ফ্রি ইনস্টলেশনের মাধ্যমে নতুন প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যেমন - তারা ঈদ বা নতুন বছরের সময় বড় ডিসকাউন্ট অফার চালু করে, যা নতুন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য অপ্রতিযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে করে ওয়ালটনের বাজারে আধিপত্য বজায় থাকে এবং নতুন ব্র্যান্ড বাজারে প্রবেশের আগেই থেমে যায়।
১১। নেটওয়ার্ক ইফেক্ট
নেটওয়ার্ক ইফেক্ট এমন একটি প্রভাব যেখানে একটি পণ্য বা সেবার কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা ব্যবহারকারীর সংখ্যার উপর নির্ভর করে। যত বেশি মানুষ কোনো একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, সেটি ততই মূল্যবান হয়ে ওঠে। এটি প্রবেশের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, কারণ নতুন কোম্পানি একই ধরনের সুবিধা দিতে পারলেও ব্যবহারকারীর ঘাটতির কারণে সেটি কার্যকর হয় না। বিশেষ করে প্রযুক্তিনির্ভর বা ফিনটেক পণ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
“বিকাশ” বাংলাদেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস খাতে একমাত্র প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এমন নেটওয়ার্ক ইফেক্ট তৈরি করেছে, যেখানে প্রায় সব দোকান, অনলাইন ব্যবসা ও গ্রাহক বিকাশ ব্যবহার করে। ফলে একজন গ্রাহকের বিকাশ ব্যবহার করার প্রণোদনা তৈরি হয় কেবল অন্যরা সেটি ব্যবহার করে বলেই। নতুন প্ল্যাটফর্ম যেমন “উপায়” বা “নগদ” তাদের ইউজার বেইজ বাড়াতে গিয়ে এই নেটওয়ার্ক ইফেক্টের অভাবে পিছিয়ে পড়ে।
পরিসংহার
একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার জন্য বাজারে প্রবেশের বাধাগুলো কেবল প্রতিযোগিতা ঠেকানোর উপায় নয়, বরং টেকসই মার্কেট লিডারশিপ ধরে রাখার কৌশল। বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে, ব্র্যান্ড ভ্যালু, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, আইনি সুরক্ষা কিংবা সরবরাহ ব্যবস্থার মতো বাধাগুলো নতুন উদ্যোক্তাদের প্রবেশ জটিল করে তোলে। আপনি যদি এই বাধাগুলো সচেতনভাবে তৈরি ও বজায় রাখতে পারেন, তাহলে আপনার ব্যবসা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে এবং আপনি প্রতিযোগিতার আগেই প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
- https://blog.hubspot.com/sales/barriers-to-entry
Next to read
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)


সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)

ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)

সাবস্ক্রিপশন মডেল (Subscription Model)

মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)

রেড ওশান এবং ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি (Red Ocean & Blue Ocean Strategy with Example

এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)

অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)

World Trade Organization (WTO) Agreements
