লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)

লোগো হল একটি গ্রাফিক্স মার্ক বা প্রতীক। কোনো কিছুর প্রতীকী অর্থে লোগো ব্যবহার করা হয়। লোগোর প্রকারভেদ ৫/৬ প্রকার থেকে ১১ প্রকার হতে পারে। কোন শিল্পী যেই প্রকারভেদ ৫ বলেছে তো অন্য কোন শিল্পী এই সিরিজকে আরও প্রস্থ ও বিশ্লেষণ করে ১১ প্রকারে ভাগ করেছেন।
Key Points
- লেটারমার্ক/ মনোগ্রাম লোগো: সাধারণত টাইপগ্রাফি ভিত্তিক হয় এবং কোম্পানির নামের প্রথম অক্ষরগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয়ে থাকে
- সিংগেল লেটার লোগো/লেটারফর্ম লোগো: একটা অক্ষর দিয়েই এই লোগোর ডিজাইন করা হয়
- ওয়ার্ডমার্ক/ লোগোটাইপ লোগো: কোম্পানির পুরো নামটাই লোগোর মাঝে রাখা হয়
- পিকটোরিয়াল/ ব্র্যান্ড মার্ক/ লোগো: সিম্বল কোম্পানি বা ব্র্যান্ডকে উপস্থাপন করতে যখন কোন আইকন, সিম্বল বা গ্রাফিক্স লোগো ব্যবহার করা হয়
- ম্যাসকট লোগো: একটা ইলাস্ট্রেশন বা ক্যারেক্টারের উপর ফোকাস করে যখন কোন লোগো তৈরি করা হয়
- অ্যাবস্ট্র্যাক্ট লোগো মার্কস: এই লোগো ডিজাইনে সরাসরি কোন প্রকার ডিজাইন (সিম্বল/ ছবি/ আইকন) ব্যবহার না করে সাধারণত জিয়োম্যাট্রিক বা ধারনাগত অন্য কোন অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ডিজাইন বা সিম্বল ব্যবহার করা হয়।
- কম্বিনেশন মার্কস লোগো: এই লোগো ফরমেটে একাধিক স্টাইলের লোগো একসাথে ব্যবহার করা হয়
- এমব্লেম লোগো: এমব্লেম লোগো তৈরিতে কোন সিম্বল/ আইকনের মাঝে টাইপোগ্রাফি ব্যবহার করে নাম/ স্লোগান লেখা থাকে
- স্প্ল্যাশ/ স্লাইম লোগো: এই লোগো ডিজাইনিং এ কিছু নির্দিষ্ট জিওম্যাট্রিকাল শেপ ব্যবহার না করে একটা কার্টুনিশ কন্টেক্স ধরে রাখা হয়
- ডায়নামিক মার্কস লোগো: লোগোর ডিজাইন ইন্টারনেট/ ব্র্যান্ডিং এর উপর নির্ভর করে সবসময় পরিবর্তন করা হয়
- কনটোর্ড ওয়ার্ডস লোগো: কনটোর্ড ওয়ার্ডস লোগোতে ব্র্যান্ড/ কোম্পানির নাম একটা জিয়োম্যাট্রিক শেপের মাঝে আবদ্ধ থাকে।
লোগো কি (What is Logo):
লোগো হল একটি গ্রাফিক্স মার্ক বা প্রতীক, যা কোন কিছুর পরিচয় বহন করে এবং প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। লোগো যে শুধু কোন ব্র্যান্ড বা কোম্পানির জন্য ব্যবহার করা হয় এমনটা না। কোন ধর্ম, জাতি বা সংস্কৃতির পরিচয় দিতেও ব্যবহার করা হতে পারে।
লোগো সাধারনত এমন ভাবে তৈরি হয় যেন, যাকে উদ্দেশ্য করে বানানো হয়েছে বা দেখান হচ্ছে সে কোন কিছু না পড়ে বা মনোযোগ না দিয়েও যেন সহজেই বুঝতে পারে কি দেখছে।
লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logo):
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে রাখা টুথপেস্ট থেকে শুরু করে, বাইরে গেলে দেখতে পাওয়া অনেক রকম এডভার্টাইজ থেকে, হাতে রাখা ফোন, ঘুমাতে যাওয়ার আগে চোখ থেকে খুলে রাখা চশমা, সব জায়গাতেই কোন না কোন লোগো আমরা প্রতি মুহুর্তে দেখছি। কিন্তু প্রতিটা লোগোর ডিজাইনের মাঝে কিছু ভিন্নতা আছে। আর প্রথম দেখায় লোগোকে একটা সাধারন সিম্বল মনে হতে পারে কিন্তু এর মাঝেও অনেক জটিল এবং অর্থগত অনেক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
আর্ট/ ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে কোন কিছুর প্রকারভেদ বললে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা দিয়ে হিসাব করা সম্ভব হয়না। কারন এক একজনের দৃষ্টিতে আর্ট/ ডিজাইনিং এক এক রকম। ঠিক একইভাবে লোগোর জন্য নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা বলা যায় না। এই সংখ্যা ৫/৬ প্রকার থেকে ১১ প্রকার হতে পারে। কোন আর্টিস্ট যেই প্রকারভেদ ৫ বলেছে তো অন্য কোন আর্টিস্ট এই সিরিজকে আরও প্রস্থ ও বিশ্লেষণ করে ১১ প্রকারে ভাগ করেছেন।
কিছু উল্লেখযোগ্য লোগো হলোঃ
লেটারমার্ক/ মনোগ্রাম লোগো (Lettermark/ Monogram Logos):
এই লোগোগুলো সাধারণত টাইপগ্রাফি ভিত্তিক হয় এবং কোম্পানির নামের প্রথম অক্ষরগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয়ে থাকে, এজন্য এটা মনোগ্রাম লোগো নামেও পরিচিত। যেমনঃ
- HBO (Home Box Office Inc.)
- CNN (Cable News Network, Inc)
- HP (Hewlett-Packard)
- NASA (National Aeronautics and Space Administration)
- IBM (International Business Machines Corporation)
- BMW (Bayerische Motoren Werke)
- PwC (PricewaterhouseCoopers)
উদাহরণঃ
CNN এর কথা ধরলে এই লোগো “Cable News Network” নিউজ চ্যানেলের নামের প্রথম অক্ষরগুলো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
লোগোটির ডিজাইনে পুরোপুরি একটি কাস্টম বোল্ড টাইপগ্রাফির উপর নির্ভর করা হয়েছে।
সিংগেল লেটার লোগো/লেটারফর্ম লোগো (Single Letter Logo/ Letterform Logo):
লেটারফর্ম হলো মনোগ্রাম বা লেটার মার্কস এর ছোট ভার্সন। একটা অক্ষর দিয়েই এই লোগোর ডিজাইন করা হয়।
যেমনঃ
- McDonald's এর M
- Netflix এর N
- Unilever এর U
- Yahoo এর Y
- WordPress এর W
উদাহরনঃ
NETFLIX এর লোগোতে অনেক পরিবর্তন হতে হতে বর্তমানে সিঙ্গেল লেটারফর্মে এসেছে। বেসিক লোগোতে দেখা যায়, একটা কালো আর্কের (Arc) মাঝে আয়তাকার ও দুইটা লাল রঙের শেড ব্যবহার করে বানানো N ।
ওয়ার্ডমার্ক/ লোগোটাইপ (Wordmark or Logotype):
এই লোগো স্টাইল অনেকটা লেটারমার্ক/ মনোগ্রামের মতোই হয়ে থাকে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে এখানে কোম্পানির পুরো নামটাই লোগোর মাঝে রাখা হয়। কোন প্রকার ভারি গ্রাফিক্স, আলাদা কোন সিম্বল বা অর্থ ব্যবহার না করে ইউনিক কিছু ফন্ট আর স্টাইল ব্যবহার করা হয় এই লোগোগুলোয়।
যেমনঃ
- Google,
- VISA,
- Coca-Cola,
- Pinterest,
- MicroSoft,
- Canon,
- Facebook,
- Disney
উদাহরণঃ
VISA এর লোগোতে সাধারন ওয়ার্ডমার্ক ব্যবহার হয়েছে আর একটু ইউনিক করার জন্য ওয়ার্ডমার্কে হালকা ইটালিক টাইপফেস স্টাইল ব্যবহার করা হয়েছে আর এটা V এর উপরে বামকোণায় আছে।
পিকটোরিয়াল/ ব্র্যান্ড মার্ক/ লোগো সিম্বল (Pictorial/ Brand Mark/ Logo Symbol):
কোম্পানি বা ব্র্যান্ডকে উপস্থাপন করতে যখন কোন আইকন, সিম্বল বা গ্রাফিক্স লোগো ব্যবহার করা হয় তখন তাকে পিকটোরিয়াল লোগো বা ব্র্যান্ড মার্ক বলে।
যেমনঃ
- Twitter এর Blue Bird
- Apple এর Bitten Apple
- Snapchat এর Ghost
- Target এর Red-circle
- Nike এর Swoosh
- WWF এর Panda
উদাহরণঃ
পিকটোরিয়াল লোগোর ব্যবহারের উদাহরণ দিলে প্রথমেই আসবে APPLE এর নাম। অনেক রকমের রঙের পার্থক্য থাকলেও বেসিক লোগোতে দেখা যায় একটি “Bitten Apple” যা পিকটোরিয়াল লোগো হিসেবে টেকনোলজির দুনিয়ায় অনেক জনপ্রিয়।
ম্যাসকট লোগো (Mascot Logo):
একটা ইলাস্ট্রেশন বা ক্যারেক্টারের উপর ফোকাস করে যখন কোন লোগো তৈরি করা হয় তখন তাকে ম্যাসকট লোগো বলে।
যেমনঃ
- Kool-Aid Man
- KFC’s Colonel
- Planters Mr Peanut
- Pillsbury Doughboy
- Starbucks
উদাহরণঃ
KFC এর লোগো ম্যাসকট লোগো হিসেবে অনেক জনপ্রিয় আর KFC এর ফাউন্ডার Colonel Sanders কে এই লোগোর মাঝে ম্যাসকট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
অ্যাবস্ট্র্যাক্ট লোগো মার্কস (Abstract Logo Marks):
এই লোগো ডিজাইনে সরাসরি কোন প্রকার ডিজাইন (সিম্বল/ ছবি/ আইকন) ব্যবহার না করে সাধারণত জিয়োম্যাট্রিক বা ধারনাগত অন্য কোন অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ডিজাইন বা সিম্বল ব্যবহার করা হয়। অ্যাবস্ট্র্যাক্ট লোগোকে পিকটোরিয়াল লোগো এর একটা পার্ট হিসেবে দেখা হয়।
যেমনঃ
- Nike এর Swoosh
- Pepsi এর Divided Circle
- Adidas এর Flower
- Chanel এর Double C
উদাহরনঃ
Adidas এর “Trefoil” বা “3 Stripes” লোগোটি অ্যাবস্ট্র্যাক্ট লোগো এর অন্যতম উদাহরন যার মাঝে ৩টি সমান্তরাল রেখা Y অক্ষ থেকে বামদিকে কিছুটা ঝুকিয়ে রেখে ব্যবহার করা হয়েছে।
কম্বিনেশন মার্কস লোগো (Combination Marks Logo):
এই লোগো ফরমেটে একাধিক স্টাইলের লোগো একসাথে ব্যবহার করা হয়। ডিজাইনে ওয়ার্ডমার্কের সাথে সাধারনত পিকটোরিয়াল/ ম্যাসকট/ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট মার্কের মাধ্যমে পাশাপাশি, উপরনিচে, একসাথে, অথবা একটা ছবির সাথে কম্বিনেশন করে থাকে।
যেমনঃ
- Lacoste
- Toblerone
- TacoBell
- Doritos
- MasterCard
- BurgerKing
উদাহরণঃ
Burger King এর লোগোতে একটা বার্গারের শেপের সাথে কোম্পানির নাম ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ পিকটোরিয়াল আর ওয়ার্ডমার্কের একসাথে ব্যবহার, যার জন্য একে কম্বিনেশন মার্ক লোগো বলা হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এই লোগোকে এমব্লেম হিসেবেও ধরা হয়ে থাকে।
এমব্লেম লোগো (Emblem Logo):
ব্যাজ/ সিল/ ক্রেস্ট এ যেমন কোন সিম্বল/ আইকনের মাঝে একটা টাইপোগ্রাফি ব্যবহার করে কিছু লেখা থাকে তেমনি ভাবে এমব্লেম লোগো তৈরিতে কোন সিম্বল/ আইকনের মাঝে টাইপোগ্রাফি ব্যবহার করে নাম/ স্লোগান লেখা থাকে।
যেমনঃ
- Stella Artois
- Perrier
- Harvard
উদাহরণঃ
WB এর লোগোতে দেখা যায় একটা শিল্ডের মাঝে WB কাস্টম ফন্টে লেখা আর তার উপর রিবনের মতো একটা শেপের মাঝে WB এর পুর্নরূপ।
স্প্ল্যাশ/ স্লাইম লোগো (Splash/ Slime Logo):
এই লোগো ডিজাইনিং এ কিছু নির্দিষ্ট জিওম্যাট্রিকাল শেপ ব্যবহার না করে একটা কার্টুনিশ কন্টেক্স ধরে রাখা হয় এবং নির্দিষ্ট কোন ফরম্যাটের টাইপফেস/ সিম্বল না রেখে একটা স্লাইম ফরম্যাট দেওয়া হয়।
যেমনঃ
- Nickelodeon
উদাহরণঃ
স্লাইম বা স্প্ল্যাশ লোগোতে উদাহরন হিসেবে Nickelodeon এর নাম সবার আগে থাকবে এর জনপ্রিয়তা আর ইউনিক স্টাইলের জন্য। লোগোতে Handwritten টাইপফেসের ব্যাকগ্রাউন্ডে Orange কালারের একটা মসৃণ স্লাইম ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
ডায়নামিক মার্কস লোগো (Dynamic Marks Logo):
এই লোগো যেই কন্টেক্সটে ব্যবহার করা হয় সেই কন্টেক্সট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়, মানে একই ফন্ট-রং-টেক্সটের কম্বিনেশনে লোগো না রেখে, লোগোর ডিজাইন ইন্টারনেট/ ব্র্যান্ডিং এর উপর নির্ভর করে সবসময় পরিবর্তন করা হয়।
যেমনঃ
- AOL
- Nickelodeon
- MIT Media Labs
উদাহরণঃ
MIT Media Lab এর লোগোতে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি শেপ ছিলো আর তার মাঝে আরও ১২ রকমের কালার কম্বিনেশন।
কনটোর্ড ওয়ার্ডস লোগো/ শেপের মধ্যে ফন্ট লোগো (Contoured Words Logo/ Font Inside a Shape Logo):
কনটোর্ড ওয়ার্ডস লোগোতে ব্র্যান্ড/ কোম্পানির নাম একটা জিয়োম্যাট্রিক শেপের মাঝে আবদ্ধ থাকে। জিয়োম্যাট্রিক শেপের সুবিধাসহ ওয়ার্ডমার্ক লোগো এবং লোগোটাইপের সুন্দর বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
যেমনঃ
- Levi’s
- Samsung
- BBC
- IKEA
উদাহরণঃ
কাস্টম ফন্টে লেখা Samsung লোগোর মাঝে একটা বেসিক ওভাল শেপের মাঝে আবদ্ধ থাকে।
উপসংহার (Conclusion):
লোগো যেহেতু একটি কোম্পানি/ ব্র্যান্ডের একটি ভিজুয়াল আইডেন্টিফায়ার হিসেবে কাজ করে, তাই এর গুরুত্বের কথা আলাদা ভাবে না বললেও চলে। আর এইজন্য লোগো নিয়ে কার্পন্য করা আর কোন প্রকার বিভ্রান্তিও রাখা উচিত না। কোম্পানি/ ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট/ সার্ভিসের সাথে যেরকম রঙ- ফন্ট- আইকন যায়, এমনকি একটা সাদা দাগও হতে পারে কোম্পানির জন্য একটা পরিচয়। শুধু এই বিষয় মনে রাখতে হবে টার্গেট কাস্টমারদেরকে প্রভাবিত করার জন্যই লোগো ব্যবহার করা হয় আর এতে এমন কোন স্টাইল ব্যবহার করা উচিত না যেন তা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
- https://www.tailorbrands.com/logo-maker/types-of-logos
- https://www.ebaqdesign.com/blog/types-of-logos
- https://www.logomyface.com/types-of-logos-and-how-to-use-them/
- https://www.designhill.com/design-blog/types-of-logos-and-how-to-use-them/
- https://99designs.com/blog/tips/types-of-logos/
- https://www.moirae.co.uk/blog/4-basic-types-of-logo-and-how-to-use-them/#:~:text=A%20lettermark%20logo%20is%20typography,CNN%E2%80%A6%20you%20get%20the%20idea!&text=It's%20always%20nice%20when%20the%20monogram%20spells%20a%20relevant%20word%2C%20too!
Next to read
শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)


রিব্র্যান্ডিং (Rebranding)

সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?

বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ

‘SWOT’ Analysis

ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসা

ডিমার্কেটিং (DeMarketing)

বিক্রয় বৃদ্ধি করার ৬টি নীতি

সেলস টার্গেট অর্জনের জন্য ১০টি বডি ল্যাঙ্গুয়েজ টিপস
