আমাদের অর্থ নিয়ন্ত্রণ করে কে? (Who Controls All of Our Money?)

406
article image

সহজ কথা বললে, দেশের নোট ইস্যু ও মনিটারি পলিসি তৈরি করার দায়িত্ব যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর অর্পিত থাকে, তাই বলা যায় যে আমাদের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব’ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতেই থাকে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু নোট ইস্যু ও মনিটারি পলিসি তৈরি করার মাধ্যমেই এই কাজটি করে না। এর পাশাপাশি তারা আরো কিছু ইকোনমিক ফ্যাক্টর ব্যবহার করে, যেমন - সরকার ও রাজস্ব-নীতি, কমার্শিয়াল ব্যাংক ইত্যাদি। আবার বিশ্বায়নের ফলে বর্তমান সময়ে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন’ও দেশের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।

Key Points

  • অর্থনীতিতে কি পরিমাণ অর্থ সার্কুলেট হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ব্যষ্টিক অর্থনীতি (মাইক্রোইকোনমিক) ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে (ম্যাক্রোইকোনমিক) প্রভাবিত করে।
  • স্পেসিফিক কোনো ইকোনমিক অবজেক্টিভ বা মনিটারি পলিসিকে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে’ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • প্রথমদিকে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মনিটারি পলিসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অসামান্য সাফল্য অর্জন করে।
  • উনবিংশ শতক এবং বিংশ শতকে অর্থনীতিতে অর্থের পরিমাণকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে স্বর্ণের বিপরীতে বেধে রাখার চেষ্টা করা হয়, যাকে আমরা দি গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে জানি।
  • 

ভূমিকা

একটি দেশের অর্থনীতিকে যদি ঐ দেশের শরীর হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই সেই শরীরের হৃদপিন্ড হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। হৃদপিন্ড যেমন প্রতিনিয়ত সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে শরীরকে জীবিত রাখতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিনিয়ত অর্থনীতিতে মুদ্রা সাপ্লাই করে অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং বড় হতে সাহায্য করে। কখনো অর্থনীতিতে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, আবার কখনো অনেক কম। কখন কি পরিমাণ টাকা সাপ্লাই করতে হবে তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর।

আমি, আপনি প্রতিনিয়ত যেই টাকা ব্যবহার করে চলেছি, তার সাপ্লাই যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে, তাই এই টাকার নিয়ন্ত্রণ’ও অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতেই রয়েছে। তাই, বলা যায় যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সকলের অর্থ বা টাকা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার সাথে একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত নয়, এর সাথে রয়েছে আরো বেশ কিছু ফ্যাক্টর যেমন - ফিসকাল পলিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক ফ্যাক্টর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেনো আমাদের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করে?

অর্থনীতিতে কি পরিমাণ অর্থ সার্কুলেট হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ব্যষ্টিক অর্থনীতি (মাইক্রোইকোনমিক) ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে(ম্যাক্রোইকোনমিক) প্রভাবিত করে। মাইক্রো-লেভেলে অর্থনীতিতে বেশি অর্থ থাকার মানে হচ্ছে এই যে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের হাতে খরচ করার জন্য বেশি অর্থ থাকছে। সাধারণ মানুষ এই পরিস্থিতিতে খুব সহজেই ব্যাক্তিগত প্রয়োজন ও সম্পদ ক্রয়ের উদ্দেশ্য ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। আবার কোম্পানীগুলোও এই পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যবসায় সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে লোন কালেক্ট করতে পারে।

আবার ম্যাক্রো-লেভেলে অর্থনীতিতে বেশি অর্থ থাকলে তা জিডিপি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সুদের হার ও বেকারত্বের হারকে প্রভাবিত করে। এগুলোর ভালো ও খারাপ দিক থাকলেও, ইকোনমিক সাইকেল অনুযায়ী খুব শীঘ্রই এমন একটি সময় চলে আসে, যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে যায় অথবা অর্থনিতিতে অনেক বেশি পরিমাণে ঋণ তৈরি হয়ে যায়। তাই এক না এক সময় তা ক্র্যাশ করতে বাধ্য।

এই কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রা সরবরাহের জন্য এমন একটি পয়েন্ট খুজে বের করতে হয় যেখানে, ইকোনমিক ক্র্যাশের সম্ভাবনা যতোটা সম্ভব কমিয়ে রাখা সম্ভব হয় এবং অর্থনীতিকে যতোদিন সম্ভব ভালোভাবে চলতে দেয়া যায়। আবার স্পেসিফিক কোনো ইকোনমিক অবজেক্টিভ বা মনিটারি পলিসিকে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে’ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ

মানবসভ্যতার ইতিহাসে অর্থ বেশ রোমাঞ্চকর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। প্রথমে বিনিময় প্রথা দিয়ে শুরু, তারপর কোনো স্পেসিফিক পণ্যকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার এবং অতঃপর মানুষ বুঝতে পারে যে যেকোনো একটি স্ট্যান্ডার্ড মিডিয়াম অফ এক্সচেঞ্জ প্রয়োজন। বিনিময় প্রথার সময় অর্থের কোনো একক নিয়ন্ত্রক ছিল না, তবে বিবর্তনের ধারায় অর্থ ধীরে ধীরে সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, প্রথমে রাজাদের হাতে এবং তারপর সরকারের হাতে।

অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টার ইতিহাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগমত একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। প্রথমদিকে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মনিটারি পলিসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অসামান্য সাফল্য অর্জন করে ফেলে। তারপর ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে প্রতিটি দেশের অর্থের নিয়ন্ত্রণ উক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে চলে যায়। বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মুল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মুদ্রার সরবরাহ ও সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে।

উনবিংশ শতক এবং বিংশ শতকে অর্থনীতিতে অর্থের পরিমাণকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে স্বর্ণের বিপরীতে বেধে রাখার চেষ্টা করা হয়, যাকে আমরা দি গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে জানি। তবে এতে করে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা গেলেও তা মনিটারি পলিসিতে নমনীয়তার পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দেয়। দেখা যাচ্ছিল যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ভালো কোনো উপায় আসলেও, তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না শুধু গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের জন্য। ফলস্বরুপ, বিংশ শতকের মাঝের দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে এবং তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হাতে আরো নমনীয়তা এনে দেয়। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো খুব দ্রুত নিজেদের নীতি পরিবর্তন করে অর্থনৈতিক সমস্যাকে মোকাবিলা করার সুযোগ পেয়ে যায়।

কীভাবে আমাদের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়?

আমরা ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছি যে কেনো আমাদের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কি। এবার আমরা জানার চেষ্টা করবো যে কিভাবে আমাদের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেহেতু অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে একাধিক ফ্যাক্টর জড়িত, তাই আমরা এক এক করে প্রতিটি ফ্যাক্টর সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক

যেকোনো দেশের মুদ্রাকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সংগঠন হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের প্রধান কাজগুলো হচ্ছে মুদ্রার সরবরাহ নিশ্চিত করা, সুদের হারকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করে এবং ব্যাংকিং সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মুদ্রার সরবরাহ ও সুদের হারকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা। মূলত খোলাবাজারে সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় ও রিজার্ভের হার হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিতে মুদ্রার সার্কুলেশন নিয়ন্ত্রণ করে। আবার সুদের হার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনৈতিক লেনদেন হ্রাস-বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে।

মূলত ব্যাংক রেট বৃদ্ধি করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংককে বেশি সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করে। এতে করে অন্যান্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে আরো কম পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে। আবার ব্যাংকগুলো যেহেতু কম পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করতে পারছে, তাই তারা সাধারণ জনগণকে বেশি সুদের বিনিময়ে কম পরিমাণ ঋণ অফার করে। এতে করে সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হয়। আবার যখন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ব্যাংক রেট কমিয়ে ফেলে। ফলস্বরুপ, তখন আবার সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সরকার ও রাজস্ব-নীতি

অর্থ তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করার কাজে সরকার’ও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজ করে, সেখানে সরকার তার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে কর গ্রহণ ও অন্যান্য টুলের মাধ্যমে অর্থের প্রাপ্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। আবার জাল নোট এবং অবৈধ লেনদেন ঠেকানোর উদ্দেশ্যে’ও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

সরকার রাজস্ব-নীতি তৈরি ও বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে পাবলিক খরচ এবং ট্যাক্সেশন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মূলত করের হার ও সরকারি খরচ হ্রাস-বৃদ্ধি করার মাধ্যমে জনগণের হাতে দিনশেষে খরচ করার জন্য কি পরিমাণ অর্থ থাকছে তা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। রাজস্ব-নীতি যদি সম্প্রসারণমূলক হয়, তাহলে সরকার তার খরচ বৃদ্ধি করে এবং করের হার কমিয়ে আনে। আবার, রাজস্ব-নীতি যদি সংকোচনমূলক হয়, তাহলে সরকার তার খরচ কমিয়ে আনে এবং করের হার বৃদ্ধি করে। এতে করে অর্থনৈতিক লেনদেন ও প্রবৃদ্ধি হ্রাস-বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। কখন কোন রাজস্ব-নীতি অনুসরণ করা হবে তা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের বিভিন্ন ফ্যাক্টর বিশ্লেষণ করে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করে।

এখন, প্রশ্ন আসতে পারে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর সরকারের মাঝে আসলে সম্পর্ক কেমন? যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে মুদ্রানীতি তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তবে তার লক্ষ্য সবসময়ই সরকার কর্তৃক তৈরি বৃহৎ অর্থনৈতিক অভিক্ষার সাথে অ্যালাইন করা থাকে। এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমেই এনশিওর করা হয় যে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব-নীতি একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখছে। এতে করে উভয় নীতির পদক্ষেপ যেমনই হোক না কেনো, মূল অবজেক্টিভ থাকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জন।

কমার্শিয়াল ব্যাংক

আধুনিক অর্থনৈতিক জগতে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ঋণগ্রহিতা ও ঋণদাতাদের মাঝে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করে। একাধিক আর্থিক সেবা, যেমন - সেভিংস ও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, লোন ও বিনিয়োগ সেবা ইত্যাদি প্রদান করার মাধ্যমে তারা অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহে সাহায্য করে। আর কমার্শিয়াল ব্যাংকের জন্য সবচেয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে আসে ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ সিস্টেম।

এই সিস্টেমে, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ডিপোজিটরদের টাকার একটি নির্দিষ্ট অংশ (সাধারণত ২০%) বিভিন্ন প্রয়োজনে রিজার্ভ হিসেবে জমা রেখে বাকি অংশ ঋণ হিসেবে ঋণগ্রহিতাদের দিয়ে দেয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাধারণ জনগণ তা বিভিন্ন খাতে খরচ করে এবং ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করে। ফলস্বরুপ, অর্থনৈতিক লেনদেন বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনীতি বড় হতে থাকে। বলা যায় যে ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ সিস্টেম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।

আর কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো ঠিক কি পরিমাণ ঋণ সাধারণ জনগণকে দিতে পারবে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেকশনেই তুলে ধরেছি। আর সাধারণ জনগণ আল্টিমেটলি কি পরিমাণ টাকা খরচ করার সুযোগ পাচ্ছে তার সাথে যেহেতু কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, তাই বলা যায় যে আমাদের অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো’ও জড়িত।

বিশ্বায়নের ভূমিকা

বিশ্বায়নের কারণে অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন যেন আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির মাঝে আন্তঃনির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার এতে করে অর্থনীতিগুলোতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা’ও চলে এসেছে, ঠিক যেমনটি হয়েছিল ২০০৭-০৮’র অর্থনৈতিক মন্দার সময়।

আবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংক এখন বিভিন্ন দেশকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করছে। যেসব দেশ বাণিজ্য ঘাটতিজনিত সমস্যা ভুগছে, তাদের মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সহযোগিতা করে। আবার বিশ্বব্যাংক সকল দেশেই দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নমূলত প্রজেক্টগুলোর জন্য তহবিল প্রদান করে। তবে এই সহযোগিতা প্রদান করার পাশাপাশি তারা দেশগুলোর উপর মুদ্রানীতি ও রাজস্ব-নীতিজনিত বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে দেয়। এতে করে তারা পরোক্ষভাবে জনগণের ক্রয়ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমালোচনা

যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তারপরেও তারা বেশ কিছু কারণে সমালোচনার সম্মুখীন হয়। অনেকেই মনে করেন যে সুদের হার কমিয়ে ফেলার কারণে তা দ্বারা সাধারণ জনগণের আসলে যতোতুকু লাভ হয়, তার চেয়ে বেশি লাভ হয় বিত্তশালীদের। ফলে সমাজে আয়ের অসমতা বৃদ্ধি পায়। আবার অনেকেই মনে করেন যে নীতি নির্ধারনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বচ্ছতার বেশ অভাব রয়েছে।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জোরালো সমালোচনামূলক বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। অনেকেই মনে করেন যে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে গ্রহণ করে নেয়ার মাধ্যমে অর্থের প্রাপ্তির প্রতি সকল নিয়ন্ত্রণ দূর করে ফেলা সম্ভব। এই সম্ভাবনা কতোটা সত্য, তা নিয়েও অনেক মতপার্থক্য থাকলেও, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে রেগুলেট করা এবং এই বিষয়ে যথার্থ নীতি তৈরি করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য বর্তমানে বেশ চ্যালেঞ্জিং।

আবার এখন যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে’ও অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাই অনেকেই মনে করেন যে এর মাধ্যমে দেশগুলোর মাঝে’ও আয়ের অসমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে বিশ্বের অল্প কিছু দেশের মাঝে বিশ্বের বেশিরভাগ সম্পদ পুঞ্জিভূত হবে।

পরিসংহার

পরিশেষে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাজ কি ভুল নাকি সঠিক, তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে যে একটি দেশের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রাচীন যুগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের না থাকার কারণে অর্থকে রেগুলেট করা ছিল বেশ কঠিন। তবে বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অর্থকে রেগুলেট করার ব্যাপারে বেশ ভালো ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর তারা কি কি উপায়ে এই কাজগুলো করছে এবং কেনো করছে তা আশা করি আজকের লেখা পড়ে ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছে।

  • https://www.investopedia.com/articles/investing/053115/how-central-banks-control-supply-money.asp
  • https://medium.com/@prashanthvenkataraman/who-controls-all-our-money-7d34aa6ace90
  • https://steemit.com/money/@shrea3233/who-controls-all-our-money
  • https://www.investopedia.com/articles/03/050703.asp
  • https://www.investopedia.com/terms/m/monetarypolicy.asp
  • https://positivemoney.org/2014/03/money-comes-matters/
Next to read
Canvas & Methods
লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)
লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)

লিন ক্যানভাস মডেল মূলত একটি এক পৃষ্ঠার নয়টি ব্লকের মাধ্যমে তৈরি করা সমস্যা-সমাধান ভিত্তিক মডেল যা একটি আইডিয়াকে ব্যবসায়ে রুপান্তরিত করতে কিংবা স্টার্টআপ এর প্রসারে সহায়তা করে। এই মডেলটি মূলত স্টার্টআপ লেভেলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুগান্তকারী মডেল হিসেবে কাজ করে যেকারণে অনেক বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও তাদের শুরুর দিকে এই মডেলটি ব্যবহার করে নানাভাবে উপকৃত হয়েছে।

লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)
Logo
লোগোর প্রকারভেদ (Types of Logos)
লোগো ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা (Pros and Cons of Logo Usage)
Logo
লোগো ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা (Pros and Cons of Logo Usage)
CSR বা Corporate Social Responsibility কী?
Business
CSR বা Corporate Social Responsibility কী?
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
Sales
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
Investment
বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
Investment
এঞ্জেল বিনিয়োগ কি? এবং কিভাবে কাজ করে (What is angel investing & how does it work?)
PESTLE বিশ্লেষণ
Analysis
PESTLE বিশ্লেষণ
MTNUT কাটিয়ে কিভাবে একটি সেলস ডিল ক্লোজ করবেন?
Sales
MTNUT কাটিয়ে কিভাবে একটি সেলস ডিল ক্লোজ করবেন?
ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কী? সংজ্ঞা, মডেল এবং উদাহরণ
Branding
ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কী? সংজ্ঞা, মডেল এবং উদাহরণ