ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)

234
article image

ফ্রিমিয়াম মডেলে মূলত গ্রাহকদের মূল সেবাটির সীমিত কিছু ফিচার বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। সেবাটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন গ্রাহকদের বিনামূল্যে ফিচারগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সেবাটির প্রতি আস্থা এবং নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়।

Key Points

  • ফ্রি (Free) এবং প্রিমিয়াম (Premium) এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে ফ্রিমিয়াম (Freemium) নামকরন করা হয়
  • ফ্রিমিয়াম মডেলে মূলত গ্রাহকদের মূল সেবাটির সীমিত কিছু ফিচার বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়
  • ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান গুলো মূল আয়টি মূলত পেইড সাবস্ক্রাইবার বা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন আপগ্রেড ফিচার ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে করে থাকে
  • ফ্রিমিয়াম মডেল এ কোনো সফটওয়্যার, গেমস, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের ব্যসিক ফিচারগুলো একদম বিনামূল্যে গ্রাহকদেরকে ব্যবহার করতে দেয়। এবং পরবর্তীতে তাঁরা যখন বিভিন্ন আপডেট ফিচার গুলো নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করে, তাঁর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান গুলো মূল আয়টি করে থাকে।
  • স্কাইপি (Skype), লিংকডইন (Linked In) থেকে শুরু করে স্পটিফাই (Spotify) এর মতো প্রতিষ্ঠান গুলো ও এই মডেল ব্যবহার করে আয় করছে

ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)

বর্তমানে ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কতৃক ব্যবহ্রত অন্যতম জনপ্রিয় ও সমাদৃত একটি বিজনেস মডেল হচ্ছে ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)। এই মডেল কে ইন্টারনেটের বিজনেস মডেল নামেও অভিহিত করা হয়।

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষতার ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ইন্টারনেট কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিপণন, ব্যবস্থাপনার ধরন ও কৌশলেও বৈচিত্র‍্যতা আমরা দেখতে পাই।

ফ্রিমিয়াম মডেলে মূলত গ্রাহকদের মূল সেবাটির সীমিত কিছু ফিচার বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। সেবাটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন গ্রাহকদের বিনামূল্যে ফিচারগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সেবাটির প্রতি আস্থা এবং নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়।

পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশলে তাদেরকে বিভিন্ন আপগ্রেড বা উন্নত ফিচার গুলো ব্যবহারে উৎসাহী করা হয়। এবং এই ফিচার গুলো মূলত পেইড। অর্থাৎ এই আপগ্রেড ফিচার গুলো ব্যবহার করতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়।

গ্রাহকরা নিজেদের প্রয়োজনীয়তার তাগিদেই মূলত এই আপগ্রেড ফিচারগুলো ক্রয় করে থাকে। আর এখান থেকেই প্রতিষ্ঠান গুলোর আয় হয়ে থাকে। এভাবেই মূলত ফ্রিমিয়াম মডেল কাজ করে থাকে।



ফ্রিমিয়াম মডেল এ মূলত কোনো সফটওয়্যার, গেমস, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের ব্যসিক ফিচারগুলো একদম বিনামূল্যে গ্রাহকদেরকে ব্যবহার করতে দেয়। এবং পরবর্তীতে তাঁরা যখন বিভিন্ন আপডেট ফিচার গুলো নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করে, তাঁর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান গুলো মূল আয়টি করে থাকে।

ফ্রিমিয়াম মডেল সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ

১৯৮০ সালের দিকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফ্রিমিয়াম মডেল এর ব্যবহার শুরু করে। তবে এই মডেল এর নাম ফ্রিমিয়াম হিসেবে প্রচলন শুরু হয় ২০০৬ সালে। আমেরিকান ভিত্তিক ব্যবসায় গবেষণা (Business Research) প্রতিষ্ঠান আলাক্রা (Alacra) এর কর্মকর্তা জারিড লুকিন (Jarid Lukin) এই মডেলটি কে ফ্রিমিয়াম মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

ফ্রি (Free) এবং প্রিমিয়াম (Premium) এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে ফ্রিমিয়াম (Freemium) নামকরন করা হয়। এই নামকরণের সার্থকতা হলো এই মডেলের বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ এখানে প্রাথমিক সেবাটি গ্রাহকদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। অতঃপর অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ফিচার গুলো নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হয়।

আমরা ইতোপূর্বেই জেনেছি যে, ফ্রিমিয়াম মডেল মূলত ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সফটওয়্যার গুলোতে এই মডেলের ব্যবহার করে আসছে।

স্কাইপি (Skype), লিংকডইন (Linked In) থেকে শুরু করে স্পটিফাই (Spotify) এর মতো প্রতিষ্ঠান গুলো ও এই মডেল ব্যবহার করে আয় করছে। বিভিন্ন ফাইল ট্রান্সফার, ফাইল কনভারশনস, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন গুলো ও ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহার করছে।

ফ্রিমিয়াম মডেল এ মূলত কোনো সফটওয়্যার, গেমস, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের ব্যসিক ফিচারগুলো একদম বিনামূল্যে গ্রাহকদেরকে ব্যবহার করতে দেয়। এবং পরবর্তীতে তাঁরা যখন বিভিন্ন আপডেট ফিচার গুলো নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করে, তাঁর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান গুলো মূল আয়টি করে থাকে।

এক্ষেত্রে সেবা গ্রহণকারী মার্কেটটি অনেক বিস্তৃত হয়। গ্রাহক সংখ্যাও অনেক বিস্তর হয়। তবে আপগ্রেড ফিচারটি ব্যবহারকারীর সংখ্যা তাঁর ভিতর খুব সামান্য হয়। এবং এভাবেই ফ্রিমিয়াম মডেল মূলত কাজ করে থাকে।

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে সাফল্য পেতে করণীয়

কতিপয় বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকলেই খুব সহজেই এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহার করে সফল হতে পারে যে কোনো প্রতিষ্ঠান।

লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাঁদের সেবাটি যেন বেশি সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ যত বেশি সংখ্যক গ্রাহক সেবাটি ব্যবহার বা গ্রহণ করবে, তত বেশি সম্ভাবনা থাকবে আপগ্রেড ফিচার গুলো ব্যবহার করার। আর আমরা ইতোপূর্বেই জেনেছি যে, মূলত পেইড ফিচার গুলোর মাধ্যমেই এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় হয়ে থাকে।

তাই বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে সেবাটির প্রচারণা করতে হবে। এবং তাঁদের কাছে এই পণ্য বা সেবার বৈশিষ্ট্য, ব্যবহারে সুবিধা, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা চালাতে হবে। এক্ষেত্রে মার্কেট বা বাজার বিশ্লেষণ করে গ্রাহকদের চাহিদা, ধরন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। যাতে করে খুব দ্রুত সঠিক পদ্ধতিতে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের কাছে পৌছানো যায় এবং সেই অনুযায়ী প্রচারণা চালানো যায়। তাই বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন বা ফিল্ড ক্যাম্পেইন করে প্রচারণা চালাতে হবে।

কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহার করে তুলনামূলক বেশি সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। অর্থাৎ আপনার তৈরীকৃত সেবাটির উপযোগীতা কি এবং এর গ্রহণকারী কারা তা সুন্দরভাবে চিহ্নিত করতে হবে। তাই অত্যন্ত সুষ্পষ্ট এবং সুন্দরভাবে এ সব বিষয় সম্পর্কে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

এক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে একক ব্যক্তি হওয়ার দিকে ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এতে করে গ্রাহক সংখ্যাটাও যেমন বেশি হয়, তেমনি পেইড সাবস্ক্রিপশনও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর প্রতিষ্ঠান গুলো মূলত নানা দিক বিবেচনা করে কোনো একটি সেবা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিপরীতে কোনো ব্যক্তিকে খুব দ্রুতই সেবাটি গ্রহণে উৎসাহী করা যায়। পাশাপাশি ঐ ব্যক্তি যদি সেবাটি ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়, তবে তুলনামূলক দ্রুত সময়ে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।

তবে তাই বলে শুধু ব্যক্তি গ্রাহক কেন্দ্রিক হওয়া যাবে নাহ। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান দুধরনের গ্রাহক এর সম্বিলিত ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।

সেবা বা পণ্য

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে, সেই প্রতিষ্ঠান কি ধরনের পণ্য বা সেবা মানুষদের কাছে পৌছাচ্ছে তাঁর উপর। ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ও এ ঘটনাটির ব্যতিক্রম নয়।

মূলত সেবাটির গুণগত মান, উপকারীতা যেন প্রতিযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা বা পণ্যের চেয়ে তুলনামূলক ভাল হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি সেবা বা পণ্যটিকে এমনভাবে প্রস্তুত এবং উপস্থাপন করতে হবে যেন তা সহজেই গ্রাহককে আকৃষ্ট করে। এবং ধীরে ধীরে যেন ঐ সেবাটির প্রতি গ্রাহক আস্থা সষ্টি হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রাথমিক সেবাটির প্রতি গ্রাহক আস্থা এবং নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হলেই কেবল গ্রাহকরা আপগ্রেড এবং পেইড ফিচার গুলো ব্যবহারে উৎসাহী হবে। এবং যার মাধ্যমেই মূলত প্রধান আয় হয়ে থাকবে। আর পেইড ফিচারগুলোর ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে যেন, সেগুলোর মূল্য অনেক বেশি না হয়। বরং তা গ্রাহকের সাধ্যের মধ্যেই থাকে।

সর্বোপরি গ্রাহকরা যেন তুলনামূলক কম খরচে, সাশ্রয়ী মূল্যে ফিচার গুলো গ্রহণ করতে পারে সে ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আপনার সেবাটির ধরন বা মানে পরিবর্তন কিংবা নতুনত্ব আনতে হবে।

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারে সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনা

অপার সম্ভাবনার হাতছানির পাশাপাশি কিছুটা ঝুঁকিও কিন্তু এই ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারে রয়ে যায়।

বিনামূল্যে ব্যবহারকারী গ্রাহক

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান গুলো মূল আয়টি মূলত পেইড সাবস্ক্রাইবার বা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন আপগ্রেড ফিচার ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে করে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের সেবাটি গ্রহণকারী সব গ্রাহকই কিন্তু পেইড সাবস্ক্রিপশন করবে নাহ। কিংবা আপডেট বা আপগ্রেড ফিচার গুলো ক্রয় করবে নাহ।

বরং গ্রাহকদের একটা বিশাল অংশ বিনামূল্যের যে ফিচার গুলো আছে, শুধু সেগুলোরই ব্যবহার করবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই বিনামূল্যে সেবাটি গ্রহণকারীর সংখ্যা ৯৯ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তাই এই এত সংখ্যক গ্রাহককে বিভিন্ন ফিচার বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেওয়ার মতো আর্থিক এবং অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কেও প্রতিষ্ঠানটির সতর্ক থাকতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় করতে তুলনামূলক বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে। কারণ প্রাথমিক সেবাটি কিন্তু বিনামূল্যেই দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু পেইড সাবস্ক্রিপশন বা পেইড ফিচার গুলো বিক্রয়ের মাধ্যমেই আয় হয়ে থাকে। তাই গ্রাহকদের কাছে পেইড ফিচার গুলোর গ্রহণযোগ্যতা বা প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করতে হয়।

সেক্ষেত্রে গ্রাহক নির্ভরশীলতা তৈরী করে আপগ্রেড ফিচার গুলোর চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে তাঁদেরকে দিয়ে পেইড ফিচার গুলো ক্রয় করানোর মাধ্যমেই আয় হয়। যেহেতু এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অনেক সময়সাপেক্ষ এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার। তাই সেবার গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে একটি বিরাট সময় পর্যন্ত সেবা প্রদান করাও ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অন্যতম বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

সেবার মানে সামঞ্জস্য

পণ্য বা সেবাটির গুণগত মান ঠিকঠাক রেখে উপস্থাপন করাও অন্যতম বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে ফ্রি বা বিনামূল্যে প্রদানকারী সেবাটি এবং প্রিমিয়াম তথা আপগ্রেড সেবাটির মধ্যে পরস্পর সামঞ্জস্য রাখাটা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। বিনামূল্যে বা ফ্রি তে প্রদানকৃত সেবাটি যেন এমন না হয় যে, তা গ্রাহকের কাঙ্ক্ষিত সব চাহিদাই পূর্ণ করে।

তাহলে আপগ্রেড ফিচার গুলো অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের বিনিময়ে কেনার কোনো প্রয়োজনীয়তাই দেখা দিবে নাহ। যেহেতু প্রিমিয়াম বা আপগ্রেড ফিচার গুলো বিক্রয়ের মাধ্যমেই মূল আয়টি হবে। সেহেতু এক্ষেত্রে কিন্তু সম্পুর্ন ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে।

আবার তাই বলে মূল বা বিনামূল্যে প্রদানকারী সেবাটি এমনও হওয়া যাবে নাহ যে, যা গ্রাহক চাহিদা একেবারেই না মিটাতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রাহক মনে অসন্তোষ দেখা দিবে। তাই এই উভয় দিক সামঞ্জস্য রেখে ব্যবসা পরিচালনা করা তুলনামূলক শ্রম এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারের সুবিধা সমূহ

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে খুব সহজেই গ্রাহক পরিধি অনেক বিস্তৃত করা যায়। কারণ প্রাথমিক স্তরের অনেক সেবা বা সুবিধাদি একদম বিনামূল্যে হওয়ায় দ্রুত সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহক আকৃষ্ট করা যায়। অতঃপর যখন গ্রাহকরা আপনার প্রতিষ্ঠানের সেবা বিনামূল্যে গ্রহণ করা শুরু করবে, তখন ধীরে ধীরে ঐ সেবা ব্যবহারে অভ্যস্ততা সৃষ্টি হবে। পরবর্তীতে তাঁদের ভিতর আরো উচ্চ মানের ফিচার গুলো গ্রহণের চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে। তাই এভাবে আপনি খুব সহজে গ্রাহক পেয়ে যাবেন। এবং তাঁদের প্রয়োজনীয়তার তাগিদেই অন্যান্য পেইড ফিচার গুলো ব্যবহারের সুবাধে আপনার আয় হতে থাকবে।

আমরা ইতোপূর্বেই জেনেছি যে, ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারে মূল আয়টি মূলত গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন আপগ্রেড ফিচার বিক্রি করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান গুলো বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করেও আয় করতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে অনলাইনে বিভিন্ন সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন গ্রাহকদের নিকট প্রদর্শন করার মাধ্যমেও বেশ ভাল পরিমাণ আয় করতে পারে ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান গুলো। আর যেহেতু এর গ্রাহক সংখ্যা বেশি হয়, তাই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ ও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারে অসুবিধাসমূহ

ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারে অন্যতম অসুবিধা হলো এর বিভিন্ন ফিচারের সীমাবদ্ধতা। অর্থাৎ ফ্রিমিয়াম মডেলে শুধু পেইড সাবস্ক্রাইবাররাই বিভিন্ন উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বেশি সুবিধাজনক ফিচার বা সেবা ব্যবহার করতে পারে। বিপরীতক্রমে একদম বিনামূল্যে ব্যবহারকারী গ্রাহকের পক্ষে এসব ফিচার ব্যবহার করা সম্ভব হয় নাহ। যেটি অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহক মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহক এর ফলে ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারকারী ট্যুলস টি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পথে ধাবিত করতে পারে।

গ্রাহকদের মাঝে প্রিমিয়াম বা আপগ্রেড ফিচার এর প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু মূল আয়টি তো এই ফিচার গুলো থেকেই। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুব বেশি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই এগুতে হয়। আর তাছাড়া একই সেবার বিপরীতে অনেক প্রতিযোগি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এক্ষেত্রে যদি কোনো গ্রাহক ঐ প্রতিযোগি প্রতিষ্ঠানের পেইড ফিচার গুলো গ্রহণ করে, তবে আপনার সেবাটির আপগ্রেড বা প্রিমিয়াম ফিচার গুলো ক্রয় থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিরত থাকবে। তাছাড়া ফ্রি এবং প্রিমিয়াম ফিচার গুলোর মাঝে ও সামঞ্জস্য রাখাও খুব একটা সহজ নয়।

ফ্রিমিয়াম মডেল প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট উদাহরণ সমূহ:

স্কাইপি (Skype), লিংকডইন (Linkedin), স্পটিফাই (Spotify), এভারনোট (Evernote), মেলচিম্প (MailChimp), ড্রপবক্স (Dropbox) এর মতো নামকরা এবং বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ফ্রিমিয়াম মডেল এর সফল প্রয়োগ করে আসছে।

তাহলে জেনে নেওয়া যাক স্কাইপি (Skype) এবং মেলচিম্প (MailChimp) এর মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান দুটি কিভাবে এই মডেলের সফল প্রয়োগ করে আসছেঃ

স্কাইপি (Skype)

২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত টেলিকমিউনিকেশনস অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার স্কাইপি ফ্রিমিয়াম মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে আয় করে থাকে। কম্পিউটার, ট্যাবলেট কিংবা মোবাইল ব্যবহারে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যায় স্কাইপি এর মাধ্যমে।

ভয়েস কল, ভিডিও চ্যাট, ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজের মতো দারূণ সব সুবিধা পাওয়া যায় স্কাইপি ব্যবহারের মাধ্যমে। এছাড়াও অন্যান্য ব্যবহারকারীরা একে অপরের নিকট বিভিন্ন টেক্সট, ভিডিও, অডিও, ইমেইজ ইত্যাদি পাঠাতে পারে।

স্কাইপি মূলত তাঁদের ব্যসিক ভার্সনটি সর্বসাধারণ কে বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেয়। অর্থাৎ স্কাইপি এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয় নাহ প্রতিষ্ঠানটির কাছে। তবে সেটা স্কাইপি টু স্কাইপি কলের ক্ষেত্রেই।

মানে আপনি যাকে কল দিবেন বা যার সাথে ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করবেন সেও যদি স্কাইপি ব্যবহারকারী হয় তবে কোনো চার্জ কাটে নাহ। কিন্তু আপনি যদি স্কাইপি থেকে কোনো ল্যান্ডলাইন ফোন কিংবা টেলিফোন নেটওয়ার্ক এ যোগাযোগ করতে চান, তবে আপনাকে একটি নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। শুধু স্কাইপি ক্রেডিট সেবা গ্রহণকারীরাই এর ব্যবহার করতে পারবে।

এক্ষেত্রে ব্যসিক ভার্সন টি বিনামূল্যে দিয়ে ধীরে ধীরে গ্রাহক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানটি। অতঃপর গ্রাহকরা যখন স্কাইপি এর মাধ্যমে যোগাযোগে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন ধীরে ধীরে স্কাইপি ক্রেডিট ক্রয় করার প্রবণতা দেখা যায়।

এক্ষেত্রে প্রাথমিক সেবাটি ফ্রি তে দেওয়া হলেও আপগ্রেড ফিচার টি প্রিমিয়াম। এভাবেই মূলত স্কাইপি ফ্রিমিয়াম মডেল এর প্রয়োগ করে আসছে।

মেলচিম্প (MailChimp)

২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ইমেইল মার্কেটিং এবং মার্কেটিং অটোমেশন ভিত্তিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মেলচিম্প ফ্রিমিয়াম মডেলের সফল ব্যবহার করে আসছে। ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইমেইল মার্কেটারদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এই মেলচিম্প অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যারটি।

মূলত মেলচিম্প এসব প্রতিষ্ঠানকে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের ইমেইল সংগ্রহে, গ্রাহকদের নিত্যনতুন বিভিন্ন তথ্য প্রেরণ তথা আপডেট দিতে, স্বয়ংক্রিয় উত্তর প্রদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যার ফলে কোনো প্রতিষ্ঠান সঠিক গ্রাহকদের কাছে পৌছাতে পারে, গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁদের চাহিদা বুঝে কন্টেন্ট তৈরী করতে পারে। যা প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জন করতে ও খুব দ্রুত সফল হতে পারে।

যেকোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান একদম বিনামূল্যে এই মেলচিম্প এ সাইন আপ করতে পারবে। এবং সাইন আপ করার পর নির্দিষ্ট কিছু সেবা বা ফিচার কোনো রকম অর্থ প্রদান ব্যতীতই ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ এই অ্যাপ্লিকেশনের ব্যসিক ভার্সনটি ব্যবহার করতে পারবে।

তবে মার্কেটিং অটোমেশন সহ অন্যান্য সুবিধাদি গ্রহণ করতে পারবে নাহ। কারণ এই সব সেবাগুলি শুধু পেইড সাবস্ক্রাইবাররা গ্রহণ করতে পারবে। এটিই মূলত ফিমিয়াম বিজনেস মডেল এর প্রয়োগ।

এখানে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রথমে এই মেলচিম্প ব্যবহারে খুব সহজে ইমেইল তালিকা তৈরী সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারে। যার ফলে ধীরে ধীরে তাঁর এই অ্যাপ্লিকেশনটির প্রতি নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়।

পরবর্তীতে অন্যান্য পেইড সুবিধা গুলো গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। আর তখনই নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে পেইড সাবস্ক্রিপশন গ্রহণ করে। এভাবেই মূলত ফ্রিমিয়াম মডেল টি মেলচিম্প সফটওয়ারটিতে কাজ করে।

  • https://en.m.wikipedia.org/wiki/Skype https://en.wikipedia.org/wiki/Mailchimp
  • https://en.wikipedia.org/wiki/Freemium
  • https://productmint.com/the-freemium-business-model-a-complete-guide/
  • http://blog.payproglobal.com/freemium-business-model-benefits-and-pitfalls-to-avoid?hs_amp=true
  • https://www.investopedia.com/terms/f/freemium.asp
Next to read
Canvas & Methods
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)

অধিক শ্রম ও অর্থ খরচের এই ঝুঁকি এড়াতে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি যেখানে পণ্য প্রয়োজনীয় কিছু ফিচার দিয়ে বাজারজাত করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাহিদা পর্যালোচনা করে ধীরে ধীরে এই পণ্যের উন্নয়ন করা হয় এবং নতুন নতুন উপাদান/ফিচার যুক্ত করা হয়। ব্যবসায়িক জগতে একে বলা হয় মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট।

কাস্টমার এক্সপ্লোরেশন ম্যাপ (Customer Exploration Map)
Canvas & Methods
কাস্টমার এক্সপ্লোরেশন ম্যাপ (Customer Exploration Map)
লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)
Canvas & Methods
লিন ক্যানভাস মডেল (Lean Canvas Model)
কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)
Business Models
কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)
বেইট এন্ড হুক মডেল  (Bait & Hook Model)
Business Models
বেইট এন্ড হুক মডেল (Bait & Hook Model)
Needs, Wants, Demands (প্রয়োজন, চাওয়া এবং চাহিদা)
Business
Needs, Wants, Demands (প্রয়োজন, চাওয়া এবং চাহিদা)
রিব্র্যান্ডিং (Rebranding)
Branding
রিব্র্যান্ডিং (Rebranding)
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
Sales
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
PESTLE বিশ্লেষণ
Analysis
PESTLE বিশ্লেষণ
মার্কেটিং এ ৫ সি (5 C's Of Marketing)
Marketing
মার্কেটিং এ ৫ সি (5 C's Of Marketing)