ইক্যুইটির সংজ্ঞা এবং অর্থ

শেয়ার বা স্টক কে ইক্যুইটি বলে যা একটি কোম্পানীতে মালিকের বা শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার অংশ কে বুঝায় । বিভিন্ন প্রকারের ইক্যুইটি রয়েছে যেমন :- মালিকের ইক্যুইটি : কোম্পানিতে কোম্পানির মালিকের নিয়ন্ত্রণকে বোঝায়। শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটি: শেয়ারহোল্ডারের ইক্যুইটি, যাকে স্টকহোল্ডারের ইক্যুইটিও বলা হয় এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি সাধারণত এমন কোম্পানিগুলির মূল্যায়নকে বোঝায় । রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ROE) যত বেশী হবে তত ই ভালো ।
Key Points
- একটি কোম্পানির মালিকের বিনিয়োগ বা মালিকানাধীন মূলধনের পরিমাণ কে ইক্যুইটি বলে
- এ্যাকাউন্টিং এ একটি কোম্পানীর মোট সম্পদ থেকে সকল দায় দেনা বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তা ই ইক্যুইটি
- ফিনান্সে, ইক্যুইটি বাজার মূল্য হিসাবে নির্দেশিত হয়, যা বইয়ের মূল্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম বা বেশি হতে পারে
- ইক্যুইটির ফমূলা হচ্ছে : ইক্যুইটি = মোট সম্পদ- মোট দায় দেনা
- নেট আয়কে শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি দিয়ে ভাগ করলে রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ROE) পাওয়া যায়
ইক্যুইটি
একটি কোম্পানির মালিকের বিনিয়োগ বা মালিকানাধীন মূলধনের পরিমাণ কে ইক্যুইটি বলে ।
ইক্যুইটি সাধারণত একটি পাবলিক কোম্পানির মালিকানা বোঝায় । আরো সহজ ভাষায় শেয়ারকে ইক্যুইটি বলে ।
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক, যেমন ধরুন আপনি একটি কোম্পানীর মোট শেয়ার বা স্টকের ৩০ শতাংশ ক্রয় করে ঐ কোম্পানীর ৩০ শতাংশের মালিক হয়ে গেছেণ । অর্থাৎ ঐ কোম্পানী আপনার কাছে ৩০ শতাংশ ঋণ নিয়েছে । আপনাকে ৩০ শতাংশ শেয়ার দিয়ে আপনার কাছ থেকে সমপরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছে ।
এ্যাকাউন্টিং এ একটি কোম্পানীর মোট সম্পদ থেকে সকল দায় দেনা বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তা ই ইক্যুইটি ।
অ্যাকাউন্টিংয়ে, ইক্যুইটি তার বুক ভ্যালু বা বইয়ের মূল্যে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং আর্থিক বিবৃতি রেকর্ড এবং ব্যালেন্স শীট সমীকরণ দ্বারা গণনা করা হয়। বইয়ের মূল্য নির্ণয় করতে ব্যবহৃত সমীকরণটি :- ইক্যুইটির ফমূলা হচ্ছে : ইক্যুইটি = মোট সম্পদ- মোট দায় দেনা ।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে কোন একটি কোম্পানীর লিকুইডেশনের ক্ষেত্রে অর্থাৎ যখন এর সকল সম্পদকে নগদ অর্থে বা তরল সম্পদে রুপান্তরিত করে তা থেকে কোম্পানির সমস্ত ঋণ পরিশোধ করার পর যে পরিমাণ অর্থ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ফেরত দেওয়া হবে সেই পরিমাণ অর্থই হলো ইক্যুইটি ।
ফিনান্সে, ইক্যুইটি বাজার মূল্য হিসাবে নির্দেশিত হয়, যা বুক ভ্যালু বা বইয়ের মূল্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম বা বেশি হতে পারে।
যদি একটি কোম্পানির এক লাখ বকেয়া শেয়ার থাকে এবং যদি কোম্পানির বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি শেয়ার 50 টাকা হয়। কোম্পানির ইক্যুইটির বাজার মূল্য হবে (প্রতি শেয়ার ট 50 X 1 লাখ বকেয়া শেয়ার = 50 লাখ)
ইক্যুইটির অর্থ
ইক্যুইটির অর্থ ভালোভাবে বুঝতে হলে মালিকের ইক্যুইটি এবং শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটি কি তা বুঝতে হবে ।
মালিকের ইক্যুইটি : কোম্পানিতে কোম্পানির মালিকের নিয়ন্ত্রণকে বোঝায়। একক মালিকানা এবং অংশীদারী সাধারণত এই ধরনের ইক্যুইটি ব্যবহার করে।
এখানে মালিকের ইক্যুইটি বলতে একটি ব্যবসায় মালিকের কতটা মূলধন আছে তা বোঝায় ।
উদাহরণ দেয়া যাক, ধরুন একটি অংশীদারী ব্যবসায় আপনার শেয়ার ৭০ শতাংশ এবং অপর অংশীদারের শেয়ার ৩০ শতাংশ । অর্থাৎ এই ব্যবসায় আপনার ইক্যুইটি ৭০ বা মালিকানা ৭০ শতাংশ ।
শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটি: শেয়ারহোল্ডারের ইক্যুইটি, যাকে স্টকহোল্ডারের ইক্যুইটিও বলা হয় । কর্পোরেশন হিসাবে গঠিত ব্যবসা প্রায়ই এই ধরনের ইক্যুইটি ব্যবহার করে।
শেয়ারহোল্ডারের ইক্যুইটি হলো সমস্ত দায় বাদ দেওয়ার পরে একটি কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডারদের সম্পদের সংখ্যা কে বোঝায়।
উদাহহরণ ন্বরুপ বলা যায় যে AXON নামের কোম্পানীর ৩১/১২/২০২১ ইং তারিখের একটি ব্যালান্স সীট থেকে দেখা যায় যে কোম্পানীটির মোট সম্পদ ২৩০, ০০০০০০০/- টাকা এবং মোট দায় দেনা মাত্র ৮০, ০০০০০০০ টাকা সুতরাং কোম্পানীটির মোট ইক্যুইটি ১৫০, ০০০০০০০ টাকা , অর্থাৎ কোম্পানীর মোট সম্পদের ৬৫শতাংশের মালিকানা শেয়ারহোল্ডারদের । ইহাই
শেয়ারহোল্ডারের ইক্যুইটি
উপরের দুই প্রকার ইক্যুইটি ছাড়াও আরো একধরনের ইক্যুইটি সম্পর্কে জানতে হবে তা হলো প্রাইভেট ইক্যুইটি ।প্রাইভেট ইক্যুইটি সাধারণত এমন কোম্পানিগুলির মূল্যায়নকে বোঝায় যেগুলির শেয়ার সর্বসাধারণ বা সর্বজনীনভাবে বিক্রির জন্য নয়। কোম্পানিগুলি সরাসরি ব্যক্তিগত প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করে । এই প্রাইভেট ইক্যুইটি বিনিয়োগকারীরা পেনশন তহবিল, ইউনিভার্সিটি এন্ডোমেন্ট, বীমা কোম্পানি বা স্বীকৃত ব্যক্তিদের মতো প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
প্রাইভেট দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে :-
হোম ইক্যুইটি:-
হোম ইক্যুইটি বলতে বুঝায় যে একজন মানুষ তার এ্যাপার্টমেন্টের কতোটা মালিক । যেমন ধরুন আপনার এ্যাপার্টমেন্টের বর্তমান বাজার মূল্য 45, 00, 00 টাকা বকন্তু এখনো বাড়ি বন্ধকী ঋণ রয়েছে 15, 00, 000 টাকা, সুতরাং 45, 00, 000-15, 00, 000 = 30, 00, 000 টাকা ইক্যুইটি মূল্য রয়েছে আটনার বাড়ির ।
ব্র্যান্ড ইক্যুইটি:
একটি উদাহরণে মাধ্যমে ব্র্যান্ড ইক্যুইটি সম্পর্কে ধারণাটি পরিষ্কার করা যাক,
অনেক কোমল পানীয় প্রেমীরা মোজো কেনার আগে কোকের জন্য পৌঁছাবে কারণ তারা কোকের স্বাদ পছন্দ করে বা স্বাদের সাথে আরও বেশি পরিচিত। যদি মোজোর 2-লিটার বোতলের দাম 60 টাকা এবং কোকের 2-লিটার বোতলের দাম 120 টাতা হয়, তাহলে Coca-Cola-এর ব্র্যান্ড ইকুইটি 60 টাকা ।
কিভাবে ইক্যুইটি একটি কোম্পানী ও বিনিয়োগকারীর জন্য কাজ করে?
যখন একটি কোম্পানীর সম্পদ কেনার জন্য, প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে এবং কোম্পানীর কাজ কর্ম পরিচালনা করার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয় তখন কোম্পানিটি সাধারণত লোন নেয় অথবা বন্ড বা ইক্যুইটি (স্টক বা শেয়ার) ) ইস্যু করে ( বিক্রি করে) অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এই হলো কোম্পানী কিভাবে শেয়ার বা স্টক বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে ।
অপরদিকে, কারা এই শেয়ার বা স্টক কিনে এবং কেন?
বিভিন্ন বিনিয়োগকারী গণ এই শেয়ার বা স্টক কিনে থাকেন ।
বিনিয়োগকারীরা সাধারণত ইক্যুইটি (শেয়ার বা স্টক) বিনিয়োগের সন্ধান করে কারণ একটি কোম্পানির লাভ এবং বৃদ্ধিতে ভাগ বসানোর এটি তাদেরকে একটি ভাল সুযোগ দেয়া
রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ROE) চেক :-
শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি বা মূলধন একটি কোম্পানিতে কতটা ভালোভাবে পরিচালিত বা ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানতে রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ROE) দেখতে হয় ।
নেট আয়কে শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি দিয়ে ভাগ করলে রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ROE) পাওয়া যায় ।
উদাহরণ: ধরুন AXON কোম্পানী টি ২০২১, ৩১ শে ডিসেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য, কোম্পানিটি নেট আয় ( মোট আয় থেকে সব রকম খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে ) করেছে ৩০,০০০০০০০/- টাকা এর শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি ছিল শুরুতে ৬০, ০০০০০০০/- টাকা এবং শেষ ব্যালান্স ৬৫, ০০০০০০০/- টাকা ।
শুরুতে ইক্যুইটি ব্যালান্স ৬০, ০০০০০০০/- টাকা
শেষ ইক্যুইটি ব্যালান্স ৬৫, ০০০০০০০/- টাকা
শেয়ার হোল্ডারদের গড় ইক্যুইটি ৬০, ০০০০০০০/- টাকা + ৬৫, ০০০০০০০/- টাকা /২ = ৬২.৫ ০০০০০০/- টাকা
ইক্যুইটিতে AXON এর রিটার্ন = ৩০,০০০০০০০/- টাকা / ৬২.৫ ০০০০০০/- টাকা = ৪৮ %
রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ROE) যত বেশী হবে তত ই ভালো ।
স্টক এবং ইক্যুইটি এর মধ্যে পার্থক্য
স্টক এবং ইক্যুইটি একই, কারণ উভয়ই একটি সত্তার (কোম্পানি) মালিকানার অংশ কে বুঝায় এবং স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যবসা করা হয়।
সংজ্ঞা অনুসারে ইক্যুইটি মানে ঋণ পরিশোধের পর সম্পদের মালিকানা। স্টক সাধারণত ট্রেডড ইক্যুইটি বোঝায়।
ইক্যুইটি অর্থ স্টক বা শেয়ারও হতে পারে।
উপসংহার
ইক্যুইটি শব্দের আভিধানিক অর্থ সমতা হলেও এ্যাকাউন্টিং এবং ফাইন্যান্সে এর অর্থ ভিন্ন যা আমরা উপরে আলোচনা করেছি । একটি কোম্পানীতে মালিকদের মালিকানা এবং কোম্পানীর পক্ষে উপার্জনের সক্ষমতা জানার জন্য আমাদের ইক্যুইটি সম্পর্কে জানার প্রয়োজন রয়েছে । ইক্যুইটি শব্দের আভিধানিক অর্থ যত সহজ এ্যাকাউন্টিং এবং ফাইন্যান্সে এর অর্থ ততই জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ।
- https://www.merriam-webster.com/dictionary/equity#:~:text=Definition%20of%20equity,common%20stock%20of%20a%20corporation
- https://www.investopedia.com/terms/e/equity.asp
- https://byjus.com/commerce/what-is-equity/
- https://www.merriam-webster.com/dictionary/equity#:~:text=Definition%20of%20equity,common%20stock%20of%20a%20corporation
- https://www.investopedia.com/terms/e/equity.asp
- https://byjus.com/commerce/what-is-equity/
Next to read
শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)


কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)

বেইট এন্ড হুক মডেল (Bait & Hook Model)

মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)

Needs, Wants, Demands (প্রয়োজন, চাওয়া এবং চাহিদা)

ব্রান্ডিং (Branding)

অর্থনীতি কী?

সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?

ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসা
