কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)

554
article image

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেলে গ্রাহকদেরকে মূল সেবাটি বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। অতঃপর সুষ্ঠু পদ্ধতিতে গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করা হয়। আর এই গ্রাহক তথ্য বিক্রয়ের মাধ্যমেই মূলত এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূল আয় করে থাকে।

Key Points

  • কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেলে মূল সেবা বা পণ্যটি বিনামূল্যেই দিতে হয়।
  • কাস্টমার বা গ্রাহকদের বিভিন্ন ডেটা বিক্রয়ের মাধ্যমেই মূল আয়টি হয়ে থাকে
  • কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা

কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল

কখনো ভেবে দেখেছেন, এইযে বিভিন্ন কোম্পানি আমাদের বছরের পর বছর ফ্রিতে অসাধারণ সেবা দিয়ে আসছে, তাদের আসলে লাভ হয় কিভাবে? মূলত এইসব কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করে থাকে যা আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে দেখতে পাই না। আর তেমনই একটি বিজনেস মডেল অনেকে ব্যবহার করে তা হলো কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেলে গ্রাহকদেরকে মূল সেবাটি বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। অতঃপর সুষ্ঠু পদ্ধতিতে গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করা হয়। আর এই গ্রাহক তথ্য বিক্রয়ের মাধ্যমেই মূলত এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূল আয় করে থাকে।

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ

বর্তমান প্রতিযোগিতা পূর্ণ সময়ে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বা সেবা ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। একই পণ্য বা সেবার বিপরীতে ব্যাপক প্রতিযোগি থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ নজরদারী রাখতে হচ্ছে গ্রাহকদের রুচি, অভিমত, চাহিদা, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষার প্রতি।

আর এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপযুক্ত এবং কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের খোঁজ পেতে প্রয়োজন পড়ছে নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন মানুষের নানাবিধ প্রয়োজনীয় তথ্য। কারণ যত বেশি উপযুক্ত গ্রাহকের প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কোনো প্রতিষ্ঠানের থাকবে, তত বেশি প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক উন্নতির পথ মসৃণ হবে।

মূলত এই বিপুল সংখ্যক বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গুলোকে নানাবিধ তথ্য দেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছে কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী নানান প্রতিষ্ঠান এর। এসব প্রতিষ্ঠান গুলো মূলত বিভিন্ন কৌশল এবং পদ্ধতি অবলম্বন করে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করে। অতঃপর সেই ডেটা বা তথ্যগুলো ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করে দেয়।

মূলত এই ডেটা বা তথ্য গুলো বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান তাঁদের মূল সেবাটি গ্রাহকদের বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। অতঃপর গ্রাহক যখন এই সেবাটি গ্রহণ করে তখন তাঁদের কাছে বিভিন্ন টার্মস এন্ড কন্ডিশন তথা শর্তাবলী উপস্থাপন করে তাঁদের যাবতীয় ডেটা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে থাকে। যখন বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে গ্রাহক ঐ সেবাটি গ্রহণ করে, তখন প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটালাইজেশ, প্রযুক্তির প্রয়োগে বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বন করে গ্রাহকদের নানাবিধ তথ্য সংগ্রহ করে।

অতঃপর গবেষণা, বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো একত্রিত করে। তারপর এই তথ্য গুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান গুলো মূল সেবাটি থেকে কোনো অর্থ উপার্জন করতে না পারলেও তাঁদের বিভিন্ন তথ্য নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির মাধ্যমে আয় করে থাকে। এটিই মূলত কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল।

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত দুই ধরনের তথ্য যেমন, মূল তথ্য এবং প্রক্রিয়াজাত তথ্য বিভিন্ন ডেটা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে থাকে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডেটা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডেটা বিশ্লেষণ করে গ্রাফ, চার্ট কিংবা বিভিন্ন পদ্ধতিতে উপস্থাপন করে থাকে ঐ প্রতিষ্ঠানের সুবিধার জন্য।

এছাড়াও গ্রাহক দ্বারা স্বেচ্ছায় প্রদত্ত ডেটা ছাড়াও বিভিন্ন ডেটা নানান পদ্ধতি অবলম্বন করে উৎপাদন করে এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বিভিন্ন পণ্য, সেবা কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নানান ডিভাইসের সহায়তায় এই ডেটা গুলো সংগ্রহ করে। তবে যেভাবেই যে পদ্ধতিতেই গ্রাহকের ডেটা সংগ্রহ করা হোক না কেন, সর্বোপরি ডেটা সংগ্রহে বৈধতা কিংবা নীতিমালা অনুসরণ করতে হয় এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে সাফল্য পেতে করণীয়

কতিপয় দিক সম্পর্কে সচেতন থাকলে খুব সহজেই এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহার করে সফল হতে পারে যে কোনো প্রতিষ্ঠান।

সেবা বা পণ্য

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সফল হতে হলে প্রথমেই সেবা বা পণ্যটির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেহেতু এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল এ মূল সেবাটি বিনামূল্যেই দিতে হয় এবং গ্রাহকদের ডেটা থেকেই মূল আয়টি হয়ে থাকে। তাই যথাসম্ভব বেশি গ্রাহকের কাছে সেবাটি পৌছে দিতে হবে।

আর প্রতিষ্ঠানটির সেবাটি এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন সেটি গ্রাহক উপযোগী হয়। যেন খুব সহজেই সেবাটি গ্রহণের জন্য গ্রাহকদের ভিতর প্রবল আগ্রহের সৃষ্টি হয়। যত বেশি গ্রাহক সংশ্লিষ্টতা থাকবে, প্রতিষ্ঠানটির কাছে তত বেশি সংখ্যক ডেটা থাকবে। যা প্রতিষ্ঠানটির জন্য বিশ্লেষণে সহজ হবে, বিক্রয়ে সুবিধা হবে। এবং এই মূল সেবাটি এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন তা গ্রাহক মনে তথ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে বা যাবে এরকম গুজব কিংবা ভীতির সঞ্চার না করে।

লক্ষ্য নির্ধারণ

মূল সেবা বা পণ্যটি সুষ্ঠুভাবে উপস্থাপনের পাশাপাশি সেই পণ্য বা সেবা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কি লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, সেটি নির্ধারিত করতে হবে। অর্থাৎ মূল সেবা বা পণ্যটির দ্বারা গ্রাহকদের কাছ থেকে কি ধরনের ডেটা সংগ্রহ করতে চায় এবং কারা এই ডেটা ক্রয় করবে সে সম্পর্কে প্রতিষ্টানটির পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে। এগুলো সম্পর্কে আগাম ধারণা রাখা পূর্বক সেবা বা পণ্যটিকে বাজারজাত কিংবা গ্রাহক উপযোগী করতে হবে।

সর্বোপরি কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক পেতে সেবাটি গ্রহণে গ্রাহকদের বিভিন্ন কৌশলে উৎসাহী করতে হবে। কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক পেয়ে গেলে পরবর্তীতে তাদের ডেটা গুলো প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কৌশল এবং পদ্ধতি অনুযায়ী সংগ্রহ করতে হবে। অতঃপর সেই ডেটার পরিমাণ, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি যাচাই করতে হবে। তারপর এই ডেটা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে তাঁদের প্রয়োজনীয় ডেটা গুলোকে প্রদান করতে হবে।

ডেটা সনাক্তকরণ এবং বিশ্লেষণ

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারে সফল হতে হলে ডেটা শনাক্ত কিংবা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে। কেননা এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্টানের মূল আয় ডেটা বিক্রয়ের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। তাই অভ্যন্তরীণ তথ্যাদি (Internal Data) কিংবা বাহ্যিক তথ্যাদি (External Data) সংগ্রহের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে যখন গ্রাহক সেবাটি গ্রহণ করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে বিভিন্ন তথ্যাবলী দিয়ে নিবন্ধিত কিংবা সাইন আপ করবে সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

তাছাড়া বিভিন্ন শর্তাবলী অর্থাৎ টার্মস এন্ড কন্ডিশন গ্রাহকের সামনে প্রদর্শন পূর্বক গ্রাহকের অনুমতি নিয়ে তাঁর বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সার্ভে প্রদর্শন কিংবা নানান ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করেও গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ করতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলো। এভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে গ্রাহকদের নানাবিধ বাহ্যিক কিংবা অভ্যন্তরীণ ডেটা সংগ্রহ হয়ে গেলে এসব ডেটা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শনাক্ত করতে হবে।

বিধি-নিষেধ

কাস্টমার বা গ্রাহকদের বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানতে হবে। বিভিন্ন নীতিমালা সুষ্ঠুভাবে মেনে ডেটা গুলো সংগ্রহ এবং বিতরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, গ্রাহকদের থেকে সংগৃহীত ডেটা গুলো প্রতিষ্ঠানটি কাদের কাছে বিক্রি করছে। অর্থাৎ এই ডেটা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা ক্রয় করার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি।

এবং কোনকাজে তাঁরা এই ডেটা গুলো ব্যবহার করছে বা করবে, সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। অর্থাৎ ডেটা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এই ডেটা গুলো অবৈধ কোনো কাজে না লাগায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আর গ্রাহকদের কাছ থেকে ডেটা সংগ্রহের ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। যেন এটি গ্রাহক অসন্তোষ সৃষ্টি না করে। সর্বোপরি ডেটা গ্রহণ, নিয়ন্ত্রণ, বিক্রয়ে বৈধতা কিংবা বিভিন্ন নীতিমালার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারে সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনা

অপার সম্ভাবনার হাতছানির পাশাপাশি কিছুটা ঝুঁকিও কিন্তু এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারে রয়ে যায়।

ডেটা বিক্রয়

মূলত কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেলে মূল সেবা বা পণ্যটি বিনামূল্যেই দিতে হয়। এবং কাস্টমার বা গ্রাহকদের বিভিন্ন ডেটা বিক্রয়ের মাধ্যমেই মূল আয়টি হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ঝু্ঁকি বা অনিশ্চয়তা নিয়েই এগুতে হয়। অর্থাৎ যেহেতু গ্রাহকদের কোনো একটি সেবা প্রদানের মাধ্যমে কোনো অর্থ উপার্জন হচ্ছে নাহ। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লভ্যাংশই অর্জন করতে হবে ডেটা বিক্রয়ের মাধ্যমে।

আর সেক্ষেত্রে সঠিক গ্রাহক পাওয়া, প্রয়োজনীয় ডেটা গুলো পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই খুব কষ্টসাধ্য। আর তাছাড়া গ্রাহক সংশ্লিষ্টতাও অনেক বড় একটি ব্যাপার এই মডেলে। তাই সঠিক গ্রাহক, প্রয়োজনীয় ডেটা, উপযুক্ত ক্রেতা এই তিনের সমন্বয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

ডেটা সংরক্ষণ

গ্রাহকের তথ্যকে সুরক্ষিত রাখাও এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অন্যতম একটি ঝুঁকি। গ্রাহকদের থেকে সংগৃহীত ডেটা গুলো যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রয় হচ্ছে, তারা যদি অবৈধ কোনো কাজে এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে তবে তার দায়ভার কিন্তু ডেটা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকেও নিতে হবে৷

কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অবৈধতার অভিযোগ উঠলে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম ও সৃষ্টি হতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, বিভিন্ন সময় ফেসবুক এর বিরুদ্ধে ডেটা বিক্রয়ের ব্যাপারে নানাবিধ অভিযোগ উঠছে। যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি গ্রাহক আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে।

অন্যান্য

তাছাড়াও গ্রাহক ডেটা সংগ্রহও অন্যতম কঠিন কাজ। কোনো গ্রাহকই তাঁর ব্যক্তিগত কিংবা অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য খুব সহজে কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিতে চাইবে নাহ অবশ্য। তাই তাঁদের কাছ থেকে সঠিক এবং বৈধ উপায়ে ডেটা সংগ্রহ করার জন্য নানাবিধ কৌশল কিংবা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করাও জটিল ব্যাপার।

এছাড়াও প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলার ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি সঠিক সেবা বা পণ্যটিকে বাছাই করা, নির্দিষ্ট মার্কেটটি যাচাই করা, কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক খুঁজে বের করা এবং সঠিক ডেটা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে বের করা তুলনামূলক জটিল এবং কষ্টসাধ্য কাজ।

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারের সুবিধা সমূহ

আমরা ইতোপূর্বেই জেনেছি যে, কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূল সেবাটি গ্রাহকদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এটিই মূলত একটি বিরাট সুযোগ। কারণ এক্ষেত্রে গ্রাহকদের ঐ সেবাটি গ্রহণের জন্য তুলনামূলক দ্রুত এবং সহজেই উৎসাহী করা যায়। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক আকৃষ্টতা অর্জন করে, খুব দ্রুতই গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।

আর গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি মানে ডেটা বৃদ্ধি পাওয়া। যতবেশি পরিমাণ ডেটা থাকবে তত ভালভাবে ডেটা যাচাই-বাছাই কিংবা বিশ্লেষণ করা যাবে। ফলে ডেটা ক্রয়কারীকে সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য ডেটা প্রদান সহজতর হবে। যা মূলত প্রতিষ্ঠানটির আয়ের ক্ষেত্রে অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক মুনাফা অর্জন, বিভিন্ন ব্যয় হ্রাস, নতুন সুযোগ তৈরীর জন্য বিভিন্ন ডেটার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো তাঁদের পণ্য বা সেবাটিকে কিভাবে উপস্থাপন করা যায় কিংবা গ্রাহক গ্রহণযোগ্যতা কিরকম ঐ পণ্য বা সেবার তা জানতেও বিভিন্ন মানুষের নানাবিধ তথ্যের প্রয়োজনীয়তা পড়ছে। যা কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অন্যতম বড় একটি সম্ভাবনা। কারণ ডেটা ক্রয়কারীর সংখ্যা বাড়লে ডেটার প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে, সেই সাথে বাড়বে ডেটার মূল্য।

শুধু ডেটা বিক্রয় ছাড়াও পাশাপাশি অন্যান্য পদ্ধতিতেও আয় করার সম্ভাবনা এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য থেকে যায়। অর্থাৎ তাঁরা একটু কৌশলী ভাবে অন্যান্য আয়ের পথ ও চালু রাখতে পারে। যেমন ফেসবুকের দিকে লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাই যে, ফেসবুক ডেটা উৎপাদন এবং বিক্রয় ছাড়াও অন্যান্য পদ্ধতিতে আয় করে আসছে। এক্ষেত্রে ফেসবুক বিভিন্ন ভিডিও বিজ্ঞাপন, সেল্ফ সার্ভ বিজ্ঞাপন, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে আয় করে থাকে।

অর্থাৎ এই ডেটা আদান-প্রদান ছাড়াও পাশাপাশি অন্যান্য আয়ের ব্যবস্থাও কিন্তু ফেসবুকের চালু রয়েছে। তাই এই মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের সেবা বা পণ্যের ধরন অনুযায়ী বিকল্প আয়ের পদ্ধতি চালু রেখে তা থেকে আয় করতে পারে।

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারের অসুবিধা সমূহ

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারের অন্যতম অসুবিধা কিংবা চ্যালেঞ্জ হলো গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা। যেহেতু কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বিভিন্ন ডেটা বিক্রয়ের উপর নির্ভর করে। তাই এই ডেটাকে সঠিক পদ্ধতিতে গ্রহন, নিরাপদে সংরক্ষণ এবং সুষ্ঠু বন্টন করাটাও অত্যাধিক জরুরী।

প্রায় সময়ই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন রকম ডেটা সংক্রান্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। এই এত এত সংখ্যক ডেটাকে সুরক্ষিত রাখা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম নীতি মেনে গ্রাহকের গোপনীয়তা নিশ্চিত করে ডেটা গ্রহণ এবং আদান-প্রদান করাটা তুলনামূলক কঠিন কাজই বটে।

মানুষ স্বভাবত নিজের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় অনেক বেশি সতর্ক। স্বাভাবিক ভাবেই সে নিজস্ব বিভিন্ন ব্যক্তিগত, অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক তথ্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিতে চাইবেনা। আর এর উপর তারা যদি নিশ্চিত হয় তাঁদের বিভিন্ন তথ্যাদি বিক্রয় করে কোনো প্রতিষ্ঠান আয় করবে। তবে সে স্বভাবতই সেই সেবা গ্রহণে নাকোচ করবে।

তাই এক্ষেত্রে সেবাটিকে গ্রাহক প্রয়োজনীয় করে তৈরী করতে অনেক কাঠখোড় পোড়াতে হবে। অর্থাৎ সেবাটি যদি গ্রাহক আকৃষ্টতা না করতে পারে কিংবা গ্রাহকের কাছে ঐ সেবার চাহিদা কিংবা প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি না থাকে তবে কিন্তু গ্রাহক স্বভাবতই এমন ধরনের প্রতিষ্ঠানের সেবা সহজে গ্রহণ করতে চাইবেনা।

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট উদাহরণ সমূহ

ফেসবুক (Facebook), পেশেন্টস লাইক মি (PatientsLikeMe), টেলিফোনিকা (Telefonica), ভেরিজন (Verizon), অর‍্যান্জ (Orange) এর মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোও এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল এর সফল প্রয়োগ করে আসছে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক ফেসবুক এবং পেশেন্টস লাইক মি এর মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান দুটি কিভাবে এই মডেলের সফল ব্যবহার করছেঃ

ফেসবুক (Facebook)

সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় এবং বহুল সমাদৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল এর সফল ব্যবহার করে আসছে। ওবেরলো (Oberlo) এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ফেসবুকের নিয়মিত সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি আশি লক্ষ। এবং প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

এই এত এত ব্যবহারকারীর বিশাল সংখ্যক ডেটা তাই ফেসবুকের ভান্ডারে রয়েছে। যখন কেউ ফেসবুকে সাইন আপ করে তখন তাকে ফোন নাম্বার বা ইমেইল, পরিচয় সহ বিভিন্ন তথ্য ফেসবুককে প্রদান করতে হয়। এবং পরবর্তীতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন তথ্য ফেসবুকে আপডেট করতে হয় কিংবা শেয়ার করতে হয়। বিজনেস ইনসাইডার এর তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকদের এই সমস্ত গতিবিধি থেকে ফেসবুক একটি বিশাল সংখ্যক পার্সোনাল ডেটা পায়। এবং এই ডেটা থেকেই ফেসবুক বিপুল পরিমাণ আয় করে থাকে।

ফেসবুক মূলত আমাদের ডেটা গুলো খুব ভালভাবে বিশ্লেষণ করে। অতঃপর সেগুলো বিভিন্ন থার্ড পার্টির কাছে বিক্রি করে দেয়। এই ডেটা গুলো বিক্রয়ের ফলে ঐ সব প্রতিষ্ঠান তাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক খুজে বের করে কিংবা আরো নানাবিধ কাজে ব্যবহার করে। এবং বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক আমাদের কাছে আমাদের ডেটা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কিন্তু বিনামূল্যে ফেসবুক ব্যবহার করছে৷ কিন্তু ফেসবুক গ্রাহকদের বিভিন্ন ডেটা বিক্রি করে আয় করছে। এটি মূলত কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল।

পেশেন্টস লাইক মি (Patients Like Me)

আট লক্ষ ত্রিশ হাজার মানুষ সম্বলিত প্রতিষ্ঠান পেশেন্টস লাইক মি (Patients like me) ও বহুবছর ধরে কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেলের সফল ব্যবহার করে আসছে। মূলত এই বিরাট সংখ্যক সেবা গ্রহণকারী মানুষেরা তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়ে থাকে। যেমন, তাঁদের জীবনে সংঘটিত হওয়া বিভিন্ন রোগ এবং সেই রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার, নিরাময় বিষয়ক নানান তথ্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে প্রদান করে।

শুধুই কি রোগ বিষয়ক তথ্য দিয়ে থাকে? না এমনটি নয়, তাঁরা এই রোগ বিষয়ক তথ্যাবলি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের মন-মেজাজ, ওজন, জীবনযাত্রার মান সহ স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বর্তমান কিংবা পূর্ব অবস্থা সম্পর্কে ও নানাবিধ তথ্য দিয়ে থাকে।

মূলত প্রতিষ্ঠানটি এই তথ্যগুলোর ভিত্তিতে রোগীকে তাঁর অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁর জন্য কি কি করণীয় সেগুলো সম্পর্কে দিকনির্দেশনা বিনামূল্যেই দেয়। আর এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য গুলো খুব সহজেই সংগ্রহ করে নেয়। এই সংগৃহীত তথ্য বা ডেটা গুলো চার্ট, গ্রাফ সহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে একত্রিত করে নানান ভাবে তালিকা করে। এবং তালিকা গুলো তৈরীর সময় রোগীদের নাম, পরিচয় গোপন রাখে।

অতঃপর এই বিভিন্ন রোগীদের কাছ থেকে সংগৃহীত নানাবিধ তথ্য গুলো ফার্মাসিউটিক্যালস অর্থাৎ ঔষধ কোম্পানিগুলোর কাছে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। এখানে প্রতিষ্ঠানটি রোগীদের বিনামূল্যে দিকনির্দেশনা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে, সেই তথ্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে আয় করে। এটিই মূলত কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল।

  • https://www.thestreet.com/.amp/technology/how-does-facebook-make-money-14754098
  • https://www.sisense.com/data-monetization/ https://en.wikipedia.org/wiki/PatientsLikeMe
  • https://bmtoolbox.net/patterns/customer-data-monetization/
Next to read
Canvas & Methods
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)

অধিক শ্রম ও অর্থ খরচের এই ঝুঁকি এড়াতে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি যেখানে পণ্য প্রয়োজনীয় কিছু ফিচার দিয়ে বাজারজাত করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাহিদা পর্যালোচনা করে ধীরে ধীরে এই পণ্যের উন্নয়ন করা হয় এবং নতুন নতুন উপাদান/ফিচার যুক্ত করা হয়। ব্যবসায়িক জগতে একে বলা হয় মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট।

সারোগেট মার্কেটিং (SURROGATE MARKETING)
Marketing
সারোগেট মার্কেটিং (SURROGATE MARKETING)
মোট মুনাফা (Gross profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং উদাহরণ
Business
মোট মুনাফা (Gross profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং উদাহরণ
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
Business
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
Sales
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
Investment
বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগের ধরণ এবং উদাহরণ
‘SWOT’ Analysis
Analysis
‘SWOT’ Analysis
ব্যবসায়কি আইন কি? উদাহরণ সহ বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়কি আইন
Business Law
ব্যবসায়কি আইন কি? উদাহরণ সহ বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়কি আইন
ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসা
E-Commerce
ই-কমার্স: অনলাইন ব্যবসা
হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি (What is Accounting)
Accounting
হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি (What is Accounting)