বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর: চ্যালেঞ্জ এবং সংস্কার (বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে)দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বেড়াজালে আমাদের ব্যাংকিং সেক্টর জর্জরিত। ইতোমধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে লক্ষাধিক কোটি টাকা। ব্যাংকিং সেক্টর পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করে দিয়েছেন। সবার আগে এনশিওর করতে হবে যাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে আর কোনো ব্যাংক কাউকে ঋণ না দিতে পারে।
ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং কী এবং কীভাবে কাজ করে?ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ ব্যাংকিং হচ্ছে এমন একটি ব্যাংক ব্যবস্থা, যেখানে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিপোজিটের একটি নির্দিষ্ট অংশ রিজার্ভ হিসেবে জমা রেখে বাকি টাকা লোন হিসেবে অন্যান্য গ্রাহকদের দেয়। গ্রাহকদের টাকা ব্যবহার করার কারণে সেই লোন থেকে প্রাপ্ত লাভের একটি অংশ ব্যাংক তার গ্রাহকদের সুদ হিসেবে প্রদান করে। বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা’ই ফ্র্যাকশনা রিজার্ভ ব্যাংকিং সিস্টেম ফলো করছে।
কমার্শিয়াল ব্যাংক কী এবং কীভাবে কাজ করে?কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বর্তমানে ডিপোজিট গ্রহণ, ঋণ প্রদান, পেমেন্ট প্রসেসিং ও কারেন্সি এক্সচেঞ্জ সার্ভিসের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন সেবা অফার করছে যেমন - মূলধন সরবরাহ করা, রিস্ক ট্রান্সফরম্যাশন, লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। এইসকল সার্ভিস অফার করার মাধ্যমে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো একদিকে যেমন ব্যাক্তি পর্যায়ে ব্যাংকিং সার্ভিস পাওয়া সহজ করে দিচ্ছে, আবার বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে’ও ভূমিকা পালন করছে।
ব্যাংক রান - কি, কেন, কীভাবে?ব্যাংক রান হচ্ছে এমন একটি ঘটনা যেখানে কোনো ব্যাংকের বেশিরভাগ ডিপোজিটর একসাথে ব্যাংক থেকে নিজেদের টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন এবং বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের চাহিদাপূরণ করতে না পেরে ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে যায়। অনেক সময় গুজব বা ব্যাংক দ্বারা নেয়া কোনো ভুল পদক্ষেপের কারণে এই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ব্যাংক কীভাবে কাজ করে?ব্যাংকের কার্যক্রম বলতে মূলত জনগণের সঞ্চয় আমানত হিসেবে গ্রহণ ও ঋণ প্রদান বোঝানো হলেও ব্যাংক আরো অনেক ধরণের সার্ভিস যেমন - ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন ধরণের পেমেন্ট সার্ভিস, কারেন্সি এক্সচেঞ্জ, ব্যবসায়িক ঋণ, ট্রেড ফাইন্যান্স, ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট সেবা প্রদান করে থাকে। তবে সকল ব্যাংক সকল ধরণের সার্ভিস প্রদান করে না, উদ্দেশ্যভেদে প্রতিটি ব্যাংকের কার্যক্রম ভিন্ন হয়ে থাকে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং কী? ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বিস্তারিতডিজিটাল ব্যাংক বলতে মূলত এমন ব্যাংককে বোঝানো হয়, যার সকল প্রোডাক্ট ও সার্ভিস হচ্ছে ক্লাউড-বেইজড, অর্থাৎ, এই ব্যাংকের কোনো ফিজিকাল লোকেশান থাকে না। তবে অনেক সময় ডিজিটাল ব্যাংকিং, ই-ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং - এই শব্দগুলোকে সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডিজিটাল ব্যাংকের সকল প্রোডাক্ট ও সার্ভিস ট্রেডিশনাল ব্যাংকের মতোই, শুধু পার্থক্য হচ্ছে এই যে, ডিজিটাল ব্যাংকের সকল সুবিধা ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে ভোগ করা যায়, ব্রাঞ্চে উপস্থিত হতে হয় না।
Banking 101 (A brief discussions of banking products and services)ব্যাংকের প্রোডাক্ট ও সার্ভিসগুলোকে মূলত ৪টি ভাগে করা যায়, যথা - কোর প্রোডাক্টস, লোন সার্ভিস, ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস। প্রতিটি ভাগেই একাধিক ধরণের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস রয়েছে, যার উদ্দেশ্য মূলত গ্রাহকের আর্থিক লেনদেনকে সহজ করে তোলা এবং নিরাপদে আর্থিক লেনদেন করার সুবিধা প্রদান করা।
কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝে পার্থক্য কী?কমার্শিয়াল ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঝে মূল পার্থক্য হচ্ছে এই যে, কমার্শিয়াল ব্যাংক সাধারণ মানুষদের সার্ভিস প্রদান করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার অধীনে থাকা অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে সার্ভিস প্রদান করে। অন্যান্য ব্যাংকের কার্যক্রম দেখাশোনার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি তৈরি করে, ফরেন রিজার্ভ মেইনটেইন করে, নোট ইস্যু করে, সরকারকে রিপ্রেজেন্ট করে। এসব কার্যক্রম কোনো কমার্শিয়াল ব্যাংক পালন করে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকবাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে। বর্তমানে বাংলাদেশের নোট ইস্যু করা, মনিটারি পলিসি তৈরি করা, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা, ব্যাংকিং সেক্টর রেগুলেট করা ইত্যাদি দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী? এবং অর্থব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার মূল দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দায়িত্ব পালন করে মূল ৫টি কাজের মাধ্যমে, যথা - মনিটারি পলিসি তৈরি করা, কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে রেগুলেট করা, নোট ইস্যু করা, ফরেন রিজার্ভ ম্যানজ করা ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস মোকাবিলা করা।
ব্যাংক লোন কিভাবে কাজ করেকোনো কিছু বন্ধক রেখে বা বন্ধক ছাড়াই যখন ব্যাংক আমাদের অ্যাকাউন্টে জমানো টাকার অতিরিক্ত অর্থ আমাদের প্রদান করে, তখন তাকে ব্যাংক লোন বলা হয়। সাধারণত, ব্যক্তিগত কোনো প্রয়োজনে বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য ব্যাংক লোন নেয়া হয়ে থাকে। লোনের মেয়াদ শেষ হলে সুদ’সহ লোনের সম্পূর্ণ অর্থ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হয়। আর লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে দিতে হয় জরিমানা।
ব্যাংক ব্যবস্থার ইতিহাসপৃথিবীতে ব্যাংক ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়েছিল বিনিময় প্রথার অবসানের মাধ্যমে। তখন ব্যাংকিং বলতে মূলত বোঝানো হতো অর্থ (কয়েন ও স্বর্ণ) জমা রাখা এবং ঋণ আদান-প্রদান। ব্যাংক ব্যবস্থাকে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয় রোমান সম্রাজ্য এবং বিশ্বের প্রায় সকল দেশে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রভাব বিস্তার করতে ভূমিকা পালন করে ইউরোপের বিভিন্ন ধনী সম্প্রদায়।
ব্যাংকিং কি এবং ব্যাংক কিভাবে কাজ করে?ব্যাংক হচ্ছে এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যারা জনগণের সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে এবং উক্ত আমানতের টাকা ঋণ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তিদের প্রদান করে। আর ব্যাংকের সাথে জড়িত যেকোনো ধরণের কার্যক্রমকে ব্যাংকিং বলা হয়। যেকোনো দেশের ব্যাংককে উক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।