ট্রেড বেইসড মানি লন্ডারিং২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল, এই দশ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ৭. ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে উন্নত দেশগুলোতে। চোখের সামনে থেকে পাচার হওয়া এই অর্থের আবার আছে বৈধ নথিপত্রও। আর এই অবৈধ অর্থকে বৈধতা দেয়ার এই প্রক্রিয়াকে সরাসরি অর্থপাচার না বলে, নাম দেয়া হয়েছে Money Laundering বা অর্থশোধন। দ্যা ইকোনোমিস্ট পত্রিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশের অসংখ্য দূর্নীতির মধ্যে এক "ওপেন সিক্রেট হল" বানিজ্যের আড়ালে মানি লন্ডারিং বা Trade Based Money Laundering। আর দেশের মানি লন্ডারিংয়ের ৮০ শতাংশই হচ্ছে বানিজ্য ভিত্তিক।
পাম্প এন্ড ডাম্প কি?"পাম্প এবং ডাম্প" - ফাইন্যান্সিয়াল বাজারের একটি বিশাল প্রতারণামূলক স্কিম। সাধারণত, পাম্প এর ফাংশন বলতে আমরা বুঝি কোনো কিছু উত্তোলন করা বা ওপরে ওঠানো। আর, এখানে, ডাম্প বলতে কোনো কিছুর ভ্যালুকে হঠাৎ নিচে নামিয়ে ফেলাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর Pump and Dump স্ক্যামে প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাই ঘটছে।
সর্বকালের সবচেয়ে বড় ৫ স্টক স্ক্যামস্টক মার্কেটের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আকাশচুম্বী। সেই নব্বই দশক থেকে একুশ শতকে, এসেও কমেনি মানুষের আগ্রহ। আর এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়েই যুগে যুগে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতারণার ফাঁদ। এখন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ স্টক স্ক্যাম এর শিকার হয়েছে। পাম্প এন্ড ডাম্প কিংবা কর্পোরেট জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া স্টক দিয়ে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
মানি লন্ডারিং (Money Laundering)সাল ২০১৬, পানামা পেপারস নামে হঠাৎ করেই ফাঁস হয় ১ কোটি ১৫ লক্ষ গোপন নথি। কি ছিল এসব নথিতে? এখানে ছিল সভ্যতার মুখোস পড়া অসংখ্য অবৈধ ব্যবসায়ী, সেলিব্রিটি, স্মাগলার দের কালো টাকার কাগজ পত্র। এই সব কালো আর অঘোষিত টাকাকে বিভিন্ন জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছিল বৈধতা। প্রায় ১১৪০ কোটি টাকাকে বৈধতা দেয়ার রেকর্ড পাওয়া যায় এই ঘটনায়।
ইনসাইডার ট্রেডিং (Insider Trading)ওয়ার্ড ট্রেডিং এন্ড ফাইনান্সিয়াল সিস্টেম এখন অতন্ত্য সেনসিটিভ ইস্যুতে পরিনত হয়েছে। রাতারাতি কেউ সফল হয়ে যাচ্ছে, কেউ আবার চোখের পলকে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের নামকরা বহু কোম্পানি এই ধরনের অভ্যন্তরীণ ইলিগ্যাল ট্রেডিং এর ফাঁদে পড়ছে। অর্থাৎ কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করে অথবা সেটা কাজে লাগিয়ে, কোম্পানির সাথে যুক্ত ব্যক্তিরাই ইনসাইডার ট্রেডিং করে যাচ্ছে। নন পাবলিক ইনফরমেশন কে পাবলিক করা বা মিস ইউজ করার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ফেস করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবছর প্রয় ৪৩২ টি কেস ফাইল হয় শুধুমাত্র ইনসাইডার ট্রেডিং এর বিরুদ্ধে।
প্রতারণামূলক আর্থিক প্রতিবেদনএখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সারা জাগানো, ও সবচেয়ে হিস্টোরিক্যাল Fraudulent ছিল এনরোন স্ক্যান্ডাল৷ ২০০১ সালে, ভুয়া তথ্য প্রচার ও ফ্রড রিপোর্টিং এর মাধ্যমে পাম্প এন্ড ডাম্পের সবচেয়ে কুখ্যাত এই ঘটনাটি ঘটে। আর এই স্ক্যাম গুলো এখানেই থেমে থাকে নি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১২ হাজারের ও অধিক Fraudulent Financial Reporting এর কেস ফাইল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও থেমে নেই এর প্রকোপ।
False advertising and marketing fraudবিশ্বজুড়ে মোট বিজ্ঞাপনের প্রায় ২১-২২% বিজ্ঞাপনই False advertising হয়ে থাকে। ভারতের সমস্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৩১% ইউজার ই False advertising-এর শিকার হয়ে থাকেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর মিথ্যা বিজ্ঞাপনের জন্য ১৫ বিলিয়ন ডলার হারায়। তাই, আমাদের জীবন এবং বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য Marketing fraud-এর খুব সাধারণ একটি রূপ এই False advertising-এর ভয়াবহতা কতটা মারাত্মক তা খুব সহজেই অনুমান করা যায়।
Identity Theft and Cyber FraudIdentity Theft-কে বলা হয়ে থাকে ডিজিটাল ডাকাতি, যেখানে আপনার পরিচয় এবং ব্যক্তিগত তথ্য অন্য একজন চুরি করে। এই চুরি করা তথ্য ব্যবহার করে অপরাধী নানা ধরনের প্রতারণামূলক কাজ করে থাকে। এবং এসব অপরাধের চূড়ান্ত লক্ষ্যই হলো প্রতারণামূলক কাজ করা। চুরির এইসব তথ্য ব্যবহার করে অপরাধীরা আপনার থেকে কয়েক থেকে কয়েকশো ডলার হাতিয়ে নিতে পারে।
হর্ষদ মেহেতা স্ক্যাম (1992 Indian Stock Market Scam)ভারতীয় শেয়ার বাজারের কেলেঙ্কারি নিয়ে যতবার কথা উঠবে , হর্ষদ মেহেতার নাম নিতেই হবে। মৃত্যুর দুই দশক পরেও কেন তার নামের চর্চা হয়? কি এমন করেছিলেন হর্ষদ মেহেতা? যার জন্য তাকে শেয়ার বাজারের অমিতাভ বাচ্চানও বলা হতো! জেনে অবাক হবেন মেহেতার এই প্রভাবের উপর ভিত্তি করে একটি সিরিজ নির্মিত হয় ‘স্ক্যাম ১৯৯২ : দ্যা হর্ষদ মেহেতা স্ক্যাম’। হানসাল মেহেতা পরিচালিত সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ যা সর্বস্তরের জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। Applause Entertainment-এর 'Scam 1992: The Harshad Mehta Story' সারা বিশ্ব থেকে সবচেয়ে বেশি দেখা সিরিজের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
নাইজেরিয়ান প্রিন্স স্ক্যাম (The Nigerian Prince Scam)অনলাইন স্ক্যামের ক্রমবর্ধমান বিবর্তনের যুগে, অন্যতম কুখ্যাত ও দীর্ঘস্থায়ী ই মেইল স্ক্যাম হল নাইজেরিয়ান প্রিন্স স্ক্যাম। "419 scam" নামে পরিচিত এই স্ক্যামের ফাঁদে পরে বছরের পর বছরে হাজারো মানুষ সর্বস্ব হারাচ্ছে। Nigerian Prince Scam এর ভিকটিম প্রতি বছর বাড়ছে। অর্থাৎ, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম স্ক্যাম কিন্তু এখনও সচল আছে। একদম শুরুর ইমেইল এই ১৬.৮ মিলিয়ন হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারণামূলক স্ক্যাম৷
হোয়াইট কলার ক্রাইম (White Collar Crime)আইন ও সমাজের দৃষ্টিতে, "ক্রাইম" শব্দটি দিয়ে আমরা কি বুঝি? সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করা থেকে শুরু করে সহিংসতা, ডাকাতি, খুন, জটিল আর্থিক প্রতারণা এর মত শাস্তিযোগ্য অপরাধ গুলো। কিন্তু যদি এমন হয়, উচ্চপদস্থ কোনো ব্যক্তি, বড় কোনো প্রতারণা করে, অথবা সিস্টেমেটিক্যালি সেগুলো সরাসরি ভায়োলেন্স এর সাথে জড়িত নয়? তখন এই কম প্রকাশ্য, কিন্তু সমানভাবে ধ্বংসাত্মক, অপরাধ গুলোকে নাম দেয়া হয় "হোয়াইট কলার ক্রাইম "। ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট এর শুরু থেকেই সিকিউরিটিজ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, কর্পোরেট জালিয়াতি, পাম্প এন্ড ডাম্প, এবং মানি লন্ডারিং এর মত হোয়াইট কলার ক্রাইম গুলো সংঘটিত হয়ে আসছে। ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) অনুসারে, white collar crime এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বছরে 300 বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করতে হয়। আর, দিন দিন এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হয়েই যাচ্ছে।
পঞ্জি বনাম পিরামিড স্কিম (Ponzi vs Pyramid Scheme)অর্থনীতি জগতের খোঁজ রাখা ব্যক্তিদের কাছে, পঞ্জি স্কিম ও পিরামিড স্কিম শব্দ দুটো বেশ পরিচিত। স্বল্প সময়ে কোনো পরিশ্রম ছাড়াই দ্রুত অর্থ উপার্জনের প্রায় সকল জালিয়াতি বা প্রতারণা কেই পঞ্জি এবং পিরামিড স্কিম হিসেবে ধরা হয়। দুই ধরনের স্কিম এর উদ্দেশ্য একদম কাছাকাছি। প্রথমে ইনভেস্টরদের আস্থা অর্জন করা এবং তাদের ইনভেস্টের সর্বস্ব আত্মসাত করা। সঙ্গতভাবেই এ ধরনের স্কিম বিজনেসের কোনো আইনি বৈধতা থাকে না, শুধু মূল পরিকল্পনাকারীই লাভবান হয়ে থাকেন। Ponzi & Pyramid স্কিম এর উদ্দেশ্য একই হলেও পার্থক্য তাদের প্রতারণার ধরন ও স্ট্র্যাকচারে৷ পঞ্জি ও পিরামিড স্কিমের ফাঁদে পরে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ২০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি রেকর্ড করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি স্ক্যামেই ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্ক্যাম হয় ২০০৮ সালে, বার্নি ম্যাডফের হাত ধরে।
পিরামিড স্কিমপিরামিড স্কিম বলতে মূলত এমন একটি সংগঠন বোঝানো হয় যারা কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয় করেন না বরং নতুন নতুন মানুষদের সংগঠনে জড়ানোর মাধ্যমে তাদের আয় নিশ্চিত হয়। এখানে নতুন মেম্বার হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে জয়েন করতে হয় এবং মেম্বারদের খুব অল্প সময়ের ভেতর অধিক পরিমাণ মুনাফা পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে আকর্ষিত করা হয়। এরপর নতুন মেম্বারদের থেকে পাওয়া টাকা থেকে পুরাতন মেম্বাররা আয় করে থাকেন।
পঞ্জি স্কিম সংজ্ঞা এবং উদাহরণপঞ্জি স্কিম হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ সুযোগ যেখানে কোনো বৈধ অথবা অবৈধ আর্থিক উপদেষ্টা বা এজেন্সি মানুষের অলস টাকা বিনিয়োগ হিসেবে গ্রহণ করে অনেক বেশি পরিমাণে রিটার্ন দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। তবে বিনিয়োগকৃত অর্থ তারা কোনো বৈধ ফান্ডে বিনিয়োগ না করে বরং কিছু অংশ দিয়ে পুরাতন বিনিয়োগকারীদের প্রফিট প্রদান করে এবং বাকি অংশ স্কিম পরিচালনাকারীরা আত্মসাৎ করে।